ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ: তেলের দাম নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না, এলএনজি আমাদের ভোগাতে পারে, জ্বালানি উপদেষ্টা

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে, যা আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
তবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও দেশের জ্বালানি ব্যবস্থা তাত্ক্ষণিক কোনো বড় ঝুঁকিতে নেই, কারণ পূর্বপ্রস্তুতি ও চলমান সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে (টিবিএস) বলেন, 'ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য খুবই খারাপ খবর, কারণ ইতোমধ্যে তেলের দাম বাড়ছে। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে তেলের সরবরাহে বড় প্রভাব পড়বে না।'
তিনি জানান, 'মে মাসে আগাম কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশ জুন ও জুলাইয়ের জন্য তেল সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। জুলাই পর্যন্ত আমরা নিরাপদ।'
উপদেষ্টা বলেন, 'প্রতি লিটারে ১৮ থেকে ২০ টাকা দাম বাড়লেও আমরা তা সামাল দিতে পারব, কিন্তু তার চেয়ে বেশি বাড়লে বিপদে পড়ব।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকার যে অভ্যন্তরীণভাবে তেলের দাম কমানোর পরিকল্পনা করছিল, সেটি বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে বিলম্বিত হতে পারে।'
তিনি বলেন, 'জুলাই থেকে ছয় মাস মেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় তেল সরবরাহ চালু হবে, যা বর্তমান বাজার অস্থিরতায় কিছুটা স্বস্তি দেবে। চুক্তিতে প্রিমিয়াম নির্ধারিত, কেবল সূচক অনুযায়ী দাম উঠানামা করবে। এই কাঠামো আমাদের কিছুটা স্বস্তি দেয়।'
তেল সরবরাহে কিছুটা স্থিতিশীলতা থাকলেও এলএনজি নিয়ে খান উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, 'জ্বালানির দামে বড় কোনো সমস্যা হবে না, তবে এলএনজির দামে ধাক্কা খেতে হবে, কারণ আমাদের স্পট মার্কেট থেকে কিনতে হয়।'
তিনি বলেন, 'স্পট মার্কেটে দাম দ্রুত ওঠানামা করে, যার ফলে স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশের এলএনজি সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।'
তবে দাম বাড়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও এলএনজি আমদানি কমানোর কোনো তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, 'এখনই সেদিকে চিন্তা করছি না, আগে বাজার পর্যবেক্ষণ করব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।'
তিনি আরও বলেন, 'জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন, সরবরাহ ব্যবস্থায় দেরি এবং পরিবহন ব্যয় বাড়াও এই সংকটের সঙ্গে যুক্ত আরও কিছু বড় উদ্বেগের কারণ। আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুটের ওপর বাংলাদেশ অনেকটাই নির্ভরশীল, ফলে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনা জ্বালানি থেকে শুরু করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।'
উপদেষ্টা বলেন, 'নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও কৌশলগত সতর্কতা প্রয়োজন। তেলের দামের তাৎক্ষণিক প্রভাব সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি থাকলেও এলএনজি এখনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় দুর্বলতা। যদি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত বা আরও তীব্র হয়, তবে তা দেশের জ্বালানি খাত ও সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।'