উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে, অধ্যাদেশ জারি

'জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল'- নামের একটি স্বাধীন কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। এমন বিধান রেখে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান আসিফ নজরুল।
এসময় তিনি বলেন, `আগের সরকারের আমলে অনাচার হতো, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো, মানুষকে দমন-পীড়ন করা হতো, তার একটা বড় প্লাটফর্ম ছিল উচ্চ আদালত। সেখানে মানুষ প্রতিকার পেত না। এর কারণ ছিল উচ্চ আদালতে রাজনৈতিক সরকারগুলো সম্পূর্ণভাবে দলীয় বিবেচনায় অনেকক্ষেত্রে অযোগ্য লোকদের জজ হিসেবে নিয়োগ দিত। উচ্চ আদালতে নিয়োগ নিয়ে একজন সাবেক বিচারপতি প্রলয় ঘটে গেছে এমন মন্তব্যও করেছিলেন।'
আসিফ নজরুল বলেন, 'উচ্চ আদালতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ লোকেরা, যোগ্য লোকেরা যদি নিয়োগ না পায় তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি বা ১৭ কোটি মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নটি অমিমাংসিত থেকে যায়, ঝুঁকিতে থেকে যায়। এই প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম কোর্ট বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ- ২০২৫ জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ, অভিজ্ঞ, দল নিরপেক্ষ এবং প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাবেন- এরকম একটি চাহিদা এই সমাজে বহু বছর ধরে ছিল। বহু ফোরাম থেকে, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে, নাগরিক সংগঠন থেকে এই দাবি তোলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেটি পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অফিসের এ সংক্রান্ত একটি খসড়া, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের তৈরি করে দেওয়া খসড়া এবং ২০০৮ সালে এ ধরনের একটি অধ্যাদেশ তৈরির প্রক্রিয়া হয়েছিল, সেই অধ্যাদেশের কপি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এছাড়া, স্টেকহোল্ডার, সচেতন নাগরিক সমাজ, সাবেক বিচারপতি, আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
আইনে বিচারক নিয়োগে একটি কাউন্সিলের প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, এই অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হবে। যেখানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুজন বিচারক(একজন অবসরপ্রাপ্ত, একজন বর্তমান) ও হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল থাকবেন। এই কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে অনেক নাম সংগ্রহ করবেন, একইসঙ্গে যে কেউ নাম প্রস্তাব করতে পারবেন, যেকোনো আইনজীবী আবেদন করতে পারবেন। এরপর কাউন্সিল বিচারক নিয়োগের সকল প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন। ফলে একটা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ হবে।
তিনি বলেন, সরকার আশা করছে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টের যে পরবর্তী নিয়োগ আছে, সেখানে আগের যেকোনো আমলের চেয়ে বেটার নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এছাড়া স্থায়ী অ্যাটর্নি বা প্রসিকিউশন সার্ভিস তৈরির লক্ষ্যে আইন করা হচ্ছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অনেক সময় অভিযোগ আসে পাবলিক প্রসিকিউটররা দলীয়ভাবে নিয়োগ হন, ফলে তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন না। রাষ্ট্রেরপক্ষে ভূমিকা পালন না করে অনেকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন। এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে স্থায়ী প্রসিকিউশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সম্ভবত এক মাসের মধ্যে এটা করা যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।