‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’: ভ্যাট বৃদ্ধির প্রতিবাদে রেস্তোরাঁ মালিকদের ধর্মঘটের হুমকি

হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেবায় সরকার ভ্যাট বৃদ্ধির পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা না করলে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ হুঁশিয়ারি দেয়।
এদিকে, গত ৮ জানুয়ারি হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ প্রায় ৯০টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে রেস্তোরাঁ ব্যবসা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠিন সংকটে রয়েছে।
তিনি বলেন, "ভোক্তাদের ওপর চাপ কমাতে আমরা ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার এটি তিনগুণ বাড়িয়েছে। এতে গ্রাহকদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। মানুষজন হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া কমিয়ে দেবেন।"
তিনি আরও বলেন, করের আওতা না বাড়িয়ে এবং কর ফাঁকি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিয়ে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি "হঠকারী সিদ্ধান্ত"।
এনবিআর সাধারণ ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে।
ইমরান হাসান বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাটের সঙ্গে আরও ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে ভোক্তাদের মোট ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
"বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের কাছ থেকে এই অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ কর সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না," তিনি বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যেই ব্যবসার পরিবেশ কঠিন করে তুলেছে।
তিনি জানান, ৭০ শতাংশ রেস্তোরাঁ এখনও ভ্যাট ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা না চাপিয়ে, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করার পরামর্শ দেন তিনি।
ইমরান বলেন, "আইএমএফ এর শর্ত মানতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো দেশের জনগণের ওপর ইচ্ছে মত করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হতে পারে না"
তিনি বলেন, ভ্যাটের হার কমালে ভ্যাট আদায় বৃদ্ধি পায়। তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার পর ভ্যাট আদায় ১৯ শতাংশ বেড়েছিল।
ইমরান হোসেন বলেন, "ভ্যাটের হার কম থাকলে মানুষ ভ্যাট দিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু হার বেশি হলে ভোক্তারা ভ্যাট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ দেশে আয়ের মূল উৎস হলো প্রত্যক্ষ কর, যেমন আয়কর। করের আওতা না বাড়িয়ে ভ্যাটকে প্রধান রাজস্ব উৎস হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
"বর্তমানে প্রায় ৫.২৫ লাখ ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধিত। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৩.৫০ লাখ নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে," তিনি জানান।
সারা দেশে ধর্মঘটের পরিকল্পনা
সংবাদ সম্মেলনে ইমরান হাসান জানান, সরকার যদি বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার না করে, তাহলে রেস্তোরাঁ মালিকদের স্বার্থ ও জীবিকা রক্ষায় তারা মানববন্ধন করবেন।
এর পাশাপাশি, প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে একদিনের জন্য সব রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হবে। তবে সরকার যদি তাদের অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হবে।