বেক্সিমকোর রিসিভার নিয়োগ বাতিল করে হাইকোর্টের রায়, এখন থেকে চলবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬৯ প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিভার থাকছে না বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার (১২ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহাবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। আদালত ৯টি পর্যবেক্ষণসহ এ রায় ঘোষণা করে।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস ও আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও আইনজীবী আনিসুল হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ আর সোবহান।
আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, এ আদেশের ফলে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। তবে কোম্পানিগুলোকে আইন মেনে পরিচালনা করতে হবে এবং সুপারভিশন ও মনিটরিংয়ের আওতায় থাকতে হবে।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের বলেন, '৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে একজন জনস্বার্থে রিটের প্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বেক্সিমকো ফার্মা আপিলে যায়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশটি মডিফাই করে শুধু ফার্মাকে নিজস্ব পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো রিসিভার নিয়োগ করেছিল।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান বলেন, 'আদালত বলেছেন, এ পর্যন্ত রিসিভার যা করেছে, সব কাজগুলো আইনগতভাবে বৈধ।'
এর আগে, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বেক্সিমকো গ্রুপের কার্যক্রম পরিচালনায় রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেয় এবং প্রতিষ্ঠানটির সব সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেয়। পাশাপাশি গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রিসিভার নিয়োগ করেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান এ বিষয়ে একটি রিট করেন। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি দেখভাল করার জন্য রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ছয় মাসের জন্য গ্রুপটির সকল সম্পত্তি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি দেওয়া ওই আদেশে সালমান এফ রহমান থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ উদ্ধার এবং বিদেশে থেকে টাকা ফেরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সালমান এফ রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। আপিল বিভাগ গত ১২ নভেম্বর শুধু বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে 'রিসিভার' নিয়োগের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এরপর রুলের ওপর হাইকোর্টে ২৭ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়।
পরে হাইকোর্টে শুনানি শেষে আজ রুলটি নিষ্পত্তি করেছেন। আদালত নয়টি পর্যবেক্ষণসহ রুলটি নিষ্পত্তি করেছেন। রুল নিষ্পত্তির কারণে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬৯ প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিভার থাকছে না। এই কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা তারা নিজেরা করবেন।
তবে আদালত বলেছেন, আইন অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রেগুলেটরি বডির সুপারভিশন ও মনিটরিং থাকবে।