ব্যাংকে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন, নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

শতাধিক ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধভাবে ৬৪ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অস্বাভাবিক এসব লেনদেনের মধ্যে নসরুল হামিদের নামে থাকা ৯৮ ব্যাংক হিসাবে ৬ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তাঁর ছেলে জারিফ হামিদের নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং নসরুলের স্ত্রী সীমা হামিদের ২০টি ব্যাংক হিসাবে আরও ৩৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার লেনদেনের অভিযোগ এনেছে দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আক্তার হোসেন বলেন, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪–এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছে দুদক। তাঁর স্ত্রী সীমা হামিদের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া ২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার ছেলে জারিফ হামিদের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব লেনদেনের বিস্তারিত তুলে ধরে আক্তার হোসেন জানান, নসরুল হামিদের নিজ নামে ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ৩১৮১.৫৮ কোটি টাকা এবং মোট উত্তোলনের পরিমাণ ৩,১৮০.২৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে মোট অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ৬,৩৬১.৮১ কোটি টাকা।
তার ছেলে জারিফ হামিদের নিজ নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, এবং মোট উত্তোলনের পরিমাণ ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর সীমা হামিদের ২০টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কমা এবং ১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলনের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।
এর আগে গত ২০ আগস্ট নসরুল হামিদ ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত (ফ্রিজ) করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা - বিএফআইইউ।
গত ২২ আগস্ট নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে দুদক। ওইদিন তাঁর প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী এ অভিযান চালায়। এ সময় 'প্রিয় প্রাঙ্গণ' নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ অর্থ ও বৈদেশিক মুদ্রা (প্রায় ১০ লাখ টাকা ও ২০০ তুর্কি মুদ্রা) এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন নসরুল হামিদ।