ভিসা প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও হয়রানির দ্রুত সমাধান চান ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীরা
দ্রুত অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালু করে ভিসা প্রদানের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও ইতালি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীরা ।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অয়াসোসিয়েশন মিলনায়তেন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
তিনটি প্রবাসী সংগঠন- বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ), ইতালি-বাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতি- এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া, ভিসা ডেলিভারিতে দীর্ঘসূত্রতা, দালালের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি নানান জটিলতায় এক বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার ইতালির ভিসা প্রত্যাশী।
তারা বলেন, ইতালিতে কাজের জন্য ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশী অভিবাসী কর্মীরা দীর্ঘ প্রায় ৬-৭ মাস অপেক্ষার পরও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না। বর্তমানে অ্যাপয়েন্টমেন্টের অপেক্ষায় থাকা ভুক্তভোগীরা বেকার অবস্থায় চরম সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা আর্থিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
এখন অনেকেই বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে সবার জন্য খুবই উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ইতালিবাংলা সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান বলেন, "ঢাকার ইতালিয়ান দূতাবাস ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ইতালি ভিসা প্রত্যাশীদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার।"
"যদি এক বছর পরেও ৪০ হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি করা সম্ভব না হয়, তাহলে ১ লাখ ১০ হাজার পাসপোর্টের কাজ করতে আরও অন্তত দুই-তিন বছর সময় লাগবে। এতে শুধু বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে," যোগ করেন তিনি।
এ সময় ইতালির ভিসা প্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হচ্ছে- বন্ধ থাকা অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রক্রিয়া চালু করে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায়, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এছাড়া, অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইমেইলের ৩০ দিনের মধ্যে ভিসা আবেদন জমার ব্যবস্থা করতে হবে। আর আবেদনের পর সর্বোচ্চ ৬০ কর্মদিবসের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভিসা আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে ভিএফএস গ্লোবালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ভুক্তভোগীরা বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া পর্যন্ত ব্যাকলকে থাকা ই-মেইল চেকিং ও ট্রেকিং করার মাধ্যমে সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ দিতে হবে।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- নিয়োগকর্তাদের পক্ষ থেকে কর্মীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে দূতাবাস বা ভিএফএস গ্লোবালে যোগাযোগ করা হলে দ্রুত সাড়া দিতে হবে; অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য, দালালের দৌরাত্ম্য, প্রতারকদের হয়রানিসহ সব হয়রানির পথ বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিএমডিএফ) সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল।
এদিকে, গত ৩ অক্টোবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাস দীর্ঘদিন যাবত জমে থাকা ভিসা আবেদনসমূহের দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কনস্যুলার শাখার লোকবল বৃদ্ধিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, এরই ধারাবাহিকতায়, আগামী দুই মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক (অন্তত ২০,০০০) আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধ্বান্ত গ্রহণপূর্বক পাসপোর্ট ফেরত প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাস।
