এমভি আবদুল্লাহতে ভারী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে জলদস্যুরা। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাত থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করায় নিজেদের 'শক্ত' অবস্থান জানান দিতে গুলি ছুড়ছে তারা। একইসঙ্গে, জাহাজের বিভিন্ন পাশে তারা ভারী অস্ত্র বসিয়েছে বলে জানান এমভি আব্দুল্লাহতে জিম্মি নাবিক ইঞ্জিন অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের পরিবারের একজন সদস্য।
আজ শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা সাড়ে এগারোটায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ওই নাবিকের বরাত দিয়ে তার পরিবারের সদস্য জানান, "এমভি আব্দুল্লাহর অদূরে ইইউ'র যুদ্ধ জাহাজ অবস্থান নেওয়ায় জিম্মি ২৩ নাবিকের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। ৩০ থেকে ৩৫ জন সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকছে। কেবিনে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না নাবিকদের। ইতোমধ্যে জাহাজে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেজন্য পানি ব্যবহার নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নাবিকদের। একটি টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে সবাইকে। খাবার নিয়েও কষ্টে আছেন নাবিকরা। তবে এখনও পর্যন্ত সব নাবিক সুস্থ আছেন।"
জিম্মি এমভি আব্দুল্লাতে ভারী অস্ত্র বসানোর প্রমাণ মিলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ। গত বুধবার দ্য ডেইলি সোমালিয়া ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে জলদস্যুদের ভারী অস্ত্র তাক করে রাখার এই ছবি প্রকাশ করা হয়।

দ্য ডেইলি সোমালিয়ার পোস্টে বলা হয়, ১৭ নাবিকসহ জলদস্যুর কবলে পড়া মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। এরপর থেকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে থাকা জলদস্যুরা। ছবিটিতে দেখা যায়, কাপড় মুড়িয়ে সমুদ্রের দিকে তাক করে রাখা হয়েছে অস্ত্রটি।
এছাড়া উত্তর-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তায় ইউরোপীয়ান নেভাল ফোর্স বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে বাহিনীটি এমভি আব্দুল্লাহর কাছে তাদের অবস্থানের তিনটি ছবি ও একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ইইউ নেভাল ফোর্সের সদস্যদের নজরদারির পাশাপাশি ওই আকাশসীমায় তাদের হেলিকপ্টারও টহল দিতে দেখা যায় ভিডিওতে। ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও কোনো অভিযানের বিষয়ে জানায়নি।
তবে জাহাজ মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলে, "এমভি আব্দুল্লাহর অদূরে ইইউ'র যুদ্ধ জাহাজ, হেলিকপ্টার টহল এবং জিম্মি জাহাজে জলদস্যুদের ভারী অস্ত্র তাক করার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তবে জাহাজ মালিক এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইইউ কিংবা ইন্ডিয়ান নেভিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সমঝোতার মাধ্যমে আমরা জিম্মি নাবিকদের দেশে ফেরাতে চাই। কোনোভাবেই সশস্ত্র অভিযানের পক্ষে আমরা নই। নাবিকদের জীবন সংশয়ে পড়বে এমন কোনো কিছুর প্রতি আমাদের সমর্থন নেই।"
জলদুস্যদের সাথে যোগাযোগ শুরু হওয়ায় দ্রুততম সময়ে নাবিকদের মুক্তি নিয়ে আশা ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, "ইইউ'র যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কারণে দস্যুদের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়েছে। যেই কারণে দস্যুরাও জাহাজে ভারি অস্ত্র বসিয়েছে এবং জিম্মিদের উপর চাপ তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশি জাহাজে ইইউ'র অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। এমনকি বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত বাস্তবতার আলোকে জিম্মি জাহাজে সামরিক অভিযানের সম্মতি দেয়নি। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা ছাড়া বিকল্প নেই।"
যেকোনো সামরিক অভিযান নাবিক, জাহাজ ও জাহাজের পণ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, এতে জিম্মি সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে, জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়। তবে অভিযান চালানো হলে জিম্মি থাকা নাবিকদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই জাহাজের নাবিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে– এমন কোনো অভিযানে সমর্থন নেই বলে জানায় জাহাজটির মালিকপক্ষ।
জিম্মি করার আট দিন পর গত বুধবার দুপুরে প্রথমবারের মতো এমভি আব্দুল্লাহর মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে সোমালি জলদস্যুরা। তবে এখনও কী আলোচনা হয়েছে, তা জানায়নি জাহাজের মালিকপক্ষ।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী জাহাজটি এখন সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রেখেছে দস্যুরা।