ক্রমাগত আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেও এখনও বাণিজ্যিক ভবন পরিদর্শন শুরু করেনি বিডা

প্রায় আড়াই বছর আগে নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে বড় হতাহতের ঘটনার পর দেশের কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ঝুঁকি তদারকির দায়িত্ব নিয়েছিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
ওই সময় দক্ষভাবে মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে কারখানা ও মার্কেটপ্লেস বিল্ডিংগুলোতে নিরাপত্তার মান তদারকি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে প্রধান করে একটি জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়।
ওই উদ্যোগের আওতায় ১০ হাজার কারখানার অগ্নি নিরাপত্তা, ভবনের নিরাপত্তা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে এখনও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়নি।
অন্যদিকে বিশালসংখ্যক বাণিজ্যিক ভবনের পরিদর্শনই শুরু হয়নি এর আওতায়। এর কারণ হিসেবে বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতার কথা বলছেন কিছু কর্মকর্তা।
রাজধানীর বেইলি রোডে আরেকটি বাণিজ্যিক ভবন বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) আগুন লেগে ৪৬ জন প্রাণ হারানোর পর আবারও অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছিলাম; কিন্তু বাজেট পাওয়া যায় না। এজন্য পরবর্তীতে কেবল কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে।'
বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, 'অর্থ মন্ত্রণালয় শিগগিরই তৃতীয় ধাপের পরিদর্শনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেবে। আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।'
নিরাপত্তা পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)।
ডিআইএফইর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল একেএম সালাউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'কিছু মার্কেট পরিদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভবন পরিদর্শন প্রাথমিকভাবে বিডা এই পরিদর্শনের আওতায় ছিল না, শিগগিরই এটি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।'
সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকান্দার আলী মিয়া টিবিএসকে বলেন, 'বিডার কার্যক্রম শুরু করার পরও দুই বছরে অগ্নি নিরাপত্তায় প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। এত আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি না করে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় ও তাদের শক্তিশালী করা বেশি জরুরি ছিল।'
বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ, রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ার ভবনে। ২২ তলা ওই বাণিজ্যিক ভবনের অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
সেকান্দার আলী মিয়া বলেন, 'বিডার পরিদর্শনের আওতায় বাণিজ্যিক ভবনকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।'
এদিকে বিডার পরিদর্শন করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত কারখানাগুলোর মধ্যে একটিও বন্ধ করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
যদিও এক বছর আগে সালমান এফ রহমান বলেছিলেন, '২০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাকে ছয় মাস বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। তারা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের নিরাপত্তার মান না বাড়ায়, তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।'
শুক্রবার (১ মার্চ) বেইলি রোডে পুড়ে যাওয়া ভবনটি পরিদর্শন শেষে ডিআইএফই-এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল একেএম সালাউদ্দিন বলেন, 'ঢাকার নগর উন্নয়ন সমন্বয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা রাজউক এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা অবাক হয়েছি যে এখানে সেফটির অনেক ভায়োলেশন ছিল। কীভাবে অনুমোদন দিয়েছে?'
অন্যদিকে ভবনটিকে তিন দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক।
রাজউক ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলেও এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের মূল দায়িত্ব ডিআইএফই-এর। তবে ডিআইএফই ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হলে তা বন্ধ করার ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। আবার ডিআইএফই-এর জনবলও প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত।
অগ্নিকাণ্ডে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার পর অতীতের মতো এবারও এক পক্ষ আরেক পক্ষের দিকে দায়িত্ব ঠেলছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ টিবিএসকে বলেন,'ফায়ার সার্ভিস বা ডিআইএফই-এর হাতে কারখানা বন্ধ করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।'