বিদেশি কোম্পানিগুলোর টাকায় ঋণ নেওয়ার সুবিধা বাড়ছে

বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিএমআরই (ব্যালান্স, মডার্নাইজেশন, রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন) কার্যক্রমে বহুজাতিক ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য টাকায় ঋণ নেওয়ার শর্ত শিথিল করছে সরকার। ফলে এখন থেকে এ ধরনের কোম্পানিগুলো দেশীয় বেসরকারি কোম্পানির মতো একই হারে টাকায় ঋণ নিতে পারবে।
গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'বৈদেশিক ঋণ বা সরবরাহ ঋণ যাচাই কমিটি'-এর সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন পায়। সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ–এর (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরি বিদেশি কোম্পানির জন্য ডেট-ইক্যুইটি রেশিও বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তিন বছর ধরে কার্যক্রম চালানোর পর উৎপাদন ও সেবাখাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা বিএমআরই করতে দেশীয় ব্যাংক থেকে টাকায় ঋণ নিতে পারে। তবে এই ঋণের পরিমাণ কোম্পানির ইক্যুইটির ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "এই গাইডলাইন সংশোধনের পক্ষে বিডা যুক্তি তুলে ধরে যে, ১৯৮০ সালের 'বিদেশি ব্যক্তিমালিকানাধীন বিনিয়োগ (উৎসাহ ও সুরক্ষা) আইন'-এ বলা আছে, সরকার দেশীয় ও বিদেশি ব্যক্তিমালিকানাধীন বিনিয়োগের মধ্যে 'ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক আচরণ করবে।"
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিডা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগকে চিঠি দেবে। সেই ভিত্তিতে বৈদেশিক লেনদেন বিধি সংশোধন করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর টাকায় ঋণগ্রহণের শর্ত দেশীয় কোম্পানির মতোই করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, "দেশীয় কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো ইক্যুইটির অনুপাতে ঋণ দিয়ে থাকে। সাধারণত সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয়। এখন বিদেশি কোম্পানিও একই হারে ঋণ সুবিধা পাবে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর (এফআইসিসিআই) নির্বাহী পরিচালক টি. আই. এম. নুরুল কবির বলেন, "মাল্টিন্যাশনাল (বহুজাতিক) কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন এই বৈষম্যের কথা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরে এসেছে। মাল্টিন্যাশনাল ও বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে ডেট টু ইক্যুইটি রেশিও শিথিল করা হলে তা এসব কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিএমআরই কার্যক্রমকে সহজ করবে এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে।"
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর তুলনায় মাল্টিন্যাশনাল ও বিদেশি কোম্পানিগুলো কমপ্ল্যায়েন্সের (নিয়মনীতি মানা) ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। দেশি কোম্পানির তুলনায় বিদেশি কোম্পানির খেলাপির হারও কম। তাই এ ধরনের বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ ইতিবাচক। এতে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর দেশীয় ও বিদেশি কোম্পানির মধ্যে এ ধরনের বৈষম্য রাখার কোন সুযোগ নেই। ডাব্লিউটিও-এর ন্যাশনাল ট্রিটমেন্ট ক্লজ অনুযায়ী, দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা দিতে হবে।"