বিকল্প ধারা: কখনও বিকল্প হতে পারেনি

বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপরীতে বিকল্পধারা বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক শক্তি খুবই কম। এর ফলে দলটি কখনও কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্প হিসাবে আবির্ভূত হতে পারেনি। রাজনীতিতে কথার ভারেই টিকে আছে বিকল্পধারা। উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি হলেও দলটির সাংগঠনিক কর্মসূচি কম।
দেশের রাজনীতিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট সাবেক বিএনপি নেতা একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যে ভাবমূর্তি রয়েছে, তা দলের মধ্যে আর কারও নেই। কিন্তু তার বয়স হয়েছে, মাঝেমধ্যে অসুস্থও থাকেন। এ কারণে তিনি অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এর জেরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে দলটি এখন বাড়তি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিক দল বিকল্পধারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
তবে এবারের নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে, বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীর এবং নোয়াখালী-৪ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়ায় তাদের মনোনয়ন বাতিল হয় বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আবদুল মান্নান লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মান্নান মহাজোট থেকে প্রার্থী ছিলেন।

২০১৮-র নির্বাচনে বিকল্পধারা ২৬টি আসনে নির্বাচন করে ২টি আসনে জয়ী হয়; মোট ভোট পায় ৫ লাখ ৬৫ হাজার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটি ৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়ে কোনো আসনে জয় পায়নি; ভোট পেয়েছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার।
আপিলের মাধ্যমে মাহি বি চৌধুরী তার বাতিল হয়ে যাওয়া মনোনয়ন ফিরে পাবেন বলে আশা করছেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমি নিজেও আবাক হয়েছি আমারটা বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি বলেছে। আমার নামে কোনো ঋণ নেই, কারণ আমি তো ব্যবসায়ী না।'
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '১২ বছর আগে আমি অন্য কোনো ঋণের গ্যারান্টর ছিলাম। সেটা আমার মনে নেই। এর পর যাদের ঋণ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা গত নভেম্বরে তাদের ঋণ রিশিডিউল করেছে। সেটার ব্যাংক সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। ব্যাংক সেটা সময়মতো আপডেট করার না করার কারণে এ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার তো কোন ঋণ নেই। আমার ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্সও জিরো।'
দলটির মহাসচিব আবদুল মান্নানও মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বলে জানান। তার বিরুদ্ধেও ঋণখেলাপির অভিযোগ আনা হয়েছে।
দলের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবারের নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বিতা করছেন না। এ বিষয়ে মাহি বলেন, 'তিনি ২০০৮ এবং ২০১৪-র নির্বাচনেও দাঁড়াননি। তার বয়স এখন ৯৩ বছর। তিনি আমাদের দলের আদর্শিক দীক্ষাগুরু। তিনি আমাদের উৎসাহ। স্পিরিট অব পার্টি—দলের চেতনা দলের, বিশ্বাস ওনাকে সামনে রেখে।'
মাহি আরও বলেন, 'তবে মহাসচিব এবং আমি দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করি।'
নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের ৭-৮ জন প্রার্থী এবার শক্তিশালী। তারা ভালো ফলাফল করবেন, এটা চিন্তা করছি। আমাদের এবার সিলেকটিভ ওয়েতে মনোনয়ন দিয়েছি। আমরা বেছে বেছে মনোনয়ন দিয়েছি।'
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মাহি বলেন, 'আমরা নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচন সুন্দর করতে পারবে কি পারবে না, এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
'সরকার একটা অবস্থান নিয়েছে, বিএনপি আরেকটা অবস্থান নিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম সমঝোতা হবে; সেটা না হয়ে সংঘাতের পথে গিয়েছে।'
বিএনপির শাসনামলে ২০০১ রাষ্ট্রপতি ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতি পদ ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
এরপর ২০০৪ সালের মার্চ মাসে বিকল্পধারা বাংলাদেশ করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। দলের প্রতীক ঠিক করা হয় কুলা। ওই বছর উপনির্বাচনে মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে জয়লাভ করে বিকল্পধারা।
২০০২ সালে মাহি বি চৌধুরী জাতীয় সংসদের মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অষ্টম সংসদের মূল নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন তার বাবা বিএনপির প্রথম মহাসচিব একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে এই আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে।