ইসলামী ঐক্যজোট: যারা জোট ভাঙা-গড়ায় ওস্তাদ
প্রথমবারের মতো ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ইসলামী ঐক্যজোট। সে বার ৫১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাত্র একটি আসনে জয় পেয়েছিল জোটটি। নির্বাচনে জোটের পক্ষে মোট ভোট পড়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি।
জোটের নির্বাচনী প্রতীক ছিল 'মিনার'। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে ছয়টি ইসলামী দলের সমন্বয়ে এই জোট গঠিত হয়।
এরপর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জোটটি ১৬৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এবারও মাত্র একটি আসনে জয় পায় জোটটি। তবে আগের বারের চেয়ে জোটটির ভোট বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৬১ হাজারে।
কিন্তু ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেতাদের মধ্যে মতাদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে জোটের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়। মুফতি আমিনীর নেতৃত্বে একটি দল জোটের প্রতীক নিয়ে বিএনপির চার দলীয় ঐক্যজোটে যোগ দেয়। অন্য দলটি যোগ দেয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
এই নির্বাচনে ঐক্যজোটের সদস্যরা চারটি আসনে জয়লাভ করে। তাদের মধ্যে দুজন 'মিনার' প্রতীক নিয়ে এবং অন্য দুজন 'ধানের শীষ' প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মূল জোটটির মধ্যে বিভক্তি বাড়তেই থাকে। ছয়টি দলের সমন্বয়ে গঠিত জোটটি এখন ছয়টি দলে বিভক্ত। জোটের এই দলগুলো ছিল খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নিজাম-ই-ইসলাম পার্টি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন), জমিয়তে উলামা-ই-ইসলাম এবং ফরায়েজী আন্দোলন।
২০০৮ সালে মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট আবার বিএনপির পক্ষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় এবং মাত্র চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে জোটের প্রার্থীরা মোট এক লাখ আট হাজার ৪১৫টি ভোট লাভ করেছিল।
সাফল্য ধরা না দিলেও ২০১২ সালে দলটি বিএনপির ২০ দলীয় জোটে যোগ দেয়। দলটি বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর মতোই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছিল।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ঐক্যজোটের মধ্যে আবারও ভাঙন তৈরি হয়। দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল লতিফ নেজামী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেন। তবে দলটির ছোট একটি অংশ জোটের সঙ্গে থেকে যায়।
ওই সময়ে লতিফ নেজামী বলেছিলেন, '২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলামী ঐক্যজোট আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।'
এ ঘোষণা সত্ত্বেও ঐক্যজোট পরের বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ নেয়। তবে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটটিকে আওয়ামী লীগের "নৌকা" প্রতীক ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ নির্বাচনে লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন এ দলটি ২৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও একটি আসনেও জয় পায়নি। এমনকি জামানত পর্যন্ত হারিয়েছিল প্রত্যেক প্রার্থীই। নির্বাচনে জোটটি মোট এক লাখ ১৩ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিল।
বর্তমানে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবুল হাসনাত আমিনী। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট একক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে ৩০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও দলটি মাত্র ৪৫টি আসনে প্রার্থী মনোনীত করেছে।
প্রয়াত মুফতি আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন।
তবে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি ফয়জুল্লাহ এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দল এখন নিজের মতো করে এগোচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমরা আশা করি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ইসলামী ঐক্য জোট বর্তমানে কোনো জোটের অংশ নয়।'
