এক প্রজন্ম ভোট দেয়নি, তাদের কেন্দ্রে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ: ইইউ রাষ্ট্রদূত মিলার
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে সন্তুষ্ট হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বড় আকারের পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ। তিনি আরও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, যেসব ভোটাররা আগে কখনও ভোট দেননি, তাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
মাইকেল মিলার বলেন, 'আমি আগেও বলেছি—ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি বৃহৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অনুশীলন যে বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা এবং এই বৈচিত্র্যময় দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সমর্থনেরই প্রতীক।'
তিনি বলেন, 'আমরা দেখছি, নির্বাচনের প্রস্তুতি ভালোভাবেই এগোচ্ছে। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে—কারণ এটি একটি বিশাল দেশ, বিশাল জনসংখ্যা; এবং বিভিন্ন কারণে অনেক নাগরিক এবার প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাবেন। সুতরাং এখন নাগরিক ও ভোটার শিক্ষার কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। এতে জন-আলোচনা হবে, সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে সাধারণ ভোটারদের ব্যাখ্যা করতে হবে—নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে কী, আর গণভোটের জটিল অংশগুলোর তাৎপর্য কী। কারণ এটি এই দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখছি প্রস্তুতি যথেষ্ট এগিয়েছে। লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ—সবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। আর আমরা বাংলাদেশের সব অংশীজনের সঙ্গে যে বিষয়টি আলোচনায় রাখছি তা হলো—কীভাবে ঝুঁকি কমানো যায় এবং কীভাবে নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়। এটিই আমরা দেখতে চাই।'
এক প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, 'আমার মনে আছে—আমি বলেছিলাম, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এমন একটি প্রজন্ম যারা অতীতের ভোটে অংশ নেয়নি। কেউ অংশ নেয়নি কারণ তারা বিশ্বাস করত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, আবার কেউ আশঙ্কা করত ভোট দিতে গেলে সহিংসতার মুখোমুখি হতে হবে। ফলে আপনার দেশে এক পুরো প্রজন্ম—সম্ভবত তারও বেশি—কখনও ভোট দেয়নি। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ নির্বাচনের দিন বা গণভোটের দিন ভোটারদের জানতে হবে তারা কীভাবে কী করবে। তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই প্রস্তুত থাকতে হবে যাতে সময়মতো ভোট দিতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি জানতে পেরেছি নির্বাচন কমিশন এবার ভোটের সময় বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে, যা আমার কাছে খুবই যৌক্তিক মনে হয়েছে। কারণ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণে ভোটের দিন দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকতেই পারে।'
মিলার বলেন, 'সামগ্রিকভাবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট। নির্বাচন কমিশন দিনটিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সব জটিলতা আগেভাগে ভেবে দেখছে এবং ঝুঁকি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—তা গ্রহণ করছে। কাজটি এখনো চলছে। যদিও এখনো নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক সময়সূচি ঘোষণা হয়নি, আমরা সেই ঘোষণার অপেক্ষায় আছি। এরপর আমরা বহু বছর পর বাংলাদেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখব।'
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, গত সপ্তাহান্তে সিইসির সঙ্গে একটি 'মক এক্সারসাইজ' বা মহড়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল তার। কমিশন নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত কি না, তা নিশ্চিত করতেই ছিল এই আয়োজন।
প্রস্তুতির প্রশংসা করে মাইকেল মিলার বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের আগাম প্রস্তুতি এবং একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে তাদের ভাবনা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুতি, পেশাদারত্ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার সক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেয়।'
