ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতসহ ২২ ইস্যু নিয়ে সচিবদের সঙ্গে ইসির চূড়ান্ত বৈঠক চলছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, ঋণখেলাপী সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, আগাম পোস্টার-ব্যানার অপসারণসহসহ অন্তত ২২টি ইস্যু নিয়ে সচিবদের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক করছে নির্বাচন কমিশন ( ইসি)।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিনের সভাপতিত্বে রবিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ৩টায় এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শুরু হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক প্রথম সভা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হবে।
সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, নৌপরিবহন, পররাষ্ট্র, অর্থ, স্বাস্থ্য, আইন, স্থানীয় সরকার, বিদ্যুৎ, ডাক-টেলিযোগাযোগ, আইসিটি, সড়ক পরিবহন, কারা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিভি, বেতার, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশলসহ মোট ৩৪টি বিভাগের প্রতিনিধিদের ইসি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সভায় জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আলোচনায় মূল বিষয় থাকবে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ইসিকে কী পরিমাণ সহযোগিতা করবে।
তারা জানান, আলোচ্যসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কমিশন চায় তফসিল ঘোষণার আগে মাঠে যেন কোনো ধরনের নির্বাচনি পোস্টার বা ব্যানার না থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার আগে বিদ্যমান পোস্টার-ব্যানার ও অননুমোদিত প্রচার সামগ্রী অপসারণে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
তারা আরও জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে গত বৈঠকের সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা এ বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রসমূহের ভবন, যাতায়াতপথ, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশনসহ ভৌত অবকাঠামো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত: ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করে প্যানেল প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
পার্বত্য এলাকায় পরিবহন সহায়তা
পার্বত্য এলাকার কিছু ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি সামগ্রী পরিবহন ও কর্মকর্তা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে যাতায়াতে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় হেলিপ্যাড মেরামতের ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসন গ্রহণ করবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঋণখেলাপীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও সরবরাহের জন্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এজন্য নির্বাচন সময়সূচি ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিস্তারিত পত্র পাঠানো হবে।
জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়ে আলোচনা হবে, নির্বাচন পরিচালনা ও কমিশনের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্ট এবং বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিটি এলাকায় আচরণবিধি নিশ্চিত ও অপরাধ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।
পরীক্ষা সময়সূচি পর্যালোচনা
বিভিন্ন বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময় বিবেচনায় নিয়ে ভোটগ্রহণের তারিখসহ নির্বাচনের সময়সূচি প্রস্তাব করা হবে। ডিসেম্বর ২০২৫–ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সময়ের আবহাওয়া পূর্বাভাস সংগ্রহ করে ভোটের সময়সূচি নির্ধারণে ব্যবহার করা হবে।
ভোটের দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জরুরি চিকিৎসায় হাসপাতাল নির্ধারণ ও মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে।
অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ভোটকেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট অফিসে অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
আলোচ্যসূচিতে আরও রয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের অন্তর্ঘাত ও নাশকতা রোধে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে এবং ফিরে আসতে পারে এ জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ভোটার সচেতনতা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমে সহযোগিতা, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিংসহ সার্ভিস সহজীকরণ, এবং নির্বাচন বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে সিভিক এডুকেশন কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি।
আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
