২৮ অক্টোবর সমাবেশ: ঢাকা জুড়ে উৎকণ্ঠা!

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের মাধ্যমে ঢাকা দখলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। কিন্তু কোনমতেই রাজধানীর দখল ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ। একদিকে বিরোধী দলের সমাবেশের অনুমতি ও স্থান নিয়ে আলোচনা, অন্যদিকে পাল্টা সমাবেশে সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দেশের রাজনীতিতে।
বিএনপিকে প্রশাসন নির্ধারিত স্থানের বাইরে সমাবেশের অনুমতি দিবে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। কিন্তু ২৮ অক্টোবর যেকোন মূ্ল্যে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অন্যদিক জামায়াত নিবন্ধিত দল না হওয়ায় তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সম্ভাব্য হামলা প্রতিহতের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত
২৮ অক্টোবর পুলিশ-আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ-প্রতিহতের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। নয়াপল্টনে সমাবেশে বাধা দিলে বা মিছিলে হামলা করলে রাজধানীর ১৬ স্থান থেকে পাল্টা প্রতিরোধের সকল ধরনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
রাজধানীর গুলিস্তান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি ইত্যাদি এলাকাকে সম্ভাব্য হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর নজরদারি করতে একটি মনিটরিং কমিটি কাজ করছে বলে বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, পুলিশ-আওয়ামী লীগ হামলা করবে-এমন সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। তাই আগে থেকেই হামলার পাল্টা প্রতিরোধের জন্য ঢাকা মহানগরের নেতাদের দিয়ে ১৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের নেতৃত্বে রাজধানীর ১৬টি স্থান থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।
যদি নয়াপল্টনে সমাবেশে বাধা দেওয়া হয় তাহলে তারা স্ব স্ব স্পট থেকে প্রতিরোধ শুরু করবে। নয়াপন্টনে যদি বাধা নাও দেওয়া হয়, তারপরও ১৬ স্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকাল পর্যন্ত পাহারা দিয়ে সবার শেষে নয়াপল্টনে সমাবেশে যোগ দিবেন।
বিএনপির একাধিক নেতা দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে জানান, ২৮ অক্টোবর সমাবেশ সফল করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দফায় দফায় মিটিং করছেন প্রভাবশালী নেতাদের সাথে। যেকোন মূ্ল্যে ঢাকায় ১০ লাখ জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে-বিএনপি আগ বাড়িয়ে কোনো সংঘাতে যাবে না, তবে কোনো বাধা এলে তা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী ২৯ অক্টোবর বা ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ঘেরাও, বিক্ষোভ, অবস্থান, অবরোধ এমনকি হরতালও ক্রমান্বয়ে আসছে।
জামায়াত সূত্রে জানা যায়, যেকোন্য মূল্যে রাজধানীতে সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামি। মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশে পুলিশ-আওয়ামী লীগ বাধা দিলে আশাপাশের বিকল্প স্থানে সমাবেশ করতে একাট্টা তারা। ইতোমধ্যে ৮-১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একাধিক সিনিয়র নেতা দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে জানান, আওয়ামী লীগ প্রথমে হামলা না করলেও ২৮ অক্টোবর পুলিশ দিয়ে হামলা করতে পারে- তা মাথায় রেখে যাবতীয় প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতিহত করার জন্য ছাত্র শিবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দলটি চলমান আন্দোলনে গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র্রের কূটনৈতিক'গ্রিন সিগনাল'পেয়েছে। তাই বিগত কয়েক মাসের তুলনায় মাঠের কর্মসূচিতে আর জোর দিচ্ছে, যেকোন মূল্যে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে পরাজিত করতে চায় দলটি।
জামায়াতও হামলা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে আগাচ্ছে
গুলিস্তান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি ইত্যাদি এলাকা থেকে আওয়ামীলীগ হামলা চালাতে পারে-তথ্যের ভিত্তিতে এসব এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের 'ক্যাডার পলিটিক্স' করে এমন শতাধিক নেতাদের উপর নজরদারি জন্য একটি মনিটরিং সেল কাজ করছে-যাতে হামলা করার আগেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা
২৮ অক্টোর বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে হামলা হলে পাল্টা হামলা করা হবে।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "আমরা তাদের রেহাই দেব না, কেন তাদের রেহাই দেব? তারা কারা? তারা ক্ষমতায় এলে দেশকে গ্রাস করে ফেলবে," বুধবার এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, "তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। বিএনপির মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। তারা দেশদ্রোহী। এ দলটিকে বিশ্বাস করা যায় না। প্রয়োজনে সতর্ক থাকতে হবে।"
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি না করে রাজনৈতিক কর্মসূচী দেওয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের
ব্যবসায়ী নেতারাও ২৮ অক্টোবর নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা নিয়ে ব্যবসায়ীরাও চিন্তিত। দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল পরিবেশে ব্যবসা করে আসা উদ্যোক্তারা এখন শঙ্কায় সময় পার করছেন।
"আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো এমন কর্মসূচী দেবেন না, যাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কারখানার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ রাজনীতিবিদরা মানুষের উন্নয়নের রাজনীতি করেন," যোগ করেন তিনি।
বাস বন্ধ করবে না পরিবহন মলিকরা
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, "২৮ অক্টোবর ঘিরে বাস বন্ধ করার পরিবল্পনা নেই। সরকারেরও এরকম কোনো নির্দেশনা নেই। বিএনপির যে সম্মেলন, সেখানে বাধা দেয়ারও আমাদের ইচ্ছা নেই।"
বিগত দিনে ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচীর দিনে বাসি বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, "এটি মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত ছিল না, অতি উৎসাহী কিছু বাস মালিক এটি করেছে সেখানে আমাদের কোনো সমর্থন ছিল না।"