দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট দেবে সরকার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের সন্তান ও তাদের সন্তানদের পাসপোর্ট দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
বর্তমানে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এবং কানাডিয়ান নাগরিকদের জন্য এই সুবিধা চালু রয়েছে।
জানা গেছে, এখন বেলজিয়াম, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, পর্তুগাল, জাপানে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ধরনের নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও অভিবাসন) মো. সাইফুল ইসলাম।
সিদ্ধান্তটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে। মন্ত্রী সম্মতি দিলে এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটি চালু হলে যেসব বাংলাদেশি নারী-পুরুষ বিদেশে বসবাসকালীন সময়ে সন্তানের বাবা বা মা হয়েছেন, ওইসব সন্তান এবং তাদের সন্তানরাও স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস বা হাই কমিশনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের নাগরিকরা পাসপোর্ট পেতে আবেদন করছেন। ওইসব দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে এ ধরনের ব্যক্তিদের পাসপোর্ট দেওয়া যাবে কিনা, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। সভায় সকল পক্ষ বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
বর্তমান নিয়ম
পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশি নাগরিক যেখানেই বসবাস করুক, তিনি পাসপোর্ট পাবেন।
আর বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে যিনি বাংলাদেশি নাগরিক, তার পরবর্তী দুই প্রজন্ম যেখানেই জন্মগ্রহণ বা বসবাস করুক তিনি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
এই বিবেচনায় কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বসবাসকারি দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। কারণ এই দেশ দুটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক। ওই পরিপত্রের ভিত্তিতে এই দুটি দেশে বসবাসকারী দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে থাকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রজন্মসহ) বসবাস করছেন।
বাংলাদেশি পাসপোর্টের সুবিধা
বাংলাদেশি পাসপোর্ট চাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাবা-মায়ের বাংলাদেশে থাকা সম্পদের মালিকানা ও দখল।
অনেকের বাবা অথবা মা বিদেশেই মারা গেছেন। কিন্তু তাদের বাংলাদেশে সম্পদ রয়েছে। তবে মৃত ব্যক্তিদের সন্তানরা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারায়, ওইসব সম্পদের মালিকানা বা দখল পাচ্ছেন না।
এছাড়া, অনেকে দেশকে ভালোবেসে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট নিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। যাতে তারা ভবিষ্যতে দেশের সাথে সহজে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন।