২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী, আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাকা

সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণার পর আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনে যুবলীগও একই দিন পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
এ ঘোষণা ও পাল্টা ঘোষণায় উতপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী। সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কায় জনজীবনেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ১ দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে বিএনপি। এখন থেকে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে লাগাতার ঢাকা কেন্দ্রীক কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
২৭ তারিখ মহাসমাবেশে সারাদেশে থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ ঠেকাতে সরকার সারাদেশে পথে পথে বাস-লঞ্চ বন্ধ করে দিতে পারে- এ আশঙ্কা থাকায় দূরবর্তী জেলার নেতাকর্মীদের ২৭ তারিখের দুই-তিন দিন আগেই ঢাকায় আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্র জানায়।
বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া পন্থি), এলডিপি, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোটসহ যুগপৎ আন্দোলনের ৩৭টি দলও একই তারিখে ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে ২৪ জুলাই যুবলীগের ঢাকা বিভাগীয় 'তারুণ্যের জয়যাত্রা' সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সোমবারের যুবলীগ এক প্রেস বিজ্ঞাপ্তিতে ২৪ জুলাই পরিবর্তে এই সমাবেশ আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে আওয়ামী যুবলীগের দেশব্যাপী 'তারুণ্যের জয়যাত্রা' সমাবেশের ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সোমবারের পরিবর্তে আগামী বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ-পশ্চিম গেটে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ২৭ তারিখকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে বলে আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল টিবিএসকে বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই আমাদের এই তারুণ্যের জয়যাত্রা। সরকারের সাফল্য জনগণকে জানানোই আমাদের লক্ষ্য।"
উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিকদের বক্তব্য
সরকার বিএনপির সমাবেশের দিন ইন্টারনেট শাটডাউনসহ ডিজিটাল নিপীড়ন করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "আপনাদের সকলের তথা দেশ-বিদেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতায় বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন আজ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালার পর্বে অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে।"
"এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গুম-খুন, জেল-জুলুম, নির্যাতন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দমন করার অপচেষ্টা করেছে," বলেন তিনি।
শনিবার তারুণ্য সমাবেশের বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, "আর কোনো প্রতিবাদ নয়, এখন থেকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।"
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, "জেল-জুলুম এখন আমরা আর ভয় পাই না। জনগণ শপথ নিয়েছে এই জালিম শাহী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না।"
এদিকে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "তারা জনগণের দুর্ভোগ চিন্তা না করেই প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে, আন্দোলন করে যাচ্ছে।"
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "কর্মসূচিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। রাস্তাঘাট বন্ধ ও যান চলাচল বিঘ্নিত করা যাবে না।"