২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে ২.৫ গুণ: র্যাপিড

ব্রেক্সিটের পর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য জিএসপি'র (জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্সেস) আদলে ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) নামে একটি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, যার ফলে সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির শর্ত আরো সহজ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আড়াই গুণ বাড়তে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক স্টাডিতে এমন সম্ভাবনার তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে 'এক্সপ্যান্ডিং অ্যান্ড ডাইভারসিফাইং এক্সপোর্ট টু দ্য ইউকে আন্ডার দ্য ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং সিস্টেম' শীর্ষক এক স্টেকহোল্ডার কনসালটেশনে এ স্টাডি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এই অনুমানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, গত এক দশকে ইউকে-তে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮%।
"যেহেতু ডিসিটিএস-এর কিছু শর্ত সহজ করা হয়েছে এবং চীনের মার্কেট শেয়ার সেখানে কমছে, ফলে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাদে অন্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের মার্কেট প্রেফারেন্সের আওতায় শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে, সেজন্য ইউকে-তে কনসেন্ট্রেশন আরো বাড়বে। যার কারণে '২৬ সালের পর থেকে সেখানে ১৫ শতাংশ হারে গ্রোথ প্রজেকশন করা হয়েছে।"
"সবমিলিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ সেখানে ১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে অ্যাপারেল এক্সপোর্ট", বলেন তিনি।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের বাজারে ৪.৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে।
দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে চীন শীর্ষ অবস্থানে থাকলেও বিগত বছরগুলোতে তাদের পোশাক রপ্তানির শেয়ার কমছে।
র্যাপিডের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বাজারে চীনের হারানো শেয়ারের বেশিরভাগই পেয়েছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২১-এই ১১ বছরে যুক্তরাজ্যের পোশাকের বাজারে চীনের শেয়ার ৩৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২১ শতাংশে। আর একই সময়ে সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়ে ১৪ শতাংশের উপরে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বাজারে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ভ্যালু অ্যাডিশন ৩০ শতাংশ করার শর্ত মানতে হয়।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএস-এ ভ্যালু অ্যাডিশনের শর্ত ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক ৩২টি কনভেনশন মানার শর্তও দেওয়া হয়নি। যদিও কোনো প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে, বিষয়টি তারা দেখতে পারেন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত ডিসিটিএস পাশ হতে পারে।
সেমিনারে খাত সংশ্লিষ্টরা রপ্তানি পণ্যের ডাইভারসিফিকেশনের উপর গুরুত্ব দেন। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বাজারে পেমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিটকে উপেক্ষা করার প্রবণতা, কিছু পণ্যের টেস্টিংয়ে সমস্যা, সাপ্লাই চেইনে যুক্ত না থাকা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে সরকারের নীতি সহায়তার ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেন উদ্যোক্তারা।
পেমেন্ট সংক্রান্ত ইস্যুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ ফয়জুল ইসলাম এবং ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ড. ডানকান ওভারফিল্ড প্রমুখ।