অপরিহার্য নয়, এমন অঙ্গ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারি খাতে ব্যয় কমাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অপরিহার্য নয়, এমন অঙ্গগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পের অপরিহার্য নয় এমন অঙ্গের জন্য বরাদ্দও কাটছাঁট করা হবে।
গত ৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি' বিষয়ক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অপরিহার্য নয়, এমন অঙ্গ চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় উল্লেখ করা হয়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিকাংশ প্রকল্পের আওতায় রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়। এটা সড়ক প্রকল্পের জন্য অপরিহার্য নয়। চলমান ও আগামীতে যেসব প্রকল্প আসবে সেগুলো থেকে এই অঙ্গ বাদ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে। এতে সরকারের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়। এর আগে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিদেশ ভ্রমণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সভায় সম্মানি, গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এবার উন্নয়ন প্রকল্পে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ও অগুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ করতে নতুন করে অপরিহার্য নয়, এমন অঙ্গ চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়ন প্রকল্পে বেশ কিছু অগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে আবার কিছু অঙ্গে অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকে। যেমন পরামর্শক ব্যয়। অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক প্রয়োজন না থাকলেও এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়।
দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা' শীর্ষক একটি প্রকল্পে ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় পরামশর্ক খাতে। এই ব্যয়কে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব থেকে এটিকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় অঙ্গের উদাহরণ দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেল পরিশোধনে সক্ষমতা বাড়ানোর একটি প্রকল্পে স্কুলকে কলেজে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্কুলকে কলেজে রূপান্তরে লোকবলসহ আরো প্রয়োজনীয় বিষয় জড়িত থাকায় পরিকল্পনা কমিশন বিপিসির প্রস্তাবিত ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্প থেকে অঙ্গটি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেক প্রকল্পে এ ধরণের কিছু অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ থাকে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি জানলেও বেশিরভাগ সময় উন্নয়ন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অঙ্গ থেকে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, সমাজসেবা অধিদপ্তর, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রকল্পে মধ্যবর্তী মূল্যায়নে ১৩ থেকে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
এই টাকা কর্মকর্তারা সম্মানী হিসেবে নেন। এটা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হিসেবে উল্লেখ করে পরিকল্পনার যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এ ধরণের ব্যয় বাদ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।
প্রচার ও বিজ্ঞাপন, বইপত্র-সাময়িকী, আপ্যায়ন ভাতা, সেমিনার, আসবাবপত্রের প্রয়োজন না থাকলেও অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে এসব খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া অনেক প্রকল্পে গাড়ি কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হলেও আবার গাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশন।
এর আগে সরকারি খাতে ব্যয়ের লাগাম টানতে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বিদেশ ভ্রমণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটিতে অংশগ্রহণকারীদের সম্মানিও বাদ দেওয়া হয়।
বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অর্থবিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসেও বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেজ্ঞা দেয় সরকার।
উন্নয়ন প্রকল্পের সভা থেকে সম্মানী বন্ধ করতে সরকার পরিপত্র জারি করে ২০২২ সালের জুলাই মাসে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশকিছু প্রকল্পের শতভাগ এবং কিছু প্রকল্পের আংশিক অর্থছাড়ও বন্ধ রেখেছে সরকার।