৮ জানুয়ারির আগে কারামুক্তি পাচ্ছেন না মির্জা ফখরুল-আব্বাস

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে সরকারের আপিল আগামী ৮ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত।
একইসাথে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এই দুইজনকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিননামা দাখিল না করতে নির্দেশ দেন আদালত।
গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির এই দুই নেতাকে হাইকোর্ট ছয় মাসের জামিন দেয়। সেই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকার পক্ষে আবেদন করলে বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার জজ জাহাঙ্গীর হোসেন এই আদেশ দেন।
এই আদেশের ফলে, ফখরুল ও আব্বাস আপাতত কারামুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। আগামী ৮ জানুয়ারি জানা যাবে, এই দুই নেতা কারামুক্তি পাবেন কি না।
বুধবার জামিন স্থগিত চেয়ে আদেশের ওপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, "গত ২১ ডিসেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদনটি ২৬ জানুয়ারি শুনানির জন্য রেখেছেন। কিন্তু সেদিনই তাদের জামিনের অন্তর্বর্তী আদেশ চেয়ে আরেকটি আবেদন করা হলে ওই আবেদনটি খারিজ করেন দায়রা জজ। মূল জামিন আবেদন বিচারাধীন রেখে ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। আর সে আবেদন বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারেন কিনা সে প্রশ্ন রেখে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মনে করছে হাইকোর্টের আদেশটি অন্যায্য। তাই জামিনের আদেশটি স্থগিত করার আরজি জানাচ্ছি।"
অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তি উপস্থাপনের পর আদালত আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জামিন স্থগিত করে আদেশ দেন।
এ সময় ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আরজি জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি রবিবার শুনানির জন্য রাখলেও যেন জামিন স্থগিত করা না হয়।
এ আরজির প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন বিচারাধীন রেখে স্থগিতাদেশ না দিলে আসামিরা বের হয়ে যাবে। এটি তো হতে পারে না।'
তখন বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, 'আমরা মুচলেকা দিতে চাই সংশ্লিষ্ট আদালতে তাদের (ফখরুল-আব্বাসের) জামিননামা দাখিল করা হবে না। তারপরও যেন হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করা না হয়। তখন চেম্বার আদালত আসামীদের জামিননামা দাখিল না করার নির্দেশ দিয়ে আদেশ দেন।'
গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের জামিন পাওয়ার আগে ঢাকার বিচারিক আদালতে এই মামলায় ফখরুল ও আব্বাস চারবার জামিন আবেদন খারিজ হয়।
এই মামলায় বিচারিক আদালতে সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ও সেশন জজ আদালতে জামিন আবেদন করলে সেটি খারিজ হয়। তার আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তিনবার জামিন নামঞ্জুর হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ও সেশন জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গত সোমবার হাইকোর্টে আপিল করে বিএনপির এই দুই নেতার আইনজীবীরা।
গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট সেই আপিল শুনানি শেষে ছয় মাসের জামিন দেন। একইসাথে তাদেরকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল ইস্যু করেন হাইকোর্ট।
বিএনপির এই দুই নেতার জামিন না হওয়ার পেছনে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে বিএনপির আইনজীবীরা।
তবে বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আদালতের কাজে আইন মন্ত্রণালয় তো নয়ই, সরকারের অন্য কোনও মন্ত্রণালয়ও হস্তক্ষেপ করছে না। আদালত যদি মনে করে থাকে, যে জামিন দেওয়া যাবে, আদালত জামিন দিয়েছে। যদি মনে করে থাকে যে, জামিন দেওয়া যাবে না, তখন দেয়নি।'
নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনার পর গত ৮ ডিসেম্বর পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করা হয়। সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের ১ দিন আগে গত ৯ ডিসেম্বর ভোররাত ৩টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও দলের স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাসকে বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।