বিএনপির সমাবেশের আগে ছাত্রলীগের শোডাউন, সিলেটে উত্তেজনা

সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশের একদিন আগে নগরে শোডাউন দিয়েছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশে চৌহাট্টা এলাকায় মিছিল করে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ।
এর আগে খন্ণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চৌহাট্টা এলাকায় সমবেত হন। আলীয়া মাদ্রাসার পাশ দিয়েও কয়েকটি মিছিল যায়। এ সময় মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সংঘাতের আশঙ্কায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এ সময় দলের কর্মীদের মাঠের ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার ৪টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলযোগে স্লোগান দিতে দিতে চৌহাট্টা থেকে ছাত্রলীগের মিছিল জিন্দাবাজার ঘুরে আবার চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে চৌহাট্টা এলাকায় অবস্থান নেন তারা। কাছাকাছি দুইপক্ষের অবস্থানের কারণে চৌহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে পুলিশের শক্ত অবস্থানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিছু সময় চৌহাট্টা পয়েন্টে অবস্থানের পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জিন্দাবাজারের দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেয় পুলিশ। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জিন্দাবাজার হয়ে বন্দরবাজারের দিকে চলে যান।
মিছিলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কাওসার জাহগান সৌরভ ও সারধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে শনিবার বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। বিএনপির সমাবেশের আগে শেডাউন সম্পর্কে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, 'বিএনপির অপপ্রচার, মিথ্যাচারসহ দেশব্যাপী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বিএনপি সমাবেশের নামে নগরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আমরা রাজপথে নেমে জনগণকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি।'
ছাত্রলীগের এই শোডাউন প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, 'তারা মামলা দিয়ে, হামলা করে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। তাতে কাজ না হওয়ায় আজ সমাবেশস্থলের পাশ দিয়ে শোডাউন করে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। কিন্তু জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। তাদের আর ভয় দেখানো যাবে না। এই সরকারের পতন হওয়ার আগপর্যন্ত জনগণ ঘরে ফিরবে না। শনিবার সিলেটে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।'
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, 'সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ছাত্রলীগের মিছিল আমরা রিকাবীবাজার বা মাদ্রাসা মাঠের দিকে যেতে দেইনি। রিকাবীবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।
দেশে 'অলিখিত বাকশাল'
ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. মঈন খান।
তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে যেখানে গণতন্ত্র নাই। তারা একদলীয় শাসন কায়েম করছে। অতীতে তারা বাকশাল কায়েম করেছিল। এবার অলিখিত ভাষায় একদলীয় হয়ে কাজ করতে হবে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন দেশের মানুষ পরাধীন রয়েছে। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের মানুষ অংশ নিয়েছেন। মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছে।'
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থল পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেটকে লাকি সেভেন উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে ৬টি সমাবেশ করেছি। এতে দেশের মানুষ অংশ নিয়েছেন। কিন্তু শাহজালালের মাটিতে আমরা আগে সমাবেশ না করে ৭ম সমাবেশ করেছি। কারণ এই মাটি পবিত্র। ইনশাল্লাহ এই পবিত্র মাটিতে সমাবেশ সফল হবে।'
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আমাদের পক্ষে গণজোয়ার দেখে ভীত হয়ে সরকার পুলিশ দিয়ে আমাদের উপর হামলা করাচ্ছে। নিজেরাও হামলা করছে। মামলা করছে। আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকিও দিচ্ছে। কিন্তু এসব করে আর জনগণকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না।'
এ সময় বিএনপির সহসভাপতি ডা. জাহিদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সিসিকের গাড়ি, সমালোচনায় মেয়র
বিএনপির সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশের (সিসিক) গাড়ি ও লোকবল।
দলীয় সমাবেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ও লোকবল ব্যবহার করায় সমালোচনায় পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনকে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। তবে মেয়র বলছেন, বিএনপি ভাড়া নিয়ে নিয়ে সিসিকের পরিবহন ব্যবহার করছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সিসিকের বিশুদ্ধ পানিবাহী গাড়ি দিয়ে মাদ্রাসা মাঠে পানি ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া রুলার ব্যবহার করে মাঠ সমতল করা হচ্ছে। মাঠের উঁচু-নিচু জায়গাগুলো বালু দিয়ে ভরাট করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে সিসিকের গাড়ি।
এর আগে বুধবারও সমাবেশের মাঠ প্রস্তুতে সিসিকের পরিবহন ও লোকবল ব্যবহার করতে দেখা যায়।
মাঠে পানি ছিটানোর কাজে ব্যবহৃত পানিবাহী ট্রাকের চালক ফরহাদ উদ্দিন বলেন, 'মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। মেয়র মহোদয়ের পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য এগুলো উপহার দেয়া হয়েছে।'

এ প্রসঙ্গে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, 'সিসিকের রোলার ব্যবহারের জন্য সিলেট মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। তারা নির্ধারিত ফি দিয়ে সিসিকের কর্মী ও গাড়ি ব্যবহার করছেন।'
মেয়র বলেন, 'শুধু বিএনপি নয়, সিলেটে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনও নিজেদের সভা-সমাবেশের জন্য সিসিকের কাছ থেকে মাঠ প্রস্তুতের জন্য গাড়ি ভাড়া নেয়।'
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে মেয়রের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনকে দলীয়করণের অভিযোগ এনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, 'সিটি করপোরেশন সরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি সব নাগরিকের। কিন্তু মেয়র আরিফ একে বিএনপির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।'
জাকির বলেন, সিটি করপোরশেনর পরিবহন যন্ত্রপাতি সব জনগণের টাকায় কেনা। এখানকার লোকবলের বেতনও জনগণের টাকায় হয়। এসব একটি দলের সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা জনগণের টাকার অপব্যহার। মেয়র এটা করতে পারেন না।