বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে আবারো পরিবহন ধর্মঘট- বন্ধ বাস, লঞ্চসহ গণপরিবহন

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) থেকে পরিবহন মালিকদের ডাকা ধর্মঘটে– বরিশালের সাথে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বিএনপি নেতারা বার বার অভিযোগ করে আসছেন যে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা যাতে সমাবেশে যোগ দিতে না পারে সেজন্য তাদের এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
বরিশাল নগরীর প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস সমিতি বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকাল থেকে ধর্মঘট ডেকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বরিশাল ও অন্যান্য জেলার মধ্যকার লোকাল লঞ্চ সার্ভিসেও একইদিনে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি বরিশাল অফিস ও ভাড়া করা প্রাইভেট কারমালিক সমিতি।
বরিশাল বাস মালিক সমিতির সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেছেন, 'মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি বন্ধ করার জন্য আমরা ধর্মঘট আহ্বান করেছি, কারণ এসব গাড়ি দুর্ঘটনা বেশি ঘটায়'।
অন্যদিকে, বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট ডাকায়– সড়কে গাড়ি বের করলে প্রশাসন ও বাস শ্রমিকদের হাতে বেআইনিভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে বলে তিন চাকার যানবাহনের মালিকরা দুই দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এদিকে বরিশাল রেন্টেড কার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুজ্জামান বলেছেন, 'আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য আমরা আগামী দুই দিন প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোবাস চালাব না'।
ধর্মঘটের কারণ জানতে লঞ্চ মালিক সমিতির সাথে টিবিএসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা এতে কোনো সাড়া দেননি।
বরিশাল লঞ্চঘাটের স্থানীয় একজন লঞ্চ-শ্রমিক বলেন, 'গতকাল ভোলায় থাকা এমভি আওলাদের লঞ্চে হামলার জন্য স্থানীয় লঞ্চ সার্ভিসগুলিতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে'।
বরিশালের স্পিডবোট ঘাটে কোনো প্রকার আগাম নোটিশ না দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা থেকে নদীতে নৌকা বাইচ বন্ধ করে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

ঘাটটি প্রধানত ভোলা ও বরিশালের পাশাপাশি অন্যান্য প্রত্যন্ত উপজেলার মধ্যে সহজ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়।
এটি ভোলা ও বরিশালের মধ্যে দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘাটের তথ্যে জানা গেছে, প্রায় শতাধিক নৌকায় করে বরিশাল ও ভোলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য হাজারো মানুষ এই ঘাট ও এর সংলগ্ন সড়ক ব্যবহার করে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানান ঘাটের লাইন ইনচার্জ তারেক শাহ। তবে ধর্মঘটের কারণ জানাতে পারেননি তিনিও।
আকস্মিক এই ধর্মঘটের কারণে আজ থেকে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে জানান এ সড়কের নিয়মিত যাত্রী শফিকুল ইসলাম।
কয়েকজন স্পিডবোট চালক বলেছেন, বিএনপির সমাবেশে যাতে মানুষ যোগ দিতে না পারে– সেজন্যি এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে অনেক নেতাকর্মী দুই দিন ধরে বরিশালে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের কয়েকজনকে সভাস্থলে দেখা গেছে।
ঝালকাঠি বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর জানান, "বৃহস্পতিবার রাত থেকে ট্রলার ও বিভিন্ন ইঞ্জিনের নৌকায় করে আমাদের নেতাকর্মীরা আসবে। একদল নেতা পায়ে হেঁটেও আসবেন। আমাদের অনেক নেতা বরিশালে অবস্থান করছেন এবং তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের দশ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা আছে।"
বরিশাল নগর শাখার সাবেক ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান খোকন বলেছেন, 'কোনো বাধাই মানুষের সভায় যোগদান ঠেকাতে পারবে না। আমাদের সমাবেশ জনস্রোতে প্লাবিত হবে। ধর্মঘট আমাদের থামাতে পারবে না। সভাস্থলের ভেতরে ও বাইরে নেতাকর্মী ও জনগণকে নিরাপদ রাখতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি'।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল হক বলেছেন, 'বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে আমরা শহরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিটি পালিত হবে। একইসঙ্গে আমরা মহাসড়কের ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখব; যাতে কেউ সেখানে কোনো বেআইনি কাজ করতে না পারে'।