মব করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: আদালতে ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালাল

মব সৃষ্টি করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে আদালত চত্বরে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বতন্ত্র ভিপি (সহ-সভাপতি) প্রার্থী জালাল আহমদ ওরফে জ্বালাময়ী জালাল।
বুধবার (২৭ আগস্ট) বেলা তিনটার দিকে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে জালালকে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
বেলা ৩ টা ২৪ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাকে বিএমএম আদালতের পাঁচ তলায় সিঁড়ি বইয়ে ওঠানো হয়। ওঠানোর সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের জালান বলেন, "আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে একজন বৈধ শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের সাবেক গুন্ডাদ্বারা, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, শিবিরের সন্ত্রাসীরা আমাকে মব সৃষ্টি করে ফাঁসিয়েছে। আমি একজন ডাকসুর ভিপি পদ প্রার্থী। বর্তমানে রানিং ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ শিক্ষার্থীদের বের করার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। তারা আমাকে হত্যা চেষ্টা করেছে। আমার শরীরে অনেক আঘাত করেছে। আমাকে কোনও চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি। এমনটা হবে কখনোই আশা করেনি।" এরপর তাকে এজলাসে ওঠানো হয়।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমানের আদালতে মামলাটির শুনানির জন্য ডাকা হয়। তবে মামলায় দুইজন আইনজীবীর ওকালতনামা থাকায় বিচারক শুনানি করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রফিক উল ইসলাম আদালতকে বলেন, আমাদের একটু সময় দেন স্যার। অপর আইনজীবীর সাথে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসা করছি। বিচারক পরে আবারও মামলাটি ডাকার জন্য রাখেন। মিনিট দশকে পরে ওকালতনামা জমা দেওয়া আরেক আইনজীবী মো. জায়েদুর রহমান (জাহিদ) আদালতে আসেন। এরপর দুই আইনজীবী মিলে একত্রে শুনানি করবেন বলে আদালত জানান।
এরপর আবারও মামলার শুনানির করার জন্য ডাকা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মো. আসাদুল ইসলাম মামলার তদন্ত স্বার্থে আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদ্বয় আসামির জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, "মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়েছে ছুরি দিয়ে আঘাতের কথা। ঘটনার সময় ছুরির কোনো ব্যবহার হয়নি। ছুরির আঘাতের কোনো মেডিকেল কাগজপত্র এখানো জমা দেয়নি। কোনও মেডিক্যাল রিপোর্টও নেই। তাই যেকোন শর্তে আসামির জামিন চাচ্ছি।"
এসময় আসামি জালাল কথা বলার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চান। আদালতের অনুমতি দিলে তিনি বলেন, "তিন বার জেলে গিয়েছি, পাঁচটি মামলা খেয়েছি। জেল-জুলুম, মামলা-হামলার মধ্যে দিয়ে আমার জীবন গেছে। ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে আজকে এই জায়গায় আসব কল্পনা করি নাই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আইন-বিষয়ে সমন্বয়ক ছিলাম, এখনও আছি। আমার রুমে যে ছিল তার পড়ালেখা শেষ হয়ে গেছে। হল থেকে চলে যাওয়ার কথা, যাচ্ছে না। আমি এজন্য একটা উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সকল অবৈধদের হল হল থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমি একটি পাবলিক ইন্টারেস্টে কাজ করছিলাম। আমি যদি উচ্চ আদালতে রিট করি তাহলে তাকে চলে যেতে হবে—এজন্য আমাকে হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করে।"
রুমমেটকে উদ্দেশ্য করে জালাল বলেন, "আমি নাকি তাকে (রবিউল) ছুরি দিয়ে আঘাত করেছি। তাকে (রবিউল) মেডিকেলে পরীক্ষা করানো হোক। তাকে ছুরি আঘাত করেছি, নাকি আমাকে মারতে গিয়ে সে আঘাত পেয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষা করলে সব বেরিয়ে হয়ে আসবে। সে আমাকে মারতে গিয়ে আঘাত পায়। যেকোনো শর্তে আমার জামিন দেন।"
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন আসামির জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন।
এসময় বিচারক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসুর) নির্বাচনকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট। এমন জায়গায় এগুলো কেন। শুনানি শেষে বিচারক জালালের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিটের দিকে তাকে আবারও সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। এসময়ও তিনি একই কথা বলতে থাকেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে জালাল কক্ষে প্রবেশ করে উচ্চ শব্দে চেয়ার টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন এবং লাইট জ্বালিয়ে রবিউলের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটান। রবিউল সকালে লাইব্রেরিতে যাওয়ার কথা বলে জালালকে আস্তে শব্দ করতে অনুরোধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে জালাল রবিউলকে প্রথমে কাঠের চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন। রবিউল হাত দিয়ে তা প্রতিহত করলেও কপালে জখম হয়। এরপর জালাল কক্ষের একটি পুরোনো টিউবলাইট দিয়ে পুনরায় রবিউলের মাথায় আঘাত করতে গেলে—তা বুকের বাম পাশে লেগে ভেঙে যায়। পরবর্তীতে সেই ভাঙা টিউবলাইট দিয়ে জালাল আবারও আঘাত করতে গেলে রবিউল বাম হাত দিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন এবং জখম হন। পরবর্তীতে অন্য শিক্ষার্থীরা আহত রবিউলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
তবে রুমমেটকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে জালালকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল রাতেই জালালকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছুরিকাঘাতের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলাটি দায়ের করা হয়।