‘গরু চুরির’ অভিযোগে কারান্তরীণ মা-মেয়ের জামিন: আদালতের স্বপ্রণোদিত মামলা

'গরু চুরির' অভিযোগে কারান্তরীণ মা-মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজীব কুমার দেব তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আগামী ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত জামিন বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করেন আদালত।
এসব তথ্য জানিয়েছেন চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, পটিয়ার শান্তিরহাট কুসুমপুরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন আক্তার (৫৫), তার দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার সেলী (২৫) ও রোজিনা আক্তার (২০)। তবে অপর দুই আসামির জামিন হয়নি।
অপরদিকে, 'গরু চুরির' অভিযোগে মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারক রাজিব কুমার দেব।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সনেট, চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম ও চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান। এ সময় তারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শোনেন।
একই ঘটনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে প্রধান করা হয়েছে।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, 'চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে হারাবাংয়ের ভাইরাল হওয়া ঘটনায় জনস্বার্থে একটি মামলা নিয়েছেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের ওই নির্দেশনাপত্র হাতে পেয়েছি।'
কক্সবাজারের চকরিয়ায় 'গরু চুরির অপরাধে' বয়স্ক মা ও তরুণী দুই মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয় শুক্রবার দুপুরে। 'গরু চোর' আখ্যা দিয়ে মা-মেয়েকে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়ে তিনজনকে প্রকাশ্য সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে।
সেখানে চেয়ারম্যান নিজেও তাদের আবার প্রহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশকে খবর দিয়ে বিপদাপন্ন মা-মেয়ে ও ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাদের চকরিয়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের সীমান্ত চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ঘটা এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি প্রকাশের পর শনিবার রাতে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে সবখানে।
শুক্রবার রাতেই হারবাং বিন্দাবনখীল লালব্রীজ মাহবুবুল হক নামের একজন বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি গরু চুরির মামলা দায়ের করেন (নম্বর-২১, তাং-২১ আগস্ট ২০২০)। এ মামলায় শনিবার বিকেলে তাদের কারাগারে নেওয়া হয়।
সোমবার আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে মামলা নেন এবং মা-মেয়ে তিনজনকে জামিন দেওয়া হয়।