অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সিসিইউ

অর্থ সংকট ও অনিশ্চয়তায় শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিশেষায়িত বিভাগ সিসিইউ।
টানা ৯ মাস ধরে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১৩০ জন কর্মী বিনা বেতনে সেবা দিয়ে বিভাগটি চালু রাখলেও শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার (৮ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে সিসিইউ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বিষয়টি গত ৫ মে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন। হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একই কারণে যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে আইসিইউ বিভাগটিও।
২০১৯ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয় জনগণের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও জেলার হাসপাতাল ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহায়তা কার্যক্রম চালু করে। এর আওতায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চালু হয় আইসিইউ, সিসিইউ, জরুরি প্রসূতি এবং শিশু সুরক্ষা সেবা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের 'স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প' (এইচজিএসপি)-এর আওতায় এনজিওগুলোর মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি জনবল ছাড়াও সদর হাসপাতালে ১৯৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিযুক্ত হন।
তবে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়ে যায়। এরপর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও সরকারি হস্তক্ষেপে মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
ডা. মং টিং ঞো জানান, "প্রকল্পের পর আইএসও নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নতুন প্রকল্প অনুমোদনের আশ্বাস পাওয়া যায়। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইসিইউ, সিসিইউসহ বিশেষায়িত বিভাগ চালু রাখা হয়। এতে ৩০ জন চিকিৎসক ও ১০০ জন কর্মী বিনা বেতনে সেবা দিয়ে আসছিলেন।"
তবে হাসপাতালের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "বিশেষায়িত বিভাগগুলো এনজিও নির্ভর। এগুলো সরকারি ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের অধিভুক্ত নয়। গত জুনে প্রকল্প শেষ হয়, পরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলেও এরপর আর কোনো অর্থায়ন আসেনি।"
তিনি আরও বলেন, "নতুন প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। অনেকেই এরমধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। সিসিইউ ডাক্তার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে, আইসিইউ এখনো চালু আছে, তবে সেটিও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।"
চিকিৎসকরা জানান, কক্সবাজারের প্রায় ২৫ লাখ মানুষের পাশাপাশি ২০১৭ সালে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা ও প্রতিবছর আগত কয়েক লাখ পর্যটকের জন্য ২৫০ শয্যার এই সদর হাসপাতালই আধুনিক চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। অথচ ৩২৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৭৬টিই শূন্য।
জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী আসেন, যেখানে মাত্র তিনজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। যদিও সেখানে কমপক্ষে ১২ জন চিকিৎসক দরকার। হাসপাতালের ইন্ডোরে প্রতিদিন গড়ে ৮০০–৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন, যা শয্যাসংখ্যার প্রায় তিনগুণ।