সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হতে যাচ্ছে?

দেশে কোভিড পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ নভেম্বর থেকে কোভিড শনাক্তের হার টানা বেড়েছে। সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২১২ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এসময়ে মারা গেছেন ৩৯ জন, যা গত ৫৭ দিনের মধ্যে দৈনিক সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর একদিনে ৪০ জন মারা গিয়েছিলেন।
আগের দিন সোমবার ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ১৩৯ জন, যা ছিল ৭০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
সোমবারের আগে সবেচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলো গত ৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ২ হাজার ২০২ জন রোগী শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর দীর্ঘদিন শনাক্তের সংখ্যা ২ হাজারের নিচে ছিল।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির টানা হার আরো এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে বলা যাবে, দেশে সংক্রমণের 'সেকেন্ড ওয়েভ' শুরু হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণ, ঢাকার বাইরে থেকে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় রোগীরা রাজধানীতে আসছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মারা যাচ্ছেন। জেলা শহরে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা না থাকায় রোগীদের ঢাকায় আনতে হচ্ছে।
দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ২৫৬ দিনে মোট ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৫ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬ হাজার ২৭৫ গেছেন। আট মাস পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পরপর দুই সপ্তাহ রোগী শণাক্তের হার ৫ শতাংশ এর নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু দেশে গত মার্চের শেষে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হওয়ার পর থেকে সংক্রমণের হার কখনো ৫ শতাংশের নিচে নামেনি।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সংক্রমণের হার ১০ থেকে ১১ শতাংশে উঠানামা করেছে। নভেম্বরের শুরু থেকে সংক্রমণের হার উঠানামার মধ্যে ছিল। ৭ নভেম্বর থেকে এই হার টানা বাড়ছে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, কোভিড সংক্রমণে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। প্রথম স্থানে আছে ভারত, দ্বিতীয় ইরান, তৃতীয় ইরাক, চতুর্থ ইন্দোনেশিয়া।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুধু মাস্ক পরার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সেটাও কার্যকর করা যাচ্ছে না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা গেলে মৃত্যু কমানো যেত।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণ কনসালটেন্ট ডা. এম মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক একটি অংশ মাত্র। আক্রান্তদের আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শুধু বিমানবন্দর দিয়ে দেশে আসা যাত্রীদের আইসোলেশনে জোর দেয়া হচ্ছে। দেশের ভিতরে রোগী না থাকলে বিদেশ ফেরতদের আইসোলেশন থেকে সুফল পাওয়া যেত।
সংক্রমণের শুরুতে ঢাকার বাইরে কোভিডের হটস্পট ছিল নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জেও রোগী বাড়তে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত কয়েকমাস সংক্রমণ কিছুটা কম ছিলো। এখন আবার রোগী বাড়ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরার ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। নো মাস্ক নো সার্ভিস বাস্তবায়ন করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মোবাইল কোর্টের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশ সিস্টেম বিভাগের পরিচালক হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্তদের আইসোলেটেড করছি। কিন্তু সোস্যাল ডিসেটেন্সিং নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। মানুষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তো আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা না।"