লকডাউনে কৃষিপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে সড়ক, নৌপথের পাশাপাশি রেলপথকেও গুরুত্ব

- সড়ক, নৌ ও রেলপথে কৃষিপণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের চিঠি
- বিকল্প ব্যবস্থায় রেলপথ ও বিটিআরসির মাধ্যমে কৃষিপণ্য পরিবহন সচল রাখা হবে
- কৃষিপণ্যের আন্তঃজেলা পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে সারাদেশের ডিসিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে
- হুজুগের কেনাকাটায় দাম বাড়ছে, সরবরাহে ঘাটতি নেই
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে মানুষ ও গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণকালীন সময়ে কৃষি পণ্যের সরবরাহ যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সড়ক, নৌ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়ে আলাদা চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর। নিয়মিত পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ফ্রিজিং ওয়াগন (পণ্য পরিবহনের বগি) চালু করে ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এতে করে দেশে করোনার প্রথম সংকটকালীন সময়ে কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছিল এবার যাতে সেই ক্ষতি না হয় সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ।
জানা গেছে, গত বছর লকডাউনের সময় সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ায় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। অন্যদিকে ভোক্তাকেও বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়েছে।
মোহাম্মদ ইউসুফ দ্য বিজনেস স্ট্য্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রথমবার লকডাউনে নানা কারণে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছিল। সেসময় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এবার শুরু থেকে আমরা কাজ করছি। আশা করছি ঐ পরিস্থিতিতে আর পড়তে হবে না'।
জানা গেছে, রোববার সারাদেশের ডিসি, ইউএনওদের চিঠি দিয়েছে বিপনন অধিদপ্তর। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও আন্তঃজেলা পরিবহনে যাতে কোন সমস্যা না হয়ে তার জন্য বিশেষভাবে তদারকি করার অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে সড়ক, নৌপথের পরিবহনগুলো যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
লকডাউনের বিশেষ এই সময়ে কৃষিপণ্য বহনকারী যানগুলো যাতে বাধার সৃষ্টি না হয় সেজন্য কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের ব্যানার লাগিয়ে দেয়া হবে। বিআরটিসির যে সমস্ত ট্রাক রয়েছে সেগুলোও অর্ধেক ভাড়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য আনা নেয়া করবে। তবে পণ্য পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন দেওয়া হবে নাকি যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে শুধু ওয়াগন যুক্ত করা হবে তা দু'একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের উপাচার্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, 'উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে দেরি করা যাবে না। সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হলে কৃষককেও পথে বসতে হবে আবার ভোক্তাকেও বাড়তি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। যেটা প্রথমবারের লকডাউনে হয়েছিল'।
এদিকে হাওড়ের কিছু কিছু স্থানে ইতোমধ্যেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা যাতায়াত করবে। এই শ্রমিকদের যাতায়াত কোন সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রসাশক, পুলিশ সুপার ও সারাদেশের কৃষি অফিসারদেরকে চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান শেখ বদিউল আলম সাক্ষরিত চিঠিতে কৃষি উপকরণের পাশাপাশি রাসায়নিক সার, কৃষি পণ্য, কৃষির উপকরণ এবং এসব পণ্যের ব্যবসায় যাতে কোন বাধা না আসে সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
বাজার ও মজুদ পরিস্থিতি
এদিকে লকডাউনের খবরে গত শনিবার থেকেই ভোক্তাদের নিত্যপণ্যের বাড়তি মজুদ গড়তে দেখা গেছে। যদিও সরকার বলছে, দেশে সব ধরণের পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। ভোক্তাদের বাড়তি কেনাকাটার সুযোগে ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে পেঁয়াজ, আলু, ব্রয়লার মুরগি, ডিমসহ বেশকিছু পণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে পাইকারী বাজার থেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে পণ্য কিনে মজুদ করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারী ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। অথচ খুচরা ও পাইকারী পর্যায়ে পণ্যের যথেষ্ট মজুদ লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ৩০-৩৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বাজারভেদে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। একইভাবে ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ।
তবে গতকাল রোববার পাইকারীতে পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়েছে। কারওয়ানবাজারের আড়তগুলোতে ৩৬-৩৮ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়লে ভোক্তাকে ৪৫-৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের আড়তদার আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমরা পাবনার বিভিন্ন আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনি। বাড়তি চাহিদার কারণে সেখানে দাম বাড়ছে। আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেশি না দিলে পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে না'।
এদিকে শুধু পেঁয়াজ নয়, বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। শবে বরাতের পর ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৬০ টাকা কেজিতে নেমেছিল। এটি আবার ১৬০-১৬৫ টাকা উঠেছে। আলুর দাম ১৮-২০ টাকা থেকে বেড়ে ২২-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি ডজন ডিমের দাম কোন কোন খুচরা বিক্রেতাকে ১০০ টাকাও চাইতে দেখা গেছে।
বাড্ডার একটি মুদি দোকানি মো. সুমন জানান, 'লকডাউনের কারণে মানুষ আগেভাগেই বেশি করে কেনাকাটা শুরু করেছে। এজন্য পাইকারী বাজারেও সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে'।
এদিকে আতঙ্কিত হয়ে ভোক্তাদের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে অস্বাভাবিক কেনাকাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ বছর নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকার কারণে বাড়তি চাহিদার পণ্যগুলোর ১০-১২ শতাংশ মজুদ করেছে এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে। বাড়তি দামের কারণে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল কেনার জন্য ইতোমধ্যে টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতেও অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ করা গেছে।