রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় বৈঠক, একজনের আত্মহত্যার চেষ্টা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ শিক্ষার্থীকে চুল কেটে দেয়ার ঘটনা সমাধানে ক্ষুব্ধ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উভয়পক্ষ সম্মিলিতভাবে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভুক্তভোগী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন সম্প্রতি ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখার বিষয়ে ছাত্রদের বকাঝকা করেন। রোববার পরীক্ষার হলের দরজার সামনে সহকারী প্রক্টর কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কক্ষে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের খানিকটা চুল নিজেই কেটে দেন তিনি। এরপর তাদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়। ছাত্রাবাসে ফিরে গিয়ে এসব শিক্ষার্থীরা অনেকেই মাথা ন্যাড়া করে ফেলেন।
পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন সেই ১৬ ছাত্রকে ডেকে নিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে নাজমুল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী সোমবার অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এসব ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত বিসিকে অবস্থিত মহিলা ডিগ্রী কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
এ অবস্থায় বেলা ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থিত হন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফ, রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী ও সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান রওশন আলম। তারা শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে বৈঠকের প্রস্তাব দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসতে রাজি হন। এরপরই প্রশাসনিক ভবনে শুরু হয় বৈঠক।
শামীম আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমাদের এক সহপাঠী নির্যাতিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশংকাজনক। যে কারণে আমরা অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছি"।
এই বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষক রওশন ইসলাম বলেন, "ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যদি কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে। নির্যাতন প্রসঙ্গে বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হওয়া উচিত"।
এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আব্দুল লতিফ জানান, "আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে উল্লেখিত ঘটনার সুন্দর সমাধানে আশাবাদী। তাদের সাথে আলোচনা চলছে, পরে বিস্তারিত জানানো হবে"।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বলেন, "শিক্ষার্থীদের সাথে কোন ঘটনা ঘটেনি আমি তা বলবো না। তবে যা বলা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত"।
শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার একটু রাগ বেশি, কিন্তু কাউকে বকাঝকা করিনি"।