রক্ষক থেকে ভক্ষক বনে যাওয়া বগুড়ার এক মেয়ে ও মেয়ে জামাই

তথ্য গোপন করে উচ্চ আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় শতকোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় দেশের কোনো আদালতে চার মাস জামিন চাইতে পারবে না দুই আসামি।
দুজনই হলো বগুড়ার আলাচিত শরীফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলওয়ার বেগমের মেয়ে আকিলা শরীফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা ও আঞ্জুয়ারার স্বামী আনোয়ার হোসেন রানা।
একসময় উত্তরবঙ্গে ব্যাপক প্রচলন ছিল শরীফ বিড়ির। আঞ্জুয়ারাসহ দেলওয়ার বেগমের ৫ মেয়ে শরীফ বিড়ি ফ্যাক্টরির পরিচালক পদে রয়েছেন।
আঞ্জুয়ারা ও রানা দেলওয়ার বেগমের শত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাগারে আছেন চার মাস ধরে। কারাগারে থেকে বের হতে মরিয়া ছিলেন জামিন পেতে। সেই লক্ষ্যে আশ্রয় নেন প্রতারণার। যেটি হাইকোর্টের নজরে আসে।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ আসামিদের জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে এই আদেশ দেন। আদালত বলেন, 'আসামিদের তো খুবই স্মার্ট মনে হচ্ছে'! আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী ও আসামি পক্ষে গোলাম আব্বাস চৌধুরী শুনানি করেন।
শুনানিতে গোলাম আব্বাস চৌধুরী বলেন, 'এই কোর্টে তৃতীয় দফায় জামিন চাওয়ার আগে আসামিরা হাইকোর্টের অন্য দুটি বেঞ্চে জামিন চান। যেটা আমাদের কাছে গোপন করা হয়। যার কারণে আমরা এটা জানতে পারি নাই'।
সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, 'জানি না বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নাই। এটা স্পষ্টত কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা। জামিন আবেদন বিবেচনার সুযোগ নাই'।
আদালত বলেন, 'আসামিরা তো অনেক স্মার্ট। অভিযোগও তো শত কোটি টাকা আত্মসাতের। এরা তো দেখছি শুধু জামিন চায়'। এরপরই হাইকোর্ট জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, 'আসামিরা দেশের কোন আদালতে চার মাস জামিন চাইতে পারবেন না'।
এ পর্যায়ে আসামির আইনজীবী বলেন, 'আসামিরা স্বামী-স্ত্রী। চার মাসের পরিবর্তে দুই মাস করে দেন মাই লর্ড'। আদালত বলেন, 'সেই সুযোগ নাই। ইতিমধ্যে আদেশ ঘোষিত হয়েছে'।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'নিম্ন আদালতের কোনো জামিন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন চাওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এই মামলার আসামিরা তথ্য গোপন করে তিনটি বেঞ্চে জামিন চেয়েছেন। যা আদালতের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
শাশুড়ির শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মেয়ে ও মেয়ের জামাই
জানা যায়, ২০১৫ সালে বগুড়ার শরীফ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক শেখ শরীফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেখভাল করছিলেন। কিন্তু অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে তিনি তার বড় মেয়ে আকিলা শরীফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন রানা ওরফে ক্যালাকে পারিবারিক সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার জন্য মৌখিকভাবে সম্মতি দেন।
পরবর্তীকালে মেয়ে ও মেয়ের জামাতা ২০১৫ সাল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নানাসময় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, এফডিআর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জোরপূর্বক নিয়ে নেন। এছাড়া কিছু কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক হিসাবে বর্ধিত টাকাসহ এফডিআর ভেঙে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এবং ব্যাংক হিসাব থেকে আরো ৫০ কোটি টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন।
এ ঘটনায় গত ৫ অক্টোবর মেয়ে ও মেয়ের জামাইসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন দেলওয়ারা বেগম। এ মামলায় গত ১১ অক্টোবর আনোয়ার ও আঞ্জুয়ারাকে আগাম জামিন না দিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই নির্দেশ মোতাবেক দুই আসামি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। গত ২৫ অক্টোবর বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে স্বামী-স্ত্রীকে কারাগারে পাঠান। এরপর গত ৩ ডিসেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামিদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
যেভাবে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা
বগুড়ার দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে বিবিধ রিভিশন মামলা করে জামিন চান আনোয়ার ও আঞ্জুয়ারা। গত ডিসেম্বরে বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের দ্বৈত বেঞ্চ কেন আসামিদের জামিন দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। এই রুল বিচারাধীন থাকার তথ্য গোপন করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের ডিভিশন বেঞ্চে দ্বিতীয় দফায় জামিন চান তারা। কিন্তু শুনানি না করে আবেদন ফেরত নেওয়া হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে রুল শুনানি না করে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন আসামিপক্ষ। এই দুটি বেঞ্চে জামিন চাওয়ার তথ্য গোপন করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে তৃতীয় দফায় জামিন চান আসামিরা। বিষয়টি হাইকোর্টের ন
আনোয়ার হোসেন রানা বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য।