বগুড়ায় ‘বিষাক্ত মদে’ ৬ জনের মৃত্যু

বগুড়ায় 'বিষাক্ত মদপানে' ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। তবে পুলিশের দাবি, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত মদ পানে। আর বাকীরা স্টোক করে মারা গেছেন।
মৃত ব্যক্তির স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের নিশ্চিত করা তিনজন বাদে অন্যরাও বিষাক্ত মদ পান করেছিলেন।
মৃতরা হলেন, বগুড়া তিনমাথা এলাকার রমজান আলী (৪০) ও সুমন রবিদাস (৩৬), ফুলবাড়ি এলাকার পলাশ মিয়া (৪০), আব্দুর রহিম (৩৮), কাটনারপাড়ার সাজু (৫৫) ও মোজাহার আলী (৭৭)।
তাদের মধ্যে সাজু ও মোজাহার আলী (৭০) হোটেল শ্রমিক। একই বিষাক্ত মদ খেয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সুমন রবিদাসের বাবা প্রেমনাথ, তার চাচা রামনাথ, পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল, পায়েলের বন্ধু আইয়ুব, শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ফুলবাড়ী এলাকার পলাশ মিয়া সোমবার ১১টার দিকে মেডিকেলে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। পলাশের ভাই পায়েল ও তার বন্ধু আইয়ুব বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে ভর্তি। তারা পারুল ল্যাব নামক একটি দোকান থেকে 'রেকটিফাইড অ্যালকোহল' কেনেন একজনের কাছ থেকে। গত শনিবার সন্ধ্যায় খাওয়ার পর তিনজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পায়েলের স্ত্রী রেখা (ছদ্মনাম) বলেন, 'গত শনিবার তাদের পরিবারের একজনের জন্মদিন ছিল। এ কারণে তার স্বামী, দেবর ও দেবরের বন্ধু শখ করে মদ খান। খেয়ে গত রোববার থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার হাসপাতালে নেওয়ার পর পলাশ মারা যান। পায়েল ও আইয়ুব চিকিৎসাধীন।'
হাসপাতলেই পলাশের ভাগ্নে বাধন বলেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওই সন্ধ্যায় তার মামার সাথে আব্দুর রহিম (৪২) নামের আরেকজনও মন পান করেন। পরে তিনি তার বাড়ি ফুলবাড়ী দক্ষিণ পাড়ায় গত রোববার মারা যান।
সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলছেন, 'এখানো নিশ্চিত হতে পারিনি যে মদপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে রমজান ও সুমন রবিদাস বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। তারা মদপান করতে পারেন। সাজু স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন তিনি মদপান করেছিলেন। আর মোজাহার বৃদ্ধ মানুষ। তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাতে হাঁসের মাংস খেয়েছিলেন মোজাহার। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে নিজ বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।'
পারুল হোমিও ল্যাব ও শাহীন হোমিও হলের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কিনা জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, 'ওই দুটি দোকান সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। মামলাও প্রক্রিয়াধীন।'
জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য বলছে, 'তিনজন বিষাক্ত মদ পান করে মারা গেছেন। তারা হলেন, সুমন রবিদাস, পলাশ ও সাজু। অন্যরা স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।'
শহীজ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'মৃতদের মধ্যে সুমন রবিদাস বিষাক্ত মদ খেয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন। অন্যদের বিষয়ে পোস্ট মর্টেমের পর জানা যাবে। তবে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কয়েজন। অন্যরা কীভাবে মারা গেছেন তা জানা নেই।'