ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে বিষাক্ত মদপান, ১৮ জনের মৃত্যু

ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে বিষাক্ত অ্যালকোহল ও মদপান করে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা, রংপুর সদর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিরামপুর উপজেলার মামুদপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবদুল মান্নানকে আটক করেছে বিরামপুর থানা পুলিশ।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঈদের আনন্দ পালন করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিরামপুর উপজেলার মামুদপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবদুল মান্নানের দোকান থেকে কয়েকজন বন্ধু অ্যালকোহল কেনে। পরে রাতে ১০/১২ জন বন্ধু মিলে অ্যালকোহল পান করে।
মঙ্গলবার মধ্য রাতে মামুদপুর গ্রামের আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে আবদুল মতিন (২৭), তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৩) ও সুলতান মাহমুদের ছেলে মহসিন আলী (৩৮) মারা যান।
পরদিন বুধবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী মনজু আরা (৩৫) মারা যান।
তিনি আরও জানান, বুধবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসলামপাড়ার তাপস কুমারের ছেলে অমৃত রায় (২৫) মারা যান। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই হাসপাতালে মামুদপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সোহেল রানা (৩০), আবুল হোসেনের ছেলে মনোয়ার হোসেন (৪২) মারা যান। বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল আলিম (৩০) মারা যান।
পুলিশ সুপার জানান, কিছুদিন ধরে বিরামপুর উপজেলার পল্লী চিকিৎসকরা অ্যালকোহল বিক্রি করছেন। আমরা এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমরা থেকে বিরামপুর উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযান শুরু করেছি। যে সব দোকানে অ্যালকোহল পাওয়া যাবে সেই সব দোকান সিলগালা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে পল্লী চিকিৎসক আব্দুল মান্নানের দোকানে অ্যালকোহল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এদিকে, রংপুর পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, সোমবার রংপুর জেলার সদর শ্যামপুরে বিষাক্ত মদপান করে কয়েকজন অসুস্থ হয়। মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদর উপজেলার পুটিমারী এলাকার মৃত জোনাব আলীর ছেলে সারোয়ার হোসেন (৩১) এবং একই এলাকার মোস্তফা মিয়া (৩০) মারা যান। পরদিন বুধবার সকালে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্টেশনপাড়ার আব্দুল হামিদের পুত্র নূর ইসলাম (৩০)।
তিনি আরও জানান, রোববার রাতে ঈদ উদযাপন করতে পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাটে বন্দরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে নেশা জাতীয় বিষাক্ত মদ পান করে। ওইদিন রাত থেকেই প্রায় ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপজেলার খোলাহাটির খলিল মিয়ার পুত্র আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), রাতিয়াবাজিতপুরের সাদুল্লাপুর এলাকার দুলা মিয়া (৫২), বড় পাহারপুর এলাকার উদ্দিনের কমর উদ্দিনের পুত্র জাহিদুল হক (৩৫), বাজিতপুরের চন্দন কুমার (৩০) এবং হরিরামপুরের সিরাজুল মিস্ত্রির দুই ছেলে লুলু (৩৪) ও সোলিম মিয়া (৩০) মারা যান।
পুলিশ সুপার আরও জানান, বিষাক্ত মদপান করে ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল কারণ জানা যাবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।