যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রস্তাবে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি!

গত শনিবার ইরানকে একটি পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইরানকে সীমিত মাত্রায় ও নিম্নমাত্রার ইউরেনিয়াম নিজ দেশে সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে এক্সিওস। অথচ এত দিন মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা এমন সুযোগ দেওয়ার ঘোর বিরোধিতা করে আসছিলেন।
হোয়াইট হাউজের দূত স্টিভ উইটকফ ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রকাশ্যে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কোনোভাবেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেবে না এবং তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি অপসারণ করতে হবে। তবে নতুন প্রস্তাবে সে অবস্থান থেকে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে, বেসামরিক প্রয়োজনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির অধিকার তারা ছাড়বে না। এই অবস্থান প্রকাশ্য মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এক্সিওস-এর কাছে দুটি সূত্র যে প্রস্তাবের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে, তা থেকে ধারণা করা যায়, চুক্তির পথে অগ্রগতির সম্ভাবনা বেড়েছে।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসে তাদের মিত্র ও ইসরায়েলের ক্ষোভের ঝুঁকি নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার এবং রিপাবলিকান দলের বহু সিনেটর চাইছেন, ইরানের ক্ষেত্রে 'শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি' এবং 'সম্পূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিল' নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নেওয়া হোক।
হোয়াইট হাউজ অবশ্য এক্সিওস-এর প্রকাশিত প্রস্তাবের কোনো কিছু অস্বীকার করেনি। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা অর্জন করতে পারবে না। বিশেষ দূত উইটকফ ইরান সরকারকে একটি বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এই প্রস্তাব গ্রহণ করাই তাদের স্বার্থে।' তিনি আরও বলেন, 'চলমান আলোচনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রশাসন প্রস্তাবের বিস্তারিত বিষয়ে মন্তব্য করবে না।'
শনিবার জমা দেওয়া এই প্রস্তাবকে 'আলোচনার জন্য প্রাথমিক ধারণা' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ইরান নতুন কোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির কেন্দ্র গড়তে পারবে না। বিদ্যমান 'ইউরেনিয়াম রূপান্তর ও প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো' ভেঙে ফেলতে হবে এবং সেন্ট্রিফিউজ নিয়ে নতুন গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির আওতায় একটি 'আঞ্চলিক সমৃদ্ধি কনসোর্টিয়াম' গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি কেবল বেসামরিক চাহিদার মধ্যে সীমিত থাকবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইরানকে সাময়িকভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। সময়সীমা আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
ইরানের ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোকে নির্ধারিত এক সময়ের জন্য 'অকার্যকর' রাখতে হবে, যা আলোচনাকারী পক্ষগুলো পারস্পরিকভাবে নির্ধারণ করবে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা অনুযায়ী, ইরানের মাটির ওপরের কেন্দ্রগুলোতে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে সীমিত থাকবে এবং তা কেবল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি প্রস্তুতের মাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, একটি 'দৃঢ় পর্যবেক্ষণ ও যাচাইব্যবস্থা' গড়ে তোলা হবে, যার মধ্যে আইএইএ-র অতিরিক্ত প্রোটোকলের তাৎক্ষণিক অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে প্রস্তাবে স্পষ্ট করা হয়েছে, ইরানকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলতার সুবিধা পেতে হলে যুক্তরাষ্ট্র ও আইএইএ-কে সন্তুষ্ট করার মতো 'বাস্তব অঙ্গীকারের' প্রমাণ দিতে হবে।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমায়েল বাঘাই বলেন, নিষেধাজ্ঞা কবে ও কীভাবে তুলে নেওয়া হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো যথেষ্ট নিশ্চয়তা দেয়নি। তিনি জানান, তেহরান এখনো প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব নেতানিয়াহু ও তার উপদেষ্টাদের উদ্বিগ্ন করতে পারে। শুরু থেকেই তারা যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে আসছেন যেন ইরানের সঙ্গে সবচেয়ে কঠোর শর্তে চুক্তি করা হয়।
অ্যাক্সিওস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, আলোচনার ক্ষতি হয় এমন কিছু না করতে। তবে নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার পক্ষে এবং আলোচনা ভেঙে পড়লে দ্রুত হামলার জন্য প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের অনুমতি ছাড়াই পদক্ষেপ নিতে পারেন।
নতুন মার্কিন প্রস্তাবের সঙ্গে ২০১৫ সালের চুক্তির বহু মিল থাকলেও কিছু পার্থক্যও রয়েছে। ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওবামা প্রশাসনের ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন।
এদিকে, অচিরেই ষষ্ঠ দফায় পারমাণবিক আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।