এই পাঁচটি ট্রেন্ড নাড়িয়ে দিতে পারে ২০২২ সালকে

২০২০ ও ২০২১, এই দুই বছরে অনেক বদলে গেছে বিশ্ব। তবে অতিমারী এসে আমাদের সবকিছু বদলে দেওয়ার আগে থেকেই কিন্তু সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির গতিপথ বদলাচ্ছিল। অতিমারী সেই পরিবর্তনকে আরও বেগবান করছে।
২০২২ কেমন হবে, তার ভবিষ্যৎবাণী করাটা কঠিন, বিশেষ করে খুবই 'আনপ্রেডিক্টেবল' দুটি বছর পার করার পর।
তবে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, অর্থ, পরিবহন, গৃহ এবং পারিবারিক জীবন নিয়ে যদি আমরা একটি কথা বলতে পারি, সেটি হচ্ছে- এগুলো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং সামনেও যাবে।
২০২২ সালে যেসব খাতে বেশি পরিবর্তন আসতে পারে, এবং যেসব ট্রেন্ড আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এঁটেসেটে বসতে পারে, সেগুলো বাছাই করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিনেট-
১. অতিমারী ও স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ
২০২০ সালের ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯'কে অতিমারী হিসেবে ঘোষণা করে। বছর খানেকের লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব পালন শেষে এবছরের মাঝামাঝিতে এসে যখন পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল, তখন উত্থান ঘটা শুরু করে করোনার নতুন নতুন ধরনের। ডেল্টা, অমিক্রনের মতো এই নতুন ধরনগুলোর কারণে এখনও বেশ ভালোভাবেই বিরাজ করছে করোনার শঙ্কা।
২০২২ সালে হয়তো আর অতিমারীর রূপে থাকবে না এই ভাইরাস। কিন্তু সবকিছু আর কখনোই ২০১৯ এ ফিরে যাবে না। মাস্ক পরা একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে যাবে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এমনিতেও বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ মাস্ক পরে বের হতেন। এই ট্রেন্ড হয়তো ছেয়ে যাবে পুরো বিশ্বেই।
স্বাস্থ্যখাতও আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার মতো করোনাকালীন অনেক চিকিৎসা পদ্ধতিই থেকে যাবে। ভবিষ্যতে যেকোনো রোগের টিকা নির্মাণের ক্ষেত্রেও কোভিডের টিকাকে আদর্শ ধরে নিয়ে কাজ শুরু করা হবে।
২. হাইব্রিড অফিস
অতিমারীর সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে সম্ভবত স্কুল ও অফিস কার্যক্রম। বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই এখন সশরীরে ক্লাস শুরু হয়ে গেলেও অফিস কার্যক্রম এখনও আগের অবস্থায় ফেরেনি। অনেক কর্মচারী (যাদের সুযোগ রয়েছে) এখনও শারীরিক অফিসের পরিবর্তে নির্জন কোনো জায়গায় থেকে 'হোম অফিস' করা অব্যাহত রেখেছেন।
বড় কোম্পানিগুলোও তাদের অফিস পলিসি নিয়ে ভাবছে। বাসা থেকে কাজ করা অফিসের কিছু অংশে স্থায়ী করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কেননা, সেক্ষেত্রে অফিসের জায়গা আরও সংকুচিত করার সুযোগ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যার ফলে বেঁচে যাচ্ছে সেই বাড়তি জায়গার অর্থ।
কোভিড চলে গেলেও হোম অফিস হয়তো একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে থেকে যাবে।
৩. বিটকয়েন, মুদ্রাস্ফীতি ও ব্যক্তিগত অর্থনীতি ভবিষ্যৎ
টাকা-পয়সা এবং ব্যক্তিগত অর্থনীতিও বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ, যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অতিমারীর প্রভাবে বিশ্বের সিংহভাগ দেশেই মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে। এবছর রিয়েল এস্টেট এবং গাড়ির মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে, যা ২০২০ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিটকয়েনকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন অনেকে।
প্রথম বিশ্বের অনেক জায়গায় বিটকয়েনের মাধ্যমে বেতনও দেওয়া হচ্ছে। ২০২০ সালেও এই বায়বীয় মুদ্রার প্রসার বাড়বে বলেই আশা করা যাচ্ছে।
৪. মহাশূন্য যাত্রা ও পরবর্তী ইন্টারনেট
২০২২ সাল মহাকাশ যাত্রাতে তুমুল প্রতিযোগিতা দেখা যেতে পারে। চীন এবং রাশিয়া ইতোমধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি বেজ স্থাপনের উদ্দেশ্যে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ২০২৪ সালে একটি গ্রহাণুতে রোবট প্রেরণের উদ্দেশ্যেও কাজ করে যাচ্ছে দেশ দুটি। এদিকে নাসা ভবিষ্যৎ চন্দ্রাভিযানের জন্য ১০ জন মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেছে।
এদিকে স্পেসএক্স, ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলো মহাকাশ পর্যটনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এবছর অনেক বেসামরিক ব্যক্তিদের মহাকাশে পাঠিয়েছে। ২০২০ সালে তাদের এই বিশেষ ঘরানার পর্যটনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও বড় হবে।
২০২২ সালে স্পেস এক্স, ব্লু অরিজিন ও অ্যামাজন আমাদের বায়ুমণ্ডলে হাজার হাজার নিম্ন কক্ষপথের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তকে স্বল্প মূল্যে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবার আওতায় আনতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
৫. বৈদ্যুতিক গাড়ির জয়জয়কার
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো যানবাহনের ক্রান্তিকাল এসে গেছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে গ্যাস-চালিত যানবাহন কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দিবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য করবে ২০৩০ সালের মধ্যে। প্রথম বিশ্বের প্রায় সব দেশই ২০৪০ সালের মধ্যে যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে দিবে।
আর স্বাভাবিকভাবেই এই জ্বালানির জায়গা নিবে বিদ্যুৎ। বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর ছিল ২০২১। এবছর সেপ্টেম্বরে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত গাড়ি ছিল টেসলা মডেল ৩।
২০২২ সালে এসব গাড়ির ব্যাপ্তি ও প্রসার যে আরও বহুগুণে বাড়বে, তা বলেই দেওয়া যাচ্ছে।