Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
September 28, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, SEPTEMBER 28, 2025
অনির্বাণ লাইব্রেরি: যেভাবে আলো দেখাচ্ছে দক্ষিণের প্রত্যন্ত গ্রামকে

ফিচার

অনুস্কা ব্যানার্জী
11 January, 2025, 01:10 pm
Last modified: 11 January, 2025, 01:08 pm

Related News

  • ছোট হচ্ছে বেস্টসেলার বইয়ের বাক্য; কীভাবে বিশ্বব্যাপী কমে যাচ্ছে পড়ার অভ্যাস?
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ
  • বিবিসির চোখে পৃথিবী বদলে দেওয়া ১০০ উপন্যাস
  • অরুন্ধতী রায়ের ‘আজাদি’সহ ২৫ বই নিষিদ্ধ ঘোষণা কাশ্মীরে
  • হান্স অ্যান্ডারসনের রূপকথার সঙ্গে ভালোবাসা ও ঘৃণার যে সম্পর্ক !

অনির্বাণ লাইব্রেরি: যেভাবে আলো দেখাচ্ছে দক্ষিণের প্রত্যন্ত গ্রামকে

লাইব্রেরির কথা শুরু হওয়ার পর থেকেই মামুদকাটি গ্রামের মানুষদেরকে চার তরুণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জড়ো করতে শুরু করলেন। তখন তো টেলিফোনের যুগ। গ্রামেগঞ্জে সবার বাড়িতে না আছে টেলিফোন, আর না আছে অহেতুক বিল পরিশোধের সামর্থ্য। তাই লোক জড়ো করতে বাড়ি বাড়ি যেতে হতো। এরপর লাইব্রেরির প্রস্তাব নিয়ে একের পর এক উঠোন বৈঠক শুরু। এসব বৈঠক থেকেই নানা জনের নানা মত জানা গেল। গ্রামের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে লাইব্রেরির রূপরেখা তৈরি হতে থাকে।
অনুস্কা ব্যানার্জী
11 January, 2025, 01:10 pm
Last modified: 11 January, 2025, 01:08 pm
ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

অনির্বাণ শব্দের অর্থ হচ্ছে, নেভে না বা নির্বাপিত হয় না এমন। অনির্বাণ নামের এই অর্থকে সামনে রেখে জ্ঞানকে জ্বালিয়ে রাখার কাজ করে চলেছে অনির্বাণ লাইব্রেরিতে। প্রমথ চৌধুরী তাঁর 'বই পড়া' প্রবন্ধে লিখেছেন, 'এ দেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল কলেজের চাইতে একটু বেশি।' তাই গ্রামে গ্রামে যেমনি হাসপাতালের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি প্রয়োজন লাইব্রেরিরও। এ কথা বুঝতে পেরেছিলেন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মামুদকাটির চার তরুণ। 

সময়টা ১৯৯০। সেই সময়ে সুন্দরবন-ঘেঁষা খুলনা জেলার পাইকগাছার অন্তর্গত মামুদকাটি গ্রাম বেশ প্রত্যন্ত এলাকা। তখন মামুদকাটিতে শিক্ষার হার খুব বেশি নয়। চুরি-ছিনতাই ছিল এই গ্রামের নিত্যঘটনা। মাদকদ্রব্য সেবনের দিকে ঝুঁকছিল গ্রামের কম বয়সী ছেলেরা। আর ছিল বাল্যবিয়ে। মেয়ের বয়েস চৌদ্দ পেরোলেই বিয়ের যোগাড়। স্কুলের পাট চুকে যেত সেখানেই। খেলার সাথী আর খেলনাবাটি খেলবার বয়সে মামুদকাটি গ্রামের নাবালিকা মেয়েরা একান্নবর্তী সংসারের গিন্নি হয়ে উঠত৷ উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন মিলিয়ে যেত উনুনের ধোঁয়ায়। 

মামুদকাটি গ্রামের ধারঘেঁষে কপোতাক্ষ নদ। হ্যাঁ, সেই কপোতাক্ষ নদ যার কথা কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তৃষ্ণার্তের মতন স্মরণ করেছেন সুদূর ফ্রান্সে বসে। কপোতাক্ষ নদের খেয়াঘাটে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বাল্যকালের চার বন্ধু জয়দেব ভদ্র, মানিক ভদ্র, ভোলানাথ মন্ডল, মৃণাল ঘোষ— এর আড্ডা জমতো সন্ধ্যেবেলায়। তাদের বয়েস তখন আঠারো।

এই তরুণেরা বোধহয় কবি সুকান্তের আঠারো বছর বয়েস কবিতা পড়ে থাকবেন। কিংবা বয়সের ধর্মেই তাঁরা দেশ এবং দশের কথা ভাবতেন। কথাচ্ছলে তাদের গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উঠেছিল সেদিন। তা লাইব্রেরির কথা শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ রইল না। হারিয়ে গেল না কপোতাক্ষের স্রোতে। এই চার বন্ধু তাদের কথামতন মামুদকাটি গ্রামে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে শুরু করলেন৷ কিন্তু বলা যত সহজ, করে ফেলা তো ঠিক ততটাই কঠিন। শুধু মহৎ স্বপ্ন নয়, সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন দরকারি। লাইব্রেরি করতে হলে প্রথমেই প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ থাকা চাই, থাকতে হবে একটা পড়বার ঘর। 

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

লাইব্রেরির কথা শুরু হওয়ার পর থেকেই মামুদকাটি গ্রামের মানুষদেরকে চার তরুণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে জড়ো করতে শুরু করলেন। তখন তো টেলিফোনের যুগ। গ্রামেগঞ্জে সবার বাড়িতে না আছে টেলিফোন, আর না আছে অহেতুক বিল পরিশোধের সামর্থ্য। তাই লোক জড়ো করতে বাড়ি বাড়ি যেতে হতো। এরপর লাইব্রেরির প্রস্তাব নিয়ে একের পর এক উঠোন বৈঠক শুরু। এসব বৈঠক থেকেই নানা জনের নানা মত জানা গেল। গ্রামের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে লাইব্রেরির রূপরেখা তৈরি হতে থাকে। এবারে লাইব্রেরি শুরু করবার জন্যে মামুদপুর হরিসভা মন্দিরের কমিটির কাছে একখানা ঘর দেওয়ার জন্যে অনুরোধ জানানো হয়। মন্দির কমিটি সে ঘর দিতে সম্মতি জানিয়েছিল। এভাবেই দুই চালা টিনের ঘরে শুরু হলো বই পড়বার মহতী উদ্যোগ।  

কিন্তু পড়বার ঘর হলেই তো হবে না। পড়বার জন্যে বই প্রয়োজন। গ্রামবাসীদের যার কাছে যা বই আছে তারা তা অনির্বাণ লাইব্রেরিকে দিতে শুরু করলো। বইয়ের সংখ্যা যখন বাড়তে শুরু করলো তখন নতুন চিন্তা, বই রাখবার আলমারির। মামুদকাটি গ্রামের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ টাকা চাঁদা নিয়ে তাদেরকে লাইব্রেরির সদস্য করে নেওয়া হলো। পাশাপাশি গ্রামের মানুষ মাসিক ২ টাকা চাঁদা দিতেও রাজি হলো। 

কিন্তু প্রয়োজনের তো শেষ নেই। বই রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে এটা দরকার-সেটা দরকার। রাতে পড়বার জন্যে আলো দরকার। এই খরচ দেবেই বা কে? তখন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা চার বন্ধু গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির বিয়েথার কাজে সাহায্য করা, গেট ডেকোরেশন থেকে বরযাত্রীদের আদর আপ্যায়ন করে সামান্য অর্থ নিতে শুরু করে। আবার বাইরে থেকে কেউ মন্দিরে প্রণাম করতে এলে তাদেরকে এই লাইব্রেরি ঘুরে দেখিয়ে সামান্য কিছু অর্থ সংগ্রহ… এভাবেই আস্তে আস্তে দাঁড়াতে শুরু করেছিল অনির্বাণ লাইব্রেরি। 

মামুদকাটির মেধাবী ছাত্ররা লাইব্রেরির দৌলতে গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই হাতে পেতে শুরু করলো। অনেক অল্প বয়সী ছেলেদের কুসঙ্গ ত্যাগ করে লাইব্রেরিতে এসে বসার শুরুটা এভাবেই। 

মামুদকাটি গ্রামে তো বটেই, পাইকগাছা ছাড়িয়ে অনির্বাণ লাইব্রেরির নাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে। চারতলা ভবনের সুরম্য অট্টালিকা, ভবনের নিচে ফুলের বাগান। চারদিকে গাছ আর গাছ। সবুজের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অনির্বাণ লাইব্রেরি। দুইচালা ঘর থেকে আজকের দিনের এই  অনির্বাণ লাইব্রেরিতে পৌঁছানোর গল্পটা সহজ নয়। সেই গল্পের খোঁজে কথা বললাম লাইব্রেরির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মানিক ভদ্রের সাথে। 

মামুদকাটি গ্রামের হরিঢালি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই ছাত্র বই পড়তে ভালোবাসেন ছেলেবেলা থেকে। সেসময়ে আসেনি মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট। স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বই বিনিময় হতো, বিকেল হলেই মাঠের দিকে দৌড়। ফুটবল খেলে কাদা মেখে বাড়ি আসা আর তারপর হ্যারিকেন জ্বালিয়ে স্কুলের পড়া। আর যাদের কেরোসিন কেনার সামর্থ্য ছিলনা তারা পড়ত দুপুরবেলা।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

সেই স্কুলজীবনেই অন্য তিন সখার সাথে পরিচয়, বন্ধুত্ব। স্কুল শেষ হয়। বন্ধু জয়দেব ভদ্র অন্য এক কলেজে ভর্তি হয় ইন্টারমিডিয়েটে। এদিকে অন্য তিনজন এক কলেজে। কলেজ বদল বন্ধুত্ব কেড়ে নিতে পারে না। খেয়াঘাটে বসে সন্ধ্যেবেলা গল্পগুজব হয় চার বন্ধুর। পৃথিবীকে বদলাতে হবে, বদলে দিতে হবে সমাজ। তা শুরুটা নিজের গ্রাম দিয়েই হোক। এই চার বন্ধুর ছেলেমানুষী চ্যালেঞ্জ আস্তে আস্তে একটা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিলো। বই ছড়িয়ে দেওয়ার, আলো ছড়িয়ে দেওয়ার, জ্ঞান বিলিয়ে দেওয়ার কাজ তো সহজ কথা নয়। তবু শুরুটা তো কাউকে না কাউকে করতেই হয়। 

পড়াশোনা আর চাকরিসূত্রে চার বন্ধুর একেকজন একেক জায়গায় ছিটকে পড়লেন। তবে কেউই ভুলে যাননি সেই দুইচালা ঘরের অনির্বাণ লাইব্রেরির কথা। ভুলবেন কী করে? এই লাইব্রেরি যে তাদের চারজনের ভালোবাসার সম্মিলিত রূপ, তরুণ বয়সের সোনালি স্বপ্ন। তাই বারবার  অনির্বাণ লাইব্রেরির কাছে ফিরে ফিরে আসা। 

এরই মধ্যে এক বন্ধু জয়দেব ভদ্র বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদে উন্নীত হলেন। তিনি  অনির্বাণ লাইব্রেরির প্রতিটা ইট, কাঠ, পাথরের জন্যে যে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন– তা আর কারো দ্বারা সম্ভব ছিল না। ২০১৬ সালে মানিক ভদ্রের ভাই সাংবাদিক নিখিল ভদ্র লাইব্রেরির নিজস্ব জমি কেনার উদ্যোগ নিলেন। তৎকালীন নৌ পরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় লাইব্রেরির জমি কেনার জন্যে দিয়েছিলেন অনুদান। ২০১৭ সালে জেলা পরিষদ থেকে  অনির্বাণ লাইব্রেরির ভবন নির্মাণে ১০ লাখ টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়। এভাবে একতলা, দোতলা থেকে আস্তে আস্তে চারতলা ভবন উঠলো।  

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

শুধু তো বই পড়া নয়, গ্রামের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন। আর তাই লাইব্রেরিতে এলো কম্পিউটার। শুরু হলো গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে কম্পিউটার শেখানোর কাজ। সেই কাজে একজন কম্পিউটার প্রশিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হলো। মামুদকাটি গ্রাম প্রত্যন্ত হলেও ছেলে-মেয়েরা যেন পিছিয়ে না পড়ে। যেসব শিক্ষার্থীর পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের কাছে কম্পিউটার কেনা ঝুটা স্বপ্নের মতনই। তারা অনির্বাণ লাইব্রেরির দৌলতে কম্পিউটারে দক্ষ হতে শুরু করলো। 

পৃথিবী কী এভাবেই একটু একটু করে মামুদকাটি গ্রামের মানুষগুলোর হাতের মুঠোয় আসছিল? হয়তো বা.. শুধু সাহিত্যচর্চা করে ক্ষ্যান্ত দিলে তো চলবে না। এদেরকে সংস্কৃতিমনা করে তুলতে পহেলা বৈশাখ কিংবা রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীতে অনুষ্ঠান শুরু হলো। কেনা হলো হারমোনিয়াম তবলা। এরা নাচে, গায়, খিলখিল হাসে, বই পড়ে, কম্পিউটার শেখে। মনের আনন্দে তাইরেনাইরে করে ছুটে বেড়ায়। 

এই তো বেশ চলছিল হেসে-খেলে। এরমধ্যে এলো কোভিড-১৯। মৃত্যুভয়ে মানুষ ঘরবন্দী হলো। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইনের মতন শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হলো এমন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও। এই সময়ে অনির্বাণ লাইব্রেরির ছাত্র সংসদ এগিয়ে এলো গ্রামবাসীর সেবায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ থেকে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কিংবা করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিকে দাফন—  অনির্বাণ লাইব্রেরির ছেলেরা সবই করেছে।  গ্রামের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সাহায্যেও এগিয়ে আসে অনির্বাণ লাইব্রেরি। কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সার বিতরণ, আম্ফান ঝড়ের পর পুনর্বাসনে অনির্বাণ লাইব্রেরি লোকবল ও  অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে গ্রামবাসীকে। প্রায় ৩০ লাখ টাকার সহায়তা দেওয়া হয় আম্ফান ঝড় পরবর্তী সময়ে। 

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

এখানেই শেষ? না, একেবারেই তা নয়। গত ২০-২৫ বছরে বাল্যবিয়ে কমেছে অনেকটাই। গ্রামের মেয়েরা এখন স্কুল-কলেজে যায়। কেউ বা চাকরি করে। কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলে নারী পাচারের ঘটনা ঘটে অহরহ। আর তাই বাল্যবিয়ের পাশাপাশি নারীপাচার রোধে প্রচার প্রচারণা চালায় অনির্বাণ লাইব্রেরি। 

যে সমস্ত সংস্থা নারী পাচার রোধে কাজ করে তাদের সাথে কাজ করে তারা, ছড়িয়ে দেওয়া হয় সতর্কতা। অসহায় বিধবা নারীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে সেলাই মেশিন বিতরণের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে সমাজের মূল ধারায় আনতে বিভিন্ন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হয়। 

এছাড়া, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে তাদের মাধ্যমিকের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এককালীন ১০ হাজার টাকা বৃত্তি দেয় অনির্বাণ লাইব্রেরি। এই মনিরউদ্দিন- অনির্বাণ মেধাবৃত্তি শুধু মামুদকাটি গ্রামের জন্যে নয়, বরং দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর জেলার জন্যেও  উন্মুক্ত। 

মামুদকাটি গ্রামের অসহায়, গরিব মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসার কথাও অনির্বাণ লাইব্রেরি ভেবেছে। ১৯৯০ সালে লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাকালে গ্রামের যে বাবা কাকারা এগিয়ে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন বৃদ্ধ। কেউ কেউ আর্থিক দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে নেই। এই সমস্ত মানুষের কথা ভেবে চালু হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত একজন ডাক্তার বসেন অনির্বাণ লাইব্রেরির একটি কক্ষে। ৬০-৭০ জন মানুষকে দেন প্রাথমিক চিকিৎসা। এতে করে মাসে প্রায় ২০০-২৫০ মানুষ চিকিৎসা সেবা পান বিনামূল্যে। এসব কথা গর্বভরে জানাচ্ছিলেন এক চমৎকার মানুষ, লাইব্রেরির অন্যতম কর্ণধার বইপ্রেমী মানিক ভদ্র। 

অনির্বাণ লাইব্রেরিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে একখানা বিশাল অডিটোরিয়াম কক্ষ। লাইব্রেরির আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যে এই জায়গাটি রাখা হয়েছে। মেডিকেল ক্যাম্প আর অফিসরুমও নিচ তলাতেই। এবারে সিড়ি বেয়ে উঠতেই দোতলায় দেখতে পাবেন একটা বিশাল হল রুমে আলমারির পর আলমারি। তাকে তাকে বিভিন্ন জনরার বই সাজানো। সাহিত্য, বিজ্ঞান, আইন বিষয়ক বই.. একাডেমিক বইও কম নেই। বইয়ের কালেকশন ভালো তো বটেই। অনেক দুষ্প্রাপ্য বইও দেখা গেল। বইয়ের ঘরটার বাদিকে একখানা খোলা জানালা, মাঝখান জুড়ে বসার টেবিল চেয়ার। জানলা দিয়ে আলোর দ্যুতি আসছে, যেন ওই খোলা জানালাটাই অনির্বাণ লাইব্রেরি। পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে কিছুতেই নিভতে দিচ্ছে না। শত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে জ্বালিয়ে রাখছে। তেতলা জুড়ে অতিথিশালা। অনির্বাণ লাইব্রেরির খোঁজে আসা দেশ বিদেশের অতিথি চাইলে থাকতে পারবেন এই জায়গায়।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

অনির্বাণ লাইব্রেরির সদস্যপদের খুঁটিনাটি জানতে পারলাম লাইব্রেরির ছাত্রসংসদের সদস্য বিশ্বজিৎ মন্ডলের কাছ থেকে। অনির্বাণ লাইব্রেরিতে তিন ধরনের সদস্যপদ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি সাধারণ সদস্য, আরেকটি আজীবন সদস্য এবং অন্যটি দাতা সদস্য। সাধারণ সদস্যের জন্যে ১ হাজার টাকা, দাতা সদস্যের জন্যে ১০ হাজার টাকা আর আজীবন সদস্যের জন্যে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের মাধ্যমে সদস্যপদ লাভ করা যায়। 

তবে শিক্ষার্থীদের জন্যে সদস্যপদ বিনামূল্যে, বছরে লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। লাইব্রেরির বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় দাতা সদস্য ও আজীবন সদস্যরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। এছাড়া, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা স্পনসরশিপ করে থাকে। ফ্রাইডে মেডিকেল ক্যাম্পের জন্যে ডাক্তারের ফি আসে বছরে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এই অর্থ একেকবছর একেক দাতা সদস্য পরিশোধ করেন। 

অনির্বাণ লাইব্রেরি দেখতে হলে আপনাকে ঢাকা থেকে খুলনার বাস ধরতে হবে। খুলনা জিরোপয়েন্টে নেমে সেখান থেকে বাস ধরে নামতে হবে চুকনগর। চুকনগর থেকে ইজিবাইকে ১৮ মাইল নামের জায়গায় যেতে হবে। ১৮ মাইল থেকে বাইক কিংবা ইজিবাইক সহযোগে তালা হয়ে মামুদকাটি বাজারে নামতে হবে। মামুদকাটি বাজার থেকে ভ্যান নিয়ে অথবা হেঁটে পৌঁছানো যাবে অনির্বাণ লাইব্রেরি। গন্তব্যে পৌঁছানোর হ্যাপা থেকেই বুঝতে পারছেন, একেবারে অজপাড়াগাঁ। কিন্তু অনির্বাণ লাইব্রেরি দেখতে এ্যাদ্দুর এসে আপনাকে যে হতাশ হতে হবে না– তা এলেই বুঝতে পারবেন। 

রাস্তা যেহেতু চেনা নয়, তাই খুলনার স্থানীয় কাউকে বলে রাখা ভালো। নইলে একাই বেরিয়ে পড়ুন এ্যাডভেঞ্চারে। পাইকগাছা থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব খুব বেশি নয়। অনির্বাণ লাইব্রেরি সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদে একটি মাঝারি ট্যুরিস্ট বোট তৈরি করা হয়েছে। যাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নৌ-ভ্রমণ এবং সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ পান স্থানীয়রা। তাই এই সুযোগে কিছুটা সুন্দরবন ভ্রমণও হয়ে যেতে পারে।

ছোটোবেলায় পড়েছিলাম, 'ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।' তখন এসব ছড়ার মর্মার্থ বোঝবার বুদ্ধি কিংবা বয়েস হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আজকের দিনে এসে সবটা না বুঝলেও কিছু কিছু বুঝতে পারি। 

অনির্বাণ লাইব্রেরিতে এখন বইয়ের সংখ্যা ১৮ হাজার। একটা মুক্তিযুদ্ধ কর্নার রয়েছে এই লাইব্রেরির এক অংশজুড়ে। সেখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা বই। আর আছে ম্যাগাজিন কর্নার। এই ম্যাগাজিন কর্নারে অনেক পুরোনো ম্যাগাজিনের সংগ্রহ, যা দেখলে আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতে পারে। একটু হলদেটে ভাব পড়া এক রাশ ম্যাগাজিনের মধ্যে হাত বাড়িয়ে একখানা বই তুলে নিয়ে দেখা গেল ১৯৬৮ সালের একখানা ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনের মধ্যে কোনো এক পাতায় চোখে পড়লো শাড়ির বিজ্ঞাপনের। আরেক পাতায় দেখা গেল ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিজ্ঞাপন। এমন অনেক পুরোনো বইয়ে ঠাঁসা অনির্বাণ লাইব্রেরির বুক কর্নার। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে মনে হবে বুঝি নীলক্ষতের পুরোনো বইয়ের দোকানে চলে এলাম। তবে বইয়ের যত্নের কিন্তু কমতি নেই৷ বই যারা ভালোবাসেন, তারা বই আগলে রাখবেন সন্তানের মমতায় এ অবশ্য নতুন কথা নয়।

অনির্বাণ লাইব্রেরি নিজেদের বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এখন নতুন করে শুরু হওয়া লাইব্রেরিগুলোকে বই কিনে দিয়ে সহায়তা করে। গত বছর ৬ খানা লাইব্রেরিতে  অনির্বাণ লাইব্রেরির পক্ষ থেকে  ১ লাখ টাকার করে বই উপহার পাঠানো হয়েছে। তার আগের বছর লাইব্রেরিপ্রতি ১ লাখ টাকার বই দেওয়া হয়েছিল ৩ খানা লাইব্রেরিতে। এই বই উপহার পাঠানোর জন্যে কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেই বিজ্ঞাপন দেখে বিভিন্ন লাইব্রেরি আবেদন করে। এরপর কমিটির যাচাই বাছাইয়ের পর উপহার দেওয়া হয় বই।  

অনির্বাণ লাইব্রেরি শুধু পাইকগাছা উপজেলা কিংবা মামুদকাটি গ্রামের মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেনি। রক্তদান কর্মসূচি  অনির্বাণ ব্লাড ফর লাইফ, বৃক্ষরোপন কর্মসূচিসহ এদের বহুবিধ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়েছে সারা দেশে। 

অনির্বাণ শুধু লাইব্রেরি নয়, পাইকগাছা অঞ্চলের বাতিঘর। অনির্বাণ লাইব্রেরির হাত ধরে যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা ঘটে, তা ৩২ বছরে মামুদকাটি গ্রাম ও এর আশেপাশে এনেছে বদলের হাওয়া। অনির্বাণ লাইব্রেরির চার কর্ণধার এখন প্রৌঢ়। কিন্তু তাদের কচি সবুজ মনটা এখনো বেঁচে আছে। তাদের হাত ধরে  অনির্বাণ লাইব্রেরি তাদের কাজের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। 

৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ, তাঁর একটা ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামের চার কিশোর বই পড়বার মাধ্যমে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন ধীরে ধীরে। এই বিপ্লবের সুফল ছড়িয়ে পড়ুক সমস্ত গ্রাম-মফস্বল-শহর-বিভাগ তথা দেশজুড়ে। মনের হাসপাতাল তথা লাইব্রেরি ছড়িয়ে পড়ুক মহামারির মতন করে।
 

Related Topics

টপ নিউজ

লাইব্রেরি / বই পড়া / পবলিক লাইব্রেরি / বই

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আমিরুল ইসলাম (ডানে)। ফাইল ছবি
    ৪১ জন আত্মীয়-পরিজনকে আনতে ভিসার তদবির, যুক্তরাজ্যে তদন্তের মুখে লেবারদলের মেয়র
  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে যেভাবে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র
    স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে যেভাবে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র
  • বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি: টিবিএস
    প্রফেসর ইউনূস যখন কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনছি: মির্জা ফখরুল
  • ছবি: সংগৃহীত
    ভারতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৯ জন নিহত
  • নিষেধাজ্ঞা পেছাতে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের পক্ষে আনা প্রস্তাবে মাত্র চারটি দেশ সমর্থন দেয়। ছবি: রয়টার্স
    রাশিয়া, চীনের চেষ্টা ব্যর্থ, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হচ্ছে
  • পিয়ানোর আভিজাত্য: ঢাকায় পিয়ানো কারা শেখে, কোথায় শেখে
    পিয়ানোর আভিজাত্য: ঢাকায় পিয়ানো কারা শেখে, কোথায় শেখে

Related News

  • ছোট হচ্ছে বেস্টসেলার বইয়ের বাক্য; কীভাবে বিশ্বব্যাপী কমে যাচ্ছে পড়ার অভ্যাস?
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ
  • বিবিসির চোখে পৃথিবী বদলে দেওয়া ১০০ উপন্যাস
  • অরুন্ধতী রায়ের ‘আজাদি’সহ ২৫ বই নিষিদ্ধ ঘোষণা কাশ্মীরে
  • হান্স অ্যান্ডারসনের রূপকথার সঙ্গে ভালোবাসা ও ঘৃণার যে সম্পর্ক !

Most Read

1
কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আমিরুল ইসলাম (ডানে)। ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক

৪১ জন আত্মীয়-পরিজনকে আনতে ভিসার তদবির, যুক্তরাজ্যে তদন্তের মুখে লেবারদলের মেয়র

2
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে যেভাবে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র
অর্থনীতি

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে যেভাবে ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র

3
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

প্রফেসর ইউনূস যখন কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল জিয়াউর রহমানের কণ্ঠ শুনছি: মির্জা ফখরুল

4
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

ভারতে থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৩৯ জন নিহত

5
নিষেধাজ্ঞা পেছাতে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের পক্ষে আনা প্রস্তাবে মাত্র চারটি দেশ সমর্থন দেয়। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

রাশিয়া, চীনের চেষ্টা ব্যর্থ, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হচ্ছে

6
পিয়ানোর আভিজাত্য: ঢাকায় পিয়ানো কারা শেখে, কোথায় শেখে
ফিচার

পিয়ানোর আভিজাত্য: ঢাকায় পিয়ানো কারা শেখে, কোথায় শেখে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net