Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

জলপুতুল পাপেটস: প্রায় দুই দশক ধরে পাপেটের গল্প বলছেন যারা

মঞ্চে চলছে হলুদ-হইলদ্যা নিয়ে দুই পাপেটের ঝগড়া। আর তা শুনে মঞ্চের নিচে হেসে লুটিয়ে পড়ছে একদল শিশু। মাঝেমাঝে উচ্চস্বরে চিৎকার করছে আবার জোরে হাততালিও দিচ্ছে। এর মাঝে আবার অতি উৎসাহী শিশু পর্দা ঘেরা মঞ্চের পেছনে কী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছে।
জলপুতুল পাপেটস: প্রায় দুই দশক ধরে পাপেটের গল্প বলছেন যারা

ফিচার

সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
04 November, 2024, 07:50 pm
Last modified: 05 November, 2024, 02:21 pm

Related News

  • বাটি ছাঁট থেকে রোনাল্ডো কাট: সেলুনগুলো যেভাবে বদলে যাচ্ছে জেন্টস পারলারে
  • ঈদের সাজগোজ থেকে খাবার; আগের রাতে মায়ের জাদুতেই ঈদ আনন্দ পায় পূর্ণতা
  • নাসিরুদ্দিন হোজ্জা গাধার পিঠে কেন উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছেন?
  • ঈদ কার্ড: হারিয়েও ফিরে আসে বারবার
  • বিশ্ব ভ্রমণের বিরল অর্জনের পথে নাজমুন নাহার  

জলপুতুল পাপেটস: প্রায় দুই দশক ধরে পাপেটের গল্প বলছেন যারা

মঞ্চে চলছে হলুদ-হইলদ্যা নিয়ে দুই পাপেটের ঝগড়া। আর তা শুনে মঞ্চের নিচে হেসে লুটিয়ে পড়ছে একদল শিশু। মাঝেমাঝে উচ্চস্বরে চিৎকার করছে আবার জোরে হাততালিও দিচ্ছে। এর মাঝে আবার অতি উৎসাহী শিশু পর্দা ঘেরা মঞ্চের পেছনে কী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছে।
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
04 November, 2024, 07:50 pm
Last modified: 05 November, 2024, 02:21 pm
নানান রঙের পাপেট ছবি: জলপুতুল পাপেটস

'আমার নাম হইলো হইলদ্যা। আমার গাছে উঠতে ভাল্লাগে...'

'এই এই, নিজের নাম হইলদ্যা কেন বলছিস? বল তোর নাম হলুদ'

'না, আমি হইলদ্যাই বলুম'

মঞ্চে চলছে হলুদ-হইলদ্যা নিয়ে দুই পাপেটের ঝগড়া। আর তা শুনে মঞ্চের নিচে হেসে লুটিয়ে পড়ছে একদল শিশু। মাঝেমাঝে উচ্চস্বরে চিৎকার করছে আবার জোরে হাততালিও দিচ্ছে। এর মাঝে আবার অতি উৎসাহী শিশু পর্দা ঘেরা মঞ্চের পেছনে কী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছে।

মঞ্চের উপর যারা পাপেট নিয়ে শিশুদের আনন্দ বিলাচ্ছেন, তারা 'জলপুতুল পাপেটস'। তাদের অংশ হিসেবে লাল আর হলুদ নামের দুই পাপেট বসিয়েছে বচসার আসর। যে বচসা শিশুদের মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছে হাসি। 

জলপুতুল পাপেটস দলের পথ চলা শুরু হয় ২০০৫ সালে। সংগঠক সাইফুল জার্নাল তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে শুরু করেন জলপুতুল পাপেটস-এর অভিযান।   

মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেলা এবং জনসমাগমে পাপেট্রি ছিল বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইউরোপে পাপেট নাচের সবচেয়ে প্রাচীনতম ধারক জার্মানি। জার্মানির ক্যাসপার নামক পুতুল চরিত্রটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল। এই চরিত্রটি ছিল অনেক ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও বিদ্রুপ প্রকাশের একটি মাধ্যম। 

মধ্যযুগে ইটালিতে 'পুলসিনেলো' নামে আবির্ভাব ঘটে সুতা পাপেটের, ফ্রান্সে যার নতুন নাম হয় 'পলসিনেল'। গ্লাভস বা দস্তানা পাপেটের জনপ্রিয় চরিত্র হিসেবে জন্ম নেয় 'পাঞ্চ'। এই পাঞ্চ চরিত্রের প্রতিরূপ দেখা যায় রাশিয়া, জাপান ও ব্রাজিলে। জার্মানি ও সুইডেনে পাঞ্চের নাম 'ক্যাসপার', হল্যান্ডে 'ইয়ান ক্লাসেন' এবং হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ায় 'ভাসিলচে'। বাংলাদেশে পাপেট জনপ্রিয়তা পায় মুস্তাফা মনোয়ারের হাত ধরে। আজ তারই উত্তরসূরীরা বাংলাদেশে পাপেটের যাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছেন।

পাপেট অভিযান শুরু

জলপুতুল পাপেটস-এর মূল সংগঠক সাইফুল জার্নাল ২০০৫ সালের দিকে যুক্ত ছিলেন নাটকের দল প্রাচ্যনাটের সঙ্গে। সেখানেই খবর পান বাংলাদেশের 'পাপেটম্যান' খ্যাত মুস্তাফা মনোয়ার পাপেট নিয়ে ওয়ার্কশপ করাবেন। পাপেট শেখার আগ্রহ সাইফুলের বরাবরই ছিল। তাই শিল্পকে সঙ্গী করেই সাইফুল দীক্ষা নিতে গেলেন পাপেটের এই প্রবাদপ্রতীম শিল্পীর কাছে।

পরবর্তী সময়ে মুস্তাফা মনোয়ারের এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের অধীনে কাজ শিখে তারই প্রোডাকশনে কাজ শুরু করলেন সাইফুল। কাজ করতে গিয়ে দেখলেন পাপেট নিয়ে কাজ করতে গেলে তা সেটেই করতে হয়, পথে-প্রান্তরে আনন্দ ছড়িয়ে কাজ করা তুলনামূলক কঠিন। সহজে পাপেটকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ঠিক করলেন, হ্যান্ড পাপেট নিয়ে কাজ করবেন। আর তা করবেন শিশুদের সঠিক মনোবিকাশের জন্য।

শুরু করলেন নিজের মতো করে পাপেট বানানো। কিন্তু পাপেট নিয়ে গুচ্ছের কাজ তো একা করা সম্ভব নয়। এ যাত্রায় দরকার এমন কিছু মানুষ, যারা পাপেটকে ভালোবেসে আপন করে নেবেন। তাতে অবশ্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি সাইফুলকে। সঙ্গ দিলেন তারই বন্ধুরা। বর্তমানে জলপুতুল পাপেটের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে আছেন সাইফুল জার্নাল। তার সাথে আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে আছেন আজমাইন আজাদ কথা, স্টোরি অ্যান্ড পাপেট ডিরেক্টর হিসেবে শাহরিয়ার শাওন, লজিস্টিক্স বিভাগের প্রধান হিসেবে আসিফ চৌধুরী, অ্যানিমেশন-সেট ডিরেক্টর অ্যান্ড পাপেট মেকানিজম বিভাগে আছেন রায়হান রাফি, সৈয়দা ফিরোজা খানম-সহ আরো অনেক বন্ধু।

শিশুদের প্রশিক্ষণ। ছবি: জলপুতুল পাপেটস

সাইফুল বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম সহজে পাপেট তৈরি করতে। এমন একটা কিছু করতে চেয়েছিলাম, যা শিশুরা সহজে শিখতে পারবে। সহজে বানাতে পারবে। সেই জায়গা থেকেই মূলত আমাদের শুরু।" 

প্রথম থেকেই জলপুতুল পাপেটের লক্ষ্য ছিল শিশুদের কাছে পৌঁছানো। তাই শিশুদের জন্য বিনোদন, বিনোদনের শিক্ষা এবং তাদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করাকে প্রতিপাদ্য করেই কাজ শুরু করেছিলেন তারা।

পরিবেশ এবং প্রকৃতি তাদের পাপেটের অন্যতম অনুষঙ্গ, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন প্লাস্টিককে। প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটি নিয়ে তো প্রতিনিয়ত কাজ করছেনই, পাশাপাশি অব্যবহৃত প্লাস্টিক দিয়ে কীভাবে পাপেট বা শোপিস বানানো যায় সেটিও শিশুদের শেখাচ্ছেন তারা।

ঈশপের গল্প থেকে সমসাময়িক গল্প

জলপুতুল পাপেটস যেহেতু শিশুদের জন্যই কাজ করে, তাই গল্পের স্ক্রিপ্টিং এর ক্ষেত্রেও শিশুকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশি। গল্প লেখার সময় খেয়াল রাখা হয়, গল্পটি শুনে বা দেখে শিশু আনন্দ পাবে কি–না। তাছাড়া, গল্পের বার্তাকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেন তারা। গল্পের মধ্যে যাতে নৈতিকতা এবং ইতিবাচকতা বজায় থাকে সেটি লক্ষ্য রাখাও তাদের অন্যতম দায়িত্ব। 

ইতোমধ্যে ঈশপের পরী-কাঠুরিয়ার গল্প, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা লিচু চোর, সুকুরমার রায়ের অবাক জলপান-সহ আরো অনেক গল্প নিয়ে পাপেট শো করেছে জলপুতুল পাপেটস।

সাইফুল বলেন, "শিশু গল্প থেকে কী শিখলো, সেটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করি আমরা। সেটা ঈশপের গল্পই হোক বা বর্তমান সময়ে কোনো একটা গল্প হোক। এটা কিন্তু শিশুকে গিলিয়ে দেওয়ার মতো কিছু না, দেখতে দেখতে শিশু নিজেই শিখে যাবে। সমসাময়িক বিষয়গুলোকে আমরা গল্পে আনার চেষ্টা করি, তাছাড়া পুরাতন গল্পগুলোকে নতুন আঙ্গিকে আনার চেষ্টা করি, যাতে এখনকার বাচ্চারা এটা পছন্দ করে।" 

"সময়ের সাথে সাথে আমরা তাল মেলানোর চেষ্টা করি, তবে গল্পের মোরাল অব দ্য স্টোরি যেটা সেটা একই থাকে," যোগ করেন সাইফুল।

জলপুতুল পাপেটস-এর আর্ট ডিরেকশন বিভাগের প্রধান আজমাইন আজাদ বলেন, "আমরা নিয়মিত যেসব জায়গায় যাই, সেখানকার বাচ্চাদের সাথে কথা বলাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গিয়েই সাথে সাথে ওদেরকে জিজ্ঞেস করি, 'কেমন আছো তোমরা?' আবার এমন হলো যে। আমরা কোনো ইভেন্টে গিয়েছি, তখন সেই ইভেন্ট অনুযায়ী আলাপ শুরু করি। আমাদের নিজেদেরও কিছু গল্প আছে। সেটার স্ক্রিপ্ট হয়তো আমাদের সদস্যরা লেখে বা বই থেকে নেই। কিন্তু আমাদের যখন কোনো স্ক্রিপ্ট থাকে না, তখন আমরা একদম ইন্টারেক্টিভ জায়গায় চলে যাই বাচ্চাদের সাথে।" 

প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের ওয়ার্কশপ। ছবি: জলপুতুল পাপেটস

"যেমন— বন্যায় কবলিত বাচ্চাদের জন্য যখন শো করতে গিয়েছি, তখন গানের পাখি হিসেবে বলেছি, উড়ে উড়ে দেখে আসলাম কত মানুষ পানিতে ভেসে গেছে, ওদের এটা-সেটা প্রয়োজন। এভাবেই আসলে কাজ করি আমরা," জানালেন আজমাইন।

পাপেটের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সঠিক বার্তা দেওয়ার কাজ করে জলপুতুল পাপেটস। যেখানে মানুষের প্রতি মানুষের যে আদব-কায়দা-ব্যবহার, চালচলন সেগুলো শিশুরা শিখতে পারে। সাইফুল বলেন, "বিশেষ করে শিষ্টাচারের খুব অভাব আমাদের মধ্যে। বড়দের মধ্যেও নেই, ছোটরা তো শব্দটিই জানে না। শিশুরা যখন বড় হবে, তারা যেন এটার চর্চা চালু রাখে- সেই চেষ্টা আমরা করি।"

প্রধান চরিত্র চারটি, আরও আছে অনেক…

লাল, হইলদ্যা, গানের পাখি আর ঘেউ— চারটি প্রধান চরিত্র জলপুতুল পাপেটস-এর। এরমধ্যে গানের পাখি সুরেলা কণ্ঠে গান গায় এবং দায়িত্বের জায়গা থেকে নানান রকম তথ্য দিয়ে থাকে। সিংহের বাচ্চা ঘেউ চরিত্রটি একটি কুকুরের। লাল-হলুদ দুই বন্ধু, যাদের খুনসুটি সবসময় চলতে থাকে। হলুদ ভীষণ দুষ্টু প্রকৃতির চরিত্র। সারাক্ষণ অন্যদের বিরক্ত করে বেড়ায়। অপরদিকে, লাল সবসময় নিয়ম মেনে চলে, ঠিকঠাক স্কুলে যায়। নীতি-নৈতিকতা মেনে চলে সবসময়।

চরিত্রের পরিচয় দিতে গিয়ে সাইফুল বলেন, "হলুদ চরিত্রটি ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই লোকাল। ও অনেককিছু বলে ফেলে। আবার লাল ওকে বোঝায়, পঁচা কথা না বলতে, ঠিকভাবে কথা বলতে হয়।"

প্রতিটি শো-এর সূচনা এবং সমাপ্তির সময়ে আসর মাতায় এই চরিত্রগুলো। সাইফুল যোগ করেন, "আইকনিক চরিত্র হিসেবে ওরা সবসময় উপস্থিত থাকে। উপস্থাপকও হয় ওরা। ওরাই বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করে কেমন আছো তোমরা, কেমন গল্প শুনতে চাও। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আমরা মূল গল্পে চলে যাই। এরপর শেষের দিকে চরিত্রগুলো মঞ্চে আসে। উপস্থিত শিশুদের কেমন লেগেছে, এমন গল্প ওরা আরও শুনতে চায় কি–না এসব জানতে চায়।"

পাপেটের সেট কেমন থাকে জানতে চাইলে আজমাইন বলেন, "আমাদের একটা সেট থাকে। সেটের পেছনে আমরা থাকি। যদিও আমাদের অনেক বন্ধু আছেন, যারা সেটের সামনে পাপেট নিয়ে কাজ করেন। সেটের পেছনে থাকলে বাচ্চাদের মজা অন্যরকম থাকে। কারণ ওরা দেখতে পাচ্ছে না, ওদের আগ্রহ অন্যরকম থাকে। ওরা অনেক সময় সেটের পেছনে চলে আসতে চায়। দেখতে চায় যে কী হচ্ছে পেছনে।"

বাংলাদেশের সর্বত্রই পাপেটের শো করে থাকে জলপুতুল পাপেটস। যেহেতু সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে তারা কাজ করেন, তাই সেখানে কোনো আর্থিক লেনদেন থাকে না। ঢাকার ভেতরে কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট, কড়াইল বস্তি, মোহাম্মদপুর বেড়ি বাঁধের দিকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একাধিকবার পাপেট শো করেছেন তারা। 

তাছাড়া ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, হবিগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, সুন্দরবন, খুলনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ আরও বিভিন্ন জেলাতেও তারা সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য পাপেট শো–তে অংশ নিয়েছেন।

তবে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণেও পাপেট শো করে জলপুতুল পাপেটস। গ্রামীণফোনের সাথে একাধিকবার কাজ করার সুযোগ হয়েছে; ইউসিবি ব্যাংকের অনুষ্ঠানেও পাপেট শো করতে গেছে জলপুতুল পাপেটস। 

এছাড়া নিমন্ত্রণ পেলে জন্মদিন, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানেও তারা হাজির হয়েছেন পাপেট হাতে। এক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট কিছু ফি-এর বিনিময়ে কাজ করেন তারা।

ছবি: জলপুতুল পাপেটস

পাপেট বানানো শিখতে চাইলে…

প্রতিমাসে দুই থেকে তিনটি শো করে জলপুতুল পাপেটস। তবে শুধু শো করা-ই নয়, পাপেট তৈরি করা নিয়ে শিশুদের জন্য ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে জলপুতুল পাপেটস-এর অফিসে আয়োজন করা হয় এটির। সেখানে সপ্তাহান্তে শিশুরা আসে পাপেট বানানো শিখতে।  

আজমাইন বলেন, "পাপেটের খুঁটিনাটি সব ওদের শেখানো হয়। পাপেট বানানো থেকে শুরু করে ভয়েস দেওয়া, গল্প লেখা সবই শেখাই ওয়ার্কশপে। পথে পথে আমরা যখন পাপেটের শো করি, তখনও কম সময়ের জন্য ওয়ার্কশপ করাই।"

একটি ভালো পাপেট শো করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দলগত কাজ। কেবল ভালো গল্প হলেই চলে না। গল্পের চরিত্র অনুযায়ী পাপেট বানাতে হয় এবং তাতে ভয়েস দিতে হয়। প্রতিটি পাপেট জলপুতুল পাপেটস-এর সদস্যরা নিজেদের হাতে তৈরি করেন।

জলপুতুল পাপেটস-এর বেশিরভাগ পাপেট মূলত হ্যান্ড পাপেট। যাদের মূল কাঠামো বোতল দিয়ে তৈরি হয়। তাছাড়া গ্লাভস পাপেট, টকিং পাপেট, রড পাপেটও তৈরি করেন তারা। ঘরে পড়ে থাকা মোজা, কাপড়, কাগজকে অবলম্বন করেই তৈরি হয় বেশিরভাগ পাপেট। এখানকার ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষিত শিশুরাও সেসব তৈরি করতে পারে।

বয়স অনুযায়ী শিশুদের পাপেটের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আজমাইন বলেন, "যেসব শিশুদের বয়স ৪ থেকে ৫ বছর, তাদেরকে আমরা চাইলেও বড় পাপেটের মধ্যে নিয়ে যেতে পারি না। মোজা দিয়ে সহজভাবে বা ওর আশেপাশে বাসায় যা কিছু আছে তা দিয়েই যেন পাপেট বানাতে পারে সেটা আমরা শেখাই। আবার একটু বড় বাচ্চা যারা, ক্লাস ফোরে বা ফাইভে পড়ে তাদেরকে আমরা ফোম দিয়ে পাপেটের ডাইস কাটা, বডি বানানো, হাত-পা বানানো শেখাই। এটা আসলে বয়সের ওপর নির্ভর করে।"

কীভাবে তৈরি হয় পাপেট?

বড় পাপেটের জন্য আগে মাটি দিয়ে ছাঁচ তৈরি করতে হয়। তার উপর গ্লিসারিন দিয়ে টুকরা টুকরা কাগজ বসাতে হয়। এরপর আবার ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন দিয়ে আরেক দফা কাগজ বসাতে হয়। এভাবে ২/৩ লেয়ারে কাগজ বসালেই কাঠামো তৈরি হয়ে যায়। এরপর এগুলোকে রোদে শুকানো হয়। সবশেষে রং করতে হয়। মোট মিলিয়ে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে।

দলের আরেক সদস্য শাওন বললেন, "পাপেটে রং দেওয়ার পর চোখের এক্সপ্রেশন দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চোখে একটা বোতাম লাগিয়ে দিলেই হয় না। চোখের এক্সপ্রেশন, ক্যারেক্টারাইজেশন এবং ভয়েস দিয়ে পুরো একটা চরিত্র তৈরি করতে হয়।"

ছবি: জলপুতুল পাপেটস

কিছু কিছু বড় পাপেটের বাহ্যিক অংশের মূল উপকরণ হিসেবে প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়। নানান রকমের রং ব্যবহার করে চকচকে করা হয়। তাছাড়া, কিছু পাপেট তৈরি করা হয় উল আর পাট দিয়ে। অনেক পাপেটের চুল বসানোর ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় শীতের কাপড় এবং শপিং ব্যাগ।

শাওন বলেন, "চোখের ক্ষেত্রে বোতাম, বল ব্যবহার করি, আবার অনেক সময় হাতে এঁকেও আমরা চোখ আঁকি। কিছু পাপেটের জন্য বলের ওপর প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহার করি। হাত–পা ভেঙ্গে গেলে এক ধরনের ব্যান্ডেজ করা হয়। ওই ব্যান্ডেজ কেটে কেটে পানিতে ভিজিয়ে লাগিয়ে দিলেই কিছুক্ষণ পর শক্ত হয়ে যায়।" 

"সাধারণত চেনা উপকরণ দিয়েই আমরা বেশিরভাগ পাপেট তৈরি করি। কোনোটার ম্যাটারিয়াল বোতল, কোনোটা বল। এই অঞ্চলের পুতুলের মতোই দেখতে আমাদের পাপেটগুলো। অনেক বেশি সুতা পুতুলের মতো আমাদের পাপেটের চেহারা। শুধু আমরা সুতায় না করে হাতে করছি। সুতা পুতুল যেমন কোনো কথা বলে না, অনেক বেশি অঙ্গভঙ্গি নির্ভর। আমাদের পুতুলও তাই," যোগ করেন তিনি।

জলপুতুল পাপেট-এর আরেক সদস্য আসিফ জানালেন, "যখন একবার তৈরি হয়ে যায় এবং পরে আমরা রেপ্লিকা বানাই, তখন আবার সময় কম লাগে। অনেক চরিত্র আছে, যারা একবার শো করার পর হয়তো আর মঞ্চে যাওয়ার সুযোগই পায় না। কিছু পাপেট আছে যারা কথা বলে না, চরিত্রের প্রয়োজনে আসে। বাচ্চাদের নিয়ে যখন কাজ করি, তখন তারা চায় তাদের পাপেট কথা বলুক। এজন্য আমরা হ্যান্ড পাপেট বেশি করি, আর এটাই আমাদের স্টাইল।"

সাধারণত একটানা কাজ করলে প্লাস্টারের তৈরি একেকটি বড় পাপেট তৈরি করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। তবে কিছু কিছু পাপেটের কাজ শেষ করতে ৬-৭ দিনও সময় লেগে যায়।

পৃষ্ঠপোষকতার অভাব পাপেটে

১৯ বছর ধরে চলছে জলপুতুল পাপেটস-এর পথচলা। প্রায় দুই দশক ধরে চলা সংগঠনটি শুরু থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। এত বছর পরেও বাংলাদেশে পাপেটের নির্ধারিত কোনো জায়গা নেই বলে আক্ষেপ রয়েছে সাইফুল জার্নালের।

তিনি বলেন, "আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ আসলে রাষ্ট্রীয়ভাবে। শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি কিংবা বাংলা একাডেমি-সহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে আছে। সেখানে গানের জন্য জায়গা আছে, নাচের জন্য আছে এবং এদের পৃষ্ঠপোষকও আছে। শুধু পাপেটের জায়গায় কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই।" 

ছবি: জলপুতুল পাপেটস

তিনি বলেন, "আমরা ১৯ বছর কাজ করছি, তার আগেও অনেক দল কাজ করেছে। মুস্তাফা মনোয়ার স্যার স্বাধীনতার পর থেকেই কাজ করছেন। গত ৫২-৫৩ বছরে এই সেক্টরে কোনো পৃষ্ঠপোষক এগিয়ে আসেনি। এর দায়টা আসলে রাষ্ট্রের। এই একটা মাধ্যম খুবই পপুলার কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং অযত্নে একদমই নাই হয়ে গেছে।"

"গ্রামাঞ্চলে সুতা পাপেট বা অন্য যেসব ট্র্যাডিশনাল পাপেট হতো, সেটার দল এখন একদম হাতেগোনা। তাও একেবারে জীর্ণ অবস্থা। আমরা সামগ্রিকভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে গেছি। এখানে শুধু জলপুতুল পাপেটস নয়, পুরো শিল্পই একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন এখানে, কর্পোরেটদের দায়িত্ব আছে, বেসরকারি সংস্থার দায়িত্ব আছে এবং উনাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ এই মাধ্যমটিই শিশুর মনোবিকাশ, সংস্কৃতি, প্রকৃতি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে এবং তাকে গড়ে তুলতে পারে," যোগ করেন তিনি।

কেউ পাপেট অর্ডার দিয়ে কিনতে চাইলে সেই সুযোগও জলপুতুল পাপেটস রেখেছে। দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই পাপেট সংগ্রহ করেছেন এখান থেকে। সাইফুল বলেন, "কেউ পাপেট কিনতে চাইলে আমরা আগে আমাদের নমুনা দেখাই। তারাও তাদের নমুনা আমাদের দিতে পারে। আসলে পরিমাণের ওপর দাম নির্ভর করে। দেখা গেল কেউ দুই পিস নিতে চাইলো, তখন একটু আগ্রহ কম থাকে। কারণ অল্প পরিমাণ নিলে উৎপাদন খরচ বেশি হয়; আর পরিমাণে বেশি নিলে খরচটা কমে আসে।"

জলপুতুল পাপেটস- এর পাপেট ইতোমধ্যে দেশের বাইরেও সুনাম ছড়িয়েছে। তাদের তৈরি পাপেট কোরিয়া, স্কটল্যান্ডেও পৌঁছে গেছে। কয়েকবছর আগে স্কটিস ফার্স্ট মিনিস্টারের প্রচারণার উদ্দেশ্যে ফরমায়েশি পাপেটও তৈরি করেছিলেন তারা। 

ছবি: জলপুতুল পাপেটস

তৈরি করতে চান পাপেট মিউজিয়াম

জলপুতুল পাপেটস-এর দ্বার সবসময় সকলের জন্য উন্মুক্ত বলে মনে করেন দলের সদস্যরা। কেউ চাইলে পাপেটের সাথেও কাজ করতে পারবেন, আবার চাইলে পর্দার পেছনেও কাজ করতে পারবেন। তবে শর্ত একটাই, পর্যাপ্ত আগ্রহ এবং সদিচ্ছা থাকতে হবে।

শিশুদের পাপেটের শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলতে পারছেন, তা নিয়ে ভীষণ আনন্দ হয় জলপুতুল পাপেট-এর সদস্যদের। তাই কেবল ঢাকার ভেতরেই নয়, ঢাকার বাইরেও দল গঠন করতে চান তারা। মূল সংগঠক বলেন, "সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় তত পরিমাণে যদি দাঁড়ায়, যেটা শিশু-কিশোররা নিজেরাই চালাবে— তাহলে এই মিডিয়ামটা ওদেরকে দিয়ে দিতে চাই এবং ওদের সাথে নেটওয়ার্কিং তৈরি করতে চাই।"

"আমাদের আরেকটি ইচ্ছা, বাংলাদেশে পাপেট মিউজিয়াম তৈরি করতে চাই। যেখানে পাপেট্রি সম্পর্কে সবকিছু লেখা থাকবে এবং তা যে কেউ পড়লেই ধারণা পেয়ে যাবেন।" 

"আমাদের ইচ্ছা পৃথিবীর বিভিন্ন পাপেট সংগ্রহ করে তা দিয়ে শোকেসিং করা। আর আমরা আমাদের পাপেট স্কুল চলমান রাখতে চাই। যেটা শিশুদের জন্যই হবে। তাছাড়া অভিভাবকদের জন্যও আমরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে চাই। শিশুর শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকেরা বিনোদনের জায়গা থেকে যাতে পাপেটকে তাদের হাতে তুলে দেয়, তা আমরা চাই," যোগ করেন সাইফুল।

ছবি: জলপুতুল পাপেটস

প্রান্তিক অঞ্চলের শিশুদের জন্য কাজ করা জলপুতুল পাপেটস-এর অন্যতম লক্ষ্য। সাইফুল বলেন, "সুন্দরবনের করমজলের একটা শিশু পাপেট বানাবে কী! সে তো কখনো পাপেট দেখেইনি। সেখানে পাপেট যাওয়ার পর এগুলো ওর কাছে সিনেমার মতো লাগলো দেখতে। যখন শিশুকে বানাতে দেওয়া হলো, সে তো মহাখুশি। পারলে বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে আসে দেখানোর জন্য।" 

"আমরা মূলত সেটাই চেষ্টা করি যে, একটা আর্ট ফর্ম শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও সেই আনন্দের স্বাদ পাবে। আমাদের হয়তো প্রতি মাসে বা প্রতি সপ্তাহে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তবে বছরে একবার হলেও আমরা চেষ্টা করি সেখানকার বাচ্চাদের মাঝে এই পাপেটের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে," যোগ করেন তিনি। 
 

Related Topics

টপ নিউজ

পাপেট / পাপেট শো / পাপেট তৈরি / ফিচার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে
  • দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত
  • আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে
  • বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা
  • মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল
  • বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

Related News

  • বাটি ছাঁট থেকে রোনাল্ডো কাট: সেলুনগুলো যেভাবে বদলে যাচ্ছে জেন্টস পারলারে
  • ঈদের সাজগোজ থেকে খাবার; আগের রাতে মায়ের জাদুতেই ঈদ আনন্দ পায় পূর্ণতা
  • নাসিরুদ্দিন হোজ্জা গাধার পিঠে কেন উল্টো দিকে মুখ করে বসে আছেন?
  • ঈদ কার্ড: হারিয়েও ফিরে আসে বারবার
  • বিশ্ব ভ্রমণের বিরল অর্জনের পথে নাজমুন নাহার  

Most Read

1
অর্থনীতি

কাল থেকে পাওয়া যাবে নতুন টাকা, সংগ্রহ করবেন যেভাবে

2
বাংলাদেশ

দেশের প্রথম মনোরেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে: মেয়র শাহাদাত

3
অর্থনীতি

আগামী বছর থেকে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে

4
অর্থনীতি

বাস-ট্রাক, ট্যাক্সির অগ্রিম কর বাড়ছে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত, পরিবহন ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

5
বাংলাদেশ

মেজর সিনহা হত্যা মামলা: প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড বহাল

6
অর্থনীতি

বাজেটে প্রাথমিকে বরাদ্দ কমছে, বাড়ছে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষায়

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab