Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

মৃত প্রাণী সংরক্ষণ করা যার নেশা 

জুয়েল বাংলাদেশে প্রথম নীল গাই ও লোনা পানির কুমিরের ট্যাক্সিডার্মি করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০০ প্রাণীর স্টাফিং করেছেন তিনি। 
মৃত প্রাণী সংরক্ষণ করা যার নেশা 

ফিচার

সালেহ শফিক
24 October, 2024, 09:00 pm
Last modified: 26 October, 2024, 02:38 pm

Related News

  • জনপ্রিয় হচ্ছে মাচায় আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি, সারাদেশে ৬৫৩টি মডেল ঘর নির্মাণ
  • ১ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের চীনা সিরামিক পাত্রের সংগ্রহ উপহার পেলো ব্রিটিশ মিউজিয়াম
  • ক্লদ মনের ক্যানভাস
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কমিটি ঘোষণা
  • সুরকার শোপাঁর হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীতের সন্ধান পাওয়া গেল ২০০ বছর পর

মৃত প্রাণী সংরক্ষণ করা যার নেশা 

জুয়েল বাংলাদেশে প্রথম নীল গাই ও লোনা পানির কুমিরের ট্যাক্সিডার্মি করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০০ প্রাণীর স্টাফিং করেছেন তিনি। 
সালেহ শফিক
24 October, 2024, 09:00 pm
Last modified: 26 October, 2024, 02:38 pm
লোনা জলের কুমিরের নমুনার সঙ্গে জুয়েল রানা। ছবি: টিবিএস

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছিলেন জুয়েল রানা। পড়া শেষ হওয়ার আগেই ২০১০ সালে সহকারী কিউরেটর হিসাবে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু সেতু আঞ্চলিক জাদুঘরে। এ সময়  ড. আনন্দ কুমার দাশ ছিলেন জাদুঘরের কিউরেটর। প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি তার অপরিসীম দরদ ও বিস্তর জানার আগ্রহ। ড. দাশ তার সকল দক্ষতা দিয়ে জাদুঘরটি গড়ে তুলছিলেন। জুয়েলের ছিল শেখার মন ও ইচ্ছাশক্তি। কীভাবে জাদুঘর সাজাতে হয়, কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হয়, কীভাবে বন্ধুতা গড়তে হয় স্থানীয়দের সঙ্গে তা শিখতে থাকলেন।

তবে জুয়েলের বেশি আগ্রহ মৃত প্রাণী সংরক্ষণের ব্যাপারে। এটি একটি কারিগরি দক্ষতার ব্যাপার তবে বিজ্ঞানমনস্ক না হলে এতে সাফল্য পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানের এ শাখাটিকে বলে ট্যাক্সিডার্মি। গ্রিক ট্যাক্সি মানে সজ্জা এবং ডার্মি মানে চামড়া। দুয়ে মিলে সহজ অর্থ  দাড়ায় 'চামড়া সাজানো'। আর এ কাজটি করা হয়ে থাকে স্টাফিং পদ্ধতিতে। 

ড. দাশের কাছে ট্যাক্সিডার্মির প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন জুয়েল। তারপর ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে স্বল্পমেয়াদী এক কোর্সে অধিকতর জ্ঞান আহরণ করেন। এখানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.বিধান চন্দ্র দাশের দেখা পান— যিনি এজন আপাদমস্তক জুওলজিস্ট; এখন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। স্টাফিং বিষয়ে তার জ্ঞান ও জানাশোনা মুগ্ধ করার মতো। জুয়েল তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে থাকেন। 

করমজল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টারে বাঘ ও কুমীরের হাড় সংরক্ষণে কাজ করছেন জুয়েল ও তার সহকর্মীরা।

জাতীয় জাদুঘরের উপ-কিপার ড. শওকত ইমাম খানও জুয়েলের একজন শিক্ষাগুরু। পরে মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে  দীর্ঘমেয়াদে আধুনিক ট্যাক্সিডার্মির কাজ শিখেছেন। 

জুয়েল নিজে প্রথম স্টাফিং করেছিলেন একটি শঙ্খচিলের; কিন্তু প্রাণীটির পা উল্টো হয়ে গিয়েছিল। এমন ঘটনা বা দুর্ঘটনা স্টাফিংয়ে স্বাভাবিক ব্যাপার, বিশেষত শুরুর দিকে। যেমন— বকের গলা বড়, একটু মনোযোগ হারালেই তা ছোট হয়ে যায়। স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পাখি, উভচর প্রাণী তথা সব প্রাণীরই নিজস্ব ও স্বতন্ত্র দেহকাঠামো রয়েছে। ট্যাক্সিডার্মিস্ট যে প্রাণীটি সংরক্ষণ করবেন, সেটির অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি সম্পর্কে তার বিশদ জ্ঞান থাকতে হবে। যদি তিনি পারফেকশনিস্ট হতে চান, তবে তাকে প্রাণীটির বসা ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি, ওড়ার ধরণ, এমনকি খাদ্যাভ্যাসও জানতে হবে।

ট্যাক্সিডার্মির প্রয়োজনীয়তা কি? জুয়েল বললেন, "প্রাণীর ইতিহাস রক্ষায় ট্যাক্সিডার্মি এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। আধুনিক যুগে ট্যাক্সিডার্মির প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এটি বেশি গুরুত্ব রাখে গবেষকের কাছে। ট্যাক্সিডার্মিস্ট গবেষকের টেবিলে প্রাণীটিকে মওজুদ রাখেন, যখন–তখন সেটি ইচ্ছেমতো নেড়েচেড়ে দেখে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করেন গবেষক। আর যারা জাদুঘরের দর্শক, তারাও এগুলোর বদৌলতে প্রাণী চিনতে পারেন, বুঝতে পারেন তার গড়ন।"

কুমীরের হাড় সংরক্ষণে ব্যস্ত জুয়েল রানা।

জুয়েল বাংলাদেশে প্রথম নীল গাই ও লোনা পানির কুমিরের ট্যাক্সিডার্মি করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০০ প্রাণীর স্টাফিং করেছেন তিনি। 

বঙ্গবন্ধু সেতু জাদুঘর কীভাবে মৃত প্রাণীর বড় সংগ্রহশালা হয়ে উঠল?— জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, "যখন বঙ্গবন্ধু সেতু গড়ে উঠছিল, সেই নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে তখন বিশ্বব্যাংক ও সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সংলগ্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের একটি ডেটাবেইজ বা জ্ঞানভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নেয়।"

"প্রাণিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জাকের হোসেনকে ওই প্রকল্পের প্রধান করা হয়েছিল। তখনও কিন্তু ভাবা হয়নি জাদুঘরের কথা। শেষে তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণের প্রয়োজনে এবং প্রদর্শনের নিমিত্তে জাদুঘরের কথা ভাবা হয়। ওইসব তথ্যের আকর্ষণীয় প্রদর্শনের কথা উঠলে স্টাফিংয়ের প্রসঙ্গ সামনে আসে। কিন্তু দেশে ট্যাক্সিডার্মিস্টের সংখ্যা নগণ্য হাওয়া, বিশেষ করে প্রশিক্ষিত ট্যাক্সিডার্মিস্ট। তাই শুরুতে স্টাফিং ছিল ধীর গতির, গতানুগতিক, অনেকটা জড়বৎ," বলেন জুয়েল।

জুয়েলের কাছ থেকে আরো জানা গেল, সাধারণত  প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের হাতে মারা পড়া (সাপ, বন বিড়াল, নীল গাই, লেপার্ড, মেছো বিড়াল) কিংবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যাওয়া প্রাণীগুলো প্রায় উনত্রিশ বছর যাবৎ এখানে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জাদুঘরটি শুধুই প্রাণীর জন্য নিবেদিত নয়, বরং এখানে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক উপকরণও প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে মৃত জীববৈচিত্রের সংগ্রহই বেশি। 

স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হলে ২০১৪ সালে জুয়েল কিউরেটর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। আধুনিক স্টাফিং পদ্ধতিতে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন জুয়েল। আধুনিক ট্যাক্সিডার্মির প্রধান বিশেষত্ব হলো, প্রাণীকে জীবন্ত দেখানো এবং নাটকীয় পরিবেশ তৈরি করা— যেন দর্শক প্রকৃতিতে প্রাণীটি দেখার অনুভূতি পায়।

দেশে প্রশিক্ষিত ট্যাক্সিডার্মিস্ট আছেন মাত্র তিন জন।

এক পর্যায়ে জুয়েল মৃত প্রাণী সংগ্রহের জন্য একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, সক্রিয় হন বাংলাদেশ বায়োডায়ভার্সিটি কনজারভেশন ফেডারেশনে (বিবিসিএফ)। পরিবেশ কর্মীদের এ সমবায়ে ২০০টির বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুক্ত আছে। কোথায় কোন প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং কীভাবে মারা যাচ্ছে– তার খবর এই নেটওয়ার্ক মারফত ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই।

জুয়েল জানান, আমাদের এখানে সংরক্ষিত মেছোবাঘটি পাওয়া গেছে ফরিদপুরের মধুখালী থেকে। বাঘটি মারা যায় স্থানীয়দের হামলার শিকার হয়ে; এর খবর পাওয়া গিয়েছিল ওই নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই। যশোরের হনুমানটি (কমন লেঙ্গুর) ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে সংগৃহীত হয়েছে, এটি বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল। পঞ্চগড়ের আটোয়ারি থেকে পাওয়া গিয়েছে নীলগাইটি, হয়তো সীমান্ত পার হয়ে এসেছিল এটি,  স্থানীয়রা একে পিটিয়ে মেরেছিল। 

নীলগাইয়ের ট্যাক্সিডার্মিতে খরচ পড়ে ১ লক্ষ টাকা প্রায়।

নীলগাই আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ১৯৪০ সালে। এখন আমাদের কাছে থাকা স্টাফড নীলগাইটিই গবেষণার উপকরণ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া গন্ডারের কথাও মনে পড়ল জুয়েলের- এশিয়ার তিন প্রজাতির গন্ডারের সব কটিই ছিল আমাদের দেশে। একশিঙ্গি বড় ইন্ডিয়ান রাইনোসরাস মিলত উত্তরবঙ্গে, জাভান রাইনোসরাসের বিস্তৃতি ছিল যশোর, বরিশাল, সুন্দরবন, সিলেট আর উত্তরাঞ্চলেও। দুই শিঙ্গি সুমাত্রান রাইনোসরাস বিচরণ করত কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। ১৮৮৫ সালে সুন্দরবনে একটি গন্ডারের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছিল। সেটিই আমাদের দেশে  গন্ডারের শেষ নিশানা। 

জুয়েল শুনেছেন, আমাদের গন্ডারের নমুনা স্টাফড করা আছে লন্ডনে, গবেষকদের এখন লন্ডন গিয়ে দেশের গন্ডার নিয়ে পড়াশোনা করা ছাড়া গতি নেই।

স্টাফিং করতে গিয়ে জুয়েল প্রথমে মৃত প্রাণীটির বয়স জেনে নেন, কীভাবে মারা গেছে তার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন। তারপর পুরো দেহের যথাযথ মাপ নেন। আলাদা করে নেন পায়ের মাপ। পায়ের হাড়, লেজের গঠন, মাথার খুলির আকৃতি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর চামড়া ছাড়িয়ে নেন, চামড়া থেকে চর্বি নিখুঁতভাবে পরিস্কার করেন, তারপর লবণ মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দেন। জীবাণু প্রতিরোধী হিসাবে লবণ দারুণ কার্যকর। এরপর পি ই ফোম, তুলা, রেজিন, প্লাস্টার অব প্যারিস, জি আই ওয়্যার দিয়ে প্রাণীটির ম্যানিকুইন তৈরি করেন। দিন কয়েক পরে ফ্রিজ থেকে চামড়া বের করে আনেন। টেকসই করার জন্য ফরমালডিহাইড, কপার সালফেট, বোরিক এসিড, বোরাক্স, আলকোহল ইত্যাদি রাসায়নিক দিয়ে চামড়ায় ট্রিটমেন্ট দেন। রাসায়নিক দেওয়ার পর সময় আর বেশি থাকে না, দুই বা চার দিনের মধ্যে প্রাণীটির স্টাফিং শেষ করতে হয়; নয়তো লোম উঠে যায় বা চামড়ার বিন্যাস ঠিক থাকে না।

দেহের বিভিন্ন অংশের সঠিক অনুপাত বজায় রাখা ট্যাক্সিডার্মিস্টের বড় চ্যালেঞ্জ।

মুখটা ঠিকঠাক তৈরি করাই স্টাফিংয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ, প্যাচার মুখ যেমন আসল খুলির ওপরই বসাতে হয়, অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে কাঠামো হতে হয় যথাযথ। ম্যানিকুইনের ভিতরকার ফাঁকা জায়গা পূরণ করা হয় তুলা ঠেসে দিয়ে। 

নীলগাইটি প্রস্তুত করতে জুয়েল ও তার সহকর্মীদের চারদিন টানা কাজ করতে হয়েছে। জুয়েল বলছিলেন, "কাজ শুরু হলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাই না। নাওয়া-খাওয়া তখন ভুলে যাই, ঘরেও ফিরি না, প্রাণীটিকে জীবন্ত করার নেশা পেয়ে বসে।" 

কোনো মৃত প্রাণী স্টাফিং করার আগে জীবাণু প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি  বিশেষ করে র‌্যাবিস টিকা নেওয়া। চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়ার পর মৃত প্রাণীটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মাটি চাপা দেওয়াও জরুরি।

স্টাফিংয়ের জন্য অনেকরকম যন্ত্রপাতি লাগে, যেমন— হেয়ার ড্রয়ার, সার্জিকাল সকল যন্ত্রপাতি, হাতুড়ি, করাত, মেজারমেন্ট টেপ, গ্লুস্টিক, প্লায়ার্স, তুলি, ব্রাশ, মাটি, রং ইত্যাদি। বিশেষ করে পাখির ক্ষেত্রে দুটি কাজ বিশেষভাবে করতে হয়; পালক বিন্যাস ও রং লেপন। 

আধুনিক ট্যাক্সিডার্মি স্টাফড প্রাণীকে প্রকৃতিতে দেখার অভিজ্ঞতা দিতে চান ট্যাক্সিডার্মিস্টরা।

আগে চোখ তৈরি করা হতো মার্বেল দিয়ে। তবে আধুনিক সময়ে ট্যাক্সিডার্মিস্টরা রেজিন ও হার্ডনার ব্যবহার করে অবিকল চোখ তৈরি করে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু জাদুঘরে বিরল বা বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে নীলগাই, লেপার্ড, প্যাঙ্গোলিন রয়েছে। প্যাঙ্গোলিনটি পাচারকারীর কাছ থেকে ভৈরবের স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছিল। দুঃখের বিষয় উদ্ধারের আগেই এর মৃত্যু ঘটে। গন্ধগোকুল, বাগডাস, ভুবন চিল, বেগুনি বক, বনবিড়াল গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। 

প্যাচা, হুদহুদ, তিলে ইগল, ফিশ ইগল, পালাস ইগলসহ ১৩৮ প্রজাতির পাখির নমুনা আছে জাদুঘরে। আছে উভচর প্রাণী ৯ প্রজাতির, মিঠা ও সামুদ্রিক মাছ ২৭৫ প্রজাতির, স্তন্যপায়ী প্রাণী ৩৩ প্রজাতির এবং সরীসৃপ ৩২ প্রজাতির। এসঙ্গে কীটপতঙ্গ, উদ্ভিদ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপকরণ, সেতু নির্মাণের তথ্য, নকশাসহ রয়েছে আট শতাধিক আলোকচিত্র। সব মিলিয়ে জাদুঘরের নমুনার সংগ্রহের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের ওপরে।

মুনিয়া, ভরত, টুনটুনি, সহেলি, মৌটুসিসহ ৬৬টি পাখির বাসা আছে। ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়লে সাধারণত বাসা খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা খবর পাঠান বা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। এগুলোয় রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট দিয়ে সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পাখির বাসা নিয়ে কাজ করতে বসার আগে জুয়েল মুখোমুখি দেয়ালে একটি কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেন— যাতে লেখা থাকে, 'টানলে কাছি (অনেক শক্ত রশি) ছিড়ে, না টানলে সুতাও ছিড়ে না'। কারণ বাসা ও প্রজাপতি ধরতে হয় খুব যত্নের সঙ্গে, মুনিয়া পাখির বাসা যেমন খুব নরম হয়, একটু চাপ পড়লেই ভেঙে যায়।

জুয়েল জানালেন, নীল গাই স্টাফিং করতে এক লাখ টাকা খরচ পড়ে। একটি বড় প্রাণীর সংরক্ষণে ট্যাক্সিডার্মিস্টকে সম্মানী দেওয়া প্রয়োজন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ইউরোপের দেশগুলোতে ট্যাক্সিডার্মি বিষয়ে উচ্চতর অধ্যয়নের সুযোগ আছে। সেখানে অনেক লোক স্টাফিংকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। 

লেপার্ড স্টাফিংয়ের কাজ অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ।

জার্মানিতে হয় ট্যাক্সিডার্মির প্রতিযোগিতা। ইউরোপের দেশেগুলোতে কাঠামো বা স্ট্র্যাকচার রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়, চাহিদামাফিক বানিয়েও নেওয়া যায় সহজে।

ওই সব দেশে অনেকেই প্রাণী পোষেন, বার্ধক্যজনিত কারণে বা অসুস্থ হয়ে কুকুর বা বিড়াল মারা গেলে সেগুলো তারা স্টাফিং করে বসার বা শোবার ঘরে রেখে দিয়ে শোক ভোলেন।

জুয়েল বললেন, "আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ট্যাক্সিডার্মিস্ট হিসেবে আছি মাত্র আমরা তিন জন। আমাদের এখানে জুওলজি ডিপার্টমেন্টগুলোর ল্যাব সমৃদ্ধ নয়। আমি বন বিভাগের প্রাণী জাদুঘর ও সুন্দরবনের করমজল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, জাতীয় চিড়িয়াখানার জাদুঘর, সরকারি সা'দত কলেজে, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ কলেজে, সরকারি তিতুমির কলেজে, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগে ও বন বিভাগের জয়মনি টাইগার হাউজে নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে সহযোগিতা করেছি। আমার সঙ্গে শিক্ষানবীশ হিসাবে আমার সহকর্মী শহিদুল ইসলাম ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা কাজ করে থাকেন।"  

ট্যাক্সিডার্মির ইতিহাস বহু পুরোনো, কমপক্ষে চার হাজার বছর পুরোনো। মিসরের ফারাওয়ের মমির সঙ্গে তার পোষা প্রাণী ও পাখির নমুনা পাওয়া গেছে। ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার আমলকে বলা হয় আধুনিক ট্যাক্সিডার্মির স্বর্ণযুগ। ইংরেজ পক্ষীবিদ জন হ্যানকককে বলা হয় এর জনক। বহু পাখি তার সংগ্রহে ছিল, কাদা ও প্লাস্টার দিয়ে তিনি সেগুলোর মডেলিং করেছিলেন। 

১৮৫১ সালে লন্ডনের প্রদর্শনীতে তিনি অনেকগুলো স্টাফড পাখি প্রদর্শন করেন। হ্যানককের প্রদর্শনী ট্যাক্সিডার্মি নিয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করে; সে আমলের অভিজাত বাড়িগুলোতে পাখির নমুনা সংগ্রহে রাখা একটি ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এমনকি, রানী ভিক্টোরিয়ার সংগ্রহেও ছিল অনেক পাখি। তখন ট্যাক্সিডার্মিতে খুবই নাম করেছিলেন উইলিয়াম হার্ট ও তার ছেলে এডওয়ার্ড হার্ট। তাদের গড়া কাঠবিড়ালির সেট ২০১৩ সালের এক নিলামে রেকর্ড মূল্যে বিক্রি হয়। এ সূত্র ধরেই টাঙ্গাইল ভুঞাপুরের বঙ্গবন্ধু সেতু আঞ্চলিক জাদুঘরের কিউরেটর জুয়েল রানা আশা করছেন, আমাদের দেশেও ট্যাক্সিডার্মিস্টদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়বে, কারণ প্রাণী পোষার শখও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তবে এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।   


ছবি: টিবিএস 

Related Topics

টপ নিউজ

মৃত প্রাণী / স্টাফিং / জাদুঘর / সংরক্ষণাগার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদেরকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার সম্ভাবনা
  • পরিত্যক্ত মার্কিন গবেষণায় ভর করে পারমাণবিক শক্তিতে বড় অগ্রগতি চীনা বিজ্ঞানীদের
  • ভারত-পাকিস্তান বড় বড় দাবি করলেও—স্যাটেলাইট চিত্র বলছে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত
  • আইএমএফ ঋণ পেতে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর ঘোষণা গভর্নরের
  • ভাড়ার যুদ্ধে কারা জিতছে: অ্যাপ না-কি খ্যাপ?
  • সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ

Related News

  • জনপ্রিয় হচ্ছে মাচায় আলু সংরক্ষণ পদ্ধতি, সারাদেশে ৬৫৩টি মডেল ঘর নির্মাণ
  • ১ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের চীনা সিরামিক পাত্রের সংগ্রহ উপহার পেলো ব্রিটিশ মিউজিয়াম
  • ক্লদ মনের ক্যানভাস
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের কমিটি ঘোষণা
  • সুরকার শোপাঁর হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীতের সন্ধান পাওয়া গেল ২০০ বছর পর

Most Read

1
অর্থনীতি

জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদেরকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার সম্ভাবনা

2
আন্তর্জাতিক

পরিত্যক্ত মার্কিন গবেষণায় ভর করে পারমাণবিক শক্তিতে বড় অগ্রগতি চীনা বিজ্ঞানীদের

3
আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান বড় বড় দাবি করলেও—স্যাটেলাইট চিত্র বলছে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত

4
অর্থনীতি

আইএমএফ ঋণ পেতে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর ঘোষণা গভর্নরের

5
ফিচার

ভাড়ার যুদ্ধে কারা জিতছে: অ্যাপ না-কি খ্যাপ?

6
বাংলাদেশ

সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab