Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

দর্জিদের বিবর্তন: খলিফা, শেখজি, দর্জিবাড়ি থেকে টেইলারিং ও ফ্যাব্রিক শপ

এখন পাড়ায় পাড়ায় যেমন লেডিস টেইলার্স দেখা যায়, এক সময় এই ছেলে আর মেয়েদের কাজ হতো একই দোকানে। নারীপুরুষ একই দর্জির কাছে জামা বানাতে দিতেন। যদিও নারীদের সশরীরে উপস্থিতি ছিল কম। বাড়ির পুরুষসদস্যটির হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন পছন্দের কাপড়।
দর্জিদের বিবর্তন: খলিফা, শেখজি, দর্জিবাড়ি থেকে টেইলারিং ও ফ্যাব্রিক শপ

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
21 June, 2024, 02:15 pm
Last modified: 22 June, 2024, 01:51 pm

Related News

  • চট্টগ্রামে টেরিবাজারে কাপড়ের গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে
  • ভারতবর্ষের পায়জামা যেভাবে পশ্চিমা পায়জামা হয়ে উঠল
  • উপমহাদেশে ফিরিঙ্গি পোশাক
  • কতদিন পরপর তোয়ালে ধুচ্ছেন? যে কারণে নিয়মিত আপনার তোয়ালে ধোয়া প্রয়োজন
  • সন্তানদের পরনে ছেঁড়া জামা-জুতো দেখে বুক ভেঙে যাচ্ছে গাজার বাবা-মায়ের

দর্জিদের বিবর্তন: খলিফা, শেখজি, দর্জিবাড়ি থেকে টেইলারিং ও ফ্যাব্রিক শপ

এখন পাড়ায় পাড়ায় যেমন লেডিস টেইলার্স দেখা যায়, এক সময় এই ছেলে আর মেয়েদের কাজ হতো একই দোকানে। নারীপুরুষ একই দর্জির কাছে জামা বানাতে দিতেন। যদিও নারীদের সশরীরে উপস্থিতি ছিল কম। বাড়ির পুরুষসদস্যটির হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন পছন্দের কাপড়।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
21 June, 2024, 02:15 pm
Last modified: 22 June, 2024, 01:51 pm

ছবি: টিবিএস/সৈয়দ জাকির হোসেন

দর্জি হাফিজ মিয়াঁর কথা মনে আছে? হাফিজ মিয়াঁর কথা পড়েছিলাম পরিতোষ সেনের 'জিন্দাবাহার' বইটিতে। কাঁচি হাতে যখন কোটের ছাঁট দিতে বসত হাফিজ মিয়াঁ, তখন দেখে মনে হতো ঠিক যেন দীর্ঘদিন অনশনরত, ধ্যানমগ্ন, অস্থিচর্মসার, স্লেটপাথরে খোদিত, গান্ধার শৈলীর অবিকল বুদ্ধমূর্তি। দর্জি হাফিজের বিশেষত্ব ছিল, তিনি না-কি জামার মাপ না নিয়ে, কাস্টমারকে একবার দেখেই নিখুঁত পোশাক বানিয়ে দিতে পারতেন।

অথচ, হাফিজ মিয়াঁর সময় যন্ত্রপাতি বলতেও তেমন কিছু ছিল না। নীলচক, কাঁচি আর সুঁই-সুতো। তখন তো আর সেলাই মেশিন আসেনি। পোশাকের এত চাহিদা, এত সহজলভ্যতাও ছিল না। ছিল না রেডিমেড পোশাকের চল। কামিজ বলি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফ্রক, পায়জামা যা-ই বলি, সব কাপড়ই হাতে বানানো হতো। দর্জির কাছে মাপ নিয়ে জেনে নিতে হতো কোন পোশাকে কতটুকু কাপড় লাগবে। এরপর সে অনুযায়ী বাজার থেকে কাপড় এনে দর্জির কাছে দেওয়া হতো।

বাসায় মায়েরাও কাজের ফাঁকে সেলাই নিয়ে বসতেন। ছেলেবুড়োর জন্য কাপড় বানিয়ে দিতেন। তবু ভালো পোশাকগুলোর জন্য দর্জির কাছেই যেতে হতো। তখন দর্জি মানেই সম্মানিত কোনো মুরুব্বি, যার হাতে থাকবে নীলচক, কাঁচি, সুঁই-সুতো, দেখতে বেশ গাম্ভীর্যপূর্ণ; একদম তন্ময় হয়ে একাগ্রতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন কাপড় কাটার কাজ।

প্রাচীন বাংলায় মুসলমানেরাই সর্বপ্রথম দর্জি পেশায় নিয়োজিত হন। এর কারণ, মুসলমান পুরুষ ও নারীদের মতো হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত সেলাই-করা কাপড় পরার রীতি ছিল না। হিন্দু পুরুষেরা ধুতি ও চাদর পরিধান করতেন, আর হিন্দু নারীরা সনাতনী পন্থায় শাড়ি পরতেন। ফলে হিন্দুদের জন্য দর্জির কাজের তেমন সুযোগ ছিল না।

আবার আগে (এমনকি এখনও) গ্রামেগঞ্জে দর্জিদের ডাকা হতো 'খলিফা' নামে। কেন খলিফা বলা হতো সে বিষয়ে এসব দর্জিদের কাছে সঠিক উত্তর নেই। তবে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে যে তথ্যটি পাওয়া যায় তা হলো, ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ লুট করতে এসেছিল, তখন তারা ক্ষমতা দখল করে মুসলিম শাসকদের থেকে। তখন স্বভাবতই মুসলিমেরা হয় তাদের প্রধান শত্রু। সে শত্রুতা থেকে তারা মুসলিম দর্জিদের উপহাস করে বলত 'খলিফা'। আবার যারা শুধু কোট বানানোর কাজ করতেন, তাদের ডাকা হতো শেখজি। কেন এই শেখজি বলে ডাকা হতো তাও জানা যায়নি।

দর্জিদের যে খলিফা বলা হতো তা প্রবীণেরাই কেবল জানেন, বর্তমান প্রজন্ম কতটা জানে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। একটা সময় ঈদের আগে এ খলিফাবাড়িতে ভিড় পড়ে যেত। ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে মৌচাক মার্কেটের সূচনা টেইলার্সের দর্জি মো. বারেক বলেন, 'দশ-এগারো বছর আগেও ঈদের আগের সপ্তাহগুলোতে দোকান খুলতে এসে দেখতাম, কাস্টমারদের লাইন পড়ে গেছে। আর এই যে সামনে কুরবানির ঈদ, সারাদিনে কোনো অর্ডার এল না।'

তখন সমাজে দর্জিদের মর্যাদাও ছিল বেশি। এক সময় গ্রামেগঞ্জে, এমনকি এখনও কোথাও কোথাও দর্জিবাড়ি পরিচয় দিলে লোকে সম্মান দেয়। কথিত আছে, দর্জিবাড়ি শুনলে লোকে বিয়ের সম্বন্ধও করতে আসত। দর্জিবাড়ি মানেই ছিল মার্জিত, সভ্য কোনো এক বাড়ি। যেখানে থাকবে সেলাইমেশিন, ডানেবামে কাপড়ের টুকরোর ছড়াছড়ি, ওপরে হ্যাঙ্গারে ঝোলানো থাকবে বানানো জামা-ব্লাউজ। যা দেখে মন চাইবে, একটা কিনেই ফেলি। কিন্তু ওগুলো কাস্টমারের হয়ে যাওয়া জামা। হাত দেওয়া বারণ!

এই দর্জিবাড়ি এখন হয়েছে টেইলারিং শপ। সেখানে এখন আর পায়ে চালিত সেলাই মেশিনের চাকা ঘোরে না। সেলাই মেশিনও ডিজিটাল হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের প্রায় সব পোশাক এখন রেডিমেড (তৈরি পোশাক)। দোকান থেকে পছন্দের রঙের ও চেকের কাপড় কিনে টেইলারিং শপে মাপ দিয়ে জামাকাপড় বানানোর চল দিনে দিনে ফুরিয়ে আসছে। টেইলার্স থেকে পাঞ্জাবি বানানোও কবেই ফুরিয়েছে। মেয়েদের থ্রিপিস-টুপিস এখন ডিজাইন অনুযায়ী কাটা থাকে। টেইলার্সরা শরীরের মাপ নিয়ে শুধু ফিটিং করে দেন।

অনেক শোরুমেও এই ফিটিংয়ের কাজ চলে। আবার কোথাও কাপড় বেচার পাশাপাশি শোরুমের সঙ্গেই এক কোনায় ব্যবস্থা আছে টেইলরিংয়ের। বনানী সুপার মার্কেটসহ জাপান গার্ডেন সিটিতে এমন কিছু চিত্র পাওয়া যায়। কেউকেউ আবার দোকানেই ঝুলিয়ে রাখছেন তৈরি করা শাড়ি, কামিজ। যেমন প্রিয়াঙ্গন মার্কেটের অনুপম টেইলার্স। সেখানকার প্রধান মাস্টার শহীদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ তৈরি কাপড়গুলো আছে বলেই দোকানভাড়ার টাকা উঠে যায়। নয়তো এখন আর শুধু মজুরি দিয়ে চলেনা দোকানভাড়া।

রেডিমেড পোশাক তাড়িয়ে দিচ্ছে দর্জিপাড়ার সব ভিড়

অবশ্য পাড়ামহল্লার ছোট দর্জির দোকানে পায়েচালিত সেলাই মেশিন এখনও আছে। নিশাত আঞ্জুম থাকেন আজিমপুরের শেখ সাহেব বাজারে। কাঁচাবাজার, জামাকাপড় সবকিছুর জন্যই নিউমার্কেটই তার একমাত্র আশ্রয়। তিনি বলেন, 'বছর পাঁচেক আগেও ঈদের জামা বানাতে দিতে হলে রোজা শুরু হওয়ার আগেই গিয়ে কাপড় দিয়ে আসতে হতো নিউমার্কেটে। পনেরো রোজার পর থেকেই তারা আর অর্ডার নিতে চাইত না। অর্ডার নেওয়া শেষ বলে সাইনবোর্ড দাঁড় করিয়ে দিত।

এখন ঈদ-পূজো যা-ই হো, হাতে কাপড় দেখলেই ডাকাডাকি শুরু। দর্জিদের কাপড় ফিরিয়ে দেওয়ার সেই তেজও নেই। 'বরং ঈদের দুদিন আগে কাপড় দিলেও তারা হাসিমুখে সব করে দিতে পারেন,' বলেন তিনি।

গুলশান পিংক সিটির খলিফাঘরে নিয়মিত জামা বানান জায়নাব চৌধুরী। একসময় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সে সময় শাড়ির ব্লাউজ বানাতে আসতে হতো এখানে নিয়মিত। এখন আসেন একটু দামি বা অনুষ্ঠানের জন্য উঠিয়ে রাখা কাপড়ের জন্যই। 'পাকিস্তানি জামা বা একটু গর্জিয়াস জামাগুলো, ব্লাউজগুলো নিয়ে এখানে আসি। কারণ ওগুলো ফিটিং না হলে ভালো দেখায় না,' বলেন তিনি।

বনানী সুপার মার্কেটে অফিসের ফাঁকে দর্জিকে কাপড় দিতে আসেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, 'আমার মুডের ওপর নির্ভর করে আসলে। কখনো ইচ্ছে হয় গজ কাপড় মিলিয়ে, লেস টেস কিনে নিজের মতো করে বানাই। আবার কখনো যা পাই কিনে ফেলি। এত ধৈর্যে কুলোয় না।'

বর্তমানে সেলাই করা কাপড়ের জন্য বিখ্যাত মার্কেট প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার। আশপাশের এলাকার গ্রাহকদের মধ্যে যারা বানানো কাপড় পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের কাছে প্রথম সারির পছন্দ হলো এই প্রিয়াঙ্গন। প্রিয়াঙ্গনের সবচেয়ে পুরোনো টেইলার্সের দোকান শর্মিলা টেইলার্স ও অনুপম টেইলার্স। অনুপম টেইলার্সে দশ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেন শহীদুল ইসলাম। তার আগে কাজ করতেন চাঁদনিচকে, তারও আগে নিউমার্কেটে ছিলেন।

চার দশক ধরে এ পেশায় থাকা শহীদুল বলেন, 'আগে কাজে ওস্তাদ-শিষ্যের মধ্যে একটা স্নেহের, সম্মানের সম্পর্ক থাকত। শিষ্যরা ওস্তাদকেই গুরু মানত। কিন্তু এখন তা নেই। এ কাজে লোকজনও পাওয়া যায়না। যারা শিখছে তারা চলে যাচ্ছে দুবাই, কাতার, সৌদিতে। কাজ শিখে তারা চলে যায়।'

একসময় গুলশান, বনানী, উত্তরা বহুদূর থেকেও মানুষ আসত নিউমার্কেটে কাপড় সেলাইয়ের জন্য। আশির দশকে নিউমার্কেটে ছিল প্রায় ২০টির মতো টেইলার্স। বিখ্যাত টেইলার্সগুলোর মধ্যে ছিল গুলজার, গোলবাগ, তারকা, শিল্পী, সূচি, সুবেশা, এম ওয়াহেদ, শিল্পশ্রী ইত্যাদি। এরমধ্যে অনেকগুলো উঠে গেছে অনেক। মৌচাকে ছিল জননী, সাগরিকা ছিল গ্রিনরোডের মূল সড়কের পাশেই, গাউসিয়াতে ছিল অজন্তা, ধানমন্ডিতে ছিল মহাসীন। এগুলো সব সত্তর-আশির দশকের।

নিউমার্কেটের সুবেশা টেইলরিং শপের বয়স আজ ৩০ বছর। এ দোকানে ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন রশীদ মিয়া (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, 'একসময় এই সুবেশায় আসতেন দীপু মনি (সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী), বর্তমান রাষ্ট্রপতি শাহবুদ্দীন সাহেবের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, দুদকের ওয়াদুদ সাহেবসহ (উপপরিচালক) সরকারের হোমরাচোমরাদের অনেকেই।'

ছবি: টিবিএস/সৈয়দ জাকির হোসেন

অঞ্জু-রোজিনাদের দেখার জন্য কাজ করতেন সিরাজ মাস্টারের কাছে

নিউমার্কেটের মেহবুব টেইলার্স ছিল শাবানাসহ নায়িকা-তারকাদের পছন্দের দোকান। বসে বসে কাপড় কাটতেন মেহবুব মাস্টার। আশির দশকের পর থেকে লালবাগে জনপ্রিয় ছিল নবরূপা টেইলর। স্কয়ার নামে আরেকটি দর্জিঘর ছিল; নব্বই দশকে সেখানে যেতেন খালেদা জিয়া। কবীর মাস্টার নাম ছিল সেখানকার দর্জির।

গাউসিয়া মার্কেটের সিরাজ মাস্টারের কাছে আসতেন সুচরিতা, অঞ্জনা, অঞ্জু ঘোষ, রোজিনা। শুধু এদের দেখার জন্যই শহীদুল ইসলাম কাজ করতেন সিরাজ মাস্টারের কাছে! এছাড়াও ছিলেন নিউমার্কেটের হাশেম, কাশেম, জহির মাস্টার। যাদের শিষ্যরাই আজ তাদের মনে রেখেছে কেবল।'আমাদের কেউ মনে রাখবেনা। এই যে এত নামিদামি লোকের কাজ বানিয়েছেন আমাদের ওস্তাদেরা, তাদের কেউ মনে রাখেনি। আমাদের আরও রাখবেনা। আমরা যে ভক্তি-সম্মান দেখিয়েছি ওস্তাদদের, তা আমরা পাইনি অনুজদের থেকে,' বলেন শহীদুল।

এ নিয়ে দুজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, বয়স্ক মুরুব্বিদের থেকে তরুণদের হাতেই কাপড় বানাতেই বেশি ভরসা পান তারা এখন। আগে এ চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। গুলশান পিংক সিটিতে এক নারী দর্জিও একই কারণ বলেন। গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য তরুণেরাই বসেন দোকানের সামনে।

সেই সত্তর-আশির দশকে মার্কেটও ছিল হাতেগোনা আর টেইলারিং শপও ছিল এই নিউমার্কেট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, কারওয়ান বাজার ডিআইটি মার্কেটসহ, জহুরা মার্কেটের মতো গুটিকয়েক জায়গায়। পাড়ায় পাড়ায় এখন আমরা যেমন টেইলার্স দেখতে পাই, তার জন্মও বেশিদিন আগে নয়। এখন তো একটি গলিতেই ৩-৪ টা করে দর্জির দোকান পাওয়া যায়। কলাবাগান বশিরুদ্দীন রোডেই ছিল তিনজন দর্জি। এর মধ্যে একটি সুমনা টেইলার্স, ১৯৯০ সাল থেকে এখনও চলছে।

সুমনা টেইলার্সে সিরাজুল ইসলাম কাজ করছেন তেরো বছর ধরে। তার আগে ছিলেন চাঁদনী চকে। এক বিহারী ওস্তাদের থেকে কাজ শিখেছিলেন তিনি। তখন ঢাকা শহরে এত শপিংমল হয়নি। তখন মানে চুরাশি সালের পরের কথা। ঢাকার বাংলামোটরে জহুরা মার্কেটে ছিল টেইলার্স, কাওরান বাজারের ডিআইটিতে ছিল কিছু টেইলার্স। সাধারণ মানুষ আসতেন এসব জায়গায় কাপড় বানাতে দিতে।

এখন পাড়ায় পাড়ায় যেমন লেডিস টেইলার্স দেখা যায়, এক সময় এই ছেলে আর মেয়েদের কাজ হতো একই দোকানে। নারীপুরুষ একই দর্জির কাছে জামা বানাতে দিতেন। যদিও নারীদের সশরীরে উপস্থিতি ছিল কম। বাড়ির পুরুষসদস্যটির হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন পছন্দের কাপড়। এখন যেমন ব্লাউজের ডিজাইন, সাইজ দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, 'কত গজ লাগবে কাপড়?' তখন ছিল উল্টো। এক গিরা কাপড় পাঠিয়ে বলতেন একটি ব্লাউজ বানিয়ে দিতে। এত ডিজাইন বা ফ্যাশন নিয়ে সচেতন ছিলেন না তখনকার রমণীরা। 'এখন তো এক পাজামার ডিজাইন, লেস, পাজামা কতটুকু চওড়া বা চাপা হবে সে নিয়েও ভাবছেন নারীরা,' বলছিলেন চাঁদনী চক সেন্ট্রাল এসি মার্কেটের ফেমাস লেডিস ফ্যাশন দোকানের মালিক মো. খলিল।

তিনি জানান, একসময় একসঙ্গে কাজ হলেও, এখন লেডিজ এবং জেন্টস কাজ আলাদা। কাজের শুরু থেকেই দুই বিভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়। একজন কারিগর তার পছন্দানুযায়ী কাজ বেছে নেন। যেমন, বাতেন অ্যান্ড সন্সের এজাজ আহমেদ। ছোটোবেলায় তিনিও কাজ শিখেছেন লেডিজ-জেন্টস দুটোই। কিন্তু বর্তমানে তিনি প্রায় বারো বছর ধরে কাজ করছেন জেন্টস বিভাগে। তার মতে, লেডিস টেইলার্সে অনেক বৈচিত্র্যতা থাকলেও জেন্টস কাজে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। ফলে এ কাজে দক্ষ হয়ে ওঠা সহজ।

একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক বাদে ছেলেরা আজ দর্জিঘরে পা বাড়ায় না

জেন্টস টেইলার্সের মধ্যে ঢাকার মধ্যে নামকরা ছিল বস টেইলার্স, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। আরও ছিল স্টুডেন্ট, ডরিনা, সানমুন, ফবস, ফেরদৌস, রুহুলস, কাজিস, টপটেন, বেলমন্ট। একটা জেন্টস টেইলারে অনেক লোক কাজ করে। কিন্তু লেডিস টেইলার্সগুলো কম কারিগর নিয়ে ও ছোট পরিসরে কাজ করে। নারী পোশাকের কাজগুলো যেখানে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন, বৈচিত্র্যময় হয় এবং আশপাশের দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে, সেখানে পুরুষদের কাজের ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য কম। সবার প্রায় একই রকম ডিজাইন হয় বলে জানান খলিল।

জেন্টস টেইলার্সে অর্ডার কম আসে বলে দিনদিন এগুলোর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বনানী সুপার মার্কেটের অন্যান্য দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে মার্কেটে লেডিজ টেইলার্সই হবে বিশটির ওপরে, অপরদিকে জেন্টস টেইলার্স দশটাও আছে কি না সন্দেহ। তাছাড়া টপটেন, রেমন্ড, বেলমন্টের মতো কিছু নামিদামি ব্র্যান্ড মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসায় পাড়ার দর্জিদের কাছে অর্ডার আসে কম। একজন পুরুষ বিশ বছর আগেও যে শার্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা বানিয়ে পরতো, সে আজ কোনো ভাবনা ছাড়াই ভরসা করছে তৈরি পায়জামা, পাঞ্জাবির ওপর। ফলে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রফেশনাল পোশাক বাদে ছেলেরা আজ দর্জি ঘরে পা বাড়ায় না বলেই জানান জেন্টস টেইলররা।

হূমায়ুন কবীর তেমন একজন। পাঞ্জাবী, ফতুয়া, শার্ট সবই বানিয়ে পরতেন তিনি একসময়। বানানোতেও একটু এদিক-সেদিক হলে দিতেন না ছাড়। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই কিনতে হয় রেডিমেড পোশাক। পছন্দের ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দিতে হলেও, অনেকগুলো টাকা বেঁচে যায়। তাছাড়া আগে মফস্বলে থাকতে পাড়ার দর্জিদের কাছে দিয়ে আসতেন পহেলা বৈশাখ বা ঈদ উপলক্ষ্যে কাপড়। এখন পাড়ার দর্জিগুলো কেবলই নারীদের দখলে। ফলে তাকেও যেতে হচ্ছে রেডিমেড পণ্যের কাছেই।

ওস্তাদদের অনেকেই ছিলেন কলকাতার কিংবা বিহারী

বর্তমানে ব্যাপকহারে উৎপন্ন তৈরি পোশাকশিল্প দর্জির কাজ কিছুটা সীমিত করেছে বটে কিন্তু সারাদেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় দর্জিদের কাজের পরিধি একেবারে কমেনি বলে জানিয়েছেন দর্জিরা। এমনকি নারী-পুরুষের কাজ একসঙ্গে এখনো মফস্বলের দর্জিরাই করে থাকেন বলে জানান তারা।

খলিলসহ, শহীদুল, এজাজ এদের ওস্তাদদের অনেকেই ছিলেন কলকাতা থেকে আগত। মৌচাক মার্কেটের নিসা টেইলার্সের বারেক মিয়ার ওস্তাদ ছিলেন ভারতের। দেশভাগ এবং একাত্তরের যুদ্ধের পর তারা এখানেই রয়ে গেছেন। অনেকে আবার ফিরেও গেছেন পৈতৃক ভিটায়। কারিগরদের অনেকে মনে করেন, চুল কাটার মতো কাপড় বানানোর কাজগুলোও এসেছে বিহারীদের থেকেই।

আকাশচুম্বী মজুরিতেও পোষাচ্ছেনা দর্জিদের

তৈরি পোশাক বা রেডিমেড কাপড় চলে আসায় দর্জিরা আজ হারাতে বসেছেন তাদের পেশা, তাদের সেই মর্যাদা। তার ওপরে কাপড় বানানোর আকাশছোঁয়া মজুরির কারণে দিনদিন দর্জিবাড়িগুলো হাতের নাগালের বাইরেই চলে যাচ্ছে।

একটি জামা বা ব্লাউজ বানাতেই এখন খরচ পড়ে ৪০০-৫০০ টাকা। আর যদি একটু লাইনিং থাকে তবে চলে যায় ৭০০-৮০০'র ঘরে। আবার বিভিন্ন শপিংমলে যেমন প্রিয়াঙ্গনেই একটি কামিজ বানাতে নেয়া হয় দোকানভেদে ১০০০ এর কমবেশি। গুলশান পিং সিটিতে শুধু সুতি কাপড়ের জামা এবং ব্লাউজের মজুরি শুরু হয় বারোশো থেকে। এ দামে আজকাল রেডিমেড কামিজই পাওয়া যায় দোকানগুলোতে।

এমনকি এই দুর্মূল্যের বাজারেও বনানী সুপার মার্কেটের কিছু কিছু দর্জিদোকানে একটি ব্লাউজের (ভারী কাজের শাড়ির) জন্য মজুরি গুণতে হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা! রেডিমেড ব্লাউজ বা অনলাইনভিত্তিক দর্জিরদোকানগুলোতেও এর কাছাকাছি মজুরি দেখা যায়। যেমন 'ডাস্টকোট: দ্য ব্লাউজ' পেজটিতে বেশিরভাগ ব্লাউজের দাম ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। আর 'সুপার এক্সক্লুসিভ' ব্লাউজগুলোর জন্য মজুরি শুরু হয় পাঁচ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত!

পাড়ার দর্জিগুলো যেখানে দোকানে বসেই কাজ করেন, বিভিন্ন মার্কেট বা শপিং মলের টেইলার্সগুলোর থাকে আলাদা কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন কারিগরেরা। ফলে কারখানার বিল, কারিগরদের থাকাখাওয়া বাবদ খরচ, দোকান ভাড়া এসব মিলিয়ে একটি ব্লাউজের মজুরি নির্ধারণ করতে হয় এখন ৫০০-১,৫০০'র মধ্যে।

কিন্তু দর্জিরা বলছেন, সে অনুযায়ী মজুরি বাড়ছেনা। যদিও গ্রাহকদের কাছে এ মজুরিও সাধ্যের বাইরে চলে গেছে ইতোমধ্যে। তাই, একদিকে গ্রাহক কাপড় বানিয়ে খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছেন, অন্যদিকে দর্জিরাও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ফলে গ্রাহকশ্রেণি যেমন তৈরি পোশাকের দিকে ঝুঁকছে, তেমনি দর্জিরাও দোকান বদলে ফেলছেন, কিংবা দোকানের মধ্যেই কাপড় বিক্রি করছেন। নয়তো শুধু দর্জি হয়ে জীবন চালিয়ে যাওয়া বিলাসিতার পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

Related Topics

টপ নিউজ

দর্জি / দর্জিবাড়ি / পোশাক / জামা / কাপড়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন বিশেষ ভাতা ১,৫০০ টাকা ও পেনশনের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করল সরকার
  • চাহিদা না থাকায় ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় কমতে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম
  • প্রতারণা করে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার: অভ্যন্তরীণ তদন্ত
  • হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিল ইরান
  • গঙ্গা চুক্তি পুনঃআলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ভারত
  • হরমুজ প্রণালী বন্ধ না করতে ইরানকে বোঝাতে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

Related News

  • চট্টগ্রামে টেরিবাজারে কাপড়ের গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে
  • ভারতবর্ষের পায়জামা যেভাবে পশ্চিমা পায়জামা হয়ে উঠল
  • উপমহাদেশে ফিরিঙ্গি পোশাক
  • কতদিন পরপর তোয়ালে ধুচ্ছেন? যে কারণে নিয়মিত আপনার তোয়ালে ধোয়া প্রয়োজন
  • সন্তানদের পরনে ছেঁড়া জামা-জুতো দেখে বুক ভেঙে যাচ্ছে গাজার বাবা-মায়ের

Most Read

1
অর্থনীতি

কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন বিশেষ ভাতা ১,৫০০ টাকা ও পেনশনের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করল সরকার

2
অর্থনীতি

চাহিদা না থাকায় ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ায় কমতে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম

3
অর্থনীতি

প্রতারণা করে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার: অভ্যন্তরীণ তদন্ত

4
আন্তর্জাতিক

হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিল ইরান

5
বাংলাদেশ

গঙ্গা চুক্তি পুনঃআলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ভারত

6
আন্তর্জাতিক

হরমুজ প্রণালী বন্ধ না করতে ইরানকে বোঝাতে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab