Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 30, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 30, 2025
শেকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে স্ক্যান্ডিনেভীয় দুই নারী 

ফিচার

প্রমিলা কন্যা
02 April, 2024, 08:30 pm
Last modified: 02 April, 2024, 10:09 pm

Related News

  • একক অর্থবছরে রেকর্ড, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার
  • এনবিআরের অচলাবস্থা, বাণিজ্যে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ী নেতাদের
  • বাংলাদেশের এক বড় ভুল: প্রতিশোধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সংস্কারের সঙ্গে
  • শুল্ক স্থগিতাদেশের ডেডলাইন সামনে, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান বাংলাদেশের
  • ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময়ে সংহতির জন্য বাংলাদেশের প্রতি ইরানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

শেকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে স্ক্যান্ডিনেভীয় দুই নারী 

আশা ও এলিজাবেথ- নামের এই দুই নারীর জন্ম বাংলাদেশে হলেও, ১৯৭০ এর দশকে কোলের শিশু থাকা অবস্থায় তাদের পাড়ি জমাতে হয়েছিল সুদূর ইউরোপে। ডেনমার্ক ও নরওয়ের দুই দম্পতি এই শিশুদের দত্তক নেন। এত বছর পরে, তাঁরা জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন আপন শেকড়ের সন্ধানে...
প্রমিলা কন্যা
02 April, 2024, 08:30 pm
Last modified: 02 April, 2024, 10:09 pm
খুলনার দোলখোলা রেলস্টেশনে নিজের ছোট্টবেলার একটি ছবি হাতে করে দেখাচ্ছেন আশা অয়েলিস। ছবির শিশুটিকে এই স্টেশনেই মন্ডল নামের কেউ একজন কুড়িয়ে পেয়েছিল। ছবি: মেহেদি হাসান

তাঁকে আমি প্রথমবার দেখি খুলনার একটি হোটেলের লাউঞ্চে বসে থাকা অবস্থায়। ঘন শ্যামবর্ণ আর কোকরা চুলের তাঁর চেহারা বিশেষত্বহীন– বাংলাদেশের পথেঘাটে এমন চেহারার অনেককেই তো দেখি। তাই সৌজন্য বিনিময়ের পর যখন মুখোমুখি বসা হলো, তখন প্রথমে বাংলাতেই কথার শুরু করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তখনই মনে পড়ল তিনি শুধু ডেনিশ ভাষাতেই কথা বলতে পারেন।

হালকা বেগুনি রঙা সালোয়ার কামিজ পরা আশা অয়েলিসকে প্রথম দর্শনেই একজন বাঙালি মনে হয়। মা বা বড় বোনের মতো কেউ যেন, অথবা দূরসম্পর্কের কোনো চাচি বা খালা। ভাষার চয়নের ভুলটা হয়তো সেকারণেই করতে বসেছিলাম। তাছাড়া, ভুলটা বড়ও নয়, কারণ ১৯৭৬ সনে দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকা অবস্থায় ডেনিশ এই নারীকে বাংলাদেশ থেকেই দত্তক নেওয়া হয়েছিল।

সময়টা ১৯৭৫, শিশুটি থাকতো তখন খুলনার সোনাডাঙ্গায় নির্মলা শিশু ভবনে। সেখান থেকেই প্রথমে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়, সেখান থেকে পাঠানো হয় ডেনমার্কে, পালক পিতামাতার কাছে। 

ছবি: মেহেদি হাসান

এই মাসের শুরুর দিকেই স্বামী মোগুয়েন্স ফাল্ক'কে সাথে করে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে মিশনারিজ অব চ্যারিটির অফিসে যান আশা অয়েলিস। সেখানেই নিজ জন্মপরিচয় সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানতে পারেন তিনি। যা জেনে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, একইসাথে তাঁর কৌতূহলও যেন নতুন মাত্রা পায়। 

ছবি: মেহেদি হাসান

'খুলনার দোলখোলা রেলওয়ে রোড স্টেশনের রাস্তায় শিশুটিকে পান ডলি মণ্ডল'- হলদেটে হয়ে আসা কাগজে নীল কালিতে লেখা ছিল এই একটি বাক্য। 

গত ৫০ বছর ধরে আশা নিজের জন্মপরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, তবে এখন তিনি একটি নাম জানতে পেরেছেন। যদিও কে এই ডলি মণ্ডল, তাঁর মা নাকি কোনও আত্মীয়– সেটি তাঁর অজানা। কিন্তু, এতে নিজের নামের মতোই এক টুকরো আশার আলো দেখেন শেকড় সন্ধানের। 

'সবারই নিজের শেকড়কে জানার দরকার আছে'

শুধু শেকড়ের সন্ধানেই সুদূর ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেননি আশা অয়েলিস। চেয়েছেন তারও বেশিকিছু, কোনো জায়গার সাথে আত্মিক বন্ধন বা একাত্মতার অনুভূতিকে, ডেনমার্কে বেড়ে ওঠার সময়ে যে অনুভূতি তিনি পাননি সবসময়।

'দেখতে আমি (পালক) মা-বাবার মতো নই, আমার ভাই বা বন্ধুদের মতোও নই– এটা তো আমি বুঝতাম। আয়নায় দেখতাম সেই প্রতিচ্ছবি। আমি বেড়ে উঠেছি (ডেনমার্কের) এক ছোট শহরে– সেখানে বাদামি চামড়ার কোনো লোক দেখিনি। এখন অবশ্য অনেক কিছুই বদলে গেছে।'

ছবি:মেহেদি হাসান

কিন্তু, ছোট্ট আশার মনে হতো সে যেন কোথাও ঠিক খাপ খায় না। গাত্রবর্ণের জন্য স্কুলেও সহপাঠীরা তাঁকে খেপাতো 'চকলেট গার্ল', 'কফি বিন' ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক সম্বোধনে। আশার (পালক) বাবাই ছিলেন স্কুলের অধ্যক্ষ, এ বিষয়টিই শিশুটির আরো ভোগান্তির কারণ হয়েছিল।

তবু সময়ের স্রোত বয়ে যায়, আশা অয়েলিসও বড় হন। তাঁর বয়স যখন ২৩, তখন একদিন একটি ম্যাগাজিনে দেখেন বাংলাদেশি এক মেয়ের ছবি । সেই ঘটনা স্মরণ করে বলেন, "আমার তখন তীব্র কৌতূহল– বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসে ওর কেমন লাগছে, ডেনমার্কে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন– এসব জানার। ওর সাথে কথা বলার জন্য তখন আমি অস্থির।"

কথা অবশ্য হলো তাঁদের, কিন্তু সেটা হয়েছিল ছয় বছর পরে। আশা বলেন, 'আমরা অনেক অনেক কথা বলেছিলাম, নিজেদের মধ্যে অনেক মিলও খুঁজে পেয়েছিলাম সেদিন।' 

আশা বর্তমানে ডেনমার্কের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত সমাজকল্যাণ কর্মী। আগের পক্ষের দুই সন্তানও আছে তাঁর, সন্তানেরা মায়ের এই শেকড় সন্ধানের সিদ্ধান্তকে মন থেকেই সমর্থন করে। মা খুশি হোন– এটাই তাঁদের চাওয়া।
  
এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসেননি আশা অয়েলিস। বরং প্রথমবার এসেছিলেন ২০০৪ সালে, তবে সেটা ছিল ডেনিশ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ডকুমেন্টারির কাজে, ফলে নিজের ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে দেওয়ার মতো সময় তখন পাননি। 

এবারের আসাটা একান্তই ব্যক্তিগত কাজে। স্ত্রীর সাথে এসেছেন মোগুয়েন্স ফাল্ক। জন্মপরিচয় খোঁজার এই আবেগপ্রবণ যাত্রায় স্ত্রীকে ভরসা আর সাহস জোগাতেই তাঁর আসা।  

মোগুয়েন্স এখন ৭০ এর কোঠায়। স্ত্রীকে নিয়ে কথা বলার সময়ে তাঁর নীল মণিতে যেন দেখা গেল উৎসাহের চাঞ্চল্য। বললেন অনেক কথাই, দুজনার প্রথম দেখা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনার কথা অবধি। 

প্রথম দেখার উপলক্ষ্য, পোষা প্রাণীর সুবাদে। দুজনেই কুকুর নিয়ে হাঁটছিলেন, এমন সময়ে। মোগুয়েন্সের আগের স্ত্রীর মৃত্যুর কথা জেনে আশা সেদিন কীভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেন– সে বৃত্তান্তও বাদ পড়ে না।  
  
মোগুয়েন্সের ভাষায়, "সেদিন থেকেই আমরা একসাথে দুজনে কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হতাম।"

"অ্যাবা ব্যান্ডের একটি কনসার্টে যোগ দিতে আমরা লন্ডনে গিয়েছিলাম, তখনই মাথায় আসে সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলার ভাবনা। আমি সবসময়েই আশাকে বলতাম, দেখ তুমি আসলে কে, কোথা থেকে এসেছ– এসব তোমার জানা উচিত, সবারই নিজের শেকড়কে জানার দরকার আছে।" 

'মায়ের সম্মানে নাম রেখেছি ফিরোজা'
 
খুলনায় আশা অয়েলিসের পরিবারের এই খোঁজে আমিও এই সম্পতির সঙ্গী হই। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম অনুসন্ধানের ফল তেমন দাঁড়াল না।  

তবে আমিও নতুন কিছু শিখলাম। মা বা বাবার নাম, জন্মস্থান যেমন যে হাসপাতালে জন্ম তার নাম– এসব কিছুই চিরকাল ভেবে এসেছি সহজাত, স্বাভাবিক। কিন্তু, সেই ভুল এই অনুসন্ধানে নেমে আমার অচিরেই ভাঙল। আরো বুঝলাম, আমাদের পরিচয়ের অনেককিছুই এসব জানা বা না জানার ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে।  
 
আশার দেখা অবশ্য পেয়েছিলাম ঘটনাচক্রে। তাঁরও আগে ফেসবুকে এল্লা ফিরোজা ফিওস্লেট বা এলিজাবেথের সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই আমার কথাবার্তা হতো। তাঁর গল্পও আশার মতোন। এলিজাবেথও ওর আসল পরিবারকে– যদি তাঁদের কেউ থেকে থাকে– খুঁজছিল ঢাকায়। 

এল্লা ফিরোজা ফিওস্লেট। ছবি: রাজীব ধর

১৯৭৫ সালে তাঁকেও ঢাকা থেকে নরওয়ের একটি পরিবারের কাছে দত্তক দেওয়া হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪ মাস। জন্মদাতা মা-বাবার নাম অবশ্য তিনি জানতে পেরেছেন। এরা হলেন – ফিরোজা বেগম এবং বশির সরদার (এরমধ্যে বশির সরদারকে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের 'শিশুর দত্তকের জন্য অভিভাবকত্ব স্থানান্তর' শীর্ষক নথিতে)। 

ওই নথি অনুসারে, এলিজাবেথের আগে নাম ছিল মৌসুমি।  

"তবে জন্মদাত্রী মায়ের সম্মানে আমিও ফিরোজা নামটা নিয়েছি। বছর দশক আগে আমার পালক মা-বাবার বাড়িতে আমি এই নথিটি খুঁজে পাই। তখন আমি ১৮ বছরের, তখনই নাম বদলে মৌসুমি রাখতে চেয়েছিলাম– কিন্তু আমাকে সবাইল বললো, এটা করলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে। এখন আমি আরো প্রাপ্তবয়স্ক, তাই ভাবছি ওই নামটা আবার ব্যবহার করব"- আমাকে বলেছিলেন তিনি। 
  
ছোট ওই নথির একটি ছবিও আমাকে দেখান তিনি, যেখানে কয়েকটি লাইন লেখা ছিল ইংরেজি ও নওরেজিয়ান ভাষায়। যেখানে লেখা ছিল তাঁর মা জীবিত, আর বাবা মৃত। দত্তকের কারণ হিসেবে লেখা ছিল শিশুর 'লালনপালনের সামর্থ্য না থাকা।' 

ছবি: রাজীব ধর

এলিজাবেথ ও আশা দুজনেই তাঁদের জন্মপরিচয় ঘিরে থাকা অজানা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন। কোনো তথ্য, তা যত সামান্যই হোক– পেলে সেটা বাকি জীবন তা আঁকড়ে ধরে বাঁচবেন। পুরোনো কিছু কাগজপত্র, ছবি আর পাসপোর্ট ছাড়া– বাংলাদেশে তাঁদের শেকড় সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানেন না তাঁরা। 

"আমি এক দুনিয়ার বাসিন্দা, অথচ এসেছি আরেক জগৎ থেকে"

ঢাকায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির অফিসে গিয়ে মোগুয়েন্স ও আশা যখন ডলি মন্ডলের নাম জানলেন, তখনই তাঁরা বুঝতে পারলেন বাকি খোঁজটা এবার করতে হবে খুলনাতে। 

খুলনায় এসে দ্বিতীয় দিন তাঁরা যান শহরের সোনাডাঙ্গা এলাকার নির্মল শিশু ভবনে। সেখানে বিশেষ কিছু জানা গেল না। অবসরে যাওয়া একজন নার্স বা গভর্নেস এর খোঁজ অবশ্য জানা গেল। পরে তাঁর বাড়িতেও যান এই দম্পতি। কিন্তু, বয়সের ভারে ন্যূজ নার্সও শিশু আশার ঘটনা স্মরণ করতে পারলেন না।

এরপর তৃতীয় দিন তাঁরা পুরোনো রেল স্টেশন ও তাঁর আশেপাশে ডলি মন্ডল ও তাঁর পরিবারের সন্ধান শুরু করেন, ওইদিন আমিও তাঁদের সঙ্গী হয়েছিলাম। 

দিনটি ছিল প্রচণ্ড গরম, শীতপ্রধান দেশের মানুষ আশা ও মোগুয়েন্সের গরমটা আরো বেশিই লাগছিল। 

প্রথমেই যাওয়া হলো পুরানো রেল স্টেশনে, যেটি এখন পরিত্যাক্ত। ঝরো পাতায় ঢাকা পড়েছে মেঝে। সর্বত্রই ধুলার প্রলেপ। সেখানে বিশেষ কিছু পাওয়ার আশা ছিল না। তবে এক কোণায় আধুনিকতার একটি ছাপ চোখে পড়ল– একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ, ফলে জায়গাটি যে পুরোপুরি জনবর্জিত নয়- তা বোঝাই যাচ্ছিল। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জন্য একসময় যেটি প্রধান ফটক ছিল– তাঁর সিঁড়িতে কয়েকজনকে বসে থাকতেও দেখা গেল। এদের মধ্যে নারী-পুরুষসহ কয়েকটি শিশুও ছিল। 

ছবি: রাজীব ধর

আশা ইশারায় দেখালেন, এরমধ্যে একটি শিশু দেখতে অবিকল তাঁরই মতো। আসলেই ছেলে শিশুটির সাথে আশার চেহারার মিল লক্ষ করলাম এবার। ওর মায়ের কাছে গিয়ে এবার ছেলেটির বয়স জেনে নিলেন আশা। ছেলেটির এখন যে বয়স ঠিক এই বয়সেই আশাকে এই স্টেশনে কেউ ফেলে রেখে গিয়েছিল। 

কাকতালীয় এই মিল আমাদের সবাইকেই ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল, কিছুক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা ফুটছিল না। আশাও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, চোখের পানি আটকানোই দায় হয়ে পড়েছিল তাঁর। অস্ফূট স্বরে বলছিলেন, "কেন ছোট্ট এই শিশুটির বয়স– আমার ওই বয়সের মতো হবে? ওকে দেখে ওই বয়সের আমার কথাই মনে পড়ছে!"  
 
আরো কয়েক ঘণ্টা এদিক-সেদিক চললো আমাদের খোঁজ। এঁর ওঁর কাছে জানতে চাইলাম ডলির সম্পর্কে। এই নামে কী কোনো রেল কর্মকর্তা ছিলেন এক সময়? ধারেকাছে কোথাও মন্ডলপাড়া নামের কোনো এলাকা আছে? ওই সময়ের কথা স্মরণ করতে পারেন বয়স্ক এমন কেউ কী জীবিত আছেন?- এমন নানান জিজ্ঞাসা। 

কিছুক্ষণ এভাবে চলার পরে, শেখ ফজলুল কবির নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রনেতা তাঁর পরিবারকে সাথে নিয়ে আমাদের এই খোঁজে যোগ দিলেন। এলাকায় তাঁর ভালো পরিচিত আছে, তাই কিছু একটা খুঁজে পাবেন বলেই ধারণা করছিলেন। 
 
তাঁর সাহায্যেই আমরা গেলাম দোলখোলার শেতলাবাড়ি মন্দিরে (যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দুদের উপাধি হয় মন্ডল)। সেখানে গিয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের বয়োবৃদ্ধ সমাজপতিদের সাথে আলোচনা করলাম আমরা, কিন্তু কেউই সঠিকভাবে কিছু বলতে পারলেন না। 

এরপর আমরা বাগমারা মন্দিরে গেলাম সেখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে, যদি ডলি মন্ডল সম্পর্কে এবার কিছু জানা যায় সেই ভরসাই ভর করে।  

কিন্তু, দিন যতই গড়াতে লাগলো– ততোই বাড়ল আমাদের হতাশা। এরমধ্যে যখনই কোনো বৃদ্ধাকে দেখতেন, আশা আমাকে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলার অনুরোধ করতেন। অনুরোধ করার সময় তাঁর চেহারা দেখেই বুঝতাম, মনে মনে ভাবছেন, ইনিই হয়তো তাঁর সেই জন্মদাত্রী মা হতে পারেন।
 
সেদিন যাদের সাথে আমাদের কথাবার্তা হলো– সবাই অবশ্য আশাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু, এটাও জানালেন তাতে সময়ও লাগবে আরো। কারণ, সময়ও তো কম নয়, সেই ৫০ বছর আগের ঘটনা, এরমধ্যে অনেক হিন্দু পরিবার দেশের অন্যান্য স্থানে চলে গেছে, অথবা ভারতে অভিবাসন করেছে।  এতকাল পরে আজ কেউ তাই চিনতে পারলো না একজন ডলি মন্ডলকে। 

আশাকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, তাঁর ভগ্নহৃদয়ের গভীরতা আমি কিছুটা বুঝতেও পারছিলাম। তাঁকে সান্তনা দিতে চাইছিলাম। কিন্তু, মোগুয়েন্স কিন্তু বেশ আশাবাদী ছিলেন তখনও। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আরেকটু সময় দিলে অবশ্যই একটা খোঁজ পাওয়া যাবেই, শুধু আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে।

আশার এবার বাংলাদেশের আসার ঘটনায় তাঁর পালক মা-বাবা কিন্তু মোটেও খুশি হননি। এখনও তাঁরা এনিয়ে নাখোশ। তবে জন্মপরিচয় সন্ধানের আবেগ চিরকালই আশাকে কুড়েকুড়ে খেয়েছে। সেই অনুভূতিকে ব্যক্ত করে বলেন, "মনে হতো যেন আমি এক দুনিয়ার বাসিন্দা, অথচ এসেছি আরেক জগৎ থেকে।"

তাই ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সফর হোক, এটা মোগুয়েন্সই চাইছিলেন। হয়তো তাঁর চাওয়াটা ছিল আশার চেয়েও বেশি। কারণ, স্ত্রীর জন্য এর গুরুত্ব তিনি মন থেকে উপলদ্ধি করেছেন। তাছাড়া, স্ত্রীর দেশ দেখার ইচ্ছেটাও ছিল ষোলআনা। 

ডেনমার্কে হয়তো পরিপাটি সুন্দর এক জীবন কেটেছে আশা অয়েলিসের। কিন্তু, নিঃসঙ্গতা কখনো দূর হয়নি। পালক মা-বাবা তাঁর বস্তুগত সব চাহিদাই পূরণ করেছিলেন, কিন্তু ভালোবাসা ও স্নেহের জন্য আকুল থাকতেন সবসময়– জানান তিনি।  

এতে বোঝাই যায়, পালক মা-বাবাকে নিজ অনুভুতির সবটা তিনি খুলে বলতে পারতেন  না। মনের কথাগুলো লুকিয়ে রাখতো হতো ভেতরে। আশা বলেন, "জানো অনেক সময় আমাকে অন্য শিশুদের সামনে বিষণ্ণ হয়ে থাকতে মানা করা হতো। কারণ, ওদের শেকড় ডেনমার্কে, কিন্তু আমার নয়।"   

মোগুয়েন্স বলেন, প্রায়ই ওকে বলা হতো, তুমি ডেনমার্কে বড় হচ্ছ, এখানে যে জীবন পাচ্ছ–  এজন্য কৃতজ্ঞ থাক। "কিন্তু কেন সে কৃতজ্ঞবোধ করবে? আমার মতে, ওর মতো চমৎকার একটি মেয়ে পাওয়ায়- তাঁদেরই (পালক পরিবারটির) কৃতজ্ঞবোধ করা উচিত।"  

বাংলাদেশে আসাটা তাঁদের জন্য সহজ ছিল। এজন্য অনেক অর্থেরও দরকার হয়েছে। আশা বলেন, "এই সফরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা দুজনে মিলে সঞ্চয় করেছি।"

'আশা করি, জন্মদাত্রী মা আমাকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেনি'

এলিজাবেথের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে– যেন কাছের কোনো বন্ধুর সাথে কথা বলছি। ওর মনটা ছিল খোলামেলা ও উষ্ণতায় ভরা। প্রথম সাক্ষাতেই তিনি আমাকে বললেন "আমাকে দেখে কী যথেষ্ট বাঙালি বলে মনে হয়?"- আমিও ওকে আশস্ত করেছিলাম সেদিন।  

ওর গর্ভে যখন প্রথম সন্তান এলো তখন চিকিৎসক ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পরিবারের কারো গুরুতর রোগব্যাধি আছে কিনা। কিন্তু, এর উত্তর দিতে পারেননি এলিজাবেথ। "পরিবার সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আমি ভাবলাম, আমার মা কী দেখতে আমার মতোন ছিলেন? যাই হোক, একটা কথা তোমায় জানিয়ে রাখি, আমার বড় ছেলে দেখতে কিন্তু পুরোদস্তুর বাঙালিদের মতোন"- বলছিলেন তিনি।   

এলিজাবেথ আমাকে ছেলেটির ছবিও দেখালেন, মাথাভর্তি কালো চুলের সুবেশি এক তরুণের ছবি। 

বেশ আবেগের সাথেই পালক মা-বার কথা বলছিলেন এলিজাবেথ। ওর পালক বাবার বয়স এখন ৮৮, আর ছয় বছর আগে পালক মা মারা গেছেন। "মা-বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। আমার মা ছিলেন চমৎকার এক ব্যক্তিত্ব।"

তবে পালক মার মৃত্যুর পর থেকেই এলিজাবেথের ভিতরে অজানা এক শূন্যতা কাজ করতে থাকে। ওর ভাষায়, "তখনই সিদ্ধান্ত নেই– আমি কোথা থেকে এসেছি তা খুঁজে বের করতে হবে। আমার কিছু উত্তর দরকার। আশা করি, জন্মদাত্রী মা আমাকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেননি, তবে সত্যিটা আমার জানা নেই। তাঁর সাথে কিছু হয়েছিল কিনা– সেটি আমি জানতে চাই।" 

এলিজাবেথ ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছে প্রচুর। বড় হওয়ার সময়ে ওর পালক মা-বাবাই তাঁকে সব বুঝিয়ে বলেছিলেন। "ওরা আমাকে বলেছিলেন, ঢাকার একটি সিঁড়িতে কেউ একজন আমায় পায়। বাংলাদেশের শিশুরা দেখতে বেশ সুন্দর– এজন্যই তাঁরা এখান থেকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন বলে (পালক) মা আমাকে জানান। তাঁরা দুজনকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন, তবে শেষপর্যন্ত শুধু আমাকেই নেন।"  

এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় এসেছে এলিজাবেথ। প্রথমবার এসেছিল ২০১৩ সালে। 

তবে এবার বাংলাদেশে পা রাখা মাত্রই ভিন্ন এক অনুভূতি ওকে ভর করেছে, এই দেশের সাথে এখন আরো একাত্মতা অনুভব করছেন। আর সেটা তিনি বুঝতেও পারছে। "আমাকে ভুল বুঝ না, নরওয়েতে থাকা আমার পরিবারকেও আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমার স্বামীর নাম হেনরিক ফিওস্লাত। আমার বয়স যখন ১৮ আর ওর ২০– তখন দুজনার প্রথম দেখা। এখন আমাদের চার সন্তান আর একজন নাতিও আছে।" 

ফিরোজা আর বশিরের মেয়ে– এর বাইরেও তাঁর জন্মপরিচয়ের অন্যান্য বিষয় জানতে চায় এলিজাবেথ। এজন্য বাংলাদেশের নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছে বলেও জানাল। "এসব পড়ে বারবার মনে হয়েছে, আমিও কি তাদেরই একজন?" 

বেশকিছু সময় ধরে খোঁজখবর নেওয়ার পরে এলিজাবেথ আবিষ্কার করেন, মিশনারিজ অব চ্যারিটি বা টেরেস ডেস হোমস (টিবিএস) থেকে তাঁকে শিশু অবস্থায় নরওয়ে পাঠানো হয়নি, যেমনটা তিনি আগে জানতেন। তিনি আরো এমন কিছু তথ্য পান, যা তাঁর আগের বোঝাপড়ার সবটাই বদলে দেয়।  

হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এলিজাবেথ আমাকে জানালো, ফরিদপুরের শিবচরের পদ্মার চর ওর জন্মের ঠিকানা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ওর মা ওকে গর্ভধারণ করেছিলেন। বেশ কয়েকজন সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এলিজাবেথ এটি জানতে পেরেছেন।  

"এর বেশি কিছু জানতে না পারলেও– এখন মনে অনেক শান্তি পাব। এবার বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটার সময় মনে হয়েছে, এইতো আমার জন্মভূমি, এখানে আসতে পেরে ভাগ্যের ওপর আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। এ দেশের নানান সৌরভ, উষ্ণ আবহাওয়া– খুব ভালো লাগে। আমার মতো দেখতে কতো মানুষ আশেপাশে"- সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আমাকে খোলামনে জানাচ্ছিলেন এলিজাবেথ।   

আমাদের দেখা হওয়ার কিছুদিন পরেই গত ২৮ মার্চ টেলিভিশনের এক সংবাদে চোখ আটকায়, সেই সুত্রেই জানতে পারি শিবচরে নিজের মা এবং বাবার এক আত্মীয়কে শেষপর্যন্ত খুঁজে পেয়েছেন এলিজাবেথ। ভিডিওতে দেখি মাকে সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে, যেন আর কোনোদিন এই বাঁধন সে আলগা করবে না। 

ওর অনুমানও সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম সত্যিই নিজ সন্তানকে দিয়ে দিতে চাননি, কিন্তু তখন তিনি ছিলেন কিশোরী, এলিজাবেথের জন্মের পাঁচ মাস আগে তাঁর স্বামীও মারা যান। ফিরোজা বেগমের বাবাও বেঁচে ছিলেন না। এই অবস্থায় সন্তান নিয়ে অকূলে পড়েন ফিরোজা।   

ওই সময়ে এক প্রতিবেশী তাঁকে পরামর্শ দেন ঢাকায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত শিশু সদনে বাচ্চাকে দত্তকের জন্য দিতে। নিরুপায় ফিরোজা বেগম তাঁর কথামতো কাজ করেছিলেন।  
 
 

Related Topics

টপ নিউজ

জন্মপরিচয় / বাংলাদেশ / শেকড়ের সন্ধান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • এনবিআরের চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা’ ঘোষণা, কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
  • কয়েন ও নোট সবই আছে, তবু ব্যবহার নেই চীনে; ‘বিলুপ্তির পথে’
  • এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা; কীভাবে এটা আন্দোলন থামাতে পারে?
  • এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতিসহ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ‍দুদক
  • আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন এনবিআরের কর্মকর্তারা
  • রীনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নেশায় ডুবে ছিলেন আমির: 'রোজ বেহুঁশ হয়ে যেতাম মদ খেয়ে'

Related News

  • একক অর্থবছরে রেকর্ড, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার
  • এনবিআরের অচলাবস্থা, বাণিজ্যে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ী নেতাদের
  • বাংলাদেশের এক বড় ভুল: প্রতিশোধ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সংস্কারের সঙ্গে
  • শুল্ক স্থগিতাদেশের ডেডলাইন সামনে, যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান বাংলাদেশের
  • ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময়ে সংহতির জন্য বাংলাদেশের প্রতি ইরানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

Most Read

1
বাংলাদেশ

এনবিআরের চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা’ ঘোষণা, কাজে না ফিরলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

2
আন্তর্জাতিক

কয়েন ও নোট সবই আছে, তবু ব্যবহার নেই চীনে; ‘বিলুপ্তির পথে’

3
বাংলাদেশ

এনবিআরের চাকরি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা; কীভাবে এটা আন্দোলন থামাতে পারে?

4
বাংলাদেশ

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতিসহ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ‍দুদক

5
বাংলাদেশ

আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন এনবিআরের কর্মকর্তারা

6
বিনোদন

রীনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নেশায় ডুবে ছিলেন আমির: 'রোজ বেহুঁশ হয়ে যেতাম মদ খেয়ে'

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net