Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 05, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 05, 2025
বোস ব্রাদার্স: নেতাজি, মাস্টারদা, প্রীতিলতাদের সংগ্রামের স্মৃতি ধরে আছে যে মিষ্টির দোকান

ফিচার

আসমা সুলতানা প্রভা
28 January, 2024, 04:45 pm
Last modified: 29 January, 2024, 03:57 pm

Related News

  • চট্টগ্রামে ছয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষককে আমৃত্যু কারাদণ্ড
  • ৫ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর
  • ছাত্র জোটের নারী কর্মীকে লাথি মারার ঘটনায় বহিষ্কৃত জামায়াত কর্মী আকাশ চৌধুরী গ্রেপ্তার
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • চট্টগ্রামে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মেরামত 

বোস ব্রাদার্স: নেতাজি, মাস্টারদা, প্রীতিলতাদের সংগ্রামের স্মৃতি ধরে আছে যে মিষ্টির দোকান

মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ অনেকেই চা-মিষ্টি খেতে খেতে আলাপ করতেন এই দোকানে। এবং তাদের সঙ্গে এ আলোচনায় শরিক হতেন দোকানের মালিক। দক্ষ এই মিষ্টি তৈরির কারিগর নিজেও ছিলেন একজন সশস্ত্র বিপ্লবী।
আসমা সুলতানা প্রভা
28 January, 2024, 04:45 pm
Last modified: 29 January, 2024, 03:57 pm
ছবি: আসমা সুলতানা প্রভা/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

সময়টা ১৯২০ সাল। চারদিকে তখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের হাকডাক। শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। অন্যান্য সব অঞ্চলের মতো বঙ্গের চট্টগ্রামও তখন ব্রিটিশদের বিপক্ষে সোচ্চার। বিদ্রোহীদের সতর্ক অবস্থান পুরো শহরজুড়ে। অলিগলিতে মিটিং-মিছিলের শোর। ইংরেজদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে জায়গায় জায়গায় তরুণ-তরুণীদের যত আয়োজন। কোনো দোকান, খোলা ময়দান, চায়ের টং দেখলেই একসঙ্গে বসে কষছেন আন্দোলনের হিসাব-নিকাশ।

খাবারের দোকান বা চা-নাস্তার দোকান, যেখানেই হোক, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে বসে সাজানো হতো যত রণকৌশল। এসব দোকানের তালিকায় বিশেষভাবে উঠে আসে একটি নাম। অনন্য স্বাদের মিষ্টির জন্য বিখ্যাত এই দোকান হলো 'বোস ব্রাদার্স'। যে মিষ্টির স্বাদ নিতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিড় জমাতেন বিপ্লবীরাও। চা-নাস্তা খেতে খেতে সাজাতেন আন্দোলনের পরিকল্পনা। এমনকি বিখ্যাত এই মিষ্টি খেতে চট্টগ্রামে এসেছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুও। বিভিন্ন মানুষের মুখ থেকে মিষ্টির সুনাম শুনেই খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয় তার।

মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তসহ অনেকেই চা-মিষ্টি খেতে খেতে আলাপ করতেন এই দোকানে। এবং তাদের সঙ্গে এ আলোচনায় শরিক হতেন দোকানের মালিক। দক্ষ এই মিষ্টি তৈরির কারিগর নিজেও ছিলেন একজন সশস্ত্র বিপ্লবী। নাম শুধাংশু বিমল বোস। স্বরাজী হিসেবেই পরিচয় দিতেন নিজেকে। স্বরাজ আন্দোলন থেকে শুরু করে যুক্ত ছিলেন জালালাবাদ বিদ্রোহ, ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলসহ ব্রিটিশ বিরোধী নানান আন্দোলনে।

শুরুটা যেভাবে

প্রায় ২০০ বছর আগে পুরো ভারতবর্ষজুড়ে চলছিল ইংরেজদের একচেটিয়া শাসনের তাণ্ডব। তাদের অযৌক্তিক সব নীতি নির্ধারণে তখন বিক্ষুব্ধ জনগণ। এর মধ্যে ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা বাঙলার মানুষের শান্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন সব নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানূষের মনে জ্বলতে থাকে বিদ্বেষের আগুন।

ইংরেজদের কর্মকাণ্ডে অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এই সংকট বাংলার মানুষের জনজীবনকে নিয়ে যায় প্রলয়ংকারী দুর্ভিক্ষের দিকে। ১৭৭০ সালের সে দুর্ভিক্ষের প্রভাবে মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুর মুখে পড়ে। এরপর লর্ড কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে সাধারণ মানুষ জমি হারিয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েন। এই সময়টায় অনেকেই ভালো কিছুর সন্ধানে ছেড়ে আসেন নিজ জন্মভূমি।

ছবি: আসমা সুলতানা প্রভা/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

সারদা চরণ বোস তাদেরই একজন। বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের গুনডাইক্কা গ্রামে। স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়েই তার সংসার। সংকটের কারণে চলে আসেন চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। পরে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে পেশা হিসেবে বেছে নেন মিষ্টি তৈরির কাজ। তারপর পায়ে হেঁটে সেসব মিষ্টি বিভিন্ন জায়গায় ফেরি করতে বেরিয়ে পড়তেন তিনি এবং তার ভাই আনন্দ বোস। দুই ভাইয়ের মিষ্টির নাম ডাক বাড়তে থাকে লোকমুখে। চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়লে এই ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন তারা।

সারদার তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় ছিলেন শুধাংশু বিমল বোস। বাবা সারদার চিন্তা অনুসারে স্থায়ীভাবে মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন তিনি। তাদের মিষ্টির এই ব্যবসা আরও বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে তার মাধ্যমে। ১৯২০ সালে তার হাত ধরেই শুরু হয় 'বোস ব্রাদার্স' দোকানের যাত্রা।

সশস্ত্র বিপ্লবী থেকে প্রসিদ্ধ 'মিষ্টির কারিগর'

ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদ করার সহজাত প্রবণতা ছিল শুধাংশুর মধ্যে। তাছাড়া এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন যেখানে চোখের সামনেই নিজের অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে দেখেছেন প্রতিদিন। ইংরেজদের অনৈতিক সব নীতিমালার তোপের মুখে পড়ে যখন ছাড়তে হয় জন্মভূমি, তখন থেকেই তার প্রতিবাদী সত্তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনেও অংশ নিতে শুরু করেন তিনি।

১৯২৩ সালে গঠিত স্বরাজ দল কর্তৃক যত আন্দোলন হয়, সেখানে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন শুধাংশু। এমনকি সবার সামনে নিজেকে স্বরাজী বলেই পরিচয় দিতেন তিনি।

বোসের বর্তমান কর্ণধার, শুধাংশুর ছেলে তরুণ কান্তি বোস বলেন, "দেশের জন্য অন্যরকম প্রেম ছিল তার। স্বরাজ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে দেশ থেকে পালিয়ে মায়ানমারে যেতে হয়েছিল তাকে।'

১৯২৪ সালের তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে। তখন সদরঘাট ক্লাবে বন্ধুবান্ধবের সাথে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে আসতেন সূর্যসেন। এ সময় তার সান্নিধ্যে আসেন শুধাংশু। তাকে মিটিং-আড্ডায় শামিল হতে আমন্ত্রণ জানাতেন মাস্টারদা। এরপর বোস ব্রাদার্সেই হতো নানা রকম আলাপ-আলোচনা। এমনকি প্রায় তারা নাস্তা বা মিটিংয়ের স্থান হিসেবে বেছে নিতেন এই দোকানকে। সাথে থাকতেন প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তসহ আরও অনেকেই। এইসব বিপ্লবীদের আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল বোসের মিষ্টি।

তরুণ কান্তি বোস বলেন, 'দোকানটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের মিলনস্থল। মাস্টারদা সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ অন্যান্য বিপ্লবীরা নিয়মিত দোকানে আসতেন।'

ছবি: আসমা সুলতানা প্রভা/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

সময়টা ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল। সূর্য সেনের নেতৃতে বিপ্লবীরা তখন জালালাবাদ পাহাড়ে (চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পাহাড়) অবস্থান নিতে শুরু করেন। সে সময় সশস্ত্র ইংরেজ সৈন্যরা তাদের আক্রমণ করে বসে। দুই ঘণ্টার প্রচণ্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন নিহত এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন শহীদ হন। এই যুদ্ধে একসাথে লড়েছেন সূর্যসেন এবং শুধাংশু। এর পরের অভিযান ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এই হামলায়ও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে যত পরিকল্পনা, মিটিং সব হতো বোস ব্রাদার্স দোকানের অন্দরে।

বিল্পবী হওয়ার বাইরেও তার আরেকটি পরিচয় ছিল মিষ্টি তৈরির দক্ষ কারিগর হিসেবে। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরেই শেখা হয় ময়রার কাজ। সেই থেকে এই কাজেও দক্ষ করেছেন নিজেকে। তার বাবা সারদা চরণ বোসের মাধ্যমেই এই পেশার শুরু। জীবন-যাপনের তাগিদে পারিবারিক এই পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তারপর এই দায়িত্বের ভার এসে পড়ে শুধাংশুর কাঁধে। বাবার এই কাজকে সব মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে গড়ে তোলেন 'বোস ব্রাদার্স'। ১৯২০ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০৪ বছর ধরে এখনো মাথা উঁচু করেই টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী এই দোকান।

বোস ব্রাদার্স

নিউমার্কেট এলাকার নন্দনকানন চৌরাস্তার মোড়। চারপাশে গাড়িঘোড়ার অবাধ যাতায়াত। নগরীর ব্যস্ত এই মোড়ের ঠিক মাঝখানে অবস্থান কাচ দিয়ে ঘেরা এই দোকানটির। বর্তমানে বোস ব্রাদার্স মোড় নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছে এটি। আট-দশটি সাধারণ মিষ্টির দোকানের মতোই দেখতে। ভেতরে কাচের বাক্সে সাজানো রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম, কাঁচাগোল্লা, বাদশাভোগ, রসমালাই, দধি, পেড়া, সন্দেশ নিমকিসহ ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার।

দোকানের চারপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়। ভেতরে বসার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকাতে অনেকেই বাইরে অপেক্ষা করে যাচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু তাতে যেন ক্লান্তি নেই তাদের। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানের অসাধারণ স্বাদের মিষ্টিমুখ করতেই এই অপেক্ষা। দোকানে কর্মরত ৫-৬ জন কর্মী। মিষ্টির বাটি হাতে ছুটোছুটি তাদের। জিরিয়ে নেবার সময় যেন নেই। টেবিলে বসে থাকা ক্রেতাদের মিনিট খানেক পরপরই বাটি ভরে মিষ্টি এগিয়ে দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্যাকেট ভর্তি করে কিনেও নিচ্ছেন।

অনন্য স্বাদের শতবর্ষী এই মিষ্টির দোকান এখনো ক্রেতাদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা। চট্টগ্রাম শহরের মিষ্টিপ্রেমী সকল মানুষের প্রিয় স্থান এটি। শুধু তা-ই নয়, দেশের অনান্য অঞ্চলের মানুষ এসেও ভিড় জমান এখানে। তাই তো ১০৪ বছর পরেও পুরনো সেই জৌলুশের সাথে সগৌরবে টিকে আছে শহরের সবচেয়ে প্রাচীন এই মিষ্টির দোকান।

তিন পুরুষের ব্যবসা

সারদা চরণ বোসের মাধ্যমেই এই ব্যবসার শুরু। তারপর দোকানের দায়িত্ব নেন শুধাংশু বিমল বোস। বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ৫০ বছর ধরে বহন করেছেন এই গুরুদায়িত্ব। সবার কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন বোস বাবু নামে। প্রায় অনেক মানুষই তাকে চিনতেন। চেনাজানা ক্রেতারা এখনো ভীষণ সমীহ করেন তাকে। তার বিপ্লবী কাজকর্ম এবং তৈরি অনন্য স্বাদের মিষ্টি — দুটো বিষয়ের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন মানুষের কাছে।

ছবি: আসমা সুলতানা প্রভা/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

১৯৮৮ সালে তার মৃত্যু হলে দোকান চালানোর দায়ভার অর্পিত হয় ছেলে তরুণ কান্তি বোসের ওপর। ৬০ বছর বয়সি তরুণ ৩৪ বছর ধরে করছেন মিষ্টি তৈরির কাজ। বাবার কাছেই মিষ্টি তৈরির হাতেখড়ি হয় তার। বর্তমানে দোকানের সমস্ত বিষয় দেখাশোনা করছেন তিনি। ১৯৮০ সালে ২৫ বছর বয়সেই এই কাজে মনোনিবেশ করেন তরুণ।

তিনি বলেন, 'দাদা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা একাই সব সামলে নিয়েছেন। দোকানের দায়িত্ব নিয়ে সেটার পরিসর আরও বড় করেছেন। আমিও বাবার মতো করে দায়িত্বের সাথে এই ঐতিহ্য রক্ষা করে যেতে চাই।'

'১৫ রকমের মিষ্টি বিক্রি হয় এখানে'

১৯১৫ সালে দিকে যখন সারদা চরণ বোস এই কাজ শুরু করেন তখন কেবল ৪–৫ ধরনের মিষ্টিই তৈরি হতো। সিঙারা, নিমকি, দধি, কালোজাম, বাদশাভোগ, রসগোল্লা এসবই বিক্রি করা হতো ফেরি করে। আস্তেধীরে এই তালিকায় যুক্ত হয় হরেক রকম মিষ্টির পদ। তবে ক্রেতাদের কাছে রসগোল্লা, কালোজাম, দধি'র মতো আদি মিষ্টান্নগুলো বরাবরই জনপ্রিয়।

তরুণ বোস বলেন, 'প্রায় ১৫ ধরনের মিষ্টি বিক্রি হয় এখানে। এর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রসমালাই। তবে পুরাতন যেসব ক্রেতা আসেন তাদের প্রিয় আদি মিষ্টি।'

দুইটি ভাগে মিষ্টিকে ভাগ করে বিক্রি হয় এই দোকানে — নরমাল মিষ্টি এবং স্পেশাল মিষ্টি। নরমাল মিষ্টির দাম প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। অন্যদিকে স্পেশাল মিষ্টির দাম হয়ে থাকে ৪৫০ টাকা কেজি। পেড়া এবং সন্দেশের দাম কেজি ৫৫০ টাকা করে। মিহিদানা, রসমালাই এবং দধির প্রতি কেজি দাম যথাক্রমে ২২০ টাকা, ৪০০ টাকা এবং ৩০০ টাকা।

রসগোল্লা, চমচম, রসমঞ্জুরি, কালোজাম, বাদশাভোগ, সন্দেশ, স্পঞ্জ ইত্যাদি মিষ্টি পিস হিসেবেও বিক্রি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দাম শুরু হয় ১৫ টাকা থেকে। যা সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেমন, রসমালাই প্রতি প্লেট ৪০ টাকা, চিরায়ত মিষ্টি (রসগোল্লা) ১৫ টাকা, দই ৩০ টাকা, সন্দেশ ৩০ টাকা, স্পঞ্জ ৩০ টাকা। সপ্তাহের সাতদিনই খোলা থাকার কারণে যেকোনো ক্রেতা সুবিধাজনক সময়ে এসে খেতে পারবেন পছন্দের মিষ্টি।

ছবি: আসমা সুলতানা প্রভা/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

মিষ্টি তৈরি হয় যেভাবে

এই মিষ্টি প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণও আছে বটে। প্রতিটি মিষ্টি এতটাই নরম এবং মোলায়েম, মুখেও দেওয়ার সাথে সাথেই সহজে মিলিয়ে যায়। অবশ্য গোপন তরিকাও আছে এর পেছনে। এই দোকানের মিষ্টি তৈরির পদ্ধতিও অন্যান্যদের তুলনায় ভিন্ন। তরুণ জানান, 'মিষ্টি বানানোর সময় আটা বা সুজির ব্যবহার হয় নামে মাত্র। দুধের ছানাকে আকার দিতে যতটুক আদা-ময়দা-সুজির দরকার হয় ঠিক ততটুকই ব্যবহার করা হয়। দুধের ছানার পরিমাণ যত বেশি হবে মিষ্টি ততই নরম হবে।'

প্রতিদিন অনেক কেজি মিষ্টি তৈরি করেন তরুণ কান্তি বোস। এজন্য দৈনিক ১৩০–১৫০ লিটার দুধের প্রয়োজন হয়। মাঝেমধ্যে ক্রেতাদের অর্ডারের ওপর নির্ভর করে বেড়ে যায় মিষ্টি তৈরির কাজ। শতবর্ষ আগে তার দাদা যেভাবে মিষ্টি তৈরি করতেন এখনো ঠিক একইভাবে হয় এই কাজ।

তরুণ বলেন, 'বিয়েসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য এখনো মানুষ এখান থেকেই তাদের পছন্দের মিষ্টি নিয়ে যান।'

তবে ঐতিহ্যবাহী এই দোকানে পুরাতন ক্রেতাদের ভিড় হয় বেশি। এমনকি কিছু ক্রেতা এমন আছেন যারা মিষ্টির স্বাদ পরিবর্তিত হলেও বুঝতে পারেন। এই ক্রেতাদের জন্যই মিষ্টির মান ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান তরুণ। তার দাবি, সবচেয়ে কম দামে ভালো মানের মিষ্টি কেবল বোস ব্রাদার্স-এ পাওয়া যায়। এত অল্প দামে এমন ভালো মানের মিষ্টি অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর বলেও জানান তিনি।

'হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই দোকান'

শতবছর ধরে এভাবেই চলে আসছে দোকানের কর্মকাণ্ড। এখনো চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যের কথা উঠে এলে বোস ব্রাদার্সের নামও থাকে সাথে। মিষ্টির স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে আলাদা করে কোনো শাখাও খোলা হয়নি। প্রাচীন সেই স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখার কারণে মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে এখনো প্রিয় নাম 'বোস ব্রাদার্স'।

কিন্তু এতসবের ভিড়েও অস্থিরতায় দিন পার করেন তরুণ কান্তি বোস। শঙ্কায় থাকেন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ব বহন করে চলা এই দোকান কতদিনই বা এভাবে চালিয়ে নেওয়া যাবে। প্রায়ই বিভিন্ন রকম চাপের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বাইরের অবাধ হস্তক্ষেপে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।

বিভিন্ন রকম জরিমানা, অতিরিক্ত কর আরোপ ইত্যাদির চাপ মাথায় নিয়ে আগের মতো কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। মিষ্টি তৈরি করে যে আয় হয় তার দ্বিগুণ জরিমানা গুনতে হচ্ছে প্রায়। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তবুও পারিবারিক এই ব্যবসাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন। ঐতিহ্য রক্ষার্থেই এত কিছুর মধ্যেও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসাটি।

আগে এই দোকানে কর্মরত ছিলেন ১০–১২ জন কর্মী। তবে বেশি মজুরি দেওয়া সম্ভব হয় না বলে বর্তমানে তা কমে গিয়ে চারজনে এসে দাঁড়িয়েছে।

হতাশা প্রকাশ করে তরুণ বলেন, 'এটি শুধু একটি মিষ্টির দোকান তা তো নয়। কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে এটির সাথে। কত আন্দোলনের সূচনা হয় এখান থেকে। মানুষের সেদিকে কোনো ধ্যান নেই। উল্টো প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই দোকান।'

Related Topics

টপ নিউজ

বোস ব্রাদার্স / মিষ্টির দোকান / মিষ্টি / চট্টগ্রাম / ব্রিটিশ ভারত

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদে জড়ায় বিএনপি ও এনসিপি
  • বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি; আহতদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্সরাও পেলেন স্বীকৃতি
  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, কার্যকর ১ জুলাই
  • ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • ১৮ মাসের প্রস্তুতি, রাশিয়ায় ড্রোন পাচার: যেভাবে রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের দুঃসাহসিক হামলা

Related News

  • চট্টগ্রামে ছয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষককে আমৃত্যু কারাদণ্ড
  • ৫ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর
  • ছাত্র জোটের নারী কর্মীকে লাথি মারার ঘটনায় বহিষ্কৃত জামায়াত কর্মী আকাশ চৌধুরী গ্রেপ্তার
  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • চট্টগ্রামে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সেনাবাহিনীর সহায়তায় মেরামত 

Most Read

1
বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদে জড়ায় বিএনপি ও এনসিপি

2
বাংলাদেশ

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি; আহতদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্সরাও পেলেন স্বীকৃতি

3
বাংলাদেশ

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, কার্যকর ১ জুলাই

4
বাংলাদেশ

‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা

5
আন্তর্জাতিক

১৮ মাসের প্রস্তুতি, রাশিয়ায় ড্রোন পাচার: যেভাবে রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের দুঃসাহসিক হামলা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net