কেমন লাগে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল চালাতে?

আজ থেকে তিন বছর আগে আমার একটা এনফিল্ড ৩৫০সিসি বুলেট ছিল। সিলেটের এক ভদ্রলোকের থেকে এটা কিনেছিলাম। এটা যে কোন সালের মডেল ছিল, বলতে পারব না—কারণ ব্লুবুকে লেখা ছিল ১৯৯২। কিন্তু চেসিসে যে নম্বর ছিল, তা আরও পুরনো। তবে এই ধাঁচের ইঞ্জিন ১৯৯৫ সালের পর রয়্যাল এনফিল্ড আর বানায় নাই।
যা-ই হোক, লাল রঙের এই বাইকটা ছিল ১৮০ কেজি ওজনের। তেল নিলে আরও ভারী হতো। ইঞ্জিন ছিল পুরোনো ধাঁচের। ইলেকট্রিক সাপ্লাই দেবার জন্য মেগনেটো ছিল ইঞ্জিনের পেছনে আলাদা কেসিংয়ে। অয়েল সাম্প থেকে আলাদা পাইপ দিয়ে ইঞ্জিন অয়েল সরবরাহ হতো ইঞ্জিন হেডে। সব মিলে ইঞ্জিনের ডিজাইন ছিল অতি চমৎকার।
বাইকের সামনের ব্রেক ছিল হাইড্রোলিক। খুবই শক্তিশালী ব্রেক। ১৪ লিটার তেল ভরা যেত ট্যাঙ্কে।
এবার বলি বাইকটি চালাতে কেমন লাগত। এটিতে কোনো সেলফ স্টার্টার ছিল না। ফলে কিক দিয়ে স্টার্ট করতে হতো। এবং এই স্টার্ট করা ছিল একটা সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ। কিকারটি প্রথমে আস্তে চাপতে হতো কয়েকবার। তারপর হঠাৎ জোরে কিক দিতে হতো। কিক দেওয়া বেশ শক্তির বিষয় ছিল। কিন্তু যদি কোনো কারণে স্টার্ট নিতে একটু ঝামেলা হতো, তাহলে বিশাল ঝক্কি। কারণ তিন-চারবার কিক মারার পর পা ব্যথা হয়ে যেত। এবং স্টার্ট নিতে মাঝেমধ্যেই বেগ পেতে হতো। যদি তেল দিয়ে ইঞ্জিন ফ্লাড হয়ে যেত, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যেত।

কিন্তু একবার স্টার্ট নেবার পর আর কোনো ঝামেলা নাই। গুরুগম্ভীর শব্দে গর্জন করে উঠত ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের থাম্প ছিল বেশ রাজকীয়। বাইকের ব্যালান্স ছিল খুবই চমৎকার। অনেক স্লো স্পিডেও ব্যালান্স ছিল অসাধারণ। রাস্তা কামড়ে শক্তিশালী বাইকটি দুনিয়া কাঁপিয়ে ছুটে চলত। শক অ্যবজর্বার এত ভালো ছিল যে খানাখন্দ কিছুতেই সমস্যা হতো না।
তবে সত্যিকার অর্থে এর স্পিড তেমন ছিল না। আমি ৯০কিমি সর্বোচ্চ স্পিড তুলেছি। কিন্তু এর ওজন এবং ব্যালান্সের জন্য হাইওয়েতে নিরাপদ ছিল বাইকটি।

তবে গরমকালে এটি চালানো ছিল কষ্টকর, বিশেষ করে ঢাকা শহরে। কারণ এটির ইঞ্জিন বড় বলে অনেক তাপ তৈরি হতো এবং ঢাকা শহরের জ্যামে বসে থাকলে সেই তাপ বেশ কষ্টকর ছিল। আবার জ্যামে ইঞ্জিন বন্ধ করাও ঝামেলা। কারণ সেলফ নাই। সিটে বসে কিক দিয়ে স্টার্ট করা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল।
শেষপর্যন্ত বাইকটি আমি বিক্রি করে দিলাম, কারণ এখানে কোনো ভালো মেকানিক পাইনি যে এটার ইঞ্জিন বুঝত। তবে এখনও আমি এই বুলেট ৩৫০-কে মিস করি।

[প্রথম ছবি বাদে বাকি তিনটি ছবি রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট বাইকের। ছবিগুলো তুলেছেন সাংবাদিক সেলিম আহমেদ।
চানখাঁরপুলের নামকরা মোটরসাইকেল মেকানিক মনুভাই ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ফোন করে জানালেন, তার কাছে রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট বাইকের সন্ধান আছে, আমরা চাইলে এসে দেখতে পারি। আমরা হাতে চাঁদ পাওয়ার আনন্দ নিয়ে এই দুর্লভ মোটরসাইকেল দেখতে ছুটে গেলাম। সেদিন ছিল আগস্টের ১২ তারিখ। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। মনু ভাইয়ের ওয়ার্কশপে যেতেই দেখতে পেলাম সেই কিংবদন্তির মোটরসাইকেল, রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট ৩৫০। মুগ্ধদৃষ্টিতে বাইকটির আপাদমস্তক দেখতে দেখতে কয়েকটি ছবি তুলে ফেলি সেদিন। যদিও জটিলতার কারণে সেটি আর আমার হাতে আসেনি, তবু ছবিগুলো রয়ে গেছে। আমার লিভিংরুমের দেয়ালে এই বাইকটির বাঁধানো ছবি রাখা আছে। আমার অসম্পূর্ন ভালোবাসার ছবি, যে কোনোদিন আমার হবে না। —সেলিম আহমেদ]