Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
October 04, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, OCTOBER 04, 2025
ফরিদপুরে মৃণাল সেনের বাড়ির খোঁজে

ফিচার

জুনায়েত রাসেল
08 July, 2023, 05:10 pm
Last modified: 08 July, 2023, 05:09 pm

Related News

  • ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে জেলা প্রশাসকের চিঠি, ভাঙ্গার পরিস্থিতি শান্ত 
  • ভাঙ্গায় সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিককে কুপিয়ে আহত
  • ভাঙ্গায় নির্বাচন কার্যালয়-ইউএনও অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ; ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বন্ধ
  • ফরিদপুরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ: অবরোধে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, ২৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ: ফরিদপুরে পঞ্চম দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ

ফরিদপুরে মৃণাল সেনের বাড়ির খোঁজে

যতই আকর্ষণীয় হোক, বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না, এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন! শুধু তাই নয়, শৈশব ও কৈশোরের পুরোটা সময় জুড়ে মৃণাল বেড়ে উঠেছেন এ বাড়িরই আলো-বাতাসে। ফরিদপুর শহরের আনাচেকানাচে লেগে আছে তার পায়ের ছাপ। সে অস্পষ্ট অথচ মূল্যবান ছাপের খোঁজে একদিন হাজির হয়েছিলাম মৃণালের জন্মভিটায়।
জুনায়েত রাসেল
08 July, 2023, 05:10 pm
Last modified: 08 July, 2023, 05:09 pm
ছবি: লেখক

ফরিদপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নাম ঝিলটুলী। এখানে এক মোড়ে চারটি রাস্তার সংযোগ হয়েছে। একসময় এ জায়গায় আচার বিক্রি করতেন অনাথ বাবু নামে এক দোকানদার। তার নামেই মোড়ের নাম হয়েছে 'অনাথের মোড়'। সেখান থেকে রাজেন্দ্র কলেজকে উদ্দেশ্য করে একটু সামনে এগুলেই চোখে পড়ে মেজবান পার্টি সেন্টার নামে একটি বহুতল ভবন। তার ঠিক পাশেই একটি পুরাতন আধভাঙ্গা বাড়ি কোনোমতে কোনঠাসা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও বাড়িটির অবস্থা জীর্ণশীর্ণ, কিন্তু ভবনটি দেখলে এখনো এর প্রতি আকৃষ্ট হতে হয় যেকোনো সৌন্দর্য পিয়াসীকে। ভবনটি মূল বাড়ির অর্ধেক অংশ, বাকিটুকু ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ির পলেস্তারা খোসে পড়ছে অনেক আগে থেকেই। পুরাতন জানালাগুলোর বেহাল দশা। দেয়ালে ছোপ ছোপ কালো দাগ জানিয়ে দিচ্ছে ভবনের বয়স। তবু কিছু কারুকাজ এখনো স্বমহিমায় ঘোষণা করছে বাড়ির একসময়ের নান্দনিকতা। ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতির সাথে এদেশিয় ভবন নির্মাণ কৌশলের মিশেলে তৈরি বাড়িটি এখনও বেশ আকর্ষণ জাগায়।

তা যতই আকর্ষণীয় হোক, বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না, এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন! শুধু তাই নয়, শৈশব ও কৈশোরের পুরোটা সময় জুড়ে মৃণাল বেড়ে উঠেছেন এ বাড়িরই আলো-বাতাসে। ফরিদপুর শহরের আনাচেকানাচে লেগে আছে তার পায়ের ছাপ। সে অস্পষ্ট অথচ মূল্যবান ছাপের খোঁজে একদিন হাজির হয়েছিলাম মৃণালের জন্মভিটায়। ইতিহাসের ওই অংশটুকু খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম, যেখানে মৃণাল হয়তো কয়েক বছরের শিশু, হয়তো হামাগুড়ি দিচ্ছেন উঠোনজুড়ে। কিংবা বুঝতে চেয়েছিলাম মৃণালের জীবনের সে সময়কে, যখন তিনি স্কুল কলেজ দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর। যে মাটি ধারণ করেছিল মৃণাল সেনকে, যে ভিটায় পৃথিবীর আলো দেখে প্রথমবার কেঁদেছিলেন তিনি, সেটি এখন কেমন আছে? আর কতদিনই বা টিকে থাকবে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকারের স্মৃতিচিহ্ন? 

এ বাড়িতে কেটেছে মৃণালের সতেরো বছর

ফরিদপুর শহরের বয়স দু'শো বছর। তবে এটি নিছকই রাজনৈতিক ইতিহাস। এর ঠিক কত আগে এখনে স্থাপিত হয়েছিল মানব বসতি, কেউ তা জানে না। শুধু এটুকু জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনের অধীনে উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে পদ্মাঘেঁষা ফাতেহাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আলাদা রাজস্ব বোর্ড। সে থেকেই এ অঞ্চল লাভ করতে থাকে সমৃদ্ধি। ঠিক কবে যে জেলার নাম ফরিদপুর হয় তা নিয়েও যেমন মতভেদ আছে, অনেকে ঠিক করে উঠতে পারেন নি কার নামে এ নামকরণ হয়েছিল। কেউ উল্লেখ করেন সুফিসাধক শেখ ফরিদউদ্দিন মাসুদের কথা, কেউ বলেন শেখ শাহফরিদ আউলিয়ার নাম। 

যাইহোক, নামকরণ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, এ অঞ্চল পীর-আউলিয়ার, বাউল-সূফিদের ভূমি। ফরিদপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। বৃটিশ ভারতের অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময়ে এসেছেন এ শহরে। ফরিদপুরের আইনজীবী অম্বিকাচরণ মজুমদার একসময় সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এহেন সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশে শহরের ঝিলটুলী অঞ্চলে মৃণাল সেন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২৩ সালে। 

ছবি: লেখক

তাদের বাড়িটির নাম ছিল তীর্থ নিবাস। মৃণাল সেনের বাবা ফরিদপুর কোর্টে আইন ব্যবসা করতেন। তিনিই নির্মাণ করেছিলেন বাড়িটি। এর আয়তন এক একর সাতচল্লিশ শতাংশ। সম্পূর্ণ ভবনটি দেখতে ইংরেজি 'সি' আকৃতির। ওই আমলে এধরনের ভবন নির্মাণ চালু ছিল। বাড়ির পাশে ছিলো বৃহৎ পুকুর। পুকুরের চারধারে শোভা পেতো নানা রকম বৃক্ষ। এখন অবশ্য পুকুরটি ভরাট হওয়ার পথে। 

মৃণাল সেন তার আত্মজীবনী 'তৃতীয় ভুবন' এ বাল্যস্মৃতি খুব সামান্যই বলেছেন। এ বাড়িতে মৃণালের জন্ম, বেড়ে ওঠা, এখানেই প্রথম বিমান দেখে গরুড়ের স্বপ্ন দেখা, তার বাবার রাজনীতি, পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক, অনেক কিছুই উঠে এসেছে তার সে গ্রন্থে। এটি ছাড়াও বিভিন্ন লেখায় তিনি ফরিদপুরে কাটানো তার ১৭ বছর জীবনকে তুলে ধরেছেন। 

এ শহরেই মৃণাল প্রথম চলচ্চিত্র দেখেছিলেন। সিনেমা হলে নির্বাক চলচ্চিত্রে দেখা যাচ্ছিল বৃষ্টির দৃশ্য। হঠাৎ বাস্তবেই শুরু হয় বৃষ্টি। বাইরের বৃষ্টির শব্দ যখন চলচ্চিত্রের দৃশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখনই মৃণাল চলচ্চিত্রে শব্দের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ বাড়িতে শুধু মৃণাল নন, তার সাত ভাই ও পাঁচ বোন, সকলেই বেড়ে উঠেছিলেন। মৃণাল লিখেছেন, "প্রথম সতেরো বছর আমি অবশ্য ফরিদপুরে বাস করি। সেই শহরে মফস্বলের গন্ধও ছিল। সেই জায়গাটা এখন কেমন! আমি যদি সুদূর অতীতে চলে যাই, তাহলে সেই পুরনো ফরিদপুর শহর, যেখানে সতেরো বছর ছিলাম, সে শহরটা ছিল রাজনৈতিক। ছ' ঘণ্টার পথ কলকাতা থেকে।" 

তৎকালীন ফরিদপুর শহর রাজনীতিতে ছিল খুবই সক্রিয়। অনেক বিখ্যাত মানুষ এ বাড়িতে এসেছেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ফরিদপুরে এলে মৃণালদের বাড়িতেই থাকতেন। কবি জসীমউদ্দিন ছিলেন মৃণাল সেনের বড় ভাইয়ের বন্ধু। সে সুবাধে এ বাড়িতে তার ছিল নিয়মিত যাতায়াত।

ছবি: লেখক

মৃণাল সেন ছিলেন ফরিদপুরে ঈশান ইন্সটিটিউটের ছাত্র। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন রাজেন্দ্র কলেজে। এখানকার পড়া শেষে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা যান ১৯৪৩ সালে। তখনও তার পরিবার ফরিদপুরে। কিন্তু এরপরই শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, দেখা দেয় দেশভাগের শঙ্কা। একসময় সে শঙ্কা বাস্তবে রূপ নেয়, অন্য অনেক সাধারণ মানুষের মত, দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যেতে হয় মৃণালের পরিবারকে। মৃণাল লিখেছেন, তার বাবা মা ভাবতেও পারেন নি তাদের এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু সতেরো বছরের যাপিত জীবনের ইতি টেনে তিনি স্থায়ী হন অন্য শহরে, হয়ে ওঠেন কলকাতার মৃণাল সেন।

যেদিন ফরিদপুরে ফিরেছিলেন মৃণাল 

বাল্য স্মৃতি মানুষকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। কিন্তু মৃণাল সেন বলেছিলেন, তিনি 'নস্টালজিয়ায়' বিশ্বাস করেন না। তবুও তার বিভিন্ন লেখায়, সাক্ষাৎকারে তাকে বার বার ফরিদপুর প্রসঙ্গে ফিরে আসতে দেখা যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ ছাড়ার চার দশক পর তিনি প্রথম ও শেষবারের মত ফরিদপুরে ফিরে আসেন ১৯৯০ সালে। সেবার ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনদিন কাটিয়ে চতুর্থদিন তিনি ও তার স্ত্রী গীতা সেন ঠিক করেন ফরিদপুরে যাবেন, সে যদি কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়, তাও। এতগুলো বছর জন্মভূমিতে ফেরার প্রস্তাব বার বার ফেরালেও, মৃণাল লিখেছেন, 'আমরা যখন ফরিদপুর শহরের কাছাকাছি এসে গেছি তখন আমি খুব উত্তেজিত, উত্তেজনার আগুন পোহাচ্ছি।' অর্থাৎ শৈশবের স্মৃতি তাকে ভেতর থেকে আন্দোলিত করে তুলছিল।

ঢাকা থেকে নদীপথ ধরে তিনি যখন ফরিদপুর শহরে পৌঁছালেন, তখন তিনি আর সেই অখ্যাত শিশু বা কিশোর মৃণাল নন। হাজার হাজার অনুরাগী, উৎসাহী মানুষ থাকে ঘিরে রেখেছিল। কিন্তু নিজের স্মৃতির পরীক্ষা নিতে কারো সাহায্য ছাড়াই নিজের জন্মভিটা খুঁজে বের করতে চাইলেন তিনি। অনেক কিছু চিনতে পারলেন, দেখলেন কত কত পরিবর্তন হয়ে গেছে চারপাশে। বাড়ির সামনে পৌঁছে মানুষের কাছে মৃণাল পেলেন অকৃত্রিম ভালোবাসা। 

ছবি: লেখক

সেদিনের ঘটনা তিনি তুলে ধরেছেন তার আত্মজীবনীতে। লিখেছেন, 'যেখানে নামলাম সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা, প্রসংশা ও ভালোবাসা পেলাম। তারপর পায়ে হেঁটে এগোতে লাগলাম সেই অতীতের খোঁজে। আমার মনের ভেতরে একটার পর একটা স্মৃতি-সেই মনের গোপন কোণে সেসব পুরনো কথা উঁকি মারছিল। আমি সবাইকে কাছে ডেকে বললাম, আমি এখানে আমার নিজের মতো করে পথ চলব, তোমরা কেউ কোনও কথা বলবে না। আমি আবিষ্কার করলাম নতুন করে নিজেকে, সাতচল্লিশ বছর বাদে। সে এক অভিজ্ঞতা। আমি নিজেই সব জায়গা খুঁজে পেলাম সাতচল্লিশ বছর পরেও। গীতা কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, তুমি সব জায়গাগুলো চিনতে পেরেছ! এদেরও চিনতে পেরেছ! আমার কান্না পেল। কিন্তু কাঁদতে পারলাম না। এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা, অতি সাধারণ বাড়ির বউ, একগুচ্ছ ফুল এনে গীতার হাতে নিয়ে হেসে বললেন, আপনি শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন।' 

মৃণালের জন্য এ অতীতের খোঁজ অনেক বেশি আবেগময় ছিল আরও একটি বিশেষ কারণে। বেদনাদায়ক এক স্মৃতির খোঁজ মৃণালকে করতেই হতো। তার পাঁচ বছর বয়সী এক বোন ছিল, যার নাম রেবা। বাড়ির পুকুর ঘাটে সে পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকতো। একদিন হঠাৎ পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় তার। মৃণালের বাবা রেবার উদ্দেশ্য একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন পুকুর ঘাটে। বাড়ি বিক্রির সময় নতুন মালিককে অনুরোধ করেছিলেন, তার ছোট মেয়ে রেবার একটি স্মৃতিসৌধ আছে পুকুরের ধারে। পারলে যেন তারা স্মৃতিসৌধকে রক্ষা করে। 

এত বছর পর এসে মৃণাল নিজেও ভাবেন নি, সেই স্মৃতিফলক তিনি দেখতে পাবেন। পুকুর ঘাটে রেবার স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পেয়ে মৃণাল লিখেছেন, 'যদি আমি আমার বাবাকে বলতে পারতাম যে তার সেই ছোট্ট রেবার স্মৃতিসৌধ আজও সেই পুকুরঘাটে সুরক্ষিত! যদি আমার মাকে আমি জানিয়ে দিতে পারতাম যে তার মেয়ে রেবা এখনও সেই ঘাতক-পুকুরঘাটে বেঁচে আছে!'

ছবি: লেখক

বাড়িটি এখন ধ্বংসের অপেক্ষায় 

দেশ ছাড়ার আগে মৃণালের বাবা দীনেশ সেন ১৯৪৭ সালে বাড়িটি বিক্রি করে দেন। মাত্র ১৫ হাজার টাকায় ভবনসহ সম্পূর্ণ বাড়িটি কিনে নেন আইনুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর আর কোনো মালিকানা বদল হয় নি, চৌধুরী পরিবারই বসবাস করে আসছে। বাড়ির বর্তমান মালিক বেলাল চৌধুরী স্থানীয় একটি দৈনিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। তিনি জানালেন তার পিতামহের বাড়ি কেনার কাহিনী। 'আমরা ছোট বেলায় মৃণাল সেনকে চিনতাম না। জানতাম এক উকিলের কাছ থেকে বাড়িটি কেনা হয়েছিল।' 

বেলাল চৌধুরী জানালেন, মৃণাল সেন যখন জীবিত ছিলেন, এসেছিলেন এ বাড়িতে, তবে বাড়িটি রক্ষায় তেমন আগ্রহ দেখান নি। এরপর তার পুত্র কুনাল সেন বা তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায় নি। ফলে ব্যক্তি উদ্যোগে যেটুকু পেরেছেন মৃণাল সেনের স্মৃতি রক্ষা করেছেন, তুলে ধরেছেন নতুন প্রজন্মের কাছে। 

পুরাতন বাড়ির একটি অংশ ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সে ভবনের সামনে মৃণালের নামাঙ্কিত একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছেন বেলাল চৌধুরী। 'আমরা যখন এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করি উনিশ সালে, সে সময় আমরা দাওয়াত করে মৃণালের পরিবারের লোকদের এনেছিলাম। তারা এখানে সপ্তাহখানেক ছিলেন। ওইসময় আমরা ঘোষণা করেছিলাম, মৃণালের শতবর্ষ আমরা জাঁকজমকভাবে পালন করবো। আমরা দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান করেছি এবার', জানালেন চৌধুরী। 

কিন্তু ব্যক্তি উদ্যোগে সম্পূর্ণ বাড়ি বা ভবন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারণ এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি। মালিক চাইলেই ভেঙ্গ ফেলতে পারেন। এই একই কথা বললেন আইনজীবী মানিক মজুমদার। তার মতে, যতক্ষণ এটি প্রাইভেট প্রোপার্টি (ব্যক্তিগত সম্পত্তি), ততক্ষণ এর মালিক যা ইচ্ছা করতে পারেন। তবে সরকার যদি রক্ষা করতে চায়, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেয়ে মালিকপক্ষ মত দিলে তবেই কেবল বাড়িটি রক্ষা করা যাবে। 

ছবি: লেখক

কিছুদিন আগেও পুকুর পাড়ে দেখা যেতো একটি আমগাছ। শৈশবে এ গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল মৃণালের। সেই গাছও এখন আর নেই। ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বেশিরভাগ জানাল ভাঙ্গা। দেওয়ালও ভেঙে যেতে পারে যেকোনো সময়। এভাবে খুব বেশিদিন টিকবে বলে মনে করেন না বেলাল চৌধুরী। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া কিংবা তাদের কোনো ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি কোনোকালে। 'ভারতে একটি সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউ কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসেনি। আমরা আমাদের নিজেদের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছি।'

সেলুলয়েডে মৃণালের ফরিদপুরের জীবন ফিরিয়ে এনেছেন যারা

কেমন ছিল ফরিদপুরে মৃণাল সেনের যাপিত জীবন? কীভাবে তিনি জীবনকে দেখেছিলেন এ শহরে বসবাস করার সময়গুলোতে কিংবা ফরিদপুরের কোন কোন স্থানে ছিল তার বিচরণ? যেকোনো চলচ্চিত্রপ্রেমী বাঙালির কাছে এ প্রশ্নগুলো নিশ্চয়ই অনেক বেশি আগ্রহের জন্ম দেয়। কিন্তু মানুষগুলো যদি হন ফরিদপুরের, তা হলে তো কথাই নেই। নিজে যে জল-হাওয়ায় বড় হচ্ছেন, সে মাটিতেই জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত এক চলচ্চিত্র নির্মাতা, এ ভাবলেই পুলকিত হতে হয়। এসব ভেবেই মৃণালের জীবন ও কর্ম, বিশেষ করে ফরিদপুরে তার ১৭ বছরের জীবন নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দুজন ব্যক্তি। বলা বাহুল্য, তারা ফরিদপুরের সন্তান। একজন যুক্ত চলচ্চিত্র নির্মাণে, অন্যজন নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে। এই দুই গুণী ব্যক্তিত্ব ঠিক করেন জন্ম শতবর্ষে মৃণাল সেনকে তারা শ্রদ্ধা জানাবেন। সেই মৃণাল সেনকে তারা তুলে ধরবেন যিনি তাদের বাড়ির অদূরেই বেড়ে উঠেছিলেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। এমন ভাবনা থেকেই শুরু হয় ডকু-ফিকশন 'আপন ভূমিতে মৃণাল' এর কাজ। 

শুভঙ্কর পাল পড়াশোনা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর। এরপর একে একে নির্মাণ করেছেন নানা ধরনের তথ্যচিত্র, প্রতিবেদন। দক্ষ সংগঠক হিসেবে ফরিদপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরাতে তার সুনাম রয়েছে। মৃণালের শৈশব, কৈশোরকে একটি চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার ভাবনা কীভাবে এলো, সেটি জানাচ্ছিলেন তিনি। বিনোদন নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফ খানের সঙ্গে নিয়ে শুরু হয়ে গবেষণার কাজ। ফরিদপুরের জীবন নিয়ে মৃণাল যা কিছু লিখেছেন বা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সেগুলোর খোঁজ শুরু হয়। মৃণালকে দেখেছেন, শৈশবে কিংবা নব্বইয়ের দশকে তার পুনরায় আগমনের সময়ে, সেসকল প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তির খোঁজ চলতে থাকে। একসময় এমন অনেকেরই সন্ধান পাওয়া যায়। 

শুধু শৈশব আর কৈশোরে নয়, শেষবার যখন মৃণাল ফরিদপুরে এলেন, তখন কী কী ঘটেছিল, সেসব তারা দেখাত চেয়েছেন তাদের চলচ্চিত্রে। এজন্য সে সময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সন্ধান করা হয়। এক পর্যায়ে পাওয়াও যায় তা। শরিফ খান জানাচ্ছিলেন এসব কথা। এসব সংগ্রহের পরই তারা শুরু করেন চিত্রধারণের কাজ। 

ছবি: লেখক

ডকু-ফিকশনের প্রথম সিকোয়েন্সটি একটি স্বপ্নদৃশ্য। মৃণাল সেন শৈশবে একবার আকাশে বিমান উড়ে যেতে দেখে ভেবেছিলেন হয়তো কোনো বড় পাখি। এরপর একদিন স্বপ্নে দেখেন একটি 'গরুড়'। শৈশবের সেই স্বপ্ন তিনি পরবর্তীতে দেখিয়েছেন তার 'মাটিরা মানীষা' চলচ্চিত্রে। তার শৈশবের সেই স্বপ্নদৃশ্য দিয়ে শুরু হয় 'আপন ভূমিতে মৃণাল' তথ্যচিত্রটি। ফরিদপুরে কাটানো নানা স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন লেখা উদ্ধৃত করে কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে। কখনো স্থিরচিত্র, ভিডিও কিংবা গ্রন্থ পাঠ যুক্ত করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মৃণালের ফরিদপুরের জীবন ফলে দেখা মেলে অজানা অনেক তথ্য, ঘটনা। 
ডকু-ফিকশনটি তৈরি করা হয়েছিল মৃণালের শতবর্ষ উৎযাপনের অংশ হিসেবে। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। বিভিন্ন গুণীজনের প্রসংশাও পেয়েছেন শুভঙ্কর পাল ও শরিফ খান। তবে তাদের চাওয়া, মৃণালের জন্মস্থান এই বাড়িটিকে রক্ষা করতে যেন উদ্যোগ নেয় সরকার, তবে অবশ্যই বর্তমান মালিকদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে। 

শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই নয়, ইতোমধ্যে প্রশাসনের সাথেও কথা বলেছেন তারা। শুভঙ্কর পাল জানালেন সে কথোপকথনের কথা। 'সরকার ও পরিবারের উদ্যোগ দরকার। বাংলাদেশ সরকার যদি চাইতো, তাহলে হতো সংরক্ষণ করা যেত। আমি ফরিদপুরে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছিলাম। তখন মৃণাল সেন জীবিত। জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, যেহেতু মৃণাল সেন বেঁচে আছেন, তার পরিবার আছে, তারা উদ্যোগ নিলে সরকার নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কাজ করবে।' 

কিন্তু সে ধরনের কোনো উদ্যোগ কোনো পক্ষই নেয়নি। ঠিক কবে নাগাদ বাড়ির বাকি অংশটুকুও হারিয়ে যায়, সেটির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই কারো। ফরিদপুরের সন্তান হিসেবে তারা চান, মৃণালের স্মৃতি যেন অম্লান থাকে। সেজন্য নিজেদের অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার কথা জানালেন তারা।

Related Topics

টপ নিউজ

মৃণাল সেন / ফরিদপুর

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস
    বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার: দেশের প্রথম হাতঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান
  • ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
    ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
  • ছবি: আর্কাইভ ফটোস
    ভীষণ অলস, আনাড়ি সেনাপতি আর বিড়াল-বিদ্বেষী; হিটলারের যে দিকগুলো এখনো বলা হয়নি
  • ছবি: সংগৃহীত
    মিরপুরে চালক-হেলপারকে মারধর, যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন
  • ছবি : সংগৃহীত
    বই সংগ্রহের নেশা: ঠিক কতগুলো বইকে অসংখ্য কিংবা অনেক বেশি বলা যেতে পারে?
  • ছবি: রয়টার্স
    ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব পুতিনের, বললেন ন্যাটো কি ‘কাগুজে বাঘ’?

Related News

  • ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে জেলা প্রশাসকের চিঠি, ভাঙ্গার পরিস্থিতি শান্ত 
  • ভাঙ্গায় সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিককে কুপিয়ে আহত
  • ভাঙ্গায় নির্বাচন কার্যালয়-ইউএনও অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ; ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বন্ধ
  • ফরিদপুরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ: অবরোধে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, ২৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ: ফরিদপুরে পঞ্চম দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ

Most Read

1
ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস
ফিচার

বাংলাদেশি ওয়াচ মেকার: দেশের প্রথম হাতঘড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান

2
ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 
বাংলাদেশ

ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাকড 

3
ছবি: আর্কাইভ ফটোস
আন্তর্জাতিক

ভীষণ অলস, আনাড়ি সেনাপতি আর বিড়াল-বিদ্বেষী; হিটলারের যে দিকগুলো এখনো বলা হয়নি

4
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মিরপুরে চালক-হেলপারকে মারধর, যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন

5
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

বই সংগ্রহের নেশা: ঠিক কতগুলো বইকে অসংখ্য কিংবা অনেক বেশি বলা যেতে পারে?

6
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব পুতিনের, বললেন ন্যাটো কি ‘কাগুজে বাঘ’?

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net