Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 14, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 14, 2025
'নিজের নামও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না': পারিবারিক ভাষা না শেখার যন্ত্রণা

ফিচার

মিঠু স্যানাল 
30 June, 2023, 03:45 pm
Last modified: 30 June, 2023, 03:47 pm

Related News

  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ২০২৮ সালে আসছে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক অভিধান ‘শব্দকল্প'
  • নাগরি লিপির উইকিপিডিয়া: হারিয়ে যাওয়া লিপির পুনর্জাগরণ?
  • ভাষা টেকাতে বাংলাই হতে হবে প্রযুক্তির ভাষা
  • ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পেতে অভিবাসীদের জন্য কঠিন ভাষা পরীক্ষা, পাশ করতে পারছেন না ফরাসিরাও
  • যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ব্যালট পেপারে বাংলা

'নিজের নামও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না': পারিবারিক ভাষা না শেখার যন্ত্রণা

বাবা সবসময় আমার সাথে জার্মান ভাষায়ই কথা বলেছেন। অবশ্য আমি তাকে বাংলায়ও কথা বলতে শুনেছি- যখন তিনি ফোনে কথা বলতেন অথবা জার্মানিতে বসবাসরত কিছু ভারতীয়র সঙ্গে। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না তিনি কী বলছেন। তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হলো, আমার মিঠু- এটি বাঙালি নাম; অথচ নেটিভ বাংলাভাষী লোকজন বলেন, আমি নাকি আমার নামটিও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না।
মিঠু স্যানাল 
30 June, 2023, 03:45 pm
Last modified: 30 June, 2023, 03:47 pm
মিঠু স্যানাল। ছবি: বিবিসি

আপনি কি একটি গোপন কথা জানতে চান? এতই লজ্জাজনক গোপন কথা যা আমি দশকের পর দশক ধরে লুকিয়ে রেখেছি? কারণ একটি কথপোকথনের সুযোগ পেয়েই আমি অবশেষে নিজের জমানো সব কথা বলে দিতে পেরেছি!

আমি আমার একজন বন্ধু ও সহকর্মী জেসিন্ডা নন্দীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেও আমার মতোই একজন লেখক। আমার মতো তার বাবাও ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে এসেছেন। আমাদের দুজনের বাবাই বাংলা ভাষায় কথা বলে বড় হয়েছেন। পরবর্তীতে জেসিন্ডার বাবা ইংল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং আমার বাবা চলে আসেন জার্মানিতে, আমি বড় হয়েছি সেখানে। জেসিন্ডার বাবা ছোট থেকেই তাকে অজস্র ইংরেজি শব্দ-বাক্য শেখালেও, তার ভাষ্যে: 'বাবা আমাকে একটি বাংলা শব্দও শেখাননি'। ঠিক যেমন আমার বাবাও আমাকে শেখাননি।

বাবা সবসময় আমার সাথে জার্মান ভাষায়ই কথা বলেছেন। অবশ্য আমি তাকে বাংলায় কথা বলতেও শুনেছি- যখন তিনি ফোনে কথা বলতেন অথবা জার্মানিতে বসবাসরত কিছু ভারতীয়র সঙ্গে। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না তিনি কী বলছেন। তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হলো, আমার মিঠু নামটিও বাঙালি নাম; অথচ নেটিভ বাংলাভাষী লোকজন বলে, আমি নাকি আমার নাম সঠিকভাবে উচ্চারণই করতে পারি না।

হ্যাঁ, এটাই সত্যি। আমি নিজের নামটাও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারি না।

জেসিন্ডার সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগপর্যন্ত আমি ভাবতাম আমার মধ্যে গুরুতর কোনো সমস্যা রয়েছে। তা নাহলে এমন কেউ কি আছে যে নিজের পিতৃভাষা জানে না?

কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, আরও অনেকেই জানে না।

আনিক ডি হউয়ার জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব আরফুর্ট-এর ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশন ও বহুভাষিকতা বিষয়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং হারমোনিয়াস বাইলিঙ্গুয়ালিজম নেটওয়ার্ক-এর পরিচালক। 'বিভিন্ন পরিবার কীভাবে এবং কেন নিজেদের আদি ভাষা হারিয়ে ফেলছে'- এ বিষয়ে শীর্ষসারির বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন তিনি। ২০০৩ সালে আনিক বেলজিয়ামের ডাচ-ভাষী একটি অঞ্চল, ফ্লেন্ডারস এর ১৮,০০০ পরিবারের মধ্যে ভাষার ব্যবহার নিয়ে একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন।

বাবার সঙ্গে মিঠু সান্যাল। ছবি: বিবিসি থেকে সংগৃহীত।

"আমি দেখলাম যে, দুটি ভাষা শুনে বেড়ে ওঠা বাচ্চারা আসলে দুটি ভাষায় কথা বলে না", বলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য স্টাডি অব চাইল্ড ল্যাঙ্গুয়েজ-এর সভাপতি আনিক ডি হউয়ার। এই জরিপ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশ ও ভাষা নিয়ে ডি হউয়ার এবং অন্যদের গবেষণা মিলিয়ে দেখা যায়, ১২ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশ শিশুরা যারা দুটি ভাষা শুনে বড় হয়েছে, তারা বড় হয়ে শেষ পর্যন্ত যেকোনো একটি ভাষায়ই কথা বলা শুরু করেছে।

তিনি বলেন, "এ ধরনের বেশিরভাগ শিশুই দুটি ভাষার শব্দ শিখতে আরম্ভ করে। কিন্তু যখন তারা প্রি-স্কুলে যায়, তখন তারা শুধু একটি ভাষাকেই বেছে নেয়, যা দিয়ে অন্যদের সাথে কথপোকথন চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্ত কেন এমনটা হয়? কারণ শিশুরা বুঝতে পারে যে সেখানে ঐ একটি ভাষাকেই মূলত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং বাকিরা ওই ভাষাতেই কথা বলছে, তাই খুব শীঘ্রই অন্য ভাষাটি অর্থহীন হয়ে ওঠে, স্রেফ অর্থহীন!"

যখন আমার মাথায় এই চিন্তাটি এলো, তখন আমি লোকজনকে জিজ্ঞেস না করে পারলাম না যে- পারিবারিক ভাষায় কথা বলতে না পেরে তাদের ঠিক কেমন লাগে? সেই অনুভূতিটা কেমন? অনেকেই মুখ খুলেছেন এ ব্যাপারে, জানিয়েছেন যে তারা সারাজীবনই ভাষা নিয়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের কষ্ট হয়েছে।

"আমার বাবা লেবাননে জন্মগ্রহণ করেছেন, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র ফোনে কথা বলার সময় অথবা কোনো দর্শণার্থী এলে কিংবা রেস্টুরেন্টে গেলে আরবি ভাষায় কথা বলেন", জানানলেন আন্দ্রেয়া কারিমে। আন্দ্রেয়া একজন শিশুসাহিত্যিক এবং গল্পকথক। "তাই ছোটবেলায় আমার মনে হতো, বাবা বোধহয় কোনো গোপন ভাষায় কথা বলছেন। ওই সময় আমার বাবা আমার কাছে এই 'সিক্রেট' হয়ে গিয়েছিল", যোগ করেন আন্দ্রেয়া।

বার্লিনে বসবাসরত শিল্পী এমিলি চৌধুরী বলেন 'অননুমোদন' এর কথা। তার ভাষ্যে, "যখন আমার বাবা-মা এমন কোনো বিষয়ে কথা বলতো, যা বাচ্চাদের শোনা উচিত নয়, তখন তারা বাংলায় কথা বলতো। এই ভাষা আমাদেরকে দূরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো।"

একই সময়ে এবং আপাতবিরোধী দৃষ্টিতে, আমাদের মধ্যে যাদের চেহারা এবং নাম-পদবী পূর্বসূরিদের সঙ্গে মিল রয়েছে, তাদের উপর সামাজিকভাবে একটি প্রত্যাশা থাকে যে, আমরা পূর্বপুরুষদের ভাষায় কথা বলবো। কিন্তু সেটা যখন হয় না, তখন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। আমি 'এইট কনফেশনস অব মাই টাং' নামক কবিতাটি পছন্দ করি। এখানে কবি নোয়েল কুইনোনেস, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে; কিন্তু পূর্বসূরিদের সূত্রে পুয়ের্তো রিকান হওয়া সত্ত্বেও স্প্যানিশ ভাষায় অনর্গল কথা বলতে না পারার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। এই কবি বলেছেন, "আমার নামের শেষ অংশটি আগন্তুকদের খুব আকৃষ্ট করে: তারা বলেন, তোমার বাবা-মায়ের উচিত ছিল তোমাকে শেখানো অথবা তোমার উচিত ছিল নিজ প্রচেষ্টায় ভালোভাবে এই ভাষা শেখা; যেন বাবা-মাকে স্প্যানিশ বলতে শুনলে বাচ্চারা কানে আঙুল দিয়ে রাখতো! গবেষণায় দেখা গেছে, নন-স্প্যানিশ লাতিনোদের মধ্যে কমবেশি সবাই যে অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত তা হলো, জনসমক্ষে লজ্জিত বোধ করা কিংবা তাদের 'ভাষাগত ক্ষতি'র চাইতে বরং তাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা।

আমার কাছে মনে হয়, হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলো আমাদের 'আদারটাংস'। আমাদের পূর্বসূরিদের মধ্যে, আমাদের ছেলেবেলার স্মৃতির মধ্যে এই ভাষাগুলো আছে কিন্তু তবুও কি অদ্ভুত যে, এগুলো আমাদের কাছে পৌঁছায় না, কারণ আমরা কখনো এই ভাষাগুলো নিজেরা শিখিনি কিংবা আমাদেরকে এগুলো ভুলে যেতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আমার নিজের ক্ষেত্রে আসলে ক্ষতি হয়েছে দুটি। আমি আমার মায়ের নেটিভ ভাষা, পোলিশও শিখিনি। বেড়ে ওঠার সময়টায় আমাকে পোলিশ বা বাংলা, দুটোই শেখানোর বিরুদ্ধে আমার বাবা-মাকে সতর্ক করা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, বাচ্চারা যদি একইসঙ্গে একের অধিক ভাষা শেখে, তাহলে তারা এর কোনোটাই যথাযথভাবে শিখবে না। যেন তাদের দুজনের ভাষাগুলো 'আসল' ভাষা শেখার প্রক্রিয়াকে ব্যহত করবে; আমার ক্ষেত্রে বোধহয় এই আসল ভাষাটা ছিল 'জার্মান'।

বাবা-মায়ের সঙ্গে মিঠু স্যানাল। ছবি: বিবিসি থেকে সংগৃহীত।

একইসঙ্গে, দুটি ভাষা শেখা শিশুদের ক্ষতি করে বা তাদের বিভ্রান্ত করে, এই ধারণার দিকে ইঙ্গিত করে আনিক ডি হউয়ার বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত, এটা অতীতের কোনো বিষয় নয়।" তার গবেষণায় দেখা গেছে, দুটি ভাষা শেখার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা আসলে দেরিতে কথা বলে না এবং তারা কখনো কখনো দুটি ভাষা মিলিয়ে কথা বলা (যা কোড-সুইচিং বা ট্রান্সল্যাঙ্গুয়েজিং নামে পরিচিত) মানে এই নয় যে তারা এই দুটির মধ্যে গুলিয়ে ফেলছে; বরং এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে বাচ্চারা শব্দের সঠিক প্রয়োগ বুঝতে পারছে এবং কথা বলার সময় ওই দুটি ভাষা থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দটিই বেছে নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা'র সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ এডুকেশনের অধ্যাপক মার্থা বিগলো বলেন, ভাষা শেখা নিয়ে এখনো অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে মানুষের মধ্যে: 'যেন একাধিক ভাষা মিলিয়ে ব্যবহার না করাটাই শ্রেয়, যেন বেশি জানার চাইতে কম জানাই ভালো।" এই ভ্রান্ত বিশ্বাসগুলো মিলিয়ে একটি শক্ত প্রভাব সৃষ্টি হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও পরামর্শ দেওয়া হয় যে ইংরেজি শেখো এবং শুধু ইংরেজিতে কথা বলাই শ্রেয়।"

দ্বিতীয় একটি ভাষার প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন সমাজভেদে এ সম্পর্কে মানুষের ধারণার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। জার্মানিতে সর্বত্রই ইংরেজি ভাষা চোখে পড়ে এবং ইংরেজি বলতে পারা এখানে কাম্য। আমার স্বামী একজন ব্রিটিশ এবং তার সঙ্গে সবাই ইংরেজিতেই কথা বলে, যদিও সে জার্মানও ভালোই জানে, কখনো কখনো ইংরেজির চেয়েও ভালো। কিন্তু অন্যান্য ভাষাকে এখানে তেমন স্বাগত জানানো হয় না। আবার জার্মানিতে তুর্কি হলো সবচেয়ে কম ব্যবহৃত ভাষা, ষাটের দশকে তুরস্ক থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের আগমনের মাধ্যমে এই ভাষা জার্মানিতে আসে। তুর্কিভাষীরা এখনও এদেশে বৈষম্যের শিকার হন।

২০২০ সালে জার্মানিতে একটি স্কুলের খেলার মাঠে দাঁড়িয়ে ৯ বছর বয়সী এক শিশু তার বন্ধুর সঙ্গে তুর্কি ভাষায় কথা বলেছিল বলে শিক্ষক তাকে তিরস্কার করেছিলেন। শাস্তিস্বরূপ তিনি ওই শিক্ষার্থীকে 'কেন আমরা স্কুলে জার্মান ভাষায় কথা বলি' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখতে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রবন্ধে শিশুটি লিখেছিল যে, "আমাদেরকে মাতৃভাষায় কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমাদের জার্মান ভাষা আরও ভালোভাবে শিখতে হবে।" পরে ঐ শিশুর পরিবার একজন আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানায়। তারা প্রশ্ন তোলে, ওই স্কুলে বিরতির সময়ে কেউ ইংরেজিতে কথা বললেও কি একই রকম প্রতিক্রিয়া হবে? তুর্কিদের ব্যাপারে জার্মানদের মধ্যে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে- 'তুর্কি এমন ভাষা নয় যা আপনি শিখবেন, তুর্কি হচ্ছে এমন ভাষা যা আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলে যাবেন।'

জার্মানিতে আমার হোমটাউন ডুসেলডর্ফে বহুভাষিকতা উদযাপনের চিহ্ন হিসেবে আরবি ভাষায় একটি সড়ক নির্দেশিকা চিহ্ন বসানো হয়েছিল, কিন্তু কে বা কারা যেন সেটিকে বর্ণবাদী গ্রাফিতি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এবং অনলাইনে আবার দাবি তোলা হয়েছে, 'তারা' যেন জার্মান শেখে। কিন্তু জাপানি ভাষায় আরও একটি সড়ক নির্দেশিকা চিহ্ন বসানো হলেও, সেটা অক্ষত অবস্থায়ই আছে।

কিন্তু একেক ভাষাকে একেকভাবে মূল্যায়নের এই নাটকীয় পার্থক্যের কারণ কী?

গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ সময়ই বিষয়টা শুধু ভাষা সম্পর্কিত নয়- বরং সামাজিক মনোভাবের উপর নির্ভর করে, বিশেষ করে অভিবাসনের ক্ষেত্রে।

"জার্মানিতে অভিবাসনকে এখনও নিয়ম বহির্ভূত একটি বিষয় হিসেবে দেখা হয় এবং জার্মানদের অনেকের কাছেই এটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যেসব শিশুরা বাড়িতে অন্য ভাষায় কথা বলে, ধারণা করা হয় যে, তারা বাড়িতে জার্মান ভাষায় কথা বলে না। তাই এই শিশুরা যখন স্কুলে আসে তখন তাদের ঘাটতির দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, তারা কি বিষয়ে সমৃদ্ধ সেদিকে নয়", বলেন অভিবাসন ও রেসিজম স্টাডিস বিষয়ক খ্যাতনামা লেখক মার্ক তেরকেসিডিস।

আনিক ডি হউয়ার এর মতে, বাবা-মায়ের ভাষায় কথা  বলতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: সেটা বাবা-মা, শিশুর নিজের এবং পরিবারের সবার জন্যই। আর এই ভাষা না জানার যে ক্ষতি, সেটা পারিবারিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বাবা-মা হয়তো মনে কষ্ট পেতে পারেন যে, সন্তানরা তাদের ভাষায় কথা বলছে না। আবার বাবা-মা তাদের ভাষা সন্তানদের না শেখালে উল্টোটাও হতে পারে। 

জাপানের কানাগাওয়া ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক জেনিস নাকামুরা জাপানের 'মিক্সড ফ্যামিলি'গুলোতে বড় হওয়া শিশুদের মধ্যে যারা তাদের নন-জাপানিজ বাবা-মায়ের ভাষা জানে না, তাদেরকে নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে এদের অনেকেই বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কেন তাকে তাদের ভাষা শেখানো হলো না। নাকামুরা এটিকে 'ল্যাঙ্গুয়েজ রিগ্রেট' বা ভাষার জন্য অনুশোচনা বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ, অন্য একটা ভাষা শেখার সুযোগ হারিয়ে ফেলার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে তাদের।

ডি হউয়ার মন্তব্য করেন, "আপনি যেভাবেই বিষয়টাকে দেখেন না কেন, এটা পারিবারিক সম্পর্কের জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।"

তিনি মনে করেন, ভাষা শেখার এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সমাজের অনেক কিছুই করার আছে। এর প্রত্যক্ষ উদাহরণ হলো, স্কুলগুলোতে বহুভাষিকতাকে কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। "এটা ভীষণ ভীষণ দরকারি যে স্কুলে বাচ্চারা যতগুলো ভাষায়ই কথা বলুক না কেন, সবসময় সব ভাষাকে সম্মান জানাতে হবে। আর সেটার উপায়ও খুব সহজ; যেমন, শিশুর নামটা যেন সঠিকভাবে উচ্চারণ করা হয়।"
সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে আমার নিজের খুব কান্না পাচ্ছিলো, নিজের নামের কথা চিন্তা করে যে আমি নিজেই বহুদিন ধরে আমার নাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারিনি! ডি হউয়ার মনে করেন, ছোটখাট পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। যেমন- শিক্ষক শিশুকে বলতে পারেন, বাড়িতে যে ভাষায় কথা বলে, সে ভাষায় 'হ্যালো' বলতে। "শিশুরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সে যখন ক্লাসে তার নিজের ভাষায় হ্যালো বলবে, তখন বাকি শিশুরাও শিখে যাবে কীভাবে এই বাচ্চাটাকে হ্যালো বলতে হবে। এভাবেই বিভিন্ন ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যায়। এখানে টাকাপয়সার বিষয় জড়িত নয়। শুধু আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।"

এই যে নতুন একটি ভাষাকে সমাদরে গ্রহণ করাই ভাষাটিকে মানুষের সামনে উপস্থাপনের সুযোগ দেয় এবং এটা অনেক সাহায্য করে। "এটা শুধু একটা 'হোম ল্যাঙ্গুয়েজ' নয়, ভাষা সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এটি পাবলিক প্লেসে ব্যবহার করা উচিত।"

ব্যক্তিগত পর্যায়ে 'ভাষাগত ক্ষতি' কাটিয়ে ওঠার আরও একটি উপায় হলো, পরবর্তী জীবনে সেই 'আদারটাং'কে গ্রহণ করা।

আমার বাবা ছোটবেলায় আমাকে 'আশমুলি পাশমুলি' নামের একটা বাংলা ছড়া শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেই ভিডিও আমার কাছে আছে। কিন্তু তিনি সেটিও আমাকে অনুবাদ করে শোনাতেন, ফলে মূল অর্থ বদলে গিয়েছিল কিছুটা।

প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে আমি অনেকবার বাংলা শেখার চেষ্টা করেছি। কয়েক বছরের চেষ্টার পর আমি কয়েকটি বাক্য শিখতে পেরেছি। যেমন: 'আমি বাংলা শিখতেছি।' কিন্তু আমার মনে হয় এটা একটা মিথ্যা কথা। আমি যা বুঝেছি তা হলো, এখন সত্যিই খুব দেরি হয়ে গেছে।

কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম যে, মার্থা বিগলো আমার এই কথার সাথে একমত নন। তিনি বলছেন, "তরুণ বয়সেই ভাষা শিখতে হবে এমনটা নয়। তরুণ বয়সে শেখা মানেই যে ভালো তা নয়।" ভাষা শেখার যে তথাকথিত 'ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড', যখন কিনা আমরা এ ভাষায় অনর্গল বলতে শিখি, সে সময়টা আসলে খুব দীর্ঘ এবং নমনীয়। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে তাই বয়স একটি অন্যতম ফ্যাক্টর। গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি ভাষাটি শেখার পেছনে কতখানি সময় দিচ্ছেন, এর পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কী এবং এই ভাষায় কথা বলার মতো কেউ আপনার আশেপাশে আছে কিনা- এগুলোও অনেক বড় ফ্যাক্টর।

এছাড়াও, বিগলো পরামর্শ দেন বহুভাষিকতা নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও নমনীয় করার। "আপনার তো নিখুঁতভাবে এই ভাষা বলতে পারার আবশ্যিকতা নেই কিংবা যে ভাষা আপনি সবচেয়ে ভালো পারেন, সেটার মতো অনর্গল বলতেই হবে এমনও না। আমরা এত উচ্চ মানদণ্ডে বিচার করি না। কারো কারো কাছে, বহুভাষিকতা মানে- মাঝেমধ্যে পারিবারিক ভাষায় কথা বলা। "বহুভাষী হওয়ার অনেক রকম উপায় রয়েছে।"

আনিক ডি হউয়ার বলেন, "নিজের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন থাকলে ভাষা শেখার সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া সহজ হয়। যদি আপনার পরিবার বা নিজের বংশপরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত কোনো আবেগ জড়িত থাকে তাহলে শুধু ঐ ভাষায় পড়া ও লেখা দিয়ে যাত্রা শুরু করবেন না। ওই ভাষায় কথা বলতে শুরু করুন। আপনাকে বন্ধু বানাতে হবে।"

সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টিতে আমি মিল খুঁজে পেয়েছি। আমার এখনও মনে পড়লে কষ্ট লাগে, আমার বাবা যেসব বই পছন্দ করতেন, আমি সেগুলো পড়তে পারতাম না। কিন্তু বাংলা ভাষা শুনলেই আমার খুব আনন্দ হতো, রাস্তাঘাটে দূর থেকে শুনলেও আমি বাংলা ভাষা চিনতে পারতাম। এমনকি কখনো বাংলা ভাষায় ভালোভাবে কথা বলতে না জানলেও আমি বাংলাকে ভালোবাসি। এই ভাষার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আমি অর্থ খুজে পাই; বাংলা বিশেষ্য, সর্বনামে কোনো নির্দিষ্ট জেন্ডার নেই। আমার প্রত্যাশা, একদিন আমাদের সবার এই 'আদারটাং' সবাই স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবে এবং সব জায়গায় এটিকে গ্রহণ করা হবে।  


  • বিবিসি থেকে অনূদিত
     

Related Topics

টপ নিউজ

বাংলা ভাষা / ভাষা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম : জ্বালানি উপদেষ্টা
  • এবার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে 'বোমা হামলার' হুমকি, থাইল্যান্ডে জরুরি অবতরণ
  • ‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা
  • ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে ১০০-র বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে ইরান: আইডিএফ
  • বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প
  • ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার

Related News

  • যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ২০২৮ সালে আসছে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক অভিধান ‘শব্দকল্প'
  • নাগরি লিপির উইকিপিডিয়া: হারিয়ে যাওয়া লিপির পুনর্জাগরণ?
  • ভাষা টেকাতে বাংলাই হতে হবে প্রযুক্তির ভাষা
  • ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পেতে অভিবাসীদের জন্য কঠিন ভাষা পরীক্ষা, পাশ করতে পারছেন না ফরাসিরাও
  • যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ব্যালট পেপারে বাংলা

Most Read

1
বাংলাদেশ

সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম : জ্বালানি উপদেষ্টা

2
আন্তর্জাতিক

এবার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে 'বোমা হামলার' হুমকি, থাইল্যান্ডে জরুরি অবতরণ

3
বাংলাদেশ

‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা

4
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে ১০০-র বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে ইরান: আইডিএফ

5
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প

6
বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net