Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
August 26, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, AUGUST 26, 2025
কাগজের কলম, সঙ্গে উদ্ভিদের বীজ! যেভাবে শুরু এক আশ্চর্য বলপয়েন্ট কলমের যাত্রা

ফিচার

সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
06 June, 2023, 09:10 pm
Last modified: 06 June, 2023, 09:16 pm

Related News

  • ক্যাফে রিভার ফ্রন্ট: তুরাগপারে এক কন্টেইনার রেস্তরাঁর গল্প
  • পরিবেশবান্ধব ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ পাওয়া যাবে ৩০ লাখ পর্যন্ত
  • মা-ছেলের পরিবেশবান্ধব ‘কাগজের কলম’   
  • চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ রক্ষার দাবি পরিবেশবাদীদের
  • পরিবেশবান্ধব ব্লক: সবুজ বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা  

কাগজের কলম, সঙ্গে উদ্ভিদের বীজ! যেভাবে শুরু এক আশ্চর্য বলপয়েন্ট কলমের যাত্রা

গ্রিন পেনের বাহ্যিক অংশে ব্যবহার করা হয় কাগজ। ভেতরের রিফিল অংশে প্লাস্টিকের রিফিল কলমের মতোই শিষ জুড়ে দেওয়া হয়। কাগজকে কলমের আকারে জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয় গাম বা আঠা। সবশেষে যুক্ত করে দেওয়া হয় বিভিন্ন গাছের বীজ। কলমের কালি ফুরিয়ে গেলে কেউ চাইলে কাগজ থেকে বীজ বের করে মাটিতে বা টবে রোপন করে দিতে পারবে। বীজের মধ্যে থাকে তুলসি, বেগুন, মরিচ, টমেটো, অপরাজিতা প্রভৃতি বীজ। ঋতু অনুযায়ী যখন যার ফলন ভালো হয় সেগুলোই কলমের সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা থাকে। 
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
06 June, 2023, 09:10 pm
Last modified: 06 June, 2023, 09:16 pm
ছবি-সঞ্জয় চৌধুরী

'গাছের প্রাণ আছে'- এই কথা তো জগদীশ চন্দ্র বসু বহুকাল আগেই প্রমাণ করে গিয়েছেন। কিন্তু গাছের প্রাণ যদি কলমে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? আর এমন কলম প্রস্তুতকালে বন্ধু যদি শুধু কাগজই হয়, তাহলে তা বোধহয় তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করে। এই কাগজের কলম কেবল খাতায় লেখা ফোটায় না, প্রকৃতিতে ফোটায় ফুল। এই কলমে জড়িয়ে আছে প্রাণ। তাই তো একে গাল ভরে 'গ্রিন পেন'ও ডাকা হয়। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে আরো এক চিমটে সবুজের ছোঁয়া ছড়িয়ে দিতেই নেয়া হয়েছে কাগজ দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব কলম তৈরির এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। আর এর প্রেক্ষাপটে রয়েছেন সঞ্জয় চৌধুরী।

সবুজের লড়াইয়ে ভাগীদার হতে কাগজের কলমের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে চলেছেন সঞ্জয় চৌধুরী। একজন পরিবেশবাদী। পড়াশোনাও করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে। পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়ায় চিন্তাভাবনার একটা বড় জায়গা ছিলো প্রকৃতি ও পরিবেশ। সেই লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন ইকো। নিছক পরিবেশের প্রতি ভালোবাসাই নয়, সুস্থ পরিবেশ তৈরির দায়বদ্ধতা থেকেই কাগজের কলম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি নির্মাণই মুখ্য

পরিবেশের জন্য অন্যতম ক্ষতিকর বস্তু হলো প্লাস্টিক। কলমের ক্ষেত্রেই সাধারণত প্লাস্টিক বেশি দেখা যায়। তাই কলম তৈরিতে এবার প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজের ব্যবহার শুরু করেছে গ্রিন ইকো। যা একদিক থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাবে, পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি বির্নিমিত করবে- এমনটাই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয়ের চৌধুরীর। শুধু কাগজের তৈরি কলমই নয়, এর সাথে কলমের নিচের অংশে যুক্ত থাকবে গাছের বীজ। যা আসলে প্রকৃতিতে নতুন প্রাণ সৃষ্টির সহায়ক হবে।

সঞ্জয় বলেন, 'প্লাস্টিকের কলম ব্যবহার না করে আমরা নিজেরাই একটু সচেতন হয়ে পরিবেশবান্ধব কিছু কলম ব্যবহার করতে পারি। সেই জায়গা থেকে আমরা এই কাগজের কলমটা তৈরি করতে শুরু করি।'

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর তথ্যানুযায়ী, ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পুরো বিশ্বে ৯.২ বিলিয়ন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে।

কাগজের কলম; ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

বর্তমানে প্রতি বছর ৪৩৮ মিলিয়নের মতো প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। অনুমান করা হচ্ছে, এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই মাত্রা ৩৪ বিলিয়ন টনে উন্নীত হবে।

পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনে গ্রিন ইকোকে সঙ্গ দিয়েছে গ্রিন প্রোডাকশন। গ্রিন প্রোডাকশন মূলত 'গ্রিন ইকো'রই ব্যবসায়িক রূপ। তাদের লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করা। সেখানেই প্রথম পণ্য হিসেবে তারা 'গ্রিন পেন' বা কাগজের কলম উৎপাদনের কাজ করেছেন। সঞ্জয়ের ভাষ্যে, গ্রিন প্রডাকশন প্রতি ১০০০ কলম বিক্রির লভ্যাংশ থেকে গ্রিন ইকোকে ১০ গাছের চারা দেবে। আর গ্রিন ইকো চারাগুলো বিভিন্ন জায়গায় রোপণ করবে।

গ্রিন প্রোডাকশনের উৎপাদিত গ্রিন পেন তথা কাগজের কলম প্রচারণা ও বিপণনের কাজ করছে 'তটিনী' নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান। 'তটিনী' মূলত অনলাইনভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যেখানে গৃহসজ্জা সামগ্রীর বিভিন্ন জিনিস- যেমন পর্দা, বিছানার চাদর প্রভৃতি পাওয়া যায়।

কলমের সাথে বীজ যুক্ত করার পরিকল্পনা তটিনীর স্বত্বাধিকারী জুঁই সরকারের কাছ থেকেই আসে। জুঁই বলেন, 'আমার একটা ছোট ছাদবাগান আছে। সেখান থেকে মনে হয়েছে, প্রয়োজনীয় ছোট ছোট উৎপাদন যাতে মানুষ নিজেরাই করে। আমাদের এখানে দেখা যায়, ধনিয়াপাতার বীজ ছড়িয়ে দিলেই ধনিয়াপাতা হয়ে যাচ্ছে, মরিচের বীজ ছিটিয়ে দিলে মরিচ হচ্ছে…এজন্যই পরিবেশবান্ধব কিছু করার কথা চিন্তা করছিলাম। এরপর আমি গ্রিন ইকোর সাথে যুক্ত হই। তখন থেকেই তটিনী ও গ্রিন ইকো একসাথে কাজ করছে।'

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে শুরু

২০২১ সালে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের করা 'এক্সট্রিম পোভার্টি: দ্য চ্যালেঞ্জেস অব ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ' সমীক্ষায় উঠে আসে, বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলা কুড়িগ্রাম। তাই কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারীদের মধ্যে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিতে তাদের হাত দিয়েই কলম তৈরির কাজ করাচ্ছেন সঞ্জয় চৌধুরী।

সঞ্জয় বলেন, 'আমরা নারীদের এই কাজে ব্যবহার করছি। যারা বাইরে খুব বেশি শ্রম দিয়ে কাজ করতে পারেন না কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক চাহিদা রয়েছে। যেমন আমাদের এদিকে মাটি কাটার কিছু কাজ আছে। শারীরিকভাবে সব নারীরা সেই কাজটা করতে পারেন না। কিন্তু তারা অনায়াসে আবার এই কলমটা বাড়িতে বসে বসে হাতে বানাতে পারেন। আমরা তাদেরকে পারিশ্রমিক দিচ্ছি। তাদের অর্থনৈতিক উপকার হচ্ছে এবং আমরা কলম উৎপাদন করছি।'

ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

নাগেশ্বরী উপজেলার নারীদের কলম তৈরির কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। পুরুষশাসিত দরিদ্র এই জেলায় নারীদের কাজে আসীন করার ব্যাপারেও বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে সঞ্জয় চৌধুরীকে। তিনি বলেন, 'প্রথমদিকে আমরা দেখেছি যে ২০ জনকে ডাকলে সেখান থেকে হয়তো ২ জন এসেছে। মাত্র ২ জন; তাদেরকে দিয়েই কাজটা শুরু করেছিলাম।'

কমিউনিটি তৈরি করে কাগজের কলম প্রস্তুত

নারীদের দিয়ে কাগজের কলম তৈরি তথা তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সর্বপ্রথম নাগেশ্বরীর কয়েকটি স্থানে গিয়ে সেখানে কমিউনিটি তৈরি করতে হয়েছে গ্রিন ইকোকে। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে কোনো একটি বাড়িতে করতে হয়েছে কর্মশালা। কর্মশালাতে কাজ শেখানোর পর আনুষঙ্গিক উপাদান যেমন: কাগজ, বীজ, আঠা প্রভৃতি নারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে নারীরা সংসারের যাবতীয় কাজ গুটিয়ে অবসরে বসে হাতের সাহায্যেই তৈরি করে কাগজের কলম। নির্ধারিত কোনো স্থানে একসাথে বসে তারা করে কলম তৈরির কাজ।

কমিউনিটির নারীরা কলম প্রস্তুতের পর যে বাড়িতে কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন সেখানে এসে জমা দেয়। পরবর্তী সময়ে গ্রিন প্রোডাকশনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ সেগুলো সংগ্রহ করেন। নাগেশ্বরীর ৫টি পয়েন্টে এভাবেই কাজ করেন নারীরা। প্রতিটি পয়েন্টে গড়ে আনুমানিক দশজন নারী কাজ করেন বর্তমানে।

নাগেশ্বরীর পাশাপাশি কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদের চরে অবস্থিত নারীদেরও অনেক বুঝিয়ে কাজে আনতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনেকের মনেই উদ্যোগ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা ছিলো। অনেক কটু কথাও সইতে হয়েছে সঞ্জয় চৌধুরী ও তার দলকে। অনেকভাবে বোঝানোর পর ধীরে ধীরে জনবল বাড়ে। সঞ্জয় জানান, 'আমরা একটা কমিউনিটি বেছে নিয়েছি যারা চামড়া ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত। জাতিগতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ আছে যাদের বাড়ির মেয়েরা বাইরে কাজ করতে পারেন না, আবার তাদের পরিবারেরও প্রয়োজন। আমরা সেখানে একটা কমিউনিটি তৈরি করেছি সেই নারীদের দিয়ে। তারা কিন্তু এখন নিয়মিতভাবে কাজটা করছে।'

যেভাবে তৈরি হয় কলম

গ্রিন পেনের বাহ্যিক অংশে ব্যবহার করা হয় কাগজ। ভেতরের রিফিল অংশে প্লাস্টিকের রিফিল কলমের মতোই শিষ জুড়ে দেওয়া হয়। কাগজকে কলমের আকারে জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয় গাম বা আঠার। আঠাও তারা হাতে প্রস্তুত করেন। সবশেষে যুক্ত করে দেওয়া হয় বিভিন্ন গাছের বীজ। গাছের বীজের মধ্যে থাকে তুলসি, বেগুন, মরিচ, টমেটো, অপরাজিতা প্রভৃতি বীজ। কখনো কখনো তারা বৃক্ষ জাতীয় গাছের বীজ যেমন: জারুল ফুলের বীজও তারা যুক্ত করে দেন। ঋতু অনুযায়ী যখন যার ফলন ভালো হয় সেগুলোই চেষ্টা করেন কলমের সাথে সংযুক্ত করার। 

কাগজকে হাতের সাহায্যে পেঁচিয়ে সেখানে আঠা ব্যবহার করা হয়। আঠাই মূলত কলমের মূল ভিত্তি। আঠার কারণেই কলমের ভিত শক্ত হয়।

ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

কলমের শেষ অংশে বীজ যুক্ত করে কলমকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। কলমের কালি ফুরিয়ে গেলে কেউ চাইলে কাগজ থেকে বীজ বের করে মাটিতে বা টবে রোপন করে দিতে পারবে। আরো সহজভাবে বলতে গেলে কেউ যদি চায় তাহলে কাগজের মধ্যে বীজ রেখেই মাটিতে রোপন করে দিতে পারবে। নিয়মিত পানির সংস্পর্শে এলে বীজ অংকুরিত হবে এবং একসময় কাগজও মাটির সাথে মিশে যাবে। প্লাস্টিকের কলমের মতো কাগজের কলমকেও ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কাগজের ক্যাপ বা ঢাকনা। তবে এই কলম ব্যবহারে কিছুটা সচেতন থাকতে হয়। দুমড়ে-মুচড়ে ব্যবহার না করে যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে এই কলম টেকে বহুদিন।

সঞ্জয় চৌধুরীর ভাষ্যে, যেসব উপাদান গ্রিন পেনে ব্যবহার করেন- তাতে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার তারা কমিয়ে এনেছেন।

কলম তৈরিতে কাগজ ব্যবহারে তা নষ্ট হওয়ার বা ছিঁড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে সঞ্জয় বলেন, 'আমরা যখন নিজেরা এটা ব্যবহার করতে শুরু করিনি- কেবল ভাবছিলাম যে আমাদেরই কাগজের কলম ব্যবহার করতে হবে, তখন আমাদের অনেকের মধ্যেই এই প্রশ্নটা ছিল। কাগজের কলম তো একটা হালকা ব্যাপার। আমরা যখন এটা প্রস্তুত করতে শুরু করলাম, তারপর দেখলাম এটা যথেষ্ট মজবুত। তবে হ্যাঁ, বৃষ্টির সময় যদি কলম টানা আধাঘণ্টা পানিতে ভিজতে থাকে- সেক্ষেত্রে ক্ষতি হবে।'

পত্রিকা দিয়ে প্রস্তুত হবে কাগজের কলম!

প্রতিটি নারী গড়ে প্রতিদিন ১০০টির মতো কলম প্রস্তত করতে পারেন। আনুমানিক ৫০ জন নারী প্রতিদিন কাজ করলে ৫০০০ কাগজের কলম দৈনিক ভিত্তিতে উৎপাদন সম্ভব। হাতে তৈরি করতে হয় বলে কলমের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। একটি বা দুটি কাগজের কলম কিনতে হলে দাম পড়বে ১৫ টাকা। তবে কেউ যদি একসাথে অতিরিক্ত সংখ্যায় কলম খরিদ করেন তাহলে দাম কিছুটা কমে যাবে।

গ্রাহকদের কাছ থেকেও ভালোই সাড়া পাচ্ছে কাগজের কলম। জুঁই বলেন, 'মানুষ চাচ্ছে কেনার জন্য। কেউ কেউ ৪০০-৫০০ পিস কলমেরও অর্ডার দিচ্ছেন। দারুণ সাড়াস পাচ্ছি আমরা।'

জুঁই আরও বলেন, 'এখন আমরা আকর্ষণীয় করার জন্য বা সুন্দর দেখানোর জন্য রঙিন কাগজ দিয়ে করছি। পরবর্তী সময়ে আমরা ব্যবহারযোগ্য কাগজ যেমন: পত্রিকা বা লেখার কাগজ দিয়ে কাজ করবো।'

প্রচারণার কাজে 'তটিনী' যুক্ত থাকায় তারাও তাদের পণ্যের সাথে ক্রেতাদের হাতে উপহার হিসেবে কলম তুলে দিচ্ছেন। তটিনীর স্বত্বাধিকারী জুঁই বলেন, 'ক্রেতাদের উপহার হিসেবে কাগজের কলম দিলে তাদেরও ভালো লাগে। উপহার হিসেবে এটা এমন একটা জিনিস যেটা পরিবেশবান্ধব। সে চিন্তা থেকে কেউ যদি চায়, তারা অর্ডারও করতে পারেন।'

গ্রিন পেন নিয়ে সঞ্জয় চৌধুরীও বেশ খুশি। এই কলম দিয়ে তিনি চাকরির পরীক্ষাও দিতে গিয়েছেন, হাসিচ্ছলে এমন কথাও বলেন।

প্লাস্টিক এড়িয়ে কাগজের কলম

অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে সঞ্জয় চৌধুরী উল্লেখ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদের কথা। তিনি বলেন, 'স্যার একাই উদ্যোগ নিয়ে ক্যাম্পাসে চল্লিশ হাজারেরও অধিক বৃক্ষরোপণ করেছেন। এই কাজের সাথে আমি এবং আমরা ছিলাম। ফলে দেখেছি যে একটা উদ্যোগ নিলে কীভাবে আসলে সেটা বাস্তবায়ন করা যায়। যেহেতু পরিবেশ নিয়ে সংগঠন করেছিলাম, আমাদের কাছে মনে হচ্ছিল যে এটা করা দরকার। ড. তুহিন ওয়াদুদ স্যার একাই নদী রক্ষা, বৃক্ষরোপণের কাজ করছেন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পাখির উপর বিশেষ নজরদারি আছে- এই সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।'

প্রতিষ্ঠাতার হাতে কাগজের কলম; ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

তাছাড়া সঞ্জয় চৌধুরী গ্রিন ইকোর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন পরিবেশ বিষয়ক দেশী-বিদেশী সভা সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সেখানে তিনি দেখেছেন, দেশের বাইরে থেকে যেসব পরিবেশ কর্মী এসেছেন- তাদের অধিকাংশের হাতেই কাগজের কলম ছিলো।

সঞ্জয় বলেন, 'একটি সেমিনারে পরিবেশ কর্মীরা তাদের দেশ থেকে কাগজের কলম নিয়ে এসেছেন। সেখানে জার্মানী থেকে একজন এসেছেন, একজন মুম্বাই থেকে এসেছেন, একজন কানাডা থেকে এসেছেন- ফলে এই বিষয়গুলো আমাকে প্রভাবিত করেছে। সারা বিশ্ব প্লাস্টিক এড়িয়ে যেতে চাইছে এবং আমাদের দেশও বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মানসিকভাবে এবং পরিবেশগতভাবে আমাদেরকে এগিয়ে দেওয়া দরকার।'

এখনো প্লাস্টিকের কলমে অভ্যস্ততা

কাগজের কলমের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ মানুষের ভালো লাগলেও প্লাস্টিকের কলম ব্যবহারের অভ্যস্ততা এখনো কমেনি বলে মনে করেন সঞ্জয় চৌধুরী। তিনি বলেন, 'ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় প্লাস্টিকের কলম ব্যবহার করে যে অভ্যস্ততা, সেটা ভেঙে নতুন পণ্য ব্যবহার করার যে মানসিকতা সেটা কিন্তু তৈরি হচ্ছে না। হ্যাঁ, অনেকেই বলছেন এটা ভালো। আমরা যে এত মানুষকে কাজে লাগিয়েছি- আমাদের অর্থনৈতিক চাপ যাচ্ছে, কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখছি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবো। মানুষ এটাকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে কিন্তু অভ্যাসগত কারণে প্লাস্টিক বা অন্যান্য কলমগুলোকে ছাড়তে পারছে না। এই জায়গায় আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।'

প্রচারণার কাজে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা উল্লেখ করেন তটিনীর স্বত্বাধিকারী জুঁই সরকার। জুঁইয়ের ভাষ্যে, বাজারে এখন যেসব কলম পাওয়া যায় সেগুলো ৫ থেকে ৭ টাকা। কাগজের কলমের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে অনেকসময় জবাবদিহিও করতে হয় তাদের।

বেশ কিছুদিন পাইলটিং করার পর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় গ্রিন পেনের। বর্তমানে সঞ্জয় চৌধুরীর স্বপ্ন প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০০০টির মতো কলম দেশ ও দেশের বাইরে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার।

ছবি- সঞ্জয় চৌধুরী

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বচ্ছলতা আনয়নের চেষ্টা

গ্রিন ইকো থেকে সঞ্জয় চৌধুরী কলমের পাশাপাশি কুড়িগ্রামের ১০০ দরিদ্র পরিবারের হাতে সুপারি গাছ তুলে দিয়েছেন পরিচর্যার জন্য। সুপারির বাজারমূল্য ভালো হওয়ায় এবং দরিদ্র পরিবারের মধ্যে স্বচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে নিয়েছেন এই উদ্যোগ। তাছাড়া তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে ১০ হাজার কাঁঠাল গাছ তুলে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কাঁঠাল গাছ একদিকে যেমন অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ, পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবেও কাঁঠাল পাতা উপযোগী।

১০ হাজার কাঁঠাল গাছ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তারা কাগজের কলমও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। কুড়িগ্রামের মানুষকে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতির সাথে যুক্ত করতেই মূলত সঞ্জয় চৌধুরী এই উদ্যোগ নিয়েছেন। কাগজের কলম দেশজুড়ে প্রসার লাভ করলে অন্যান্য জেলাতেও কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে তার।

২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- 'প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে'। প্লাস্টিক এড়িয়ে কাগজের কলম ছড়িয়ে দেয়ার রণে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন সঞ্জয় চৌধুরী। লক্ষ্য এখন শুধু একটাই- সবুজ পরিবেশ বিনির্মাণ করে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করা। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন পৃথিবী তৈরি করা।

Related Topics

টপ নিউজ

গ্রিন পেন / কাগজের কলম / পরিবেশ বান্ধব

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • 'দুই ল্যাপটপ, ছয় প্লাগ': কোরিয়ায় ক্যাফের আসন দখল করে সারাদিন পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের, বিপাকে মালিকেরা
  • স্ত্রী গর্ভবতী ও কিডনি জটিলতা জানিয়ে শুনানিতে তৌহিদ আফ্রিদির জামিন চান আইনজীবী
  • নিউইয়র্কে তথ্য উপদেষ্টাকে হেনস্তা আওয়ামী নেতা-কর্মীদের, ডিম নিক্ষেপ
  • মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আছে: ফজলুর রহমান
  • নতুন বোর্ডরুম, পুরনো চর্চা: ব্যাংকের এমডিরা হটসিটে
  • ২০০-এর বেশি রপ্তানিকারককে টাকা দিতে পারছে না সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো, প্রতিকার চেয়ে আজ গভর্নরের সঙ্গে বিজিএমইএ’র বৈঠক

Related News

  • ক্যাফে রিভার ফ্রন্ট: তুরাগপারে এক কন্টেইনার রেস্তরাঁর গল্প
  • পরিবেশবান্ধব ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ পাওয়া যাবে ৩০ লাখ পর্যন্ত
  • মা-ছেলের পরিবেশবান্ধব ‘কাগজের কলম’   
  • চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ রক্ষার দাবি পরিবেশবাদীদের
  • পরিবেশবান্ধব ব্লক: সবুজ বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা  

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

'দুই ল্যাপটপ, ছয় প্লাগ': কোরিয়ায় ক্যাফের আসন দখল করে সারাদিন পড়াশোনা শিক্ষার্থীদের, বিপাকে মালিকেরা

2
বাংলাদেশ

স্ত্রী গর্ভবতী ও কিডনি জটিলতা জানিয়ে শুনানিতে তৌহিদ আফ্রিদির জামিন চান আইনজীবী

3
বাংলাদেশ

নিউইয়র্কে তথ্য উপদেষ্টাকে হেনস্তা আওয়ামী নেতা-কর্মীদের, ডিম নিক্ষেপ

4
বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নির্বিঘ্নে বাঁচার অধিকার আছে: ফজলুর রহমান

5
অর্থনীতি

নতুন বোর্ডরুম, পুরনো চর্চা: ব্যাংকের এমডিরা হটসিটে

6
বাংলাদেশ

২০০-এর বেশি রপ্তানিকারককে টাকা দিতে পারছে না সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো, প্রতিকার চেয়ে আজ গভর্নরের সঙ্গে বিজিএমইএ’র বৈঠক

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net