Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
August 16, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, AUGUST 16, 2025
ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুল: বয়স ৬০, নেই শিক্ষক, বৃষ্টি এলেই ক্লাস বন্ধ

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
27 May, 2023, 01:30 pm
Last modified: 27 May, 2023, 03:49 pm

Related News

  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • স্কুলে শেখ মুজিবের ছবি টানানো সেই প্রধান শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...
  • শিশুর ট্রমা কাটাতে যা করতে হবে
  • ৬ মাসের মধ্যে সব সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে

ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুল: বয়স ৬০, নেই শিক্ষক, বৃষ্টি এলেই ক্লাস বন্ধ

এর আগে ঢাকায় প্রথম মূক ও বধিরদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯১৪ সালে। ১৯৪০ সালে এই স্কুল কর্তৃক তৈরি হয়েছিল মূক ও বধির ক্লাব। পরবর্তীতে এই দুটোই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৬৩ সালে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য ইস্ট পাকিস্তান ডিফ-মিউট অ্যাসোসিয়েশন। স্বাধীনতার পর, এর নতুন নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ জাতীয় মূক ও বধির সংস্থা’। ১৯৭৬ সালের পর আবার নাম বদলে রাখা হয়, বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা বা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ডিফ। 
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
27 May, 2023, 01:30 pm
Last modified: 27 May, 2023, 03:49 pm
ছবি / সংগৃহীত

ব্ল্যাকবোর্ডে আঁকা হাঁসটাকে দেখে সাদা খাতায় পেন্সিল দিয়ে আঁকার চেষ্টা করছে সুমনা। এর আগে সে একটা পাখি এঁকেছে। চারবার চেষ্টা করার পর অবশেষে পাখি আঁকা হয়েছে তার। আর যে-ই না হলো, দৌড়ে মা'র কাছে নিয়ে গেল ড্রয়িং খাতাটি! 

মা জাহানারা বাইরেই বসে আছেন বাকি মায়েদের সঙ্গে। ক্লাস চলাকালীন এখানেই বসে থাকেন। মাঝে মাঝে গিয়ে মেয়েকে দেখে আসেন। এই কাজ অবশ্য তিনি একাই করেন না। বাকি মায়েরাও গিয়ে গিয়ে ক্লাসে তার ছেলেমেয়েদের দেখে আসেন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়লেও আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো পুরোপুরি স্বাবলম্বী না তারা। এরা সবাই মূক ও বধির। কেউ কেউ আবার শুধু শুনতে বা বলতে পারে। তবে বেশিরভাগই শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। এই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য দেশজুড়ে অনেক স্কুল থাকলেও মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য তাদেরকে এই স্কুল থেকেই পরীক্ষা দিতে হয়। স্কুলের নাম ঢাকা সরকারি বধির হাই স্কুল। ঢাকার মানচিত্র সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা সবাই মোটামোটি স্কুলটি চেনেন। ঢাকার বিজয়নগরে স্থাপিত এই স্কুলটি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ১৯৬৬ সালে স্থাপিত হয়। পরে ২০১৬ সালে এটি সরকারি হয়েছে।   

ঢাকায় প্রথম মূক ও বধিরদের জন্য স্কুল 

এর আগে ঢাকায় প্রথম মূক ও বধিরদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯১৪ সালে। ১৯৪০ সালে এই স্কুল কর্তৃক তৈরি হয়েছিল মূক ও বধির ক্লাব। পরবর্তীতে এই দুটোই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৬৩ সালে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য ইস্ট পাকিস্তান ডিফ-মিউট অ্যাসোসিয়েশন। স্বাধীনতার পর, এর নতুন নাম দেওয়া হয় 'বাংলাদেশ জাতীয় মূক ও বধির সংস্থা'। ১৯৭৬ সালের পর আবার নাম বদলে রাখা হয়, বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা বা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ডিফ। 

এ জাতীয় বধির সংস্থার প্রধান প্রকল্প হলো, 'ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুল'।

ড্রয়িং ক্লাসে ছবি আঁকছে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক নিজেও একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী; এই স্কুল থেকেই তিনি পাশ করেছেন। ছবি: রাফিয়া মহমুদ প্রাত।

বইয়ের এক-তৃতীয়াংশ পড়া হয় তাদের 

১৯৬৬ সালে স্কুলটি যখন যাত্রা শুরু করে তখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৭-৮ জন এবং এটি ছিল একটি নৈশ বিদ্যালয়। এরপর তা প্রাথমিক পর্যায়ে, এবং বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার সুবিধা রয়েছে এখানে। প্রতিবছর ৩০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এখান থেকে। পাশের হার শতভাগ না হলেও শতভাগের কাছাকাছিই থাকছে।   

এ বছর ৪২ জন পরীক্ষা দিচ্ছে এখান থেকে। প্রতিবন্ধী বলে পরীক্ষার প্রশ্ন এবং মূল্যায়ণে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তাদের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রমেও নেই কোনো বৈষম্য। কেবল পরীক্ষায় তাদের সময় একটু বেশি দেওয়া হয় এবং তাদের খাতা আলাদাভাবে রাখা হয়। এছাড়া, মূলধারার ছেলেমেয়েরা যে বই পড়ে, তারাও তাই পড়ে। তবে, স্বাভাবিক একজন ছাত্র যেখানে পুরো বইয়ের ওপর প্রস্তুতি নিয়ে যায়, সেখানে এসব শিক্ষার্থীরা কেবল বইয়ের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারে। এ প্লাস বা ভালো রেজাল্টের চেয়ে, পাশ করতে পারাটাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। 

এ ব্যাপারে স্কুলটির গণিতের শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা যদি ওদের পড়াই বারো আনা, ওরা বুঝতে পারে চার আনা। যা পড়াই তা আবার ভুলে যায় দুদিন পরই। যেখানে স্বাভাবিক বাচ্চারাই গণিত এত ভয় পায়, সেখানে ওদের গণিত বোঝানো খুব কঠিন। তাই সবচেয়ে সহজ এবং পাশ করে যাবে এটুকুই আমরা পড়াই। আর সেটাই ওদের জন্য অনেক বেশি টাফ হয়ে যায়।"

পাখি, হাঁস আঁকার পর এখন গরু আঁকছে সুমনা। ছবি তোলা হচ্ছে বলে খুব খুশি সে। ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

শিক্ষকদের সাহায্য ছাড়া পরীক্ষায় পাশ করাটা কঠিন 

বাংলার শিক্ষক শিউলী সাহা ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছেন এখানে। তিনি জানান, পুরো বই লাইন ধরে পড়ানো তাদের হয়না তেমন। সারাংশ বা সারমর্মটুকুর ওপরই জোর দেওয়া হয় বেশি। একটা অধ্যায় শেষ করতে চার পাঁচদিন সময় লেগে যায়।

তবে বাংলা, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান, গণিত কোন বিষয়টি পারে বেশি জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণির এক অভিভাবক ফারজানা জানান, "ওরা কোনোটাই সেভাবে পারেনা। সবই কঠিন ওদের জন্য। কারণ ওরা বুঝতে পারেনা। মুখস্থ করেই উত্তর লিখে সাধারণত। বাংলা পড়তে গেলে ইংরেজি ভুলে যায়, ইংরেজি পড়তে গেলে বাংলা ভুলে যায়।" 

বছরে দুটো পরীক্ষা হয় তাদের, অর্ধবার্ষিকী ও বার্ষিকী। যে প্রশ্নগুলো আসবে পরীক্ষায় সেগুলোই শিক্ষকরা তাদের বারবার চর্চা করান। বাসায় গিয়েও সেগুলোই পড়েন। যেন পরীক্ষায় পাশ নাম্বারটুকু আসতে পারে। উত্তরগুলোও বইয়ে দাগিয়ে দেওয়া হয়, যেন বাসায় গিয়ে সেগুলো দেখে বারবার লিখতে পারে। লিখতেই লিখতেই মুখস্ত করে তারা। এরপর পরীক্ষায় লেখে। তবে অনেক সময় প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দিলে বা নামগুলো বদলে ফেললে মাঝে মাঝে বুঝতে অসুবিধা হয়। তখন শিক্ষকরাই আবার বুঝিয়ে দেন। 

মাধ্যমিক বা বোর্ড পরীক্ষাতেও কেন্দ্রে গিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেন তারা। অভিভাবকদের মতে, যদি শিক্ষকরা গিয়ে কেন্দ্রে এভাবে বাচ্চাদের বুঝিয়ে না দিতেন, তবে তারা পাশই করতে পারত না। এতটাই দুর্বল তারা পড়ালেখায়। 

স্কুলটির মাঠ বলতে এটুকুই। ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

'যদি অন্য শিক্ষকরাও হেড স্যারের মতো এত যত্ন নিত' 

অবশ্য এজন্য স্কুলের শিক্ষাদান পদ্ধতির দিকেই আঙ্গুল তোলেন অনেক অভিভাবকরা। সাংকেতিক ভাষা শেখানো হয়না বলে অভিযোগ তাদের। বেশিরভাগ শিক্ষকই বই দেখে দেখে লিখতে দেয়। আবার সাংকেতিক ভাষা না শেখানোর কারণে, বোঝার ক্ষেত্রে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটা দূরত্বও রয়ে যায়। 

শিক্ষকদের মধ্যে এ ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা না থাকলেও স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম চেষ্টা করেন সাংকেতিক ভাষাতেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে গিয়ে গিয়ে ক্লাসগুলো পরিদর্শন করেন। কারও কোনো অসুবিধা হলে, কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে বুঝিয়ে দেন। অভিভাবকরাও যেকোনো ছোটো বড় সমস্যায় যখন তখন প্রধান শিক্ষকের দ্বারস্থ হতে পারেন। তারা আফসোস করে জানান, "যদি অন্য শিক্ষকরাও হেড স্যারের মতো এত যত্ন নিতো বাচ্চাদের, তবে ওদের ভবিষ্যৎ আরেকটু ভালো হতো।"

শিক্ষকের সংখ্যাও কম

বারো বছর আগেও যেখানে ২৭ জন শিক্ষক ছিল, সেখানে বর্তমানে শিক্ষক আছেন ১২ জন। এরমধ্যে কেউ উপস্থিত না থাকলে একজন শিক্ষককেই একসঙ্গে অন্য ক্লাসগুলো নিতে হয়।    
সেদিন একই কক্ষে একসঙ্গে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন মফিজুল ইসলাম। সমাজ ও বিশ্ব পরিচিতির শিক্ষক হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন তখন। মফিজ জানান, "আমাদের টিচার এমনিতেই কম। এখন তো ডিউটি পড়সে, এমনিতে কেউ ছুটিতে গেলেও আমরা এরকম ক্লাস নেই নিজ সাবজেক্টের বাইরে গিয়ে।"

তার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এখানের শিক্ষকরা অবসরপ্রাপ্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে না। স্কুলটি সরকারি হয়ে যাওয়ায় নিজেরাও নিয়োগ দিতে পারছে না শিক্ষক। 

সেইসঙ্গে তাদের স্বেচ্ছাচারিতাও বর্তমান। কিছুদিন আগেই নাকি কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে একজন শিক্ষক বিদেশে চলে যায় স্থায়ীভাবে। যেখানে তিন মাস আগেই জানানোর নিয়ম, কথাগুলো নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করছিলেন অভিভাবকরা।

ক্লাসের ফাঁকে বেলা এগারোটার দিকে স্কুল থেকে কেক, বিস্কুট খেতে দেওয়া হয়। ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

গত ৫০ বছরেও স্কুলটির কোনো পুনঃসংস্কার হয়নি, চলছে মামলাও 

এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা এসবের কোনো ক্লাস হয়না। কোনো সাইন্স ল্যাব বা কম্পিউটার ল্যাবও নেই। নামে মাত্র শিক্ষক আছেন যিনি মূলত বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজই করে থাকেন। 

সেই সাথে স্কুলের নেই কোনো স্বাস্থ্যকর আর উন্নত পরিবেশ। এত পুরোনো আর সবার পরিচিত একটি স্কুল হওয়ার পরও স্কুলটির অবকাঠামোর দিক দিয়ে কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। না আছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, পরিস্কার এবং স্বাস্থ্যকর শৌচাগারের ব্যবস্থা, পাঠাগার, বিশ্রাম কক্ষ এমনকি হাত ধোয়ার বা বিশুদ্ধ পানিরও ব্যবস্থা নেই। 

শ্রেণিকক্ষগুলোর জানালার গ্রিলে মরিচা ধরা, দেয়ালের প্লাস্টার খুলে আসছে, পর্যাপ্ত ফ্যান নেই, শ্রেণিকক্ষ স্যাঁতস্যাঁতে আলো কম। গত ৫০ বছরেও স্কুলটির কোনো পুনঃসংস্কার হয়নি। চেয়ার টেবিল হয়তো এসেছে কিন্তু অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টিনশেডের একটি ভবন তৈরি করে গিয়েছেন। সেটা দিয়েই কোনোমতে টেনে হিঁচড়ে চলছে এখন স্কুলটির কার্যক্রম।  

২০০৫ সালে ঢাকার লালবাগ মৌজায় ১ একর খাস জমি স্কুলটিকে বরাদ্দ দেয় সরকার। এই জমিটিও দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের দখলে। এ নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে চলছে মামলা মোকদ্দমা। 

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক(হেড মাস্টার) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, "আমাদের স্কুলের অবস্থা দেখেছেন? এখন যদি বৃষ্টি হয়, আমাকে সাথে সাথে আজকে স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে। বাইরে বৃষ্টি হলে ভিতরে ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাস করবে, সে ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত নেই।"

"আমাদের দেশের অন্যান্য প্রতিবন্ধী স্কুলগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও, আমাদের স্কুলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পড়ে গেছে। কোনো দাবি নিয়ে গেলে সমাজকল্যাণ পাঠিয়ে দেয় শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে, আর শিক্ষা যেতে বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এই দুইয়ের টানাটানিতে আমরা পড়ে আছি অসহায়ভাবে। অবকাঠামোর উন্নয়ন নেই, শিক্ষক নেই, অফিস স্টাফ নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন থাকলে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গা থেকে শিক্ষকদের এনেও এসব শিশুদের শিক্ষাদান নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারতাম। কিন্তু সে পরিবেশটাই নেই। ছয়তলা বিল্ডিং হওয়ার ছিল, সেটাও হয়নি এপর্যন্ত। এদিকে, হাজী সেলিমের দখলকৃত লালবাগের জায়গাটি নিয়ে চলছে মামলা। সব মিলিয়ে এক জোড়াতালির জীবন আমাদের এখানে," যোগ করেন মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। 

অথচ এই আমিনুলই ৩৪ বছর আগে যখন জুনিয়র শিক্ষক হয়ে আসেন এখানে, তখন ছাত্র-ছাত্রদীর স্কুলে নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য নিজস্ব গাড়ি ছিল প্রতিষ্ঠানটির। পুরো ঢাকা থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আসতো সকাল সাড়ে আটটায় স্কুলে। আবার দিয়ে আসতো। 

নিজেদের মধ্যে ইশারা ভাষায় কথা বলছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

পরিবারের অজ্ঞতা আর অবহেলাও দায়ী 

করোনার আগ পর্যন্ত স্কুলটির কার্যক্রম ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনার পর স্কুলের অবস্থা বেশি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীও কমে গেছে। এখানে যারা আসে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানও তেমন ভালো না। ফলে করোনায় অনেক পরিবারই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আবার প্রতিবন্ধী সন্তানের পেছনে ব্যয় করার চেয়ে অন্য সন্তানের পেছনে ব্যয় করলে লাভ বেশি। বেশিরভাগ পরিবারেরই এমন ধারণা থাকে। তাই সেখানে তাদের পড়ার জন্য এত কাঠখড় অনেকেই পোড়াতে চায়না। এসবকিছু মিলিয়েই অনেকেই স্কুল ছেড়ে গেছে।   

আবার তাদের জন্য যে স্কুল আছে তা অনেকেই জানেনা। এরকম অবহেলা বা বিভিন্ন অজ্ঞতার কারণে শুরু থেকে বাচ্চাকে স্কুলে দেওয়া হয়ে ওঠেনা। এরপর যখন তারা আসে তখন বয়স হয়ে যায়।

"যেমন সেদিন এক মা এলো তার বাচ্চাকে ভর্তি করানোর জন্য। ছেলের বয়স ২৭ বছর। এই বয়সের কাউকে তো পড়ানো সম্ভব না। কিন্তু তারা যখন দেখে বড় হয়েও বাচ্চাদের কোনো উন্নতি হচ্ছেনা, বেসিক কাজগুলো পারছেনা, তখন তারা স্কুলমুখী হয়," জানালেন প্রধান শিক্ষক।   

কর্মসংস্থান করে নিচ্ছে তারা   

এখান থেকে বের হওয়ার পরে কেউ যদি ইন্টারমিডিয়েট বা পরবর্তীতে আরও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে চায় এখানকার শিক্ষকরাই সে ব্যবস্থা করে দেন প্রায়ই সময়। এমনই একজন মারজান। 

এখান থেকে এসএসসি পাশ করে শ্যামলী আইডিয়াল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে মারজান। একই কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে একটি চাকরিও খুঁজছে সে। চাকরির জন্য এসেছে স্কুলের শিক্ষকদের কাছে। অনেক সময় শিক্ষকরাই কথা বলে অনেক জায়গায় চাকরি দিয়ে থাকেন তাদের। 

প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে শিক্ষকরাই যোগাযোগ করে রাখেন আগে থেকে। খুব বেশি বেতনের চাকরি তো তারা পায়না। ১০-১২ হাজার টাকা বেতনেই চলে তাদের। আশার কথা হলো, এই পাশ করে যাওয়া ছাত্রদের মাঝে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়ছে দিনদিন। বর্তমানে, কেয়া কসমেটিকসে চাকরি করছে বিশাল সংখ্যক ছাত্র, বাবা মায়ের ব্যবসা, গার্মেন্টসে, বিআরটিসি বাসে টেকনিক্যাল কাজ করছে। ছেলেরা যারা ডিগ্রি পড়ে তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। স্বপ্ন, আগোরা, এপেক্সের মতো কোম্পানিগুলোতে কাজ নেয়। আর মেয়েরা এসএসসির পর সাধারণত গার্মেন্টেসে চলে যায়। তবে বেশিরভাগ ছাত্রীর বিয়েই হয়ে যায়।    

জসীম মিয়ার মেয়েও এখান থেকে এসএসসি পাশ (২০১০)করে বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করছে এখন। প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত এখানেই পড়েছে তার মেয়ে। বেশ মেধাবীই ছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে তৃতীয় হয় তার মেয়ে। তবে জসীম জানান, প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠতে তার মেয়েকে তিনটি ধাপে পড়তে হয়েছিল তখন। প্রথম শ্রেণি ক বিভাগ, খ বিভাগ, গ বিভাগ। এরপর দ্বিতীয় শ্রেণি। এখন অবশ্য এত ধাপ নেই।  জসীম মিয়া নিজে এখন এই স্কুলের পিয়ন হিসেবে কর্মরত।  

নেমপ্লেটটির মতো জরাজীর্ণ এই কক্ষগুলোও যেকোনো সময় খসে পড়বে। ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত

অর্থের অভাবে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পড়তে হচ্ছে এখানে  

লেখাপড়ার মান, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কোনোটিই নেই। তারপরও নিজেদের সন্তানদের একটুখানি ভালো ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখানে ছুটে আসেন নিম্নবিত্তের পরিবারগুলো। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল বা একাডেমিতে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে বোর্ড পরীক্ষার সময়ে এখানে এসে ভর্তি করাচ্ছেন। কিন্তু যাদের সে সুযোগ সামর্থ্য নেই, তাদের তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে এই জরাজীর্ণ আর স্যাঁতস্যাঁতে টিনশেডের ঘরগুলোর দিকেই।    

তাদেরই মধ্যে একজন হলেন ফারজানা (অভিভাবক)। ফারজানার ছোটো ছেলে যখন এখানে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসে, তার বয়স আট। শুরুতে জানতেন না এই স্কুলের কথা। তাই কিছুদিন হাইকেয়ারে (বধির ও মূকদের জন্য বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান) পড়িয়েছেন সন্তানকে। সেখানে পড়ালেখার মানও ভালো ছিল। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। প্রতিদিন শনির আঁখড়া থেকে আসেন তিনি ছেলেকে নিয়ে। এরকম দূর দূরান্ত থেকে ফারজানার মতো আরও বহু বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন।   

কমলাপুর বৌদ্ধমন্দির থেকে আসেন মঞ্জু সাহা। করোনার পর এই আসা যাওয়ার খরচটুকু বেড়ে গেছে। এখানকার লেখাপড়ার মান নিয়েও সন্তুষ্ট নন মঞ্জু। তবুও আসেন মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, "অন্তত, হারিয়ে গেলে যেন নিজে মোবাইল নম্বার, ঠিকানা লিখে দিতে পারে, বাবা মায়ের নামটুকু লিখতে পারে। আর যাইহোক, আমরা না থাকলেও সমাজে যেন বাঁচতে পারে অন্তত এটুকুই চাওয়া। বেশি শিক্ষার স্বপ্ন দেখিনা।"   

শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ থেকেই এখানে পড়তে আসে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের জন্য পাশের বধির সংস্থার ভবনের ভেতরেই রয়েছে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা। মেয়েদের জন্য এখনো সে ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে সেখানে ছাত্র সংখ্যা ১২০ জন। দশম শ্রেণির একজন আবাসিক ছাত্র দীপ্র। বাড়ি নেত্রকোণা। আগে পরীক্ষার সময় এসে এসে পরীক্ষা দিয়ে যেত। কিন্তু সামনে এসএসসি বলে, স্কুল, কোচিং (স্কুলের শিক্ষকরাই প্রাইভেট পড়ান) করতে হয় নিয়মিত। তাই হোস্টেলে উঠেছে সে। কিন্তু সেখানকার খাবার দাবার, পরিবেশ কিছুই ভালো লাগেনা তার। মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চায়, কান্নাকাটি করে।    

আবাসিক হোস্টেলে প্রতি ছাত্রের মাসিক বেতন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু এই খরচটুকুও অনেকের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। ঢাকার ভিতরে যারা আছেন, তারা কোনোমতে পারলেও, যারা দূরে থাকেন, তারা অনেকে চাইলেও পারছে না ছেলেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে। এভাবেই সুযোগ ও সামর্থ্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নিম্ন আয়ের পরিবারের এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ…  

Related Topics

টপ নিউজ

মূক ও বধির / স্কুল / বধিরতা / ফিচার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • রাজশাহীতে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, চিরকুটে লেখা 'আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে'
  • সাদাপাথরে লুট হওয়া ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর ডেমরা থেকে উদ্ধার
  • এক ক্লিকেই সর্বনাশ: অনলাইন জুয়ার ফাঁদ যেভাবে গ্রামের তরুণদের গ্রাস করছে
  • শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন: নাহিদ ইসলাম
  • জরুরি কাজ ফেলে রেখে গড়িমসির অভ্যাস দূর করবেন কীভাবে? 
  • কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন শমী কায়সার

Related News

  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • স্কুলে শেখ মুজিবের ছবি টানানো সেই প্রধান শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...
  • শিশুর ট্রমা কাটাতে যা করতে হবে
  • ৬ মাসের মধ্যে সব সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও হাসপাতালে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে

Most Read

1
বাংলাদেশ

রাজশাহীতে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার, চিরকুটে লেখা 'আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে'

2
বাংলাদেশ

সাদাপাথরে লুট হওয়া ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর ডেমরা থেকে উদ্ধার

3
ফিচার

এক ক্লিকেই সর্বনাশ: অনলাইন জুয়ার ফাঁদ যেভাবে গ্রামের তরুণদের গ্রাস করছে

4
বাংলাদেশ

শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা নন: নাহিদ ইসলাম

5
আন্তর্জাতিক

জরুরি কাজ ফেলে রেখে গড়িমসির অভ্যাস দূর করবেন কীভাবে? 

6
বাংলাদেশ

কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন শমী কায়সার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net