Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
August 07, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, AUGUST 07, 2025
ফেসবুকের মুক্ত উদ্ভিদকোষ তারা

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
10 May, 2023, 05:45 pm
Last modified: 12 May, 2023, 02:12 pm

Related News

  • ধানমন্ডিতে সড়কে গাছ পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেল গাড়ি, গুরুতর আহত চালক
  • প্রকৃতির জন্য উৎসর্গ করেছেন জীবন, মাহমুদুল পেলেন জাতীয় পরিবেশ পদক
  • ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • যেভাবে হুমকির মুখে থাকা কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী চিনার গাছ সংরক্ষণের লড়াই চলছে
  • হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ‘ছোট বড় মিলে পান্থকুঞ্জে আঁকবো ছবি’ কর্মসূচি

ফেসবুকের মুক্ত উদ্ভিদকোষ তারা

অনেকেই আছেন যারা সুযোগ পেলে চলে যান গাছেদের কাছে। সেটা হোক কোনো অভয়ারণ্যে, হোক বাড়ির ছোট্ট উঠান বা ছাদের বাগানে। টবের কোণে পড়ে থাকা কোনো তৃণ, আগাছার ফুল দেখলেও তাদের মনে বয়ে যায় খুশির দোল। সেই আনন্দের মুহুর্তটি হয়তো কেউ কেউ ছবি তুলে শেয়ারও করে নেন ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে। আবার, যাদের খুব আগ্রহ তারা গিয়ে যুক্ত হোন ফেসবুকের বিভিন্ন গাছভিত্তিক গ্রুপে। এদের উদ্দেশ্য নতুন নতুন গাছ চেনানো, তাদের সম্পর্কে জানানো। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো গ্রুপ নিয়ে এ লেখাটি।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
10 May, 2023, 05:45 pm
Last modified: 12 May, 2023, 02:12 pm
সুন্দরী ফুল, ছবিটি তুলেছেন অপু নজরুল

জাপানিজ একটি প্রাচীন পদ্ধতির নাম 'শিনরিন ইউকু'। যার অর্থ, মনের গোসল। ফেসবুকে একজনের পোস্টে প্রথম জেনেছিলাম এই মনের গোসলের কথা। মনের গোসল মানে মনের এমন একটা রিফ্রেশমেন্ট যা যাবতীয় মানসিক চাপ, ক্লান্তি, মন খারাপ এসবকে কমিয়ে দেয়। যেভাবে পানি ও সাবান-শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করলে শরীরের ঘাম, ময়লা, ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। জাপানিদের বিশ্বাস, প্রকৃতির কাছে বসে সেভাবে মনের গোসল নেওয়া হয়ে যায়। তাই জাপানি অনেক চিকিৎসকই রোগীর 'মেন্টাল রিফ্রেশমেন্ট' এর জন্য শিনরিন ইউকু প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

আমাদের দেশে বরং উলটো। যান্ত্রিক ব্যস্ততার ফাঁকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য সময় করে শপিং বা রেস্টুরেন্টে যাওয়া হলেও, গাছগাছড়ার কাছাকাছি আর যাওয়া হয় না। এমনকি রিফ্রেশমেন্টের জন্য বিভিন্ন ট্যুরে যাওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু আক্ষরিক অর্থে গাছ-গাছালির কাছে যাওয়া বলতে যা বোঝায় তা আর হয়ে ওঠে না। হয়তো গাছের প্রতি আমাদের আগ্রহ এবং ভালোবাসা তেমন নেই। অন্তত যেভাবে আমরা গাছের পাতা, ফুল ছিঁড়ি তাতেই তা স্পষ্ট। তাই বলে কি গাছপ্রেমী নেই আমাদের মাঝে? 

অবশ্যই আছে। যাদের ছোটোবেলা কেটেছে গাছের সংস্পর্শেই, তারা ঠিকই সুযোগ পেলে চলে যান গাছেদের কাছে। সেটা হোক কোনো অভয়ারণ্যে, হোক বাড়ির ছোট্ট উঠান বা ছাদের বাগানে। টবের কোণে পড়ে থাকা কোনো তৃণ, আগাছার ফুল দেখলেও তাদের মনে বয়ে যায় খুশির দোল। সেই আনন্দের মুহুর্তটি হয়তো কেউ কেউ ছবি তুলে শেয়ারও করে নেন ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে। সেসব বন্ধুরাও আবার নিজেদের বাগানের ছবি তুলে পাঠায়। আবার, যাদের খুব আগ্রহ তারা গিয়ে যুক্ত হোন ফেসবুকের বিভিন্ন গাছভিত্তিক গ্রুপে। গাছগাছালি নিয়ে ফেসবুকে আজ অনেকগুলো গ্রুপও কাজ করছে। যাদের উদ্দেশ্য নতুন নতুন গাছ চেনানো, তাদের সম্পর্কে জানানো। এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো গ্রুপ নিয়ে আজকের লেখাটি।

গাছ নিয়ে প্রথম ফেসবুক গ্রুপ

আমাদের চারপাশের গাছপালা, গুল্মলতা, বিরুৎ এতকিছু আছে, অথচ গুটিকয়েক গাছ ছাড়া বাকিগুলোকে আমরা চিনিইনা। চেনার চেষ্টাও বোধ হয় করিনা। ফলে রাস্তার ধারে, মাঠেঘাটে কত গাছগাছালি আমাদের চোখের সামনে থেকেও চোখের অগোচরে রয়ে যায়। কত গাছ আমরা না চেনার কারণে অনায়াসে বিলুপ্তির তালিকায় চলে যাচ্ছে। আবার বাগান করার ক্ষেত্রেও ফলমূল আসবে বা বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন হবে এমন গাছপালাই লাগানো হয়। আর এসবের সঙ্গে যেসব আগাছা জন্মে গাছের যত্নের নামে সেগুলোকেও ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু এতো আসলে প্রকৃতির জন্য হুমকি!

অনেকদিন ধরেই মনে মনে এই চিন্তাগুলো তাড়িয়ে বেড়াতো বেণুবর্ণা অধিকারীকে। জন্ম থেকেই তো গাছের সঙ্গে বেড়ে ওঠা তার। বিশেষত ছোটোবেলাটা পাহাড়ে পাহাড়ে কেটেছে বলে পরিচিত উদ্ভিদের বাইরেও অনেক তৃণ, লতা, বুনোফুল, অপরিচিত ও দুর্লভ গাছের সঙ্গে তার সখ্যতা হয়েছিল। এখনো এই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা গাছগুলো নিয়েই তার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। তাই কোথাও কোনো গাছ পড়ে থাকতে দেখলেই, (যা হয়তো অন্যদের চোখে পড়বে না) তার ইচ্ছে হয় গাছটাকে একটু হাতে ছুঁয়ে দেখতে, ইচ্ছে হয় গাছের নামটা একটু জানতে।

সেই ইচ্ছে থেকেই তিনি নিয়মিত যেতেন বিভিন্ন উদ্যানে, বিভিন্ন বাগানে। উদ্ভিদপ্রেমী বন্ধুদের নিয়েই ঘুরে আসতেন। গাছ নিয়ে আলোচনা, বিভিন্ন তর্ক, গাছ চিহ্নিতকরণ এসব চলতো। একসময় মনে হলো, বৃক্ষপ্রেমী তো তার এই গুটিকয়েক বন্ধুই নয়। অনেকেই আছেন যারা তাদের মতো সবুজকে ভালোবাসেন। হয়তো সময়ের অভাবে, সুযোগের অভাবে গাছগুলোর কাছে যেতে পারেন না। তাদের সবার কথা মাথায় রেখেই ২০০৯ সালে ফেসবুকে খুলে ফেললেন একটি সবুজপ্রেমী গ্রুপ, নাম দিলেন বৃক্ষকথা। যেখানে যেকোনো গাছ, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের গাছ নিয়ে হবে কথা, আলোচনা, তর্ক।

২০০৯ সাল, তখনো ফেসবুক এদেশের মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছায়নি। কিন্তু দেখা গেল, এ বাংলা তো বটেই, ওপার বাংলা, কলকাতা, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এসব অঞ্চল থেকেও বহু বাঙ্গালি যুক্ত হচ্ছেন বৃক্ষকথায়।

এরপর আস্তে আস্তে সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকলো। 'শ থেকে শুরু করে কয়েকশ, হাজার এবং এখন প্রায় এক লাখের কাছাকাছি সদস্যসংখ্যা তাদের।

গ্রুপের অপর এডমিন হাবিব আরা মেরি গ্রুপটির সঙ্গে আছেন ২০১০ সাল থেকে। তিনি বলেন, 'আমরা বিশাল পরিবার এখন। পরিবারের একজন ব্যথা পেলে যেমন সবাই ছোটাছুটি শুরু করে আসে তার ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলার জন্য,  তেমনি কেউ কিছু জানতে চেয়ে পোস্ট করলে গ্রুপের সদস্যরাও এগিয়ে আসেন সাহায্যের জন্য।'

ছবি বৃক্ষকথার সৌজন্যেপ্রাপ্ত

দুই বাংলার 'বৃক্ষকথা'

সমগ্র উদ্ভিদজাত নিয়েই কথা হয় এখানে। সে বিদেশের উদ্ভিদ হোক বা এদেশের। গ্রপের এই বিশাল সদস্যের ৩০ শতাংশই যুক্ত হয়েছে ওপার বাংলা থেকে। দু'বাংলা থেকেই নিয়মিত পোস্ট করে যাচ্ছেন সদস্যরা। আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়েও যদি সেখানে অপরিচিত কোনো ফুল বা লতা চোখে পড়ে, সাথে সাথে গ্রুপে ছবি দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন এর পরিচয়টা কী।

ওপার বাংলার এমনই একজন বৃক্ষপ্রেমী ফাল্গুনী মজুমদার। থাকেন পশ্চিমবঙ্গের শিবপুরে। বছর ছয়েক ধরে আছেন গ্রুপটির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'এখানে গাছকে ভালোবাসতে শেখানো হয়। একটা সামান্য উদ্ভিদও যেন অবহেলিত না হয়, সে বিষয়ে সদস্যের মধ্যে চেতনা গড়ে তোলা হয়। গ্রুপে এমন অনেক অভিজ্ঞ ও গুণী মানুষ আছেন যাদের কাছে শিক্ষা লাভ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়। তাছাড়া, এডমিনরা নিজেরা মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়েন, দূরদুরান্তের বাগানে, পার্কে, জঙ্গলে, জলাশয়ে ঘুরে ঘুরে নতুন নতুন গাছের ছবি সংগ্রহ করেন, বন্ধুদের সেই সম্পর্কে অবহিত করেন। এটা গ্রুপের একটা মূল্যবান দিক।'

ফাল্গুনীর ইচ্ছে কোনোদিন বাংলাদেশে এলে বৃক্ষকথার বন্ধুদের সঙ্গে গাছ দেখতে বেরিয়ে পড়বেন।

'ওদেশে আমার অনেক বন্ধু আছেন। যাদের সাথে পরিচয় বৃক্ষকথা দিয়েই। কখনো গেলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে গাছ দেখতে বেরিয়ে পড়বো। এই ক'দিন আগেই ঢাকা থেকে এক বন্ধু আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। ওকে নিয়ে শিবপুরের বিখ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেন বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি পড়াশুনায় যেমন উজ্জ্বল, তেমনি আগ্রহী গাছপালায়,' যোগ করেন ফাল্গুনী মজুমদার।

অর্থাৎ, গ্রুপের সদস্যদের মাঝে আন্তরিকতা আর বন্ধুত্বের জায়গাটিও যে বেশ পোক্ত সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই গ্রুপে কাউকে ছোট করা হয়না। যত সামান্যই হোক তার উদ্ভিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা। সদস্য এবং এডমিনরা প্রত্যেকেই এগিয়ে আসেন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। গ্রুপের এডমিন ও মডারেটর হিসেবে আছেন ৯ জন।

যদি কোনো গাছের নাম খুঁজে না-ও পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে নিজস্ব এডমিন প্যানেলদের নিয়ে বা গ্রুপের যেসব বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের নিয়ে চ্যাটরুমে আলোচনা, গবেষণা করে তারা সদস্যসের উত্তর দিয়ে থাকেন। গ্রুপটিতে মোট সদস্যসংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজারের উপরে। এত বিশাল সদস্য হলেও, গ্রুপের উদ্দেশ্য এবং কাজে কোনো এদিক-ওদিক হতে দেন না গ্রুপের এডমিনরা।

দলবেঁধে বৃক্ষসফর! ছবি সংগৃহীত

গাছের গল্প বলে বৃক্ষকথা

বৃক্ষকথার পোস্টগুলো পড়ে পূর্ণেন্দু পত্রীর পঙ্ক্তিগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।'তোমাকে না কিসের গল্প বলবো বলেছিলাম। গাছের না মানুষের?'

হুম, শুধু পরিচয়ই না, বৃক্ষকথা যেন গাছেরই গল্প বলে। গ্রুপের সদস্যদের পোস্টগুলো দেখলে মনে হবে, গাছ নিয়ে বিভিন্ন গল্প লিখছে তারা। মেরি বলেন, 'এপার-ওপার বাংলার অসংখ্য জ্ঞানীগুণীরা আমাদের সাথে যুক্ত এখানে। তারা খুব দুর্দান্ত লেখেন। সামান্য একটা ফুলের নাম জানার জন্যও কত যে সুন্দর করে লেখা যায় তা তাদের পোস্টগুলো দেখলে বুঝি। গ্রুপের এই সদস্যরা গ্রুপের মধ্যে যেন এক কাব্যরস, সাহিত্যরস এনে দেয়।'

বৃক্ষ নিয়ে কাজ করা প্রথম ফেসবুক গ্রুপ এই 'বৃক্ষকথা'। তাই এর সদস্যসংখ্যাও বেশি, পরিচিতির পরিসরও বেশি। এই গ্রুপের পরে গাছপালা নিয়ে আরো অনেক গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুকে। যা ইতিবাচক হিসেবে মনে করেন তারা। অন্তত, গাছ নিয়ে চর্চা হচ্ছে, মানুষ আগ্রহ পাচ্ছে!

গাছের উইকিপিডিয়া হয়ে কাজ করবে

বৃক্ষকথার সদস্যরা শুধু ফেসবুকেই সজাগ নয়। তারা নিয়মিত গাছের খোঁজে বের হোন। সেই শুরু থেকে শত ব্যস্ততার মাঝেও এই তরুসখা দলটি চলে যায় মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, জাতীয় উদ্যান, ময়মনসিংহ কাদিগড় উদ্যানে। প্রতি ঋতুতে এসব জায়গায় গিয়ে গাছগুলোকে তারা দেখে আসেন। যেন, নিজেদের সন্তানকে রেখে এসেছেন সেখানে!

একবারের স্মৃতি বললেন বেণু।

'একবার রমনায় অরুণোদয়ের গেটের সামনে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ফুটপাত থেকে নেমে পড়েছিলাম রাস্তায়। ভুলেই গিয়েছিলাম এ পথ দিয়ে গাড়ি যেতে পারে। পরে একটা সিএনজি ট্রাফিক জ্যাম থেকে বাঁচার জন্য এই সরু রাস্তায় ঢুকে আরেকটা গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। পায়ের আঙ্গুলে মারাত্মক আঘাত পেয়ে সাময়িক অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। হাতের ক্যামেরা ছিটকে পড়েছিল। জ্ঞান ফিরে দেখি আমাকে ধরাধরি করে বসিয়েছে।'

তাই বলে থেমে যাননি বেণুবর্ণা অধিকারী। নিয়মিত তারা এ বাগান, ও বাগান, কারও নিজস্ব বাগান থাকলে সেখানেও ঘুরছেন ফাঁক পেলেই। আর বাড়ি ফিরে নিজেদের মতো গবেষণাও করে চলছেন।

কোনো দায়িত্ব বা বাধ্যবাধকতা থেকে নয়, কেবলই নিজেদের অবাধ আগ্রহ আর ভালোবাসা থেকে আজ ১৪ বছর ধরে তারা গাছের পেছনে ছুটছেন বেণু। তার বিশ্বাস, তার এই ছুটে চলা কখনো থেমে গেলেও, গ্রুপের পথচলা কখনো থামবেনা। বেণু আর মেরির অনেক আহ্লাদ আর যত্নের একটি জায়গা বৃক্ষকথা। ইচ্ছে আছে, স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যানে গাছ পরিদর্শনে যাওয়ার। যেন ছোট থেকেই গাছের সঙ্গে তাদের এক ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের স্কুলে, মিরপুর বিসিআইসি কলেজে, টাঙ্গাইলের অর্জুনা গ্রামের একটা কলেজসহ এ পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় তারা বৃক্ষরোপণেও অংশ নিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন একদিন হয়তো এই বৃক্ষকথা নিজেই একটি উইকিপিডিয়ার মতো হয়ে যাবে। যেখানে বিভিন্ন গাছ লিখে সার্চ দিলেই চলে আসবে, গাছের ছবি, নাম, পরিচয়, গুণাগুণ। আর তা থেকে উপকৃত হবে বহু মানুষ।

তরুসখা তাপস বর্দ্ধন ও বেণুবর্ণা অধিকারী; ছবিগুলো তাদের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া

তাপস বর্দ্ধনের বাঙলার গাছ-গাছড়া

তরুসখা তাপস বর্দ্ধনের পরিচালনায় 'বাঙলার গাছ-গাছড়া' গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। নিজ বাড়ির আঙ্গিনা ও চারপাশে ছিল ভেষজ উদ্ভিদসহ নানা উদ্ভিদের সমাহার। গাছপালার প্রাচুর্য বিচারে একে বনজঙ্গল বলা যেতে পারে। ছোটোবেলা কেটেছে তার এই বনজঙ্গল আর বাগানে ঘুরে বেড়িয়ে। বাবার পাশে থেকে প্রায় সব উদ্ভিদের সাথে পরিচয় হয়েছিল তার। লতাপাতা, বৃক্ষ, গুল্ম, জলজ, বনজ উদ্ভিদের কোন মৌসুমে ফুল হয়, ফল হয়- সবই তিনি জানেন। কেটে গেলে, ব্যথা হলে কখন কোন উদ্ভিদ কাজে আসে তা-ও জানেন তাপস বর্দ্ধন। বন্ধুরা তাকে বলেন, 'আধুনিক কবিরাজ।'

উদ্ভিদের গুণাগুণ জানলেও তখন এদের বৈজ্ঞানিক নাম জানা ছিল না। ধীরে ধীরে আগ্রহ তৈরি হয়। চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। বর্তমানে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশার সাথে উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই ঠিকই, তবে এতে উদ্ভিদজগতের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি কখনো। অনেকটা মনের আকাঙ্ক্ষা মেটাতেই ফেসবুকে গ্রুপটি সৃষ্টি করেন তাপস। নাম দেওয়া হলো 'বাঙলার গাছ-গাছড়া'। অনেকে আবার নামের বানান দেখে মনে করে, বাঙ্গালী বা দু বাংলার গাছ গাছালি নিয়েই হয়তো কাজ করে গ্রুপটি। কিন্তু তাপস কাজ করছেন শুধু বাংলাদেশের উদ্ভিদ নিয়েই।

জানা-অজানা বুনো উদ্ভিদকে সকলের সামনে তুলে ধরা, তাদের সাথে পরিচিত হওয়া- এ উদ্দেশ্য থেকেই মূলত এ গ্রুপের জন্ম। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে সদস্য যুক্ত হচ্ছেন এখানে। ধীরে ধীরে গ্রুপটির পরিসরও বিস্তৃত হচ্ছে। তারা প্রত্যেকেই তাদের অভিজ্ঞতা ও উদ্ভিদের ছবি পোস্ট করেন। নাম-পরিচয় জানান বা জেনে নেন। এই জানা ও জানানোর প্রয়াস থেকে বাঙলার গাছ-গাছড়া আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলছে।

গ্রুপের আরও একজন এডমিন মায়া মাহজাবীন। এ গ্রুপের সঙ্গে তার পথচলা ২০১৬ সাল থেকে। বর্তমানে প্রবাসে বসবাস করলেও বাংলাদেশের প্রকৃতি, উদ্ভিদরাজি তাকে আন্দোলিত করে। শৈশব থেকেই তার এই প্রকৃতিপ্রেম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রায়ই বন্ধুদের সাথে ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান, নদীতীরে ঘুরতে যেতেন। বিভিন্ন জেলায় প্রকৃতি উপভোগ করতে বেড়াতে যেতেন। হাতের ক্যামেরা দিয়ে ছবিও তুলে রাখতেন, এরপর তাদের পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করতেন, রাখতেন বিভিন্ন নোট।

বাংলাদেশের সকল উদ্ভিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা (বাংলা নামসহ) তৈরি

বাঙলার গাছ-গাছড়া গ্রুপের মুখবন্ধ, ভূমিকা বা মুখকথা পড়েই মায়া মাহজাবীন গ্রুপটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। মায়া বলেন, 'গ্রুপের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পেছনে গ্রুপের সদস্যগণের অবদান অপরিসীম। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের পোস্ট থেকে আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজছি, জানছি, চিনছি।'

অন্যান্য গ্রুপে যেখানে অনেক সদস্য, লাইক কমেন্টের মেলা। এখানে এই নয় বছরে সদস্যসংখ্যা কেবল বিশ হাজারের কাছাকাছি।

বাঙলার গাছ গাছড়ার সঙ্গে অন্যদের তফাৎ এখানেই। গ্রুপের নিয়মের ব্যাপারে তারা বেশ কড়া। নিয়মের বাইরে কেউ কিছু করলে তাকে রাখা হয় না গ্রুপে। এ নিয়ে বলেন গ্রুপের অন্যতম সদস্য মারুফ। গাছের প্রতি আগ্রহ ছোটোবেলা থেকেই। গাছ-গাছড়ার সঙ্গে যুক্ত হোন ২০১৯ সালে। শুধু গাছ চেনাই নয়, গাছের ছবি দেখতে কিংবা চলতি পথে কিছু বুনোফল পেলে, ভালো লাগা কাজ করে মারুফের। তিনি বলেন, 'বাঙলার গাছ-গাছড়া সম্ভবত একমাত্র গ্রুপ (আমার দেখা মতে) যারা দৈর্ঘ্য নয় প্রস্থে বিশ্বাসী। মানে, সদস্য বাড়ানো বাদ দিয়ে তারা 'উদ্ভিদ শনাক্তকরণে' নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্ররা নয়, আমার দেখা অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকও এদের কাছ থেকে শিখছেন...'

তবে এসব শিক্ষার্থীরা আসেন তাদের দরকারে। এরপর কাজ শেষ হলে চলেও যান। গ্রুপের একদম কর্মঠ সদস্য বলতে লেখাপড়া শেষ করা ৩০-৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরাই।

বাঙলার গাছ-গাছড়া ফেসবুক গ্রুপের কভার ফটো

এ ব্যাপারে তাপস জানান, 'প্রায়ই সময় ইনবক্সে মেসেজ আসে অনেক স্টুডেন্টের বিভিন্ন গাছের নাম, পরিচয়ের ব্যাপারে। আমি তখন তাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করি বা বইয়ের নাম জানতে চাইলে সাজেশন দিয়ে থাকি।'

এমনকি ঔষধি গাছের নাম জানার জন্যও প্রায়ই মেসেজ আসে তার ইনবক্সে। কোন গাছের কী গুণ, কোথায় কোন গাছটি পাওয়া যায় এ বিষয়ে জ্ঞান বিস্তৃত হওয়ায় অনেককেই তথ্য দিয়ে উপকার করে থাকেন তাপস বর্দ্ধন।

তবে এখানেই তাদের উদ্দেশ্যে শেষ নয়। তাদের স্বপ্ন, একদিন হয়তো তারা বাংলাদেশের উদ্ভিদের ছবি ও নামসহ (বাংলা নাম, স্থানীয় নাম) পূর্ণ পরিচয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করতে পারবেন। যদিও এটি একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এ কাজ করে যেতে চান তারা।

বই প্রকাশের ইচ্ছে তাদের

আর এই কাজটি মূলত করে থাকেন মায়া মাহজাবীনই। কিন্তু এ তো বেশ সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই বিদেশে বসে নিজে সব কাজ সেরে কিছুটা সময় রাখেন গাছ নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য। কোনো গাছের আভিধানিক নাম পাওয়া না গেলে, স্থানীয় নামটা খুঁজতে চেষ্টা করেন। যদি সে নাম অনেকগুলো অঞ্চলে একই হয়, তখন ঐ নামটিই সম্ভাব্য প্রচলিত নাম হিসেবে ধরে নেন। সেই সাথে সংস্কৃত নামও খুঁজে দেখেন। কেননা সে নামগুলো হয় বিশেষ অর্থবোধক। এভাবেই একটি সম্ভাব্য নাম জুড়ে দেন। পাশে সম্ভাব্য শব্দটিও লিখে দেন।

এ পর্যন্ত যে কয়টি উদ্ভিদ তারা শনাক্ত করেছেন কিংবা প্রচলিত নাম বের করেছেন তা ডকুমেন্ট আকারেও সব সংগ্রহ করছেন মায়া। গ্রুপটি মূলত এখন তিনিই দেখছেন। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে তাপস সময় করে উঠতে পারছেন না। তবে, মাঠঘাটে ছুটে বেড়ানোর কাজটি তিনি করে থাকেন। ইতোমধ্যে তিনি মধুপুরের উদ্ভিদের পাঁচ পর্বের পিডিএফ তালিকা প্রকাশ করেছেন গ্রুপে। ইচ্ছে আছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করার। ভবিষ্যতে সুযোগ ও সময় হলে এই বাংলাদেশের উদ্ভিদরাজি নিয়ে বই প্রকাশের স্বপ্নও দেখছেন তারা…।                          

Related Topics

টপ নিউজ

বৃক্ষ / গাছ / বৃক্ষপেমী / বৃক্ষকথা / বাঙলার গাছ-গাছড়া

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘আমি ভাবছিলাম সিঙ্গাপুর যাব, যেতে পারি?’: হাসিনা-তাপসের আরও একটি ‘ফোনালাপ’ ভাইরাল
  • ‘ওভারস্টে’ ঠেকাতে দুই দেশের নাগরিকদের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ হাজার ডলার জামানতের শর্ত
  • জুলাই ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা ইতিহাস এবং আওয়ামী লীগের বর্ণনা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট: ডেভিড বার্গম্যান
  • মাইক্রোচালকের ‘ঘুমে’ স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৭ সদস্য হারালেন ওমান প্রবাসী বাহার
  • মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে আহত ১১
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জুলাই প্রদর্শনীতে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি, শিক্ষার্থীদের আপত্তিতে সরালো প্রশাসন

Related News

  • ধানমন্ডিতে সড়কে গাছ পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেল গাড়ি, গুরুতর আহত চালক
  • প্রকৃতির জন্য উৎসর্গ করেছেন জীবন, মাহমুদুল পেলেন জাতীয় পরিবেশ পদক
  • ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • যেভাবে হুমকির মুখে থাকা কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী চিনার গাছ সংরক্ষণের লড়াই চলছে
  • হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ‘ছোট বড় মিলে পান্থকুঞ্জে আঁকবো ছবি’ কর্মসূচি

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘আমি ভাবছিলাম সিঙ্গাপুর যাব, যেতে পারি?’: হাসিনা-তাপসের আরও একটি ‘ফোনালাপ’ ভাইরাল

2
আন্তর্জাতিক

‘ওভারস্টে’ ঠেকাতে দুই দেশের নাগরিকদের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ হাজার ডলার জামানতের শর্ত

3
মতামত

জুলাই ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা ইতিহাস এবং আওয়ামী লীগের বর্ণনা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট: ডেভিড বার্গম্যান

4
বাংলাদেশ

মাইক্রোচালকের ‘ঘুমে’ স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৭ সদস্য হারালেন ওমান প্রবাসী বাহার

5
বাংলাদেশ

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে আহত ১১

6
বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জুলাই প্রদর্শনীতে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি, শিক্ষার্থীদের আপত্তিতে সরালো প্রশাসন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net