Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
December 30, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, DECEMBER 30, 2025
মানুষের আঁতুড়ঘর: যে গুহা থেকে শুরু!

ফিচার

তারেক অণু
25 February, 2023, 04:05 pm
Last modified: 25 February, 2023, 04:17 pm

Related News

  • স্পেনের গুহায় শকুনের বাসা থেকে মিলল ৬৫০ বছর আগের জুতাসহ অজস্র নিদর্শন 
  • নিজ দেশে ফিরলেন ভারতের গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া রুশ মা ও দুই সন্তান
  • যেভাবে ১০ লক্ষ বছরের পুরোনো খুলি মানব বিবর্তনের ধারণা বদলে দিল
  • ৯০ লাখ বছর আগে এক ধরনের বুনো টমেটো থেকেই আলুর জন্ম: গবেষণা
  • যেভাবে বিবর্তনের ফলে বিলুপ্ত হওয়া থেকে ফিরে এল উড়তে অক্ষম এক পাখি

মানুষের আঁতুড়ঘর: যে গুহা থেকে শুরু!

এটা আজ প্রমাণিত যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার ঊষর প্রান্তর থেকে। তাই, দুই যুগ আগেও মানুষের উৎপত্তি এশিয়া না আফ্রিকা তাই নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকলেও আজ সবাইই প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে মতৈক্যে পৌঁছেছেন আফ্রিকাই আমাদের সবার আদি মাতৃভূমি। এর আগে এশিয়ার চীনে ও জাভায় যে প্রাচীন মানবজীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তা আফ্রিকা থেকেই কোন এক পর্যায়ে রওনা দেওয়া হোমো ইরেকটাসদের বন্ধুর পরিবেশে বিলুপ্ত হয়ে যাবার করুণ ইতিহাস। আর হোমো স্যাপিয়েন্সদের বসবাস মূলত ছিল পূর্ব আফ্রিকা, বর্তমান তাঞ্জানিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়ায়।
তারেক অণু
25 February, 2023, 04:05 pm
Last modified: 25 February, 2023, 04:17 pm
ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

নিকষ কালো আদিম গুহা, পরতে পরতে রহস্য, ইতিহাসের সুলুক সন্ধান, কোন পাথরের স্তরের নিচে কী আছে জানার কোন উপায় নেই। সাঁঝের আঁধারে ডানা মেলে গুহার আশ্রয় থেকে বের হয় বাদুড়ের ঝাঁক, প্রবেশের বিশালাকার মূল প্রবেশপথটি দেখলে মনে হয় ডাইনোসরদের আস্তানা। হয়ত হবেও বা! গুহাটি যে কত মিলিয়ন বছর প্রাচীন তাও জানা নেই।

এখানে মিলেছে তলোয়ার দেঁতো বাঘ, বিশালাকৃতির স্থলচর প্রাণী, নানা জাতের সরীসৃপ বিশেষ করে ডাইনোসরদের জীবাশ্ম। জীবাশ্মের রাজ্যে এই গুহা এক অনন্য প্রাকৃতিক সংগ্রহশালা এবং এখানেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে জীবাশ্মে পরিণত হওয়া আমাদের পূর্ব-পুরুষ হোমিনিডদের হাড়-গোড়, দেহাবশেষ। হয়তোবা মানব সভ্যতার হাঁটি হাঁটি পায়ে চলা শুরু হয়েছিল এখান থেকেই! স্টের্কফনটেইন নামের এ গুহার অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার এককালের স্বর্ণশহর খ্যাত জোহান্সবার্গ থেকে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বে অবস্থিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব সম্পদের মর্যাদা পাওয়া 'ক্রেডল অফ হিউম্যান কাইন্ড' বা সোজা বাংলায় যাকে বলা হয় মানব জাতির আঁতুড়ঘর! এখানে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়ানো বেশ কটি গভীর গুহা, পরিখা, সমতল ভূমি- যার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া গেছে অমূল্য জীবাশ্ম সম্ভার, খোঁড়াখুঁড়ি চলছে আজো প্রতিনিয়ত।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

এই এলাকার চুনাপাথরের খনিগুলোতে নানা প্রাণীর জীবাশ্মে পরিণত হওয়া দেহাবশেষের সন্ধান মিলতে থাকে ১৮৯০ থেকে। কিন্তু বিশ্বের সত্যানুসন্ধানীদের মনে চিরতরে স্থান করে নেয় স্টের্কফনটেইন গুহা ১৯৩৫ সালে, যখন এখানে প্রথম হোমিনিড (মানুষ ও অন্যান্য এপের মধ্যবর্তী পর্যায়, 'নরবানর' বলা যেতে পারে) জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয় অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাস আফ্রিকানোস। কয়েক মিলিয়ন বছরের পুরনো হলেও খুলি দেখে বোঝা যায় আধুনিক মানুষের কত কাছাকাছি ছিল তারা। বুদ্ধিমান মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় বড় করোটি, দুই পায়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা ইত্যাদি ছিল প্রায় আমাদের ধাচেরই, আর এর পরেই মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের পুরনো চুনাপাথরের নিচের স্তরগুলোতে ঘটতে থাকে একের পর এক চমক জাগানো আবিষ্কার।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

চারপাশে ছড়ানো সমতল সোনালী ঘাসের বন, আফ্রিকার চিরাচরিত সাভান্নার মত। দূরে দূরে রূক্ষ ন্যাড়া পাহাড় আকাশ ছোবার ব্যর্থ চেষ্টায় মত্ত, বড় সবুজ ডালপালা মেলা মহীরুহ নেই বললেই চলে। এমন পোড়া জায়গায় কেন আস্তানা গেড়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষেরা? উত্তর দিল দক্ষিণ আফ্রিকারই আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্স, আমাদের গাইড ষ্টেফান।

জানালো, অনেক মিলিয়ন বছর আগে এটা ছিল ভূমি আর সমুদ্রের মিলনস্থান। এর প্রমাণ আমরা গুহার ভেতর পাব। আর সমুদ্র সরতে সরতে চলে গেছে এখন বহু হাজার মাইল দূরে। হয়ত তখন এখানে ছিল শিকারের সুব্যবস্থা, হয়তোবা জায়গাটি ছিল বন্যপ্রাণীর কবল থেকে অধিকতর নিরাপদ। এমন চোস্ত বর্ণনায় আমাদের মানসচক্ষে সেই না-দেখা প্রাক-ইতিহাস ছবির মত ফুটিয়ে তোলে গাইড।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

বিশাল গুহা মুখের সামনে সে মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে বলে, এখন চওড়া পথ মনে হলেও ভিতরে তা ক্রমশই সরু হয়ে আসবে। কয়েক জায়গায় নির্ঘাত হামাগুড়ি দিতে হতে পারে, এতটাই সরু। কাজেই পিঠের বা পায়ের অসুখ থাকলে কেউ যেন এখনই জানিয়ে রাখে। শুরু হলো গুহার অভ্যন্তরে আমাদের যাত্রা। সবমিলিয়ে পঞ্চাশের উপরে দর্শনার্থী হবে। গ্রহের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছে আদিপুরুষের ঠিকুজি জানার অদম্য আশায়, মনের গহনে আশা দেখা যাক পূর্বপুরুষের আবাস।

বিশাল প্রবেশপথ থেকে পরিবর্তীতে তৈরি সিঁড়ি দিয়ে নামার শুরু, খানিক পরেই ঘুটঘুটে আঁধারের জয়জয়কার। দলের একমাত্র বৈদ্যুতিক বাতিটি গাইডের দখলে। সে দেখাতে লাগল চুনা পাথরের স্তর, ফোঁটা ফোঁটা চুনের পানি পড়ে হাজার বা লক্ষ বছরে তৈরি হওয়া ষ্ট্যালাকটাইট আর ষ্ট্যালাগমাইট, কোথাও ঘুপচি মেরে নিদ্রারত বাদুড়। এক পর্যায়ে প্রকৃতির হাতে তৈরি এক বিশাল হলঘরে দাঁড়ালাম সবাই, সেখানেই জোরালো টর্চের আলো দিয়ে গাইড দেখাল আদি সমুদ্রের ঢেউ আর তরঙ্গের তাণ্ডব পাথূরে দেয়ালেও অমর অক্ষয় হয়ে টিকে আছে এত মিলিয়ন বছর পরে।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রথমে তো নজরেই আসে না, আঁধারে চোখ সয়ে এলে আবছা ভাবে বোঝা যায় ধূসর দেয়ালে কেমন যেন অস্পষ্ট স্মৃতিচিহ্ন। বোঝা যায় ক্রমশ নিচের দিকে নেমেছে সেই আধোছায়া মেশানো দাগ। ষ্টেফান আফ্রিকানো ইংরেজিতে বয়ান করে যায়, ২০ মিলিয়ন বছর আগে সমুদ্র এতটাই কাছে ছিল। তারপর বিভিন্ন ভৌগোলিক –প্রাকৃতিক কারণে লোনাপানির স্তর নামতে শুরু করে, লক্ষ লক্ষ বছরে তা সরে যায় বহু যোজন মাইল দূরে। হয়ত একারণেই আদিমানুষের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ে এককালের নিরাপদ আশ্রয়টি!

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

হলঘরটির পরপরই শুরু হলো শত শত ফুট গভীরে নামার পালা, শুরু হয় দুপাশের দেয়ালের সরু হয়ে আসা। এরমধ্যে সেই পাথরের সুড়ঙ্গেও শুরু হয়েছে চড়াই-উৎরাই, এক পর্যায়ে শুধু মাথা ঝুকিয়ে হেঁটে আর ফল হলো না। আক্ষরিক অর্থেই হামাগুড়ি দেওয়া শুরু হল আমাদের দলের। মনে পড়ে জুল ভার্ণের অমর উপন্যাস জার্নি টু দ্য সেন্টার অফ দ্য আর্থ-এর কথা। আমরা কি এই নীল গ্রহের কেন্দ্রের দিকেই এগোচ্ছি এই আধো আলো-আধো ছায়ায়!

যাক, মিনিট কয়েক পরেই সবার মাঝে শান্তির সুবাতাস বইয়ে এক বড়সড় ফাঁকা জায়গায় এসে পড়লাম সবাই। আহ্! নিজের পায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোতে যে কী শান্তি! আর এই দুই পায়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার প্রবণতা শুরুই করেছিল হোমিনিডরা (কেন আমরা ঠিক জানি না, হয়ত খাদ্য-পানীয় বহনের জন্য, পাহারা দেবার সুবিধার্থে, দ্রুত চলাচলের জন্য)। বিস্ময়ের পর বিস্ময়, আঁধার গুহার একপাশে দেখি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জল, টর্চের আবছা আলোতে চকচক করছে তার পারদপৃষ্ঠ।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

জানা গেল এই পাতাল হ্রদের গভীরতা প্রায় ১৩৫ ফিট আর নিতান্তই সুমিষ্ট সুপেয় জল। এমনও হতে পারে আদি সাগরের জলই এখানে আটকা পড়ে এত লক্ষ বছরে লবণাক্ততা হারিয়ে পরিণত হয়েছে স্বাদুতে, নিশ্চয়ই এর গভীরে পাওয়া যাবে অমূল্য সব জীবাশ্ম সংগ্রহ। কিন্তু এক দুঃসাহসিক অভিযান চলাকালে এক ডুবুরীর এই পাতাল হ্রদে অকালমৃত্যুর কারণে এর রহস্যময় তলদেশ নিয়ে গবেষণায় খানিকটে ছেদ পড়েছে। কী নিকষ কালো জল, এক কালে ছিল আবার ডাইনোসরদের আড্ডা, এইখানে ডুব দিতে হলে অসম সাহসের কোন বিকল্প নেই।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

এরপর যেখানটায় যাত্রাবিরতি হলো সেখানেই ১৯৯৭ সালে পাওয়া গিয়েছিল অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাস আফ্রিকানোসের এক পরিপূর্ণ কঙ্কাল। সেটি ছিল তেত্রিশ লক্ষ বছরের পুরনো এক শিশুর, যে কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছিল লিটল ফুট। পাশেই এখনো সমানে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, পাওয়া গেছে প্রাগৈতিহাসিক নানা প্রাণীর জীবাশ্মসহ আদি মানুষের সুপ্রাচীন প্রস্তরযুগের হাতিয়ার, যার সমস্ত সংগ্রহই রয়েছে স্থানীয় জাদুঘরে।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

কেমন ছিল সেই গুহাবাসীদের জীবন? খুব একটা আলোকপাত করা যায় না এত সামান্য প্রমাণ থেকে। কিন্তু এর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ছিল যথেষ্ট বুদ্ধিমান আর পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় দক্ষ, হয়ত এই কারণগুলোর জন্যই প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয় এড়িয়ে তারা টিকে গিয়েছিল এই গ্রহতে, গড়েছিল নব ইতিহাসের পত্তন। বেশ খানিকটা সময় ইতিহাস প্রাচুর্যময় গুহার গভীরে থেকে বেরিয়ে এলাম আলোকিত বিশ্বে, পরের গন্তব্য গুহামুখের প্রায় পাশেই অবস্থিত প্রদর্শনী হল ও জাদুঘর।

প্রথমেই আছে আদি সৌরজগত আর পৃথিবীর মডেল। তারপর প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধর্মমতগুলোর সৃষ্টি সম্পর্কিত তত্ত্বকথার সমারোহ এক বিলবোর্ডে। এরপরে শুরু এক চমৎকার মডেলের সাহায্যে কী করে পৃথিবীর উদ্ভব, পানির আবির্ভাব, স্থল ভাগের জন্ম, প্যানজিয়া নামক মহাপ্রাচীন মহাদেশের বিভিন্নভাবে ভাগ হয়ে গোটা গ্রহে ছড়িয়ে পরে সাত মহাদেশ ও পাঁচ মহাসাগরের সৃষ্টি, চারশ' কোটি বছর আগে আদি সাগরে এনজাইমের উদ্ভব, এক পর্যায়ে অ্যামাইনো অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় অথবা উল্কা পিণ্ডের বয়ে আনা কোন অজানা মৌলের সুবাদে জীবনের আগমন আমাদের এই নীল গ্রহে।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

পরবর্তী গ্যালারিগুলোতে আদি জীবনের নানা স্মারক, তিনশ কোটি বছর আগের জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া অণুজীব, আরো অনেক পরে ভূ-ভাগে আবির্ভূত হওয়া গাছের প্রস্তরীভূত পাতা, প্রাচীন মাছ, নানা ধরনের উভচর প্রাণী, কোনটার মাথা কোনটার পিছনের সামান্য অংশ উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় প্যালিওন্টোলজিস্টরা ক্ষুদে এক টুকরো দাঁত বা হাড়ের ফসিল পেলেই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে একের পর এক নিরলস গবেষণার মাধ্যমে ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকা সত্যটি খুঁড়ে নিয়ে আসতে পারেন জ্ঞানের আলোয়।

জাদুঘরের পরের অংশে কোটি কোটি বছর দোর্দন্ড প্রতাপে টিকে থাকা ডাইনোসরদের রাজত্ব। ১৬০ মিলিয়ন বছর যারা এই গ্রহের জলে- স্থলে- অন্তরীক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল একচ্ছত্রভাবে, তাদের শিলীভূত দেহাবশেষের স্থান আজ সারা বিশ্বের প্রদর্শনী হলগুলোতে। পরিবেশগত কারণে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পরপরই আবির্ভাব ঘটে তাদেরই বংশধর পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের।

এক ধরনের বৃক্ষচারী ক্ষুদে স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে মিলিয়ন বছরের বিবর্তনে আপন আপন পরিবেশে বিকাশ ঘটে হাজারো প্রাণীর। এর এক অংশ থেকে আবার উদ্ভব ঘটে উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণীর, যে দলে ছিল লিমার, নানা প্রজাতির বানর এবং এদের শেষ দলটিতে আসে এপ-রা। এপ হচ্ছে লেজবিহীন, উন্নত মস্তিষ্ক বিশিষ্ট প্রাইমেট, যাদের সবাই প্রয়োজনবিধায় অল্পক্ষণের জন্য হলেও দুপায়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে। বর্তমান জীবজগতে ৬ ধরনের এপ টিকে আছে- উল্লুক, ওরাং ওটাং, গরিলা, শিম্পাঞ্জী, বোনোবো এবং মানুষ।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

পরের কক্ষটি ছিল এপদের আদিপুরুষদের নিয়ে আর এর মধ্যমণি হয়ে ছিল স্টের্কফনটেইন গুহায় পাওয়া ৩৪ থেকে ৩৭ লক্ষ বছরের পুরনো সেই হোমিনিড জীবাশ্ম যার নাম মিসেস প্লেস (Mrs Ples), যিনি কিনা তাঞ্জানিয়ায় পাওয়া সেই বিখ্যাত ফসিল লুসি'র চেয়েও ৫ লাখ বছর প্রাচীন! সমগ্র কঙ্কালটির বেশ অনেকখানিই উদ্ধার করা গেছে, করোটির কিছু অংশ আর নিচের চোয়ালসহ। তা থেকেই কম্পিউটারে নানা মডেলের সাহায্যে তাদের যে চেহারাখানি আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি তাতে সামান্য কল্পনার মিশেল থাকলেও বলা চলে বাস্তব জীবনের প্রায় নিরানব্বই শতাংশ কাছাকাছি। ২০ থেকে ৪০ লক্ষ বছর আগে অষ্ট্রেলিয়োপিথোকাসরা আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তারা আমাদের অতি দূর সম্পর্কের আত্নার আত্মীয়।

তাদের থেকেই সময়ের সাথে, পরিবেশের তাগিদে ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনে উদ্ভব হয় হোমো হাবিলিস, হোমো ইরেকটাস ও সবার শেষে আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্সদের। কিন্তু এর মাঝে প্রকৃতিতে ঘটেছে আরেক ঘটনা। আমরা যেমন চিড়িয়াখানায় একসাথে নানা প্রজতির বানর, কুমির বা হরিণ দেখতে পাই, তেমনি বিশ্বজুড়ে একই সময়ে ছিল নানা প্রজাতির মানুষের আস্তানা। আজ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে, সাগর সেঁচে আমরা কেবল ৫ প্রজাতির মানুষের কথা জানতে পেরেছি, যার একটি বাস করত বিচ্ছিন্নভাবে ইন্দোনেশিয়ার এক দ্বীপে, বামন মানব গোত্র- হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত হোমো নিয়ান্ডারথাল বা নিয়ান্ডারথাল মানব, রাশিয়ায় পাওয়া ডেনিসোভান মানুষ, সম্প্রতি চীনে পাওয়া লংগী ম্যান বা ড্রাগন মানব এবং আমরা হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সরা।

এর মাঝে প্রায় পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে নিয়ান্ডারথালদের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষরা মুখোমুখি হয় ইউরোপে, যার ফলাফল তাদের জন্য নিয়ে আসে বিলুপ্তি! জেনেটিকভাবে শতকরা নিরানব্বই ভাগেরও বেশী মিল থাকা এই জাতের মানুষদের সাথে নানা লড়াইয়ে লিপ্ত হয় ইউরোপে পদার্পণ করা প্রথম হোমো স্যাপিয়েন্সরা। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ বলে আমাদের পূর্বপুরুষদের পেশীশক্তির প্রয়োগ ও হত্যাকাণ্ডের ফলেই বিলুপ্তির সম্মুখীন হয় তারা। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বর্তমান পৃথিবীতে আমরা যত ধরনের মানুসেরা বসবাস করি- কালো, সাদা, হলুদ, আমাজন বা পাপুয়ার আদিবাসী- সবাই কিন্তু এক জাতি- হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স! এবং আমাদের কোন প্রজাতি নাই।

ছবি- লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত

এটা আজ প্রমাণিত যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল আফ্রিকার ঊষর প্রান্তর থেকে। তাই, দুই যুগ আগেও মানুষের উৎপত্তি এশিয়া না আফ্রিকা তাই নিয়ে তর্কের অবকাশ থাকলেও আজ সবাইই প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে মতৈক্যে পৌঁছেছেন আফ্রিকাই আমাদের সবার আদি মাতৃভূমি। এর আগে এশিয়ার চীনে ও জাভায় যে প্রাচীন মানবজীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তা আফ্রিকা থেকেই কোন এক পর্যায়ে রওনা দেওয়া হোমো ইরেকটাসদের বন্ধুর পরিবেশে বিলুপ্ত হয়ে যাবার করুণ ইতিহাস। আর হোমো স্যাপিয়েন্সদের বসবাস মূলত ছিল পূর্ব আফ্রিকা, বর্তমান তাঞ্জানিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়ায়।

পরবর্তী ঘরগুলোর অন্যতম আকর্ষণ এই এলাকার বিভিন্ন গুহায় পাওয়া প্রস্তরযুগের অস্ত্র। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও কতই না শৈল্পিক দক্ষতায় আর পরম মমতায় গড়া হয়েছিল এইসব জীবন রক্ষাকারী অস্ত্র। প্রায় সবগুলোই পশু শিকারের কাজে এবং শিকার পরবর্তী চামড়া খোলা ও মাংস কাটার কাজে ব্যবহারের জন্য। এইসব অস্ত্র দেখে ধারণা করা হয়, অন্তত দশ লক্ষ বছর আগেও আমাদের পূর্বপুরুষেরা আগুনের ব্যবহার জানত, হয়তোবা কেবল নিরাপত্তা বা উষ্ণতার জন্য বা অস্ত্র গড়ার কাজে। তবে খাবার আগুনে রান্নার প্রক্রিয়া শুরু হয় আরো বেশ পরে। আর সেখানে থেকে মোড় ঘুরে যায় মানব সভ্যতার। ঘটা শুরু করে একের পর এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।

আমাদের পূর্বপুরুষদের চোয়াল ছিল অনেক মোটা। বড় হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত, কাঁচা মাংস ছিড়ে খাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু আগুনে ঝলসানো নরম মাংস খাওয়ার ফলে অসুখ-বিসুখ তো কমলোই , আবার চোয়াল কয়েক প্রজন্ম পরে হয়ে এল অনেক ছোট হয়ে। সেই কারণে ভারসাম্য রক্ষার্থে মানুষের আগের চাপা কপাল হয়ে গেল সামনে দিকে অনেক বড় অর্থাৎ বড় মাথার খুলির অধিকারী হল মানুষ। ফলে মস্তিষ্কের আকার গেল অনেকখানি বেড়ে, বাড়ল বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্র তৈরির ক্ষমতা, অজানাকে জানার ইচ্ছে। অবশেষে এই আফ্রিকা থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ২০০ জনের এক ক্ষুদে দল রওনা দিল বাইরের বিশ্বে সত্তর হাজার বছর আগে, তাদেরই বংশধররা আজ সারা গ্রহের শাসনকর্তা রূপে প্রতিটি জায়গায় বিরাজমান।

স্টের্কফনটেইন গুহা ও তার জাদুঘর কেবল নিছক প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন নয়, এ হলো আমাদের আঁতুড় ঘর, জীবন্ত ইতিহাসের দলিল। এখানে দাঁড়ালে আপনি অনুভব করতে পারবেন আমাদের আদিপুরুষদের ফেলে যাওয়া বিষণ্ণ নিঃশ্বাস, বিপদ সঙ্কুল জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, শিকারি জীবনের প্রতিচ্ছবি, সর্বোপরি লক্ষ লক্ষ বছরে টিকে থাকার লড়াইয়ের কঠিন সংগ্রামে জয়ী হবার অনুপ্রেরণা।

 

Related Topics

টপ নিউজ

বিবর্তন / মানব বিবর্তন / প্রাচীন আবিষ্কার / প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন / গুহা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: টিবিএস
    চ্যাটজিপিটি দিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের ডি ইউনিটে ২৪২তম, এ ইউনিটে ফের নকল করতে গিয়ে আটক শিক্ষার্থী 
  • জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ৩৩ গ্রাহকের খেলাপি ঋণ ৫৬,১৩১ কোটি টাকা
    জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ৩৩ গ্রাহকের খেলাপি ঋণ ৫৬,১৩১ কোটি টাকা
  • ছবি: সংগৃহীত
    চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ‘আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ’ জসিম উদ্দিন, তৃণমূলে ক্ষোভ
  • ছবি: টিবিএস
    হাদি হত্যা: শুটার ফয়সালকে পালাতে সহায়তাকারী আমিনুলের দায় স্বীকার
  • সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
    এনসিপির মুখপাত্র ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হলেন আসিফ মাহমুদ
  • ছবি: সংগৃহীত
    বহিষ্কৃত যুবদল নেতার 'চাঁদাবাজির' প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা, কারওয়ান বাজারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

Related News

  • স্পেনের গুহায় শকুনের বাসা থেকে মিলল ৬৫০ বছর আগের জুতাসহ অজস্র নিদর্শন 
  • নিজ দেশে ফিরলেন ভারতের গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া রুশ মা ও দুই সন্তান
  • যেভাবে ১০ লক্ষ বছরের পুরোনো খুলি মানব বিবর্তনের ধারণা বদলে দিল
  • ৯০ লাখ বছর আগে এক ধরনের বুনো টমেটো থেকেই আলুর জন্ম: গবেষণা
  • যেভাবে বিবর্তনের ফলে বিলুপ্ত হওয়া থেকে ফিরে এল উড়তে অক্ষম এক পাখি

Most Read

1
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

চ্যাটজিপিটি দিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের ডি ইউনিটে ২৪২তম, এ ইউনিটে ফের নকল করতে গিয়ে আটক শিক্ষার্থী 

2
জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ৩৩ গ্রাহকের খেলাপি ঋণ ৫৬,১৩১ কোটি টাকা
অর্থনীতি

জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ৩৩ গ্রাহকের খেলাপি ঋণ ৫৬,১৩১ কোটি টাকা

3
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ‘আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ’ জসিম উদ্দিন, তৃণমূলে ক্ষোভ

4
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

হাদি হত্যা: শুটার ফয়সালকে পালাতে সহায়তাকারী আমিনুলের দায় স্বীকার

5
সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

এনসিপির মুখপাত্র ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হলেন আসিফ মাহমুদ

6
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

বহিষ্কৃত যুবদল নেতার 'চাঁদাবাজির' প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা, কারওয়ান বাজারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net