নিজের বাচ্চাদেরই খেয়ে ফেলে অ্যাকুরিয়ামের রঙিন এই মাছ!

শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করতে ডিম ফুটে বেরিয়ে আসার আগ অবধি মুখেই ইনকিউবেশনের মাধ্যমে বাচ্চাদের রক্ষা করে মা সিক্লিড মাছ। মধ্য আফ্রিকার মিঠা পানির এই রঙিন মাছগুলো অ্যাকুরিয়ামের মাছ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাস্টাটোটিলাপিয়া বারটোনি বা বারটন'স মাউথব্রুডার নামের সিক্লিড প্রজাতির মাছ নিজের ডিম এমনকি ক্ষুদে সন্তানদেরই খেয়ে ফেলে!
মাউথব্রুডার বা মুখে সন্তানদের ইউকিউবেশনের মাধ্যমে বেড়ে উঠতে সাহায্য করার বিষয়টি অনেক মাছের মধ্যেই দেখা যায়। তবে নিজেরই এক-তৃতীয়াংশ সন্তানকে ভক্ষণ করার বিষয়টি দেখে বিস্মিত গবেষকরাও।
সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটির বায়োলজিস্ট পিটার ডিজকস্ট্রার নেতৃত্বে সম্প্রতি বায়োলজি লেটারস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ডিম নিষিক্ত হওয়ার পর বারটোনি মা দুই সপ্তাহ নিজের মুখেই সন্তানদের আগলে রাখেন।
ডিম ফুটে ছোট লার্ভা মাছ মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। তবে আশেপাশে বিপদ দেখলেই লার্ভাগুলো আবারও মায়ের মুখে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এই সময়টা মা মাছের জন্য বেশ কঠিন। মা সিক্লিড ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারেন না। খাওয়া থেকেও বঞ্চিত হন।
নতুন এই গবেষণায় দেখা যায়, এরকম পরিস্থিতিতে মা মাছ রক্ষকের বদলে কখনো কখনো নিজেই ভক্ষক হয়ে উঠেন। এই আচরণকে বিজ্ঞানীরা 'ফিলিয়াল ক্যানিবালিজম' নাম দিয়েছেন।
গবেষণার আরেক সহযোগী মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক জ্যাক সাওয়েকি বলেন, প্রথমবারের মতো মায়ের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ক্যানিবালিজমের যোগসূত্র পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মা সন্তানদের খেয়ে নিজের স্বাস্থ্য রক্ষা করছেন ব্যাপারটিকে সহজাত মাতৃত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা যায় ক্যানিবাল এই মা মাছেরা বাচ্চাদের খেয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়ে উঠেন। ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা আবারও ডিম দেন।
স্ট্রেস বাড়লেই বাচ্চাদের খায় সিক্লিড
গবেষণার জন্য দুই গবেষক সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটির ল্যাবে বেশকিছু সিক্লিড চাষ করেন। কয়েক সপ্তাহ পর ৮০টি নারী সিক্লিড ডিম দেয়।
গবেষকরা সাবধানতার সঙ্গে মায়েদের মুখ থেকে ডিমগুলো বের করে আনেন। এরপর পুনরায় প্লাস্টিক পিপেটের সাহায্যে ৪০ জনের মুখে ২৫টি করে ডিম রাখেন। যাদের ডিম দেওয়া হয়নি তাদের কন্ট্রোল গ্রুপ হিসেবে একই ব্যবস্থায় নজরদারিতে রাখা হয়।

দু'সপ্তাহ পর্যবেক্ষণের পর গবেষকরা দেখেন মুখে ডিম পালা মায়েরা তাদের অন্তত ৪০ শতাংশ ডিম বা লার্ভাই খেয়ে ফেলেছে। ৯৩ শতাংশ মা তাদের বাচ্চাদের অন্তত কয়েকজনকে গিলে খেয়েছে।
এরপর বিজ্ঞানীরা মা মাছে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা পরিমাপ করেন। যকৃতে নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থ উচ্চমাত্রায় থাকার অর্থ মাছগুলো স্ট্রেসে আছে। যার কারণে কোষ ভেঙে যাওয়া, সংক্রমণ ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
গবেষকরা দেখে যাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেশি তারাই বেশি সংখ্যক সন্তানদের গিলে ফেলেছেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাদের সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
নতুন এই গবেষণায় সিক্লিড মাছের মাত্র একটি প্রজাতি নিয়ে গবেষণা হলেও অন্যান্য অনেক প্রজাতিও টিকে থাকতে একই কৌশল ব্যবহার করেন বলে গবেষকদের ধারণা।
এতকিছুর পরেও মা হিসেবে তারা খারাপ নন
তবে সন্তানদের খেয়ে ফেলে বলেই যে মা হিসেবে সিক্লিড ভালো নয় এমনটা মনে করেন না লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির মিউজিয়াম অব ন্যাচারল সায়েন্সের ফিশ কিউরেটর প্রশান্ত চক্রবর্তী। দুই সপ্তাহ মুখে সন্তানদের লালন করার সময় তারা না খেয়ে কীভাবে বেঁচে থাকেই সেটাই এতদিন আশ্চর্যজনক ছিল।
কিন্তু কিছু বাচ্চাকে খেয়ে ফেললেও তারা খারাপ মা নন। অনেক মাছই ডিম দেওয়ার পর আর সেগুলোর খেয়াল রাখে না। কিন্তু সিক্লিড বাচ্চা হওয়ার পরেও তাদের রক্ষার চেষ্টা করে যায়। সেটা করতে গিয়ে কিছু বাচ্চাকে খেয়ে ফেলতে হলেও সেটা প্রকৃতিরই নিয়ম হিসেবে মেনে নিতে হবে।
- সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক