Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
May 11, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, MAY 11, 2025
‘হাতিরঝিল, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল সবই আছে ঢাকায় হাতিই নেই কেবল’

ফিচার

সালেহ শফিক
28 October, 2022, 01:00 pm
Last modified: 28 October, 2022, 01:35 pm

Related News

  • হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ‘ছোট বড় মিলে পান্থকুঞ্জে আঁকবো ছবি’ কর্মসূচি
  • হাতিরঝিলে চিত্র নায়িকাকে অপহরণচেষ্টা: অভিযুক্ত উবারচালক গ্রেপ্তার
  • ‘ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধে’ দীপ্ত টিভির কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • হাতিরঝিলের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আনসার সদস্য
  • ঈদের দিন রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়

‘হাতিরঝিল, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল সবই আছে ঢাকায় হাতিই নেই কেবল’

প্রত্নতাত্ত্বিক সূফী মোস্তাফিজুর রহমানের উয়ারি-বটেশ্বর খননে প্রাপ্ত তথ্য আমাদেরকে হাজার হাজার বছর পূর্বের গঙ্গাঋদ্ধি নামের সমৃদ্ধশালী এক জনপদের কথা জানাচ্ছে। গঙ্গাঋদ্ধির শৌর্য-বীর্যের কথা আগে থেকে জানা ছিল গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের। মাঝপথে যুদ্ধযাত্রা তাঁর স্থগিত করার একটি কারণ ওই গঙ্গাঋদ্ধির শান-শওকত।  তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, গঙ্গাঋদ্ধি আক্রমণ করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আর ধারণা করতে কষ্ট হয় না, রাজ্যটির মূল বাহুবল ছিল হাতি। 
সালেহ শফিক
28 October, 2022, 01:00 pm
Last modified: 28 October, 2022, 01:35 pm
ঈদের মিছিলের ছবি

শাহজাহান নাম নেওয়ার আগে তাঁকে খুররম বলেই ডাকা হতো। তখন তিনি বাদশাহ ছিলেন না, ছিলেন মুঘল প্রিন্স। বাবা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি ঢাকা অধিকার করেন। সাত দিন ঢাকায় থেকে পকেটে পুরেছিলেন থেকে  ৪০ লক্ষ টাকা, চারশ ঘোড়া আর পাঁচশ হাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিষয়ক ২১টি বইয়ের প্রধান সম্পাদক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ভাটির এ দেশের পুরোটাই ছিল বণ্যপ্রাণীর জন্য উপযুক্ত আবাসস্থল। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও অগণিত জলাশয় অঞ্চলটিকে করে তুলেছিলে বণ্যপ্রাণীর জন্য উর্বরা ও সুফলা। ব্যতিক্রম ছিল না ঢাকাও। 

বাঘ-হাতি-সাপের আখড়া ছিল আজকের মেট্রোপলিটন সিটি- ঢাকা।  প্রত্নতাত্ত্বিক সূফী মোস্তাফিজুর রহমানের উয়ারি-বটেশ্বর খননে প্রাপ্ত তথ্য আমাদেরকে হাজার হাজার বছর পূর্বের গঙ্গাঋদ্ধি নামের সমৃদ্ধশালী এক জনপদের কথা জানাচ্ছে। গঙ্গাঋদ্ধির শৌর্য-বীর্যের কথা আগে থেকে জানা ছিল গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের। মাঝপথে যুদ্ধযাত্রা তাঁর স্থগিত করার একটি কারণ ওই গঙ্গাঋদ্ধির শান-শওকত।  তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, গঙ্গাঋদ্ধি আক্রমণ করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। আর ধারণা করতে কষ্ট হয় না, রাজ্যটির মূল বাহুবল ছিল হাতি। 

আলেকজান্ডার ছিলেন ঘোড়সওয়ারী, তাই হাতি তাঁর কাছে আজিবই ঠেকে থাকবে। মুঘলরাও এসেছিল ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধে তাদের হারানো মুশকিল ছিল; কিন্তু, হাতি দেখলে তাদেরও পিলে চমকাত। তাইতো বাংলা দখল করতে এসে তাদের হেস্তনেস্ত হতে হয়েছে অনেকবার। মুঘলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই হাতিকে ভালোভাবে বাগে আনতে পেরেছিলেন'।

আকবরের হাতি

সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী তুজুক-ই জাহাঙ্গীরী থেকে জানা যায়, আকবরের হাতিশালায় ৩৫ হাজার হাতি ছিল। সেই পঞ্চদশ শতাব্দীতে প্রতিদিন এইসব হাতির জন্য খরচ হতো ৪ লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর লিখছেন, 'পিতার হস্তীশালা ছিল অতুলনীয়। পৃথিবীর কোনো সম্রাটই এত হাতি সংগ্রহ করতে পারে নাই এবং পারবেও না। কিন্তু, আমি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর যুদ্ধ এবং আমোদ-প্রমোদের জন্য কয়েকটি হাতি রেখে অবশিষ্ট সব হাতি বনে ছেড়ে দিই।' 

আকবর কেবল হাতি পছন্দই করতেন না, উপরন্তু হাতিকে সম্মোহিত করতে পারতেন। ড. শরীফ উদ্দিন জানান, 'হাতি পোষ মানানো এবং একে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি একটি শিল্প। কারণ এটি বন্যপ্রাণী। এর সঙ্গে আত্মীয়তা না পাতালে এটি কথা শুনবে কেন? মাহুতরা এ শিল্পের ছিলেন ওস্তাদ শিল্পী। তারা হাতির ভাব-সাব, অভাব-অভিযোগ সব বুঝতেন এবং সেমতো সমাধানও দিতেন। তাই হাতি যাত্রী পরিবহনে, যুদ্ধে বা মালামাল পরিবহনে মাহুতের নির্দেশ মেনে চলত। 

ঢাকার হাতি, হাতির ঢাকা

ঢাকার মাহুতটুলীর প্রতিষ্ঠাও মুঘল আমলেই হয়ে থাকবে। পিলখানা নাম দেখে যেমন আন্দাজ করা চলে এর প্রতিষ্ঠাও মুঘল আমলে। মাহুতেরা হাতি চালনায় এমনই সিদ্ধহস্ত ছিলেন যে দুর্ঘটনা বলতে গেলে তেমন ঘটতই না; অন্তত এখনকার গাড়ি যত অ্যাকসিডেন্ট করে সেকথা মনে রেখে বলা যায়, পরিবহন খাতে হাতি ব্যবহারে দুর্ঘটনা কমই ঘটেছে। একটি হাতির জন্যে একাধিক ব্যক্তি নিযুক্ত থাকত বলেই মনে হয়। এদের কেউ হয়তো- খাবার যোগান দিত, পরিচর্যার জন্যও থাকতো কেউ আর মাহুত হতেন দলনেতা। এখন আমরা বাসে যেমন ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টর দেখি তেমনই ব্যাপার-স্যাপার। মাহুতটুলীর আশপাশেই হাওদা (যেটাতে সওয়ারি বসে) তৈরির কারখানা, মোটা দড়ি তৈরির কারখানাও ছিল বলে মনে হয়। শুধু মাহুতদের থাকার জন্য একটি এলাকা! তার মানে সংখ্যায় তারা কম ছিল না।'

সম্রাট আকবর এক হাতি থেকে লাফিয়ে আরেক হাতিতে চড়ে বসতে পারতেন। বেয়াড়া কোনো হাতি যে কি-না মাহুতকেও পিষে মেরেছে; আকবর সে হাতিকেও বশ করেছেন শোনা যায়। আকবরের ছেলে মানে জাহাঙ্গীরের ভাই দানিয়েলও ছিলেন হাতিপ্রেমী। জাহাঙ্গীর লিখছেন, 'আমার ভাইয়ের একটি বিশাল হাতি ছিল, যার নাম রেখেছিলাম ইন্দ্রের হস্তী। এর মতো বড় হাতি আমি আর দেখিনি। এর পিঠে চড়তে চৌদ্দ ধাপের মই লাগত। এটা দ্রুতগামী ঘোড়াকেও পেছনে ফেলতে পারত। একশ মত্ত হাতির সঙ্গেও যুদ্ধ করে জিততে পারত ওই হাতি। প্রতিদিন এটি ১৪ সের জল পান করত আর প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় এর জন্য ৫৬ সের চাল, ২৮ সের ভেড়া বা গরুর গোশত, ১৪ সের তেল বা ঘি দিয়ে রান্না করা হতো।'

জোসেফ স্কট ফিলিপের আঁকা ১৮৩৩ সালে শহরে হাতি

মির্জা নাথানের হাতিগুলো

মুঘলদের হাতি খেদা নামে একটি বিভাগ ছিল। হাতি খেদা মুঘল বাদশাহ ও তাদের আমির-ওমরাহদের জন্য ছিল একটি বড় বিনোদন। ভূষণার (তখন ফরিদপুর জেলার একটি থানা) রাজাকে পরাজিত করার খুশিতে ঢাকার মুঘল সুবাহদার ইসলাম খাঁ (১৬০৮-১৬১৩) একটি বড় হাতি খেদার আয়োজন করেন ঘোড়াঘাটে (রংপুর জেলার পশ্চিমে, কুচবিহার এবং কামরূপ রাজ্যের সীমান্তবর্তী)। মীর্জা নাথান নামে ইসলাম খাঁর একজন নৌ কমান্ডার বাহারিস্তান-ই-গায়বী নামে একটি ওয়ার ডায়রি (যুদ্ধের দিনপঞ্জি) লিখেছেন, যাতে ওই হাতি খেদার বিবরণ রয়েছে। তার কিছু অংশ তুলে দেওয়া হলো: 'ইফতিখার খাঁ, মুবারিজ খাঁ এবং রাজা শত্রাজিৎ অনেক হাতি কামারগাহে (হাতি ধরার বেড়) নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন। ইসলাম খাঁ দ্রুত নাজিরপুরে পৌঁছার পর হাতিগুলিকে শিকারের ঘেরের মধ্যে আনা হয়েছে। খাদে আটক করে একশ পঁয়ত্রিশটি হাতি বন্দী করে, তাদেরকে পোষা শিকারি হাতির ফাঁদের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে।'

চার্লস ডয়েলের আঁকা ঢাকার ছবিতে হাতি

উল্লেখ্য, খেদায় বুনো হাতি ধরা হয় কুনকি হাতি দিয়ে। কুনকি হলো পোষা হস্তিনী যার দ্বারা বুনো হাতিকে খেদিয়ে নিয়ে আসা হয়। 

ওসমান খাঁ (সিলেটের আফগান শাসক) ও ইসলাম খাঁর যুদ্ধে- বাজ, বাখতা, বাঘদলন ও বালসুন্দর নামের হাতিগুলোর আকার ও কৌশলের প্রশংসা করা হয়েছে। বাহারিস্তান-ই-গায়বী বইয়ে বাখতা সম্পর্কে বলা হচ্ছে, আকারে বাখতা ছিল পাহাড়ের মতো। তার পাহাড় ভাঙ্গার শক্তি ছাড়াও এমন সুশিক্ষিত ছিল যে, মাহুতের হুকুম ছাড়া এক পাও নড়ত না। অনুপা, রণসিঙ্গার, সিঙ্গালী নামের হাতিরও খবর পাওয়া যায় বইটিতে। মির্জা নাথানের চঞ্চল নামে একটি হাতি ছিল, যেটি এক দাঁতওয়ালা বলে গন্শা নাম পেয়েছিল। আরো হাতিগুলোর মধ্যে কারুর নাম ছিল গোপাল, কারুরবা ফাতুহা।   

চার্লস ডয়েলের আঁকা ঢাকার ছবিতে হাতি

মানুষের দারুণ সখা

'এখন যেমন প্রযুক্তি মানুষের কায়িক শ্রমকে সহজ করে দিচ্ছে, হাতিও কিন্তু সেকালে একই ভূমিকা পালন করত। মানুষের এক দারুণ সখা ছিল এ প্রাণী। কারণ, প্রাণীটি বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী। মানুষ অবশ্য তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে পারেনি সবসময়; তবে সমঝে চলেছে, সংযত আচরণ করেছে আর কোনো কোনো হাতি তো শাহী আদরে পালিত হয়েছে। ভারী কিছু বহন করতে, দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হাতি ছিল দারুণ এক বাহন। 

প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগের ভারতবর্ষের প্রায় সব যুদ্ধে হাতিকে অগ্রবর্তী সৈনিক হিসাবে দেখা গেছে। নিজে প্রাণ দিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা কুচবিহার অভিযানে গিয়েছিলেন ঢাকা থেকে। পথ ছিল জঙ্গলে আকীর্ণ। চলার উপযোগী পথ বানিয়ে নিতে তিনি তিনশ হাতি ব্যবহার করেছিলেন। তবে হাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার আসলে শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। পলাশীর যুদ্ধে জেতারও বেশ কয়েকবছর পর ব্রিটিশরা ঢাকা অধিকার করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- বাণিজ্য মূলত, বস্ত্র বাণিজ্য। কিন্তু, মসলিনের মতো দামি কাপড়ের চেয়ে তারা চাইল- গাউন বা এজাতীয় কিছু। তেজগাঁওয়ে তারা কুঠি বানিয়েছিল। কিন্তু, তখনকার ঢাকা ছিল বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে মানে ফরাশগঞ্জ, মিটফোর্ড এসব এলাকায়। তেজগাঁও থেকে ঢাকায় চলাচলের বাহন ছিল হাতি। মাঝখানের অনেকটা পথই ছিল গাছপালায় ভরপুর, নিরালা ও ভয়জাগানিয়া। হাতি থাকলে কিছুটা নিরাপদ বোধ করতেন যাত্রীরা'-  বলছিলেন ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ।

হাতির স্কুল হলো পিলখানা

আরো জানান ড. শরীফ উদ্দিন,  '১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফলে ছোট ছোট অনেক জমিদার তৈরি হলো। বংশীয় নবাবের স্থলে তাদেরই কর্মচারীরা জমিদার বা খেতাবপ্রাপ্ত নবাব বনে গেলেন। তারা তখন শানশওকত দেখাতে হাতি পোষা শুরু করলেন। গেল পঞ্চাশের দশকে আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দিনাজপুর জিলা স্কুলে তখনও রাজার বাড়ির সামনের বড় মাঠে হাতি দেখেছি। মাহুতকে দেখতাম মাথায় পাগড়ি লাগিয়ে জরিলাগানো হাওদায় চেপে হাতিকে বাতাস খাওয়াতে বের হতো। জমিদারদের কাছে হাতির গুরুত্ব ছিল এখনকার মার্সিডিজ বেঞ্জ বা রোলস রয়েসের মতো।

ইংরেজরা চতুর ছিল, ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল প্রখর। পিলখানায় তারা হাতিখেদাও প্রতিষ্ঠা করল। এজন্য ৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হলো। ভাওয়াল, মুক্তাগাছা, গৌরিপুর, সুসং দুর্গাপুরসহ অনেক জায়গার জমিদাররা তাদের হাতি প্রশিক্ষণের (পোষ মানানো, আদব-কায়দা শেখানো) জন্য পাঠাতে থাকল পিলখানায়। এজন্য ফি নির্ধারণ করা হলো। পিলখানা তখন হয়ে উঠেছিল হাতির স্কুল এবং গাড়ির গ্যারেজের মতো হাতি রাখার জায়গা। প্রাণীটি পানি ভালোবাসে। তাই ইংরেজ সরকার দুটি ঝিলও ভাড়া নিয়েছিল হাতির গোসলের জন্য। একটির নাম সাত মসজিদ ঝিল, যার মালিক ছিলেন এইচপি মিত্র, অন্যটি কুড়িপাড়া ঝিল, যার মালিকানা ছিল বালিয়াহাটির জমিদারদের। 

একটি চকবাজারের ছবি
 

সাতমসজিদ ঝিলের জন্য সরকারকে ১,৩০০ টাকা খাজনা গুনতে হতো। তাছাড়া ছিল বুড়িগঙ্গা। তবে বুড়িগঙ্গা শহরের ভিতর দিয়ে যেতে হতো বলে ব্যবসায়ীদের নানারকম ক্ষয়ক্ষতি পোহাতে হচ্ছিল। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, পরে এখনকার হাতিরঝিলকে হাতির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পিলখানা থেকে যে রাস্তা ধরে হাতিরঝিল যেত হাতি, তার নাম হলো- এলিফ্যান্ট রোড, পথের এক জায়গায় রেললাইন পাতা ছিল বলে হাতির সুবিধার জন্য পুল বানানো হলো; যা পরে হাতিরপুল নামে পরিচিতি পেয়েছে। পিলখানা থেকে সরকার ভালো রাজস্ব পেত, বোঝা যায় পিলখানার জন্য সুপারিনটেনডেন্ট বা সার্জন নিযুক্তি দেওয়া থেকে। ঢাকার পিলখানায় একই সময়ে আড়াই-তিনশ হাতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। ঢাকা ছিল বাংলায় খেদার প্রধান কার্যালয়। ১৯০৪ সালে ফ্রিৎজ কাপের তোলা হাতি মিছিলের ছবি দেখে যে কেউ অবাক হবে এই ভেবে যে, এত হাতি ছিল ঢাকায়!'

তবে হাতির সংখ্যা কমে আসা শুরুর খবর মেলে উনিশ শতকের সাতের দশক থেকেই। জিপি স্যান্ডারসন ঢাকায় হাতি খেদা বিভাগের প্রধান হয়ে আসেন ১৮৭৫ সালে। তিনি আসার আগের সাত বছরে খেদায় ধরা পড়া হাতির সংখ্যা ছিল গড়ে ৫৯টি। ১৮৩৬-৩৯ সালে গড়ে সংখ্যাটি ছিল ৬৯। স্যান্ডারসন ঢাকায় বেশিদিন থাকার সুযোগ পাননি, তিনি মহীশূরে হাতি খেদার দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন।

১৮১৪ সালে ঢাকার হাতি, আঁকিয়ে জর্জ চিনারি

মোটরগাড়ি হাতির জায়গা নিল

চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকেও আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোয় হাতির খেদা হয়েছে। তবে ততদিনে হাতির গুরুত্ব অনেক কমে গেছে, কারণ মোটরগাড়ির রাজত্ব শুরু হয়ে গেছে পুরোদমে। ভারী কাজের জন্য বা আভিজাত্য দেখানোর জন্য অথবা দূর পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আর হাতির দরকার হচ্ছিল না। জনসংখ্যা, নগরায়নও হাতিকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। হাতির জন্য আমাদের দেশে এখন আর কোনো জায়গা নেই বলাই ভালো। 

শেরপুর, টেকনাফ বা লংগদুতে মাঝেমধ্যে হাতি আসে ওপাড়ের পাহাড় থেকে। ওরা আসে বিশেষ করে খাবার পেতে। আর তখন মানুষ আগুন জ্বালিয়ে, বাদ্য বাজিয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে তাদেরকে তাড়ানোর নানান ফন্দিফিকির করে। সখা এখন শত্রুতে পরিণত হয়েছে। অথচ হাতি মুহররম আর জন্মাষ্টমীর মতো উৎসবেরও শোভা বাড়িয়েছে। আলম মুসাওয়ার নামের এক শিল্পী ঢাকার ঈদ ও মুহররম মিছিলের ৩৯টি ছবি এঁকেছেন যা ঢাকা জাদুঘরে রক্ষিত আছে। সে ছবিগুলোতে সুসজ্জিত বেশ কিছু হাতি মিছিলের অগ্রভাগে দৃশ্যমান। 

১৮৬৬ সালের এমন এক মিছিলের খবর দিয়ে ঢাকা প্রকাশ লেখে, মুহররমের অষ্টম দিবস তোপগস্তের দিন। এই দিবসে সন্ধ্যার কিঞ্চিৎ পূর্বে হোসেনী দালান হইতে একটি মিছিল বাহির হয়। মিছিলের অগ্রভাগ কয়েকটি হস্তী এবং কয়েকটি পতাকা দ্বারা সুশোভিত করা হয়। এছাড়া, ১৯০৬-১৯০৭ সালে ঢাকার পত্রিকাগুলোয় যেসব বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল তার একটিতে লেখা হয়েছিল, 'নাল্লাদারা ব্রাদার্সের যুদ্ধ হাতী মার্কা দিয়াসলাই জাপান দেশ হইতে আগত। এই দিয়াসলাই উৎকৃষ্ট, জলে ভিজাইলেও নষ্ট হয় না'।

বুনো হাতি অহিম

২০০৫ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপানসন ফোরামের সঙ্গী হয়ে রাঙামাটির লংগদু গিয়েছিলাম ( লেখক) হাতি দেখতে। সেটা ছিল হেমন্ত কাল। পাকা ধানে সোনালি হয়ে উঠেছিল পাহাড় ঘেরা মাঠ-প্রান্তর। আমরা শুনেছিলাম মিজোরামের পাহাড় থেকে হাতির দল আসে ধান খেতে। বিকালে ধানক্ষেতের উপরের পাহাড়ের মাথায় হাতি দেখতেও পেয়েছি। কিন্তু, হাতি বুঝি আমরা যারা বহিরাগত তাদেরকে পছন্দ করেনি; তাই যেখানে রাত কাটিয়েছিলাম সেই জায়গাটা দুদিন পরে গিয়ে তছনছ করেছে। তবে পাহাড়ের লোক আমাদের জানিয়েছে, যদি হাতিকে বিরক্ত না করা হয়, মামা বলে আদর দিয়ে ডাকা হয়, তবে হাতি আপন হয়। মত্ত হাতিকে উদ্দেশ্য করে পাহাড়ের লোক যখন বলে, বুনো হাতি অহিম, তখন নাকি হাতি শান্ত হয়ে যায়।

'হাতী আমার সাথী'

হিন্দিতে হয়েছিল 'হাতি মেরে সাথি' আর বাংলায় হয়েছিল 'হাতী আমার সাথী' ছবিগুলো। হাতি নিয়ে চমৎকার সব চলচ্চিত্র বানিয়েছে চীনও। সাম্প্রতিককালের ব্লকবাস্টার বাহুবলীতেও হাতির ভূমিকা ছিল মস্ত। হাতি সমাজবদ্ধ জীব। একটি মাদি হাতির নেতৃত্বে ২৫টি হাতি পরিবারের মতো একসঙ্গে বাস করে। বয়স্ক হাতির প্রভাব থাকে পরিবারটিতে বেশি। পৃথিবীর বুদ্ধিমান জীবজন্তুগুলোর মধ্যে হাতি অন্যতম। হাতির হাস্যরস সৃষ্টির, বিষাদ তৈরির, সরঞ্জাম ব্যবহারের ক্ষমতা আছে। সেসঙ্গে প্রাণীটি সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতাপ্রবণ। হাতি ৬০-৮০ বছর বাঁচে। হাতি এক মাইল দূরেও আওয়াজ তুলে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। 

জিপি স্যান্ডারসন ঢাকায় হাতি খেদার প্রধান ছিলেন কিছুকাল। সংগৃহীত ছবি

হাতী আমার সাথী ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এর কাহিনী এমন-অভিনেতা আজিম পরিবারসমেত যায় জঙ্গলে। তাঁবু খাটিয়ে গুপ্তধনের সন্ধান করতে থাকে। ভিলেনের আক্রমণে আজিমের কাছে থাকা নকশাটি দুই টুকরো হয়ে যায়। আজিম তখন নিজের কাছে থাকা অংশটি ছেলে জসিমের গলায় বাঁধা তাবিজের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। ভিলেন আবার আক্রমণ করলে জসিম জঙ্গলে পালায়। সেখানে হাতিরা জসিমকে রক্ষা করে। বড় হয়ে জসিম হয়ে যায় হাতিদের সাথী।

হিন্দি ছবি হাতি মেরে সাথী নির্মিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। রাজেশ খান্না এবং তনুজা ছিলেন এর প্রধান পাত্র-পাত্রী। এই ছবিটিতে দেখা যায়, রাজেশ খান্নাকে চিতাবাঘের হাত থেকে রক্ষা করে হাতির দল। তারপর চারটি হাতি নিয়ে সার্কাস পার্টি গড়ে রাজেশ। একসময় ধনীর দুলালী তনুজার সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে হয়। কিন্তু, তনুজা অসহায় বোধ করে তখন, যখন দেখে রাজেশ হাতির সঙ্গেই সময় কাটাতে ভালোবাসে বেশি। তাই তনুজা শর্ত দেয়, হয় পরিবার নয়তো হাতি, কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে রাজেশকে। শেষে হাতির আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই শেষ হয় ছবি।

আফসোস

হাতি নিয়ে প্রবাদ-প্রবচন আর গল্প-গাঁথাও কম নেই। এলিফ্যান্ট রোড, হাতির ঝিল, হাতিরপুল সবই আছে ঢাকায় হাতি নেই কেবল। আসলে তো হাতি এখন আমাদের দেশেই নেই তেমন। তাইতো ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ দুঃখ করেই বললেন, 'আমাদের এখানে বিশৃংখলা হয়েছে অনেক। তার খেসারত হাতিকেও দিতে হয়েছে। আমাদের এখানে হাতির প্রাচুর্য ছিল বলেই তো পিলখানা গড়ে উঠেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হাতি পাঠাত ঢাকার পিলখানা থেকে। হাতির সঙ্গে মানুষের সখ্যতা অদ্ভূত, বিস্ময়করই বলা চলে। অথচ এখন আমাদের দেশে হাতির জন্য কোনো জায়গা নেই, তাদেরকে তাড়াতে আমরা কামান দাগাই। তাদের চলাচলের পথেও মানুষের ভিড়, বসতি। তাহলে হাতি থাকবে কেন?'  

 

Related Topics

টপ নিউজ

হাতিরপুল / হাতিরঝিল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • যাত্রীবাহী লঞ্চে পিকনিকে আসা নারীদের প্রকাশ্যে মারধর–লুটপাটের অভিযোগ
  • চার সপ্তাহের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মোট ব্যয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার!
  • লঞ্চে প্রকাশ্যে নারীদের মারধর করা সেই যুবক গ্রেপ্তার
  • তিন মাসে বিএটি বাংলাদেশের ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার ব্যবসা, সিগারেট বিক্রি কমেছে ৫৩৮ কোটি শলাকা
  • ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের পেছনে আছে চীনের রোবট বাহিনী
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

Related News

  • হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় ‘ছোট বড় মিলে পান্থকুঞ্জে আঁকবো ছবি’ কর্মসূচি
  • হাতিরঝিলে চিত্র নায়িকাকে অপহরণচেষ্টা: অভিযুক্ত উবারচালক গ্রেপ্তার
  • ‘ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধে’ দীপ্ত টিভির কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • হাতিরঝিলের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আনসার সদস্য
  • ঈদের দিন রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়

Most Read

1
বাংলাদেশ

যাত্রীবাহী লঞ্চে পিকনিকে আসা নারীদের প্রকাশ্যে মারধর–লুটপাটের অভিযোগ

2
আন্তর্জাতিক

চার সপ্তাহের ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মোট ব্যয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার!

3
বাংলাদেশ

লঞ্চে প্রকাশ্যে নারীদের মারধর করা সেই যুবক গ্রেপ্তার

4
বাংলাদেশ

তিন মাসে বিএটি বাংলাদেশের ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার ব্যবসা, সিগারেট বিক্রি কমেছে ৫৩৮ কোটি শলাকা

5
আন্তর্জাতিক

ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত: পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্রের পেছনে আছে চীনের রোবট বাহিনী

6
বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net