নিলামে আলোকচিত্রের ইতিহাসের প্রথম দিককার ছবির রেকর্ড ভাঙা দাম!

আলোকচিত্রের ইতিহাসের একেবারে প্রথম দিককার শীর্ষ আলোকচিত্রী উইলিয়াম হেনরি ফক্স ট্যালবট-এর প্রায় ২০০টি ছবির সংগ্রহ বিক্রি হয়েছে মিলিয়ন ডলার দামে; ছাড়িয়ে গেছে নিলাম প্রতিষ্ঠানের অনুমিত বিক্রয়মূল্যকেও।
ট্যালবটের ঐতিহাসিক ছবিগুলোর নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বিশ্ব খ্যাত নিলাম হাউজ সোথেবি।
ছবিগুলোকে তারা বর্ণনা করেছে 'বাজারে বিদ্যমান ১৯ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবি' হিসেবে।
সোথেবি প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিল সংগ্রহটি তারা ৩ থেকে ৫ লাখ ডলার তুলে আনতে পারবে। তবে শেষপর্যন্ত প্রায় ২ মিলিয়ন ডলারের চূড়ান্ত বিক্রয়মূল্য উঠেছে যা ছাড়িয়ে গেছে ট্যালবটের আগের কালেকশনগুলোর বিক্রয়মূল্যকেও।
পূর্বের রেকর্ডটি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে; সে সময় সোথেবিতে নিলামে তোলা হয়েছিল ট্যালবটের বিখ্যাত কাজ "দ্যা পেন্সিল অব নেচার" এর একটি সম্পূর্ণ অনুলিপি। সেটি বিক্রি হয়েছিল ২,৭৫,০০০ ডলারে।

ট্যালবটের বিরল ছবিগুলোতে দেখা মেলে ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেনের আদি রূপ।
স্থিরচিত্রগুলো ১৮৪০ এর দশকের স্থাপত্য, উদ্ভিদবিদ্যা এবং দৈনন্দিন অভ্যন্তরীণ ও বহিঃজীবনের সাক্ষী।
ট্যালবট ছিলেন একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক। নিজের উদ্ভাবন করা এবং সেই সময়ের তুলনায় অগ্রসর ক্যামেরা প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় তিনি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের বিভিন্ন ছবি তুলেছিলেন।
একক লট হিসাবে নিলামে প্রস্তাবিত তার কালকশনটি ৭০টিরও বেশি লুজ-ফটোগ্রাফ এবং মুদ্রিত চিত্রের তিনটি অ্যালবাম নিয়ে গঠিত। এতে ট্যালবোটের প্রকাশনা "সান পিকচার্স ইন স্কটল্যান্ড" এর বিরল সংস্করণও অন্তর্ভুক্ত, যা স্কটল্যান্ডের অভ্যন্তরে তার ভ্রমণের দলিল। একইসাথে সংগ্রহটিতে নথিভুক্ত আছে তার বিখ্যাত কাজ "দ্য পেন্সিল অফ নেচার" এর বেশ কয়েকটি অংশ।

নিলামে তোলা ১৯১টি ছবির মাঝে এই আদি আলোকচিত্রীর তোলা সর্বাধিক পরিচিত কিছু ছবিও রয়েছে। যার মধ্যে একটি ছবিতে দেখা মেলে ১৮৪৪ সালে লন্ডনের বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ নেলসনের নির্মাণাধীন কলাম।
বিক্রয়ের আগে কথা বলতে গিয়ে সোথেবির ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান এমিলি বিয়ারম্যান বলেন, "এই সংগ্রহের মূল্য কেবল এর বয়স এবং অবস্থা বিবেচনায় নয়, বরং এর বৈচিত্র্য এবং সম্পূর্ণতায় বিরাজ করে"।
বিয়ারম্যান জানান, "বছরের পর বছর ধরে এই ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না কারণ ছবিগুলো ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত নয়তো প্রাতিষ্ঠানিক সংগ্রহে চলে গেছে।"
"একটি সম্পূর্ণ সংগ্রহ বা আর্কাইভ পাওয়া ... এমন কিছু তো আপনি স্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না" ।
ট্যালবোটের মা এবং বিখ্যাত লেখক টমাস মুরের বিরল চিত্রগুলোর কথা উল্লেখ করে বিয়ারম্যান আরো বলেন, "ছবিগুলোতে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের বিশাল এক মিশ্রণ রয়েছে, সেইসাথে তার (ট্যালবট) ভ্রমণ এবং গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের সাথে ছবি ... যদিও সবচেয়ে বেশি চমক তার তোলা পোর্ট্রেইটগুলোয় পাওয়া যাবে"।
ট্যালবটের বেশ কয়েকটি ছবিতে উপস্থিতি মেলে তার সৎবোন হেনরিয়েটা মারিয়া গাইসফোর্ডের। ১৮৪০-এর দশকে ট্যালবট মারিয়াকে নিজের তোলা ছবির সংগ্রহ দিয়ে দেন।
তারপর থেকে পরিবারের কাছেই নিভৃতে ছিল ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান এই ছবিগুলো।

সম্প্রতি সমাপ্ত সোথেবির নিলামের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো শিল্প সংগ্রাহকদের বাজারে আসে ১৯১টি ছবির এই মহাসংগ্রহ। এছাড়াও নিলামে বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল গাইসফোর্ডের ব্যক্তিগত স্কেচবুক, যেখানে রয়েছে নানান অঙ্কন এবং জলরঙের কাজ ।
১৮৩০-এর দশকের শুরুতে ছুটির সময় যখন ট্যালবট স্কেচিংয়ের সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন-তখনই যুগান্তকারী "সলটেড পেপার (লবণযুক্ত কাগজ)" ফটোগ্রাফি কৌশলটি তৈরি করেছিলেন তিনি। লবণ যুক্ত একটি দ্রবণে সিলভার নাইট্রেট দিয়ে তিনি সাধারণ লেখার কাগজ থেকে একটি হালকা সংবেদনশীল পৃষ্ঠা তৈরি করেছিলেন, যা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে গাঢ় হয়ে যায়।
পরে তিনিই প্রভাব বিস্তারকারী ক্যালোটাইপ (ট্যালবটাইপ) কৌশলের বিকাশ ঘটান, যা লবণযুক্ত কাগজ প্রক্রিয়ার চেয়ে বেশি জটিল ছিল, তবে এ পদ্ধতি ছবিতে এক্সপোজারের সময়কে ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছিল।
তবে ট্যালবোটের ক্যামেরা কৌশল প্রযুক্তির বিকাশে অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়েছিল, কারণ এটির মাধ্যমে ফটোগ্রাফিক নেগেটিভ তৈরি হয়েছিল, যা দিয়ে আরো সহজে প্রতিলিপি তৈরি করা যেত চিত্রগুলোর।
ট্যালবটের শৈল্পিক সংবেদনশীলতারও প্রশংসা করতে গিয়ে এমিলি বিয়ারম্যান বলেন, "ট্যালবট ছিলেন একজন তীক্ষ্ণ অ্যালকেমিস্ট এবং ফটোগ্রাফি বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব"।
"সে যুগে ফটোগ্রাফি অনুশীলনে তিনি যে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতেন তা নিয়ে চিন্তা করা, দূরদর্শিতা দেখানো- যা দেখছেন তা আলোকচিত্রের ভাষায় ফুটিয়ে তোলা- আমার মনে হয় একেই সত্যিকারের শিল্পী বলে"।
- সূত্র- সিএনএন