করোনা রোগীরা ঘ্রাণশক্তি হারায় কেন, বিজ্ঞানীদের রহস্যভেদ

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানীরা নতুন এক গবেষণায় করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রহস্যের মধ্যে একটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন: কেন ভাইরাসটিতে আক্রান্তরা সাময়িকভাবে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে।
ঘ্রাণশক্তি হারানোটা এই ভাইরাসের সবচেয়ে প্রচলিত নিওরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক উপসর্গ। গবেষণাটির প্রধান লেখক ড. সন্দীপ রবার্ট দত্ত জানান, এর কারণ হিসেবে তারা যা পেয়েছেন তা তাদের চমকে দিয়েছে, এবং এ ভাইরাসের কারণে ঘটা বড় ধরনের নিওরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়ে ভাবতে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে।
ঘ্রাণ শণাক্ত করা এবং তা মস্তিষ্কে পাঠানোয় নাকের যে বিশেষ সেন্সরি নিওরোন কাজ করে, সেটি নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেছেন হার্ভার্ডের নিওরোসায়েন্টিস্টরা।
'আমাদের অনুমান, এবং আমার ধারণা আরও অনেক মানুষের অনুমান হলো- ভাইরাসটি এইসব সেন্সরি নিওরোনকে আক্রমণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা মেরে ফেলতেও পারে; আর এ কারণে আমরা ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি,' বলেন দত্ত।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ব্ল্যাভেটনিক ইনস্টিটিউটের নিওরোলজি বিভাগের এই অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের নেতৃত্বে হওয়া গবেষণাপত্র 'সায়েন্স অ্যাডভান্সেস' জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে গত ২৪ জুলাই।
'আমাদের উপাত্তের দিকে তাকিয়ে আমরা বেশ চমকে গিয়েছি,' বলেন তিনি, 'সেগুলো দেখে মনে হয়েছে, আমাদের নাকে থাকা নিওরোনগুলোকে আক্রমণ করার সামর্থ আসলে ভাইরাসটির নেই।'
উল্টো, বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, এই নিওরোনগুলোকে আক্রান্ত হতে দুটি অন্য ধরনের কোষ সমর্থন যোগায়। ওই কোষগুলোর অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সঙ্গে নিজেদের পুনর্জীবনও দিতে পারে।
'এ কারণে আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে এটি খুবই ভালো খবর। এবং যারা ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাদের ঘ্রাণশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি,' বলেন দত্ত।
এই বৈশ্বিক মহামারিতে চিকিৎসকেরা খেয়াল করেছেন, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা রোগীদের অধিকাংশই কয়েক সপ্তাহে মধ্যে সেটি ফিরে পেয়েছেন।
'কী করে এই ভাইরাস আমাদের ঘ্রাণশক্তিকে আক্রমণ করতে সক্ষম, সেটি বোঝার ক্লু আমরা অবশেষে পেয়েছি,' বলেন দত্ত, 'সেটি আমাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে সেইসব তত্ত্বের দিকে- যেন আমরা আরও সার্বিকভাবে বুঝতে পারি, কী করে এটি আমাদের নিওরোলজিক্যাল সিস্টেমগুলোকে আক্রান্ত করতে পারে।'
ঘ্রাণশক্তি খোয়ানোর পাশাপাশি, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে; যেমন: চৈতন্যের রদবদল, মনোনিবেশে সমস্যা, সেন্সরি মোটর ঘাটতি ও স্ট্রোক। দত্ত জানান, নাকের কোন কোষগুলোকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত করে, এ নিয়ে এই নতুন বোঝাপড়াটি বাকি সব উপসর্গকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে বলে আশা তার।
'করোনাভাইরাসের কারণে যারা ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন এবং যারা নানাবিধ নিওরোলজিক্যাল সমস্যায় ভুগছেন- উভয় ধরনের মানুষেরই চিকিৎসা পদ্ধতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি,' বলেন দত্ত।
'আমাদের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস স্বাধীনভাবেই আপনার রুচিশক্তিকেও আক্রান্ত করতে পারে', বলে তিনি জানান, রুচিশক্তির ওপর আক্রমণের সময়ও সেই একই ধরনের কোষগুলো ওই ভাইরাসকে সাহায্য করে।
- সূত্র: ডব্লিউবিজিএইচ (শিক্ষা ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র)