আর অধিনায়কত্ব করতে চান না মুমিনুল, কে হচ্ছেন নতুন অধিনায়ক?

ব্যাটে রান নেই, দলও হেরে চলেছে। ফর্ম নিয়ে তো সমালোচনা আছেই, মুমিনুল হকের টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেছে। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একমাত্র আলোচনা এটাই। তবে আলোচনা আর দীর্ঘ হতে দিলেন না মুমিনুল। মঙ্গলবার গুলশানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বৈঠকের পর বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জানিয়ে দিলেন, তিনি আর অধিনায়কত্ব করতে চান না।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের পর নাজমুল হাসান জানান, মুমিনুলের সঙ্গে কিছুটা আলোচনা হয়েছে তার। পুরো ভাবনা জানতে দ্রুতই টেস্ট অধিনায়কের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন তিনি। মঙ্গলবার সেই আলোচনা হলো, যেখানে তাকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু মুমিনুল মনে করছেন, এই মুহূর্তে অন্য কারও অধিনায়কত্ব করা উচিত। বাকি সিদ্ধান্ত বিসিবি নেবে বলে জানান তিনি।
বিসিবি সভাপতির বাসায় বৈঠক শেষে মুমিনুল বলেন, 'ও রকম কিছু না, শুধু বলেছি অধিনায়ক হিসেবে আমি ওভাবে দলে অবদান রাখতে পারছি না। দরকে সেভাবে অনুপ্রাণিতও করতে পারছি না। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া ভালো। আমি এই কথাগুলো বলে এসেছি। আমি তো বলে এসেছি. এখন উনারা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা উনাদের ব্যাপার।'
সিদ্ধান্ত জানানোর পর বিসিবি সভাপতি কী বলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মুমিনুল বলেন, 'না, উনি ওই রকম কোনো কিছু বলেননি। আমি যেটা বলেছি, আপাতত একটা বিরতি হলে ভালো হয়। ব্যাটিংয়ের দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছি, এতটুকুই। সামনে বোর্ড মিটিং আছে, ওখানে উনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।'
মুমিনুল যে অধিনায়কত্ব ছাড়তে চান, তার এই সিদ্ধান্তে কারও কোনো প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজে পারফর্ম করতে না পারায় অধিনায়কত্ব করাটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। মুমিনুলের ভাষায়, 'না, কারও ভয়ে না। যখন আপনি ভালো খেলবেন, ফল না পেলেও দলকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। আমিও ভালো খেলতে পারছি না, দলও ভালো করছে না। এই সময়ে অধিনায়কত্ব করা খুবই কঠিন। সত্যি বলতে এই সময়ে অধিনায়কত্ব না করাটা সবচেয়ে ভালো।'
অধিনায়কত্বের চাপেই ব্যাটিংয়ের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন মুমিনুল, অনেবের মতো এটার সঙ্গে একমত বিসিবির অনেক কর্তাই। মুমিনুলের নেতৃত্ব ছাড়ার কারণও এটাই। বাংলাদেশকে ১৭টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া মুমিনুল বলেন, 'আমি যেটা অনুভব করি ব্যাটিংয়ে যদি আরেকটু মনোযোগ দিতে পারি, দলের জন্য ভালো হয়, আমার জন্যও ভালো হয়।'
মুমিনুল নেতৃত্ব ছাড়লে সাকিব আল হাসানকে করা হতে পারে টেস্ট অধিনায়ক। এ নিয়ে বিসিবিতে আলোচনা চলমান। মুমিনুল কাকে যোগ্য মনে করেন? এমন প্রশ্নে কারও নাম বললেন না তিনি, 'আমার মনে হয় উনারা এটা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি কারও নাম সাজেস্ট করিনি। কাকে দেবে না দেবে, এ ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। সামনে বোর্ড সভা আছে, সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে টেস্ট অধিনায়কত্ব দেবেন। আমি আমারটুকু বলে এসেছি।'
দীর্ঘ আলোচনার মাঝে মুমিনুলকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিসিবি সভাপতি। কিন্তু টেস্ট অধিনায়কত্ব করার কোনো ইচ্ছা আর মুমিনুলের নেই। তিনি বলেন, 'উনি আমাকে বলেছেন, কিন্তু আমি আর চাচ্ছি না অধিনায়কত্ব করতে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আসলেই চাচ্ছি না। একটু আগেই আমি সেটার ব্যাখ্যা করলাম। এখানে আমার কোনো অভিমান নেই।'
২০১৯ সালের অক্টোবরে সাকিবকে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। নভেম্বরে নতুন টেস্ট অধিনায়ক করা হয় মুমিনুলকে। তার নেতৃত্বে ১৭ টেস্টে ৩টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। হার ১২টিতে, ড্র হয়ে ২টি ম্যাচ। অধিনায়ক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই হারানো।
জাতীয় দলের হয়ে ৫৩টি টেস্ট খেলা মুমিনুল অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টের ৩১ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৯১২ রান করেছেন। অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম ৭ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি পেলেও পরের ১০ টেস্টে সেঞ্চুরিবিহীন তিনি। সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তার রান ১৭০, গড় ১২.১৪। অধিনায়ক হিসেবে ১৭ টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ৩১.৪৪। অধিনায়ক হওয়ার আগে তার গড় ছিল ৪১.৪৭।